ক্লাসে পাঠদানের হালচাল
২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:১২
॥ মো. আতিকুর রহমান খান ॥
বর্তমানে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেসব শিক্ষক শ্রেণি কক্ষে পাঠদান করে থাকেন তাদের ৯০-৯৫ শতাংশ শিক্ষকই গাইড বই, নোট বই, মোবাইল ফোন দেখে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়িয়ে থাকেন। দায়সারা ক্লাস বাদ দিয়ে অবশ্যই বাধ্যতামূলক মেইন বই/বোর্ড বই বুঝিয়ে পড়াতে হবে। প্রাইভেট, পরীক্ষার প্রশ্ন, ক্লাসে পড়ানো সবই চলছে গাইড নোট-এর মাধ্যমে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে পড়ানোর শিক্ষক এখন নেই বললেই চলে। ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে ব্যবসা করছেন। আর প্রধান শিক্ষকরা কতিপয় অসাধু কোম্পানির সাথে চুক্তি করে বিনা পুঁজিতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে গাইডবই, নোটবই, গ্রামার বই, টেস্টপেপারস বিক্রি করে। ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকগণ এখানে অসহায়। অথচ অভিভাবক-গার্জিয়ানেরা চান তাদের বাচ্চাদের ক্লাসে বসেই ভালোভাবে পড়ানো হোক। তারা কোচিং বা প্রাইভেট কোনোটাই পছন্দ করেন না বা বাচ্চাদের প্রাইভেট ও কোচিং থেকে বিরত রাখতে চান। কিন্তু শিক্ষকরা কৌশলে ফেল করার ভয় দেখিয়ে ছাত্রদের প্রাইভেট ও কোচিং করতে বাধ্য করেন। তবে এ কাজটি তারা শুধু করতে পারেন ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৯ম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা পর্যন্ত। কারণ বোর্ডের পরীক্ষায় তাদের কোনো হাত নেই। আর তাই ছাত্র-ছাত্রী সৃজনশীল মেধা সৃষ্টি করতে পারে না। যা গোটা জাতির ধ্বংসের একটা বড় কারণ। বাচ্চারা তাদের সৃজনশীল প্রতিভা হারিয়ে ফেলছে। বিগত সরকারের আমলে ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যেসব এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি পরীক্ষাগুলো হয়েছে সেগুলো সবই ছিল সনদ দেওয়ার পাঁয়তারা। যেসব শিক্ষার্থী নিজেরা ইচ্ছা করে ভালোভাবে লেখাপড়া করেছে তারাই শুধু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে বড় বড় অফিসার হতে পেরেছে। বাকিরা কোথাও তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারছে না। ফলে বিভিন্ন জুতার দোকান, ওষুধের দোকানে চাকরি করছে। অনেকে আবার পান-সিগারেটের দোকান দিয়েছে। কেউবা চা বিক্রি করছে। ওই যে একবার পত্রিকায় লেখা ছাপা হয়েছিল এম.এ পাস চায়ের দোকান। এখন সব অভিভাবক, সচেতন ব্যক্তিবর্গ, স্কুল কমিটির লোকজনের একমাত্র দায়িত্ব হবে যাতে শিক্ষকরা মেইন বই বা বোর্ড বই দেখে শিক্ষার্থীদের পড়াতে বাধ্য হন। যাতে ছাত্র-ছাত্রীর সৃজনশীল প্রতিভা বৃদ্ধি পায়।
লেখক : সাবেক সহ.প্র.শি ও প্র.শি (ভারপ্রাপ্ত), উজান গোবীন্দী বিনাইরচর বিদ্যালয়, দুপ্তারা, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ।