নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও এ কমিশন বাতিল করতে হবে
১ মে ২০২৫ ১৭:৩৩
একটি বিশেষ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। সহজ-সরল পথে তারা এ দায়িত্ব লাভ করেনি। পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ উপমহাদেশে বিগত পাঁচশত বছরেও এমন ঘটনা বিরল। দীর্ঘ দেড় দশকের ফ্যাসিস্ট হাসিনার দুঃশাসন। বিরোধীদলের আন্দোলন ও ভিন্নমত দমনে গুম, খুন, জুজিশিয়াল কিলিং এবং নিরস্ত্র-নিরীহ ছাত্র-জনতার বৈষম্যহীন কোটামুক্ত দেশ গড়ার ন্যায্য দাবি মেনে না নিয়ে টার্গেট কিলিং, হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে শিশু-কিশোরসহ সাধারণ মানুষ হত্যার মিশনে ব্যর্থ হয়ে দলবল নিয়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়ার ঐতিহাসিক ঘটনার পর হাজার হাজার বিপ্লবীর রক্তের বিনিময়ে বিজয় নিশান উড়েছে। তারপর ছাত্র-জনতার স্বপ্নের দেশ উপহার দেয়ার শপথে গঠিত হয়েছে এ অন্তর্বর্তী সরকার। সেই স্বপ্নপূরণের অংশ হিসেবে গঠিত হয়েছে কয়েকটি সংস্কার কমিশন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কয়েকটি কমিশনে এমন সদস্যরা দায়িত্ব পেয়েছেন, দেশ ও জনগণের সাথে যাদের কোনো সম্পর্ক নেই। ৩৬ জুলাই বিপ্লবের অঙ্গীকারও যাদের অজানা। হাসিনার দেড় দশকে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে বড় বড় পদে বসেছেন তারই দোসররা। তাদের মধ্যে যারা চিহ্নিত, তারা পালিয়েছেন। কিন্তু বর্ণচোরারা এখনো ঘাপটি মেরে আছেন। তাদের পরিচয় প্রকাশিত হচ্ছে কাজ-কর্মে। বিভিন্ন সংস্কার কমিশনে আমরা এর প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি। শিক্ষা সংস্কার কমিশন এ কারণে বাতিল করা হয়েছে। নারী সংস্কার কমিশনও দেশের ধর্মীয় ও প্রচলিত মূল্যবোধ, সংবিধান ও জাতিসংঘ প্রণীত সর্বজনীন মানবাধিকার প্রদত্ত ধর্ম পালনের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপসহ নারীর মর্যাদাহানিকর অনেক বিষয় প্রস্তাব করেছে। আমরা মনে করি, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালায় যৌনকর্মীর লাইসেন্স প্রদান নারীর মর্যাদা ও অধিকারের প্রতি চরম আঘাত। সম্প্রতি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মি. মাইকেল মিলারও এসব বিষয়ে তাদের সাথে একমত পোষণ করেছেন।
বিশেষ করে কমিশন সম্পত্তি বণ্টনে ইসলামের বিধানের লঙ্ঘন করে ধর্মদ্রোহী অপরাধ করেছে। ইসলাম যে বিধান দিয়েছে, তা গভীরভাব পর্যালোচনা না করে তারা মনগড়া মতামত ব্যক্ত করেছে। অথচ গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সম্পত্তি বণ্টনে পবিত্র কুরআনের বিধানের যথাযথ বাস্তবায়ন এদেশে নেই বলে নারীরা যুগের পর যুগ বঞ্চিত হয়ে আসছে। কীভাবে সেই অধিকার ফিরিয়ে দেয়া যায়, সেদিকে নজর না দিয়ে পিতার সম্পত্তিতে ভাই-বোনের সমান অধিকার বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছে এ কমিশন। অথচ একজন নারীর জন্য পবিত্র কুরআনে পিতা, স্বামী ও পুত্রের সম্পত্তিতে নির্দিষ্ট অংশ আছে। বিয়ের পর স্বামীর দায়িত্ব স্ত্রীর ভরণপোষণ করা। একজন নারী তার সম্পত্তি থেকে কারো ভরণপোষণের জন্য খরচ করতে বাধ্য নন। এমনকি তিনি যদি চাকরি বা ব্যবসা করেন, তার বিনিময়ে প্রাপ্ত অর্থ-সম্পদ একান্তই তার নিজস্ব। এখানে অন্য কারো ভাগ নেই। অথচ একজন পুরুষের দায়িত্ব স্ত্রী-সন্তানের ভরণপোষণে অর্থ উপার্জন ও খরচ করা। উল্লেখিত দিক বিচার করলে নারীর সম্পদের হিস্যা পুরুষের চেয়ে বেশি।
সব কথার শেষ কথা হলো, ধর্মীয় বিধান পালনে রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করতে পারে না, হস্তক্ষেপ করলেও একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ তা মানতে বাধ্য নন। ইউরোপ-আমেরিকার মধ্যে উদার গণতান্ত্রিক দেশেও সম্পদ বণ্টনে আইন করে কাউকে বাধ্য করা হয় না। ব্যক্তি উইল বা ইচ্ছাই যথেষ্ট।
আমাদের জোর দাবি, নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও এ কমিশন বাতিল করতে হবে। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ^াস, সামাজিক মূল্যবোধ এবং দেশের সংবিধান, সম্পত্তি বণ্টন আইন এবং জাতিসংঘ প্রণীত সর্বজনীন মানবাধিকার সনদ সম্পর্কে বিজ্ঞজনদের নিয়ে কমিটি পুনর্গঠন করতে হবে। কমিশনের সদস্যদের ধর্মদ্রোহী ও মানবাবিরোধী অপরাধের জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।