সম্পাদকীয়

সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন ঐক্য


২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:২৬

আবার ধীরে ধীরে সক্রিয় হয়ে উঠছে বাজার সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজ, দখলবাজ ও দুর্নীতিবাজরা। তারা নতুন করে সাহস দেখাতে শুরু করেছে। ফ্যাসিস্ট নাগিনীর বিষাক্ত শ^াস দেশের বাতাসে ছাড়ার সাথে সাথে সক্রিয় হয়ে উঠছে তার দোসররা। ৩৬ জুলাই বিপ্লবের চেতনা ভুলে দেশের প্রথম সারির কয়েকটি রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কিছু ব্যক্তি নিজের ক্ষমতার ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে। অনেকে বিস্মৃত হচ্ছেন যে, বিপ্লবের শহীদের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি, আহতরা এখনো হাসপাতাল নয়তো নিজের ঘরের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন। স্বজনহারা মানুষ খুনি, ফ্যাসিস্ট ও তার দোসরদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখার প্রত্যাশা করছেন। বিপ্লবীরা আন্দোলনে অংশ নিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনতে শত্রুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে খালি হাতে যুদ্ধ করেছেন। নিজের জীবন বাঁচানোর মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে হত্যা মামলার আসামি হয়েছেন। তাদেরও আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। অথচ জাতীয় এ বীরদের মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে আইন আর সংবিধানের পাতা খুলে সরকারে ঘাপটি মেরে থাকা একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী বিপ্লবকে শুধু অপমানই নয়, হত্যা করছে। এ সুযোগই নিচ্ছে ফ্যাসিস্টদের দোসর বাজার সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজ, দখলবাজ ও দুর্নীতিবাজরা। তাদের লক্ষ্য দেশকে অস্থিতিশীল করে ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের পথ সুগম করা। ইতোমধ্যে দেশের রাজনীতিতে এমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ফ্যাসিস্টদের বিচার ও রাষ্ট্র সংস্কারের চেয়ে তাই তো তাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যেনতেন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়া এবং তারপর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি।
আমরা জানি, অতীতে যারা আওয়ামী বাকশালীদের স্বৈরশাসনের কবল থেকে দেশ ও জনগণকে মুক্তি দিয়েছেন, সেই বিপ্লবীদের কীভাবে বিপ্লবের পর ক্ষমতা দখলকারী রাজনৈতিক দলগুলো অপমানিত করেছে, তা এ জাতি ভুলে যায়নি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণদেরও তা অজানা নয়। তাই তারা সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে জীবনপণ শপথ দিয়েছেন, যেকোনো মূল্যে ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন ঠেকাবে। অবশ্য ষড়যন্ত্রকারীরাও বসে নেই। তারাও একের পর এক নতুন নতুন নীলনকশা আঁকছে। তাদের প্রভু চাণক্যবাদী ভারত তো তাদের সাথে আছেই। আরো আছে এদেশে মুখোশের আড়ালে মুখ ঢাকা তস্কররা। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে মেতে উঠছে পুরনো খেলায়।
আমরা বিগত মাহে রমজানে বাজারদর নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগের আগে তথ্যানুসন্ধানে দেখেছি, দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ার কারণ বাজার সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও দুর্নীতি। এরা সবাই একে অপরের পৃষ্ঠপোষক। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনের সময় পথে পথে চাঁদাবজি, পণ্য খালাসের পর দখলবাজি। উল্লেখিত অপকর্মকারীরা তাদের অপরাধ আড়াল করতে ঘুষ-দুর্নীতির আশ্রয় নেয়, ব্যবহার করে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের ব্যানার। এরা সবাই মিলে একটি সিন্ডিকেট। দেশ ও জনগণের স্বার্থবিরোধী এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা পতিত ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচাদের বার বার ক্ষমতায় চায়। কারণ এতে তাদের সিন্ডিকেট আরো শক্তিশালী হয়। রাষ্ট্র ও সরকার পরিণত হয় সিন্ডিকেটের শক্তিশালী সদস্য ও পৃষ্ঠপোষক। দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় চোরতন্ত্র। এ চোরতন্ত্র ঠেকাতে অন্তর্বর্তী সরকার, ফ্যাসিস্টবিরোধী রাজনৈতিক দল ও ছাত্র-জনতার ঐক্য যেকোনো মূল্যে অটুট রাখতেই হবে।