ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি বনাম রাজনীতি নিরপেক্ষ ধর্ম


২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:১৪

॥ প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী ॥
ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির প্রবক্তা বলেন, ধর্ম ব্যক্তিগত আচার-আচরণের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং পবিত্র জিনিস। তাদের মতে, রাজনীতির মতো নোংরা মাঠে ধর্মকে নিয়ে আসা ঠিক নয়। এ ধারণায় বিশ্বাসী অনেকেই হাতে তসবিহ, মাথায় কালো হিজাব, নিয়মিত কুরআন পাঠে মগ্ন ও তাহাজ্জুদ গুজারও হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে রাজনীতির মাঠে এ অতি ধার্মিকরা একেকজন দানব। ভোট ডাকাতি, গুম-খুন, আয়নাঘরে এনে নজিরবিহীন জুলুম-নির্যাতন এবং রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট ও পাচারে তাদের ধর্ম বাধা দেয় না। বরং ওরা জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় আচার হিসেবে ঈদে মিলাদুন্নবী সা. ও শবেবরাত পালন করে। ওরা যে ভ- ও প্রতারক, অজ্ঞ জনগণ তা বোঝে না এবং বুঝতে দেয়ও না। রাষ্ট্রের টাকা ব্যয় করে ওরা একদল দরবারি আলেম রাখে, যেমনটি রেখেছিল নমরূদ আজরকে, যে তার পুত্র নবী ইব্রাহিম আ.-এর দীন কবুল করতে পারেনি। ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো নমরূদ, ফেরাউন, আবু জেহেল, আবু লাহাব ও তাদের উত্তরসূরিরা। এরা সকলেই ব্যক্তিগত আচার-আচরণে নিজেদের বড়ো ধার্মিক মনে করতো, কিন্তু রাজনীতির অঙ্গনে ছিল ধর্মনিরপেক্ষ। বরং নবী-রাসূলদেরই তারা অধার্মিক মনে করতো। এসব ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিকরা জানে না যে, জুলুম কত ভয়াবহ অপরাধ। ওরা কুরআন পড়ে না আর কুরআন থেকে হিদায়াতও নেয় না। জাস্ট সওয়াবের আশায় বা নিজের ধার্মিকতা জাহির করার উদ্দেশ্যেই লোকদেখানো তেলাওয়াত করে।
সূরা হুমাজা যদি কেউ পড়ে এবং এটি আল্লাহর কালাম বলে বিশ্বাস করে, তাহলে কি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থেকে জুলুম করা সম্ভব? আল্লাহ কী বলেছেন তা একটু ভাবুন, ‘নিশ্চিত ধ্বংস তাদের জন্য যারা মানুষকে সামনা-সামনি গালাগাল ও পেছনে দোষ প্রচার করে এবং ধনমাল জমা করে আর গুনে গুনে রাখে। সে মনে করে, এই ধনমাল চিরকাল তার নিকট থাকবে।’ মানুষের মর্যাদাকে আল্লাহপাক কত উচ্চে তুলে ধরেছেন, তা এ তিনটি আয়াত থেকেই বোঝা যায়। একটু গালি দেয়া ও অসাক্ষাতে নিন্দা জানানোর পরিণতি যদি হয় নিশ্চিত ধ্বংস, তাহলে গুম-খুন ও জুলুম-নির্যাতনের পরিণতি কী হতে পারে? পরিণতি সম্পর্কে সূরা হুমাজায় বলা হয়েছে যে, তাদের হুতামায় নিক্ষেপ করা হবে এবং সেটা হলো আল্লাহর আগুন প্রচ-ভাবে উত্তপ্ত-উৎক্ষিপ্ত।
রাজনীতির ক্ষেত্রে মানুষ যদি ধার্মিক হতো ও সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করে চলার নীতি অবলম্বন করত তাহলে সমাজে জুলুম বলে কিছু থাকতো না। আর দুর্নীতি ও টাকা পাচার সেটাও সম্ভব হতো না। বড় বড় দুর্নীতি হয় ঘুষ ও খেয়ানতের মধ্য দিয়ে। রাসূলুল্লাহ সা. স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘ঘুষ দানকারী ও গ্রহণকারী উভয়ই দোযখী।’ এতবড় স্পষ্ট ঘোষণার পর তার আবার নামাজ-রোজার দরকার আছে কি? আর রাষ্ট্রীয় অর্থের খেয়ানত? মুনাফিক ও কাফের ছাড়া কেউ খেয়ানত করতে পারে না। রাসূল সা. বলেছেন, খেয়ানতকারী কিয়ামতের দিন খেয়ানতের বোঝা মাথায় করে উত্থিত হবে। সেদিন সকল খুনি ও লুটেরা হবে বড় অসহায়। আল্লাহর রাসূল সা.-এর ভাষায় এরা হবে হতদরিদ্র। কারণ এই ব্যাংক-ব্যালেন্স অর্থকড়ি কিছুই সঙ্গে নেয়া যাবে না। মজলুমের পাওনা পরিশোধ করতে হবে নেক আমল দিয়ে এবং নেক আমল শেষ হয়ে যাওয়ার পর মজলুমের গুনাহ জালেমের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে তাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। ইসলাম আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য এক পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা (নিশ্চয় আল্লাহর নিকট একমাত্র দীন হলো ইসলাম- আলে ইমরান : ১৯) এবং আল্লাহপাকের দাবি তাঁর বান্দারা জীবনের সকল ক্ষেত্রে পরিপূর্ণভাবে ইসলাম মেনে চলবে। তাঁর বাণী, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা পুরোপুরি ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না; নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন’। সূরা বাকারা : ২০৮। রাজনীতির অঙ্গনে যারা ধর্মনিরপেক্ষ তারা শয়তানের অনুসারী আর শয়তানের কাজই হলো দুনিয়ায় গুম-খুন ও ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করা। জীবনে পরিপূর্ণ ইসলাম না মানা প্রসঙ্গে আল্লাহপাক বলেছেন, ‘তোমরা কি দীনের কিছু অংশ মানবে এবং কিছু অংশ অমান্য করবে, তাহলে দুনিয়ার জীবনে রয়েছে জিল্লতি ও আখিরাতে রয়েছে ভয়াবহ আজাব’। সূরা বাকারা : ৮৫। আজকের বিশে^ মুসলমানদের এই জিল্লতির মূলে রয়েছে দীনকে পরিপূর্ণভাবে না মানা।
রাজনীতির অঙ্গনে ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ার ফল আমরা সবাই উপলব্ধি করি, কিন্তু রাজনীতি নিরপেক্ষ ধর্ম যে কত ভয়াবহ। আমরা তা বুঝে উঠতে পারি না। বরং আমাদের সমাজে একশ্রেণির মানুষ বড় ধার্মিক সাজে রাজনীতি না করার কথা বলে। অথচ মানুষ মাত্রই রাজনৈতিক জীব (এরিস্টটল)। আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সকল নবী-রাসূলের দাওয়াত ছিল আল্লাহ ছাড়া প্রভুত্বের দাবিদার সকলকে অস্বীকার করা এবং নবী-রাসূলগণ এভাবেই তাঁদের দাওয়াত পেশ করেছেন, তোমরা সবাই বলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, তাহলেই তোমরা সফলকাম হবে। আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। ভিন্নভাবে বলা যায়, ‘তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং তাগুতকে অস্বীকার করো’। সূরা নহল : ৩৬। তাগুতকে অস্বীকৃতিই হলো রাজনীতি এবং মুসলমান হওয়ার জন্য অপরিহার্য হলো তাগুতকে অস্বীকার করে কেবল আল্লাহকে ইলাহ হিসেবে মেনে নেয়া। রাজনীতি অর্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতা। সকল নবী-রাসূলের সাথে সমসাময়িক শাসকবর্গের বিরোধের মূল কারণ রাজনীতি অর্থাৎ শাসকবর্গ নবী-রাসূলদের নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতো এবং তারা চাইতো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ না বলে তাদের অধীন হয়ে থাকতে। লা ইলাহা ইল্লাহকে যদি বাংলা ভাষায় বলা যায়, তাহলে অর্থ দাঁড়ায় ‘আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু মানি না অর্থাৎ সার্বভৌমত্ব বা চরম ক্ষমতা আল্লাহর।’
আল্লাহপাক নবী-রাসূলদের পাঠিয়েছেন স্বৈরশাসকদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে। অর্থাৎ স্বৈরশাসকদের তৈরি নিয়মকানুনের মোকাবিলায় তাঁর প্রদত্ত দীন কায়েম করার দায়িত্ব দিয়েই তিনি নবী-রাসূলদের পাঠিয়েছেন। আল্লাহর ভাষায়, ‘তিনি তোমাদের জন্য দীনের সেসব নিয়মকানুন নির্ধারিত করেছেন যার নির্দেশ তিনি নূহকে দিয়েছিলেন এবং (হে মুহাম্মদ) যা এখন আমি তোমার কাছে ওহির মাধ্যমে পাঠিয়েছি। আর যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহিম, মূসা ও ঈসাকে। তার সাথে তাগিদ করেছিলাম এই বলে যে, দীন কায়েম করো এবং এ ব্যাপারে মতপার্থক্য সৃষ্টি করো না’। সূরা শূরা : ১৩। দীন কায়েমের প্রশ্নে কোনো মতপার্থক্য আল্লাহপাক মেনে নেবেন না। হ্যাঁ, প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি ভিন্ন হতে পারে। আর সর্বশেষ রাসূল মুহাম্মদ সা.-কেও একই দায়িত্ব অর্থাৎ দীনকে বিজয়ী করার লক্ষ্যেই পাঠানো হয়েছে এবং রাসূল সা.-এর সকল কর্ম-প্রচেষ্টা ছিল দীন কায়েমের লক্ষ্যে। আল্লাহপাক দ্ব্যর্থহীন ভাষায় কুরআন মজিদে তিন জায়গায় সূরা তাওবা (৩৩নং), সূরা ফাতাহ্ (২৮নং) ও সূরা সফে (৯নং) উল্লেখ করেছেন। আল্লাহর বাণী, ‘তিনি আপন রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য-সঠিক জীবনব্যবস্থা (দীনে হক) দিয়ে পাঠিয়েছেনÑ যাতে সকল জীবনব্যবস্থার ওপর একে বিজয়ী করে দিতে পারেন, মুশরিকদের কাছে তা যতই অসহনীয় হোক’। সূরা সফ : ৯।
রাসূলুল্লাহ সা. কর্তৃক দীনের দাওয়াতের সূচনালগ্ন থেকে কাফির-মুশরিকদের বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছেন। শুরুতে তিনি কোনো হালাল-হারামের কথা বলেননি বা সুদ, ঘুষ, পর্দাহীনতার বিরুদ্ধেও বলেননি আবার নামাজ-রোজা পালনের কথাও বলেননি। তিনি শুধু কালিমা তাইয়্যেবার কথা বলেছেন। আসলে এ কালিমার মধ্যেই আরবের কাফির-মুশরিকরা রাজনীতি খুঁজে পেয়েছে এবং মনে করেছে, একদিন এ নবী মুহাম্মদ সা. তাদের হাত থেকে কর্তৃত্ব ছিনিয়ে নেবেন। কাফির-মুশরিকরা যেমন মুহাম্মদ সা.-এর দাওয়াতের মর্ম বোঝার কারণে বিরোধিতা করেছে তেমনিভাবে মুহাম্মদ সা. ও তাঁর অনুসারী সবাই বুঝত এ দাওয়াত একদিন আরবের ওপর বিজয়ী হবে এবং অনেক ত্যাগ ও কুরবানির বিনিময়েই বিজয় সম্ভব। ফলে তারা বুঝেশুনেই অগ্রসর হয়েছেন। মুহাম্মদ সা. ও সাহাবীগণ তাঁদের জন্মভূমিতে টিকতে না পেরে প্রথমে আবিসিনিয়ায় এবং পরবর্তী সময়ে মদিনায় হিজরত করেন। সেসময়ে তিনি নিজেই তাঁর নবীকে দোয়া শিখিয়ে দিয়েছিলেন ‘তোমার পক্ষ থেকে একটি কর্তৃত্বশীল পরাক্রান্ত শক্তিকে আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও (সুলতানান নাসিরাহ)- সূরা বনি ইসরাইল : ৮০। সমাজে যত অন্যায়, জুলুম, নির্যাতন সবকিছুর মূলে রয়েছে অসৎ নেতৃত্ব এবং রাসূলের আগমন ছিল অসৎ নেতৃত্ব দূর করে সেখানে সৎ নেতৃত্ব কায়েম করা।
আল্লাহপাক এ পৃথিবীতে মুসলমানদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং তিনি চান বিশ^নেতৃত্ব তাঁর অনুগত বান্দাদের হাতে আসুক। তাঁর বাণী, ‘তোমরা সর্বোত্তম দল। তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে মানবজাতির কল্যাণ সাধনের জন্য। তোমরা ভালো কাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজে নিষেধ করবে’। সূরা আলে ইমরান ১১০। বিশে^র কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে যে জাতির উদ্ভব সেই জাতি কীভাবে রাজনীতি বিমুখ হতে পারে। রাজনৈতিক কর্তৃত্ব যাদের হাতে, তারাই তো শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। ভালো কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজে নিষেধ করার অধিকার তো তাদেরই হাতে, যাদের রয়েছে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব। আরবে আবু জেহেল-আবু লাহাবদের কর্তৃত্বের অধীনে রাসূলুল্লাহ সা. কিছু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের অনুমতি চাইলে তাঁকে এত জুলুম-নির্যাতন, দেশত্যাগ ও যুদ্ধ-বিগ্রহের মুখোমুখী হতে হতো না। আরবের কাফেররা এমন ভাগাভাগি করে নেয়ার প্রস্তাব তো দিয়েছিলই। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সা. তাদের সে প্রস্তাব আল্লাহপাকের নির্দেশক্রমে (সূরা কাফিরুন) প্রত্যাখ্যান করেন।
আমরা শেখ হাসিনার ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির কবলে দীর্ঘ ষোলোটা বছর সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন, গুম-খুনের শিকার হয়েছিলাম। এ জমিনে যারা আল্লাহর দীন কায়েম করতে চান তারা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে। ফাঁসি, গুম-খুন, আয়নাঘরের নির্যাতন সাথে সাথে সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে দেশটার অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে। এমতাবস্থায় ঈমানদার মাত্রই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। আপামর ছাত্রজনতার সাথে হাতে হাত মিলিয়ে দেশের আলেম সমাজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ছিল গৌরবোজ্জ্বল। জালেমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়ে তাদের অন্তরে ঈমানের উপস্থিতিই প্রমাণ করেছে। রাজনীতিবিমুখ অতি ধার্মিকদের স্বৈরাচারের অবসানে কোনো ভূমিকা নেই। কে ঈমানদার ও কে কাফির জিহাদের মধ্য দিয়ে আল্লাহপাক তা স্পষ্ট করেছেন। তাঁর বাণী, ‘যারা ঈমানের পথ অবলম্বন করেছে তারা লড়াই করে আল্লাহর পথে। আর যারা কুফরির পথ অবলম্বন করেছে তারা লড়াই করে তাগুতের পথে। কাজেই শয়তানের সঙ্গী-সাথীদের সাথে লড়াই করো আর বিশ^াস রেখো, শয়তানের ষড়যন্ত্র আসলেই দুর্বল’। সূরা নিসা : ৭৬। এখানে দুটি পক্ষ স্পষ্ট ঈমানদার ও কাফির এর মাঝে যারা নীরবতা অবলম্বন করে তাদের পরিচয় আল্লাহই ভালো জানেন।
রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টদের মর্যাদা প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘হাশরের ময়দানে যখন আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো আশ্রয় থাকবে না, সেই কঠিন মুহূর্তে আরশের ছায়ার নিচে আশ্রয়প্রাপ্তদের মধ্যে অন্যতম হবেন ন্যায়পরায়ণ শাসক ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী বিচারক।’ আবার তিনি হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছেন, ‘যে শাসক জালেম ও খেয়ানতকারী হিসেবে মৃত্যুবরণ করবে, আল্লাহ অবশ্যই তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।’ তিনি বলেন, ‘যে বিচারক সত্যকে জানতে পেরেও ফয়সালা করার ব্যাপারে অবিচার ও জুলুম করেছে, সে জাহান্নামে যাবে। আর যে অজ্ঞতা সত্ত্বেও জনগণের জন্য বিচার-ফয়সালা করেছে, সেও জাহান্নামি হবে।’ রাসূলুল্লাহ সা. প্রদত্ত এই হাদিসটি পুরোটাই রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট।
দেশে আগামীতে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। জনমতের ভিত্তিতে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় সরকার গঠিত হবে নির্বাচনের মাধ্যমে। এ নির্বাচনী জিহাদে ঈমানদারদের একটি সুযোগ আছে তাদের পছন্দের একটি সরকার গঠনের। রাসূলুল্লাহ সা.-এর সময়ে জামায়াত ছিল একটি এবং এর বাইরে মুসলমান থাকার কোনো সুযোগ ছিল না। রাসূলুল্লাহ সা.-এর অবর্তমানে দীন কায়েমের লক্ষ্যে একাধিক জামায়াত থাকতে পারে। দীন কায়েম যেহেতু ফরজ, সেহেতু কোনো একটি জামায়াতের সাথে যুক্ত থাকা ঈমানের জন্য নিরাপদ। নির্বাচনের মাঠে ধর্মনিরপেক্ষ দল ও ইসলামী দল পাশাপাশি থাকলে একজন মুমিন অবশ্যই ইসলামী দলের পক্ষে ভোট দেবেন। যদি ভোটদানকে রাজনীতি বিবেচনা করে রাজনীতি নিরপেক্ষ ব্যক্তিবর্গ ভোটদান থেকে বিরত থাকে, তাহলে সেটি হবে আত্মঘাতী অর্থাৎ তার সমর্থন যাবে বাতিলেরই (কুফর) পক্ষে। অবশ্য রাজনীতি বড় জটিল। সোজাসাপ্টা বলা মুশকিল। পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন। আল্লাহপাক ইসলামের পক্ষে ঈমানদার জনগোষ্ঠীকে অবস্থান গ্রহণের তাওফিক দান করুন। লেখক : উপাধ্যক্ষ (অব), কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ।