আল্লাহর সাহায্য


১ মে ২০২৫ ১৮:০১

॥ এম এম আর তাহমিদ ॥
‘এই যা! মনে হচ্ছে টিউব লিক হয়ে গেছে। এখন হেঁটে হেঁটে যাওয়া ছাড়া আর উপায় নেই!’
সাইকেলের পেছনের চাকায় হাওয়া নেই। গতকাল প্রাইভেটে যাওয়ার সময় কেন জানি সাইকেল চালাতে একটু বেশিই কষ্ট হচ্ছিল। যেন সাইকেল নয়, আস্ত একটা রিকশা চালাচ্ছি! গন্তব্যে পৌঁছে দেখি অবস্থা বেগতিক। পরশু সাইকেলে হাওয়া দিয়েছিলাম, আর এখন উধাও! বাধ্য হয়ে কড়া রোদের মধ্যে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরতে হলো।
বাসায় এসে বলটিউব পরিবর্তন করলাম, ভাবলাম হয়তো ফুটো হয়ে গেছে। কিন্তু তাতেও সমাধান হলো না। হাওয়া দিলেও কিছুক্ষণ পর আবার চাকা বসে গেল। নিশ্চিত হলামÑ টিউব ফুটো হয়েছে!
সময়টা রমাদান মাস, ২০২৫ সালের ২৪ মার্চ, অর্থাৎ ২৩ রমাদান। এমন একসময়, যখন রাতে বেশ হালকা ঠা-া, আর দিনে কাঠফাটা প্রচ- গরম।
আম্মাকে বলতেই তিনি ভাইয়ার রুমে গিয়ে তার সাইকেলটা আমাকে দিতে বললেন। কিন্তু ভাইয়া তো রাজি হলেনই না, বরং রেগে গেলেন! আম্মা আর ভাইয়ার যখন এ অবস্থা, তখন আমি চটজলদি আল্লাহর ওপর ভরসা করে বেরিয়ে পড়লাম। হয়তো তারা আরও কিছুক্ষণ এ নিয়ে ঠান্ডা তর্কে সময় কাটালেন।
বাইরে প্রচ- রোদ। এই রোদে বেশিক্ষণ হাঁটা মুশকিল। তাই হাঁটতে হাঁটতে মুখে শুধু পড়ছিলাম-
‘রাব্বাহু আন্নী মাগলূবুন ফানতাসির’ ‘হে আমার রব! আমি তো পরাস্ত, তাই তুমি সাহায্য করো।’ (সূরা আল-কামার: ১০)।
মনে মনে দোয়া করছিলাম- যেন আল্লাহ কোনো মোটরসাইকেল পাঠিয়ে দেন! হাঁটতে হাঁটতে প্রায় অর্ধেক পথ চলে এসেছি, এমন সময় হঠাৎ পেছন থেকে একটি মোটরসাইকেলের ব্রেকের শব্দ শুনে হকচকিয়ে উঠলাম। তাকিয়ে দেখি তানভীর ভাই!
তার বিশাল দেহী শরীর নিয়ে তিনি হাসিমুখে আমার সামনে হাজির। বললেন, ‘উঠো!’
আমি কালবিলম্ব না করে উঠে পড়লাম। ক্লান্ত ছিলাম, তাই দেরি করিনি।
সাইকেল চালানো আমার অভ্যাস, তাই তিনি আমাকে হাঁটতে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী ব্যাপার?’
আমি সাইকেলের চাকার সমস্যার কথা বললাম। তিনি কিছু না বলে আমাকে প্রধান সড়ক পর্যন্ত পৌঁছে দিলেন। আমি নেমে তাকে ধন্যবাদ জানালাম, প্রাণভরে তার জন্য দোয়া এলোÑ ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান।’
প্রাইভেটে পৌঁছে মনটা আরও খারাপ হয়ে গেল। আজ বন্ধুরা কেউ আসেনি!
কী হলো, কে জানে? স্যার ও আমি কিছুক্ষণ গল্প করলাম, তারপর দুজনেই বাসার উদ্দেশে রওনা হলাম।
রোদ তখনো তীব্র। পিচের রাস্তা যেন গরম তেলের কড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। ক্লান্ত কচ্ছপের মতো হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ পার করলাম। মনে মনে আগের মতোই আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে লাগলাম।
হঠাৎ ভূত দেখার মতো চমকে উঠলামÑ আবার সেই তানভীর ভাই!
ভূত নয়, যেন মহান আল্লাহ তাঁর কোনো ফেরেশতাকেই পাঠিয়েছেন!
তিনি এক কাজে বের হয়েছিলেন, এখন তা শেষ করে ফিরছিলেন।
তিনি আবার বললেন, ‘উঠো!’
আমি হেসে বললাম, ‘আরে ভাই, এই তো চলেই এসেছি!’
কিন্তু তার জোরাজুরিতে শেষমেশ উঠতেই হলো।
চোখের পলকেই আমি বাসার সামনে। এবার সরাসরিই বললামÑ ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান!’
ঘরে ঢুকতে ঢুকতেই মনে পড়ে গেল সূরা গাফিরের ৬০ নম্বর আয়াত, “আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব’।”
ঘরে ঢুকে আম্মাকে পুরো ঘটনাটা বললাম।
আম্মা শুনে রুম থেকে বেরিয়ে ভাইয়াকে উদ্দেশ করে বলতে লাগলেন, ‘তুই তো তোর ভাইকে সাইকেল দিসনি, আর দেখÑ এখন আল্লাহ তাকে মোটরসাইকেল দিয়ে সাহায্য করেছেন!’
ভাইয়া হয়তো কিছুটা লজ্জিত মুখে তাকিয়ে রইলেন চুপচাপ।
সেই দিনই আমি বুঝেছিলাম- মানুষ সাহায্য না করলেও, আল্লাহ ঠিকই পথ খুলে দেন। শর্ত একটাই: তাঁকে ডাকতে হবে, শুধুমাত্র তাঁরই ওপর ভরসা করতে হবে।