সেবা প্রদানে বন্ধ হচ্ছে না ঘুষ দুর্নীতি অনিয়ম
২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:০৩
স্টাফ রিপোর্টার : সরকার পরিবর্তন হলেও সরকারি সেবাগ্রহণে বন্ধ হয়নি ঘুষ-দুর্নীতি। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর দফতরের বড় কর্তারা ঘুষ গ্রহণ বা দুর্নীতি করতে কিছুটা চিন্তাভাবনা করলেও ছোট কর্তারা নো-টেনশনে রয়েছে। সুযোগ পেলেই গ্রহণ করছে ঘুষ, আশ্রয় নিচ্ছে দুর্নীতিতে। এখনো অনেক দফতর এমন রয়েছে, যেখানে করনিক পর্যায় থেকেও ঘুষ নেওয়া হচ্ছে। ঘুষ না দিলে ফাইলের খোঁজ মিলছে না। আর ঘুষ দিলে সব কাজ হয় দ্রুতগতিতে।
গত ২২ এপ্রিল দুপুরে যখন এ প্রতিবেদন লেখা হচ্ছিল, ঠিক তখনই দেশের প্রথম সারির একটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইন ভার্সনে ‘নলছিটিতে সাব-রেজিস্ট্রারের ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগে দলিল লেখকদের কর্মবিরতি’ শিরোনামে সংবাদ ভাসছিল। ওই সংবাদের বিস্তারিত পড়তে গিয়ে জানা গেছে, নলছিটি উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার নাহিদ জাহান মুনার বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে টানা তৃতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছেন উপজেলার সকল দলিল লেখক। তাদের অভিযোগ, সাব-রেজিস্ট্রার মুনা যোগদানের পর থেকেই দলিল লেখকদের কাছ থেকে শ্রেণিভেদে অতিরিক্ত কমিশনের টাকা আদায় করে আসছেন। এমনকি প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাগজপত্র চেয়ে দলিল সম্পাদনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন তিনি। দলিল লেখকরা আরও দাবি করেন, নিয়ম অনুযায়ী সপ্তাহে পাঁচ দিন অফিস করার কথা থাকলেও সাব-রেজিস্ট্রার মুনা সপ্তাহে মাত্র দুই দিন উপস্থিত থাকেন এবং তাও আবার দুপুরে এসে বিকেলে অফিস থেকে চলে যান। গত ২০ এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালীন এ কর্মবিরতি শুরু হয়।
শরীয়তপুর জেলা আদালতে কর্মচারীদের ঘুষ ও ফি নির্ধারণ নিয়ে চলছে বিতর্ক ও উত্তেজনা। এমন প্রেক্ষাপটে দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে অভিযোগ বাক্স স্থাপন করার আদেশ দিয়েছেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। আদালতের বিভিন্ন শাখায় ঘুষ নেওয়া ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সম্প্রতি এমন সিদ্ধান্ত আসে। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এজলাসের সামনে এ অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি মোবাইল ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইমেইলে অভিযোগ জানানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। সম্প্রতি শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির এক সভায় আদালতের পেশকার, পিয়ন ও কোর্ট পুলিশের জন্য ঘুষের নির্ধারিত হার ঠিক করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। পরে আদালত ঘুষ ও দুর্নীতি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
বগুড়ার শেরপুর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মোক্কাস আলীর বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ ও তদন্তে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন এক নারী। অভিযোগকারী মোছা. রুবি আক্তার ঊর্মী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের দড়িমুকুন্দ গ্রামের বাসিন্দা। অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন শেরপুর ইউএনও মো. আশিক খান। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি কয়েকজন ব্যক্তি রুবি আক্তারের বোন মোছা. ঊর্মীলা খাতুনের জমি জবরদখল করে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এ ঘটনায় ৬ ফেব্রুয়ারি শেরপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন ঊর্মীলা। সেটি তদন্তের দায়িত্ব পান থানার এএসআই মোক্কাস আলী। তদন্ত করতে গিয়ে তিনি অভিযোগকারীর পরিবারের কাছ থেকে দুই দফায় মোট ২ হাজার টাকা নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপর ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে হোয়াটসঅ্যাপে রুবি আক্তারকে ফোন দেন মোক্কাস আলী। অসাবধানতাবশত তিনি ফোন কেটে না দিয়ে রাখেন, যার ফলে রুবি অপর প্রান্তে বিবাদীদের সঙ্গে তাঁর কথোপকথন শুনতে পান। ওই কথোপকথনে এএসআই মোক্কাস আলী বিবাদীদের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন এবং তাঁদের পক্ষাবলম্বন করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে পুলিশ বিভাগে।
নীতিমালা ভঙ্গ করে ডিলারদের হয়রানি, সার বিতরণে ঘুষসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) দিনাজপুর অঞ্চলের যুগ্ম পরিচালক (সার) শওকত আলীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, সার উত্তোলনের সময় স্বাক্ষরের নামে ডিলারদের বিভিন্নভাবে হয়রানি, দুর্বল শ্রেণির ডিলারদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে উৎকোচ আদায়, প্রতিবার সার উত্তোলনের সময় প্রকারভেদে প্রতি সারের বস্তায় ৬০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি টাকা আদায়, সার গুদামের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে অনিয়ম করে যাচ্ছেন শওকত আলী। জানা গেছে, প্রতি বস্তায় ৫০ টাকা করে উৎকোচ আদায় করা হয় বরাদ্দকৃত সারের বস্তা থেকে প্রায় ২ কোটি টাকার মতো অতিরিক্ত টাকা আদায় হবে। বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে শওকত আলী এ ধরনের বেপরোয়া কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ ডিলারদের।
ঘুষ দাবি বা গ্রহণ, দুর্নীতি, অনিয়ম কিংবা সেবাগ্রহীতাকে হয়রানির অভিযোগ থাকলে তা ই-মেইল করে জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। গত ১৯ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে এমন আহ্বান জানান তিনি। পোস্টে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ যেকোনো দপ্তর, সংস্থা বা পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঘুষ দাবি বা গ্রহণ, দুর্নীতি, অনিয়ম কিংবা সেবাগ্রহীতাকে হয়রানির অভিযোগ থাকলে তা ই-মেইল করে জানানোর জন্য আহ্বান জানানো যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, অভিযোগে যথাযথ তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণ সংযুক্ত থাকলে তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া যেকোনো অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেওয়া হবে। অভিযোগকারীর পরিচয় ও তথ্য গোপন রাখা হবে।