আলোকে তিমিরে

তারপরও কি সেক্যুলারিজম বজায় থাকবে?


১৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:৩৫

॥ মাহবুবুল হক ॥
২৪-এর জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর সংস্কারের কথা উঠেছে। সেই প্রেক্ষাপটে সরকার ৬টি কমিশন গঠন করেছে। সময়মতো সংস্কার কমিশনগুলো রিপোর্ট পেশ করেছে। সেসব রিপোর্ট নাগরিকদের কাছে পৌঁছে গেছে এবং বেশ দ্রুততার সাথে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও হাজির হয়ে যাচ্ছে। অধ্যয়ন বা পড়ালেখায় আমরা পিছিয়ে পড়ে থাকা জাতি হলেও এবার কমিশনের রিপোর্টগুলো পাঠ করার বিষয়ে তরুণদের উৎসাহ-উদ্দীপনাও পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে তরুণরা সেসব সংগ্রহ করছে। এসব বিষয়ে দেশের কিছু কিছু অঞ্চলে সভা, সেমিনার ও গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সরকারের এ বিষয়ে খুব বেশি অবহেলা রয়েছে বলে মনে হয় না।
কিন্তু এ পটভূমিতে একটি বিষয় আমাদের খুব ভালো করে চিন্তাভাবনা করা উচিত। কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়াই বা প্রচ্ছন্ন লক্ষ্য সামনে রেখে আমরা হাইওয়েতে বিভিন্ন যানবাহনে উঠে পড়েছি। হাইওয়েতে পৌঁছার আগে আমরা কত ধরনের কত রাস্তা ধরে সে জায়গায় পৌঁছেছি, তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা দেখছি গাড়ি সামনের দিকে চলছে। এই সামনে মানে পূর্বে না পশ্চিমে, উত্তরে না দক্ষিণে, তা-ও আমাদের কাছে সুস্পষ্ট নয়। সব বড় রাস্তাই তো টু-ওয়ে ট্রাফিক। কখনো কখনো বিভিন্ন কারণে গাড়িকে ইউটার্ন করতে হয়। তবে এ কথা ঠিক যে, আমাদের বসবাস পূর্বদিকে। আমরা রওনা দিয়েছি পশ্চিম দিকে। মাঝে আমরা নানা কারণে উত্তরেও যেতে পারি আবার দক্ষিণেও যেতে পারি। আবার ঘুরেফিরে পশ্চিমে না পৌঁছে ভ্রমবশত যেখান থেকে আমরা রওনা দিয়েছি, কালক্ষেপণ করে সেখানেও আমরা আবার ফিরে আসতে পারি। এ ধরনের একটা অগোছালো ও অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে আমরা পড়ে আছি।
গত ৫৩ বছর ধরে বাংলাদেশকে আমরা একটা সেক্যুলার ও তথাকথিত গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত করার জন্য অহর্নিশ কাজ করছি এবং সত্য কথা হলো- আমাদের জাতিসত্তা, আত্মপরিচয়, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, মনন ও যাপিত জীবন সম্পর্কে মৌলিক কোনো অবকাঠামো এখনো আমাদের তৈরি হয়নি। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া আমরা শুধু দৌড়াচ্ছি। দৌড়ের প্রতিযোগিতা করছি। আমাদের পাশাপাশি কিছু মানুষ অবাক বিস্ময়ে আমাদের দিকে তাকাচ্ছে। আমাদের কথা ভাবছে। আমাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখে কিছুটা হতভম্ব হচ্ছে আবার কিছুটা ভাবনা-চিন্তার মধ্যেও হাবুডুবু খাচ্ছে। তারা ভাবছে, এরা এত দৌড়াদৌড়ি করছে কেন? এত উদ্দামতার সাথে ছুটছে কেন? এই ছোটার মধ্যে কোনো শৃঙ্খলা নেই, কোনো ঐক্য নেই, কোনো ঈমান-আমানও দেখা যায় না। ছুটতে গিয়ে এই যে হরদম অ্যাক্সিডেন্ট হচ্ছে, দিন দিন হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে, জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে, পরিবারের পর পরিবার, সংসারের পর সংসার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এই যে দাসগিরি করার জন্য কোটি কোটি লোক উ™£ান্ত হয়ে নানাদিকে ছুটছে। এই ছোটার পরিক্রমা জুয়ার গুটির মতো জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে, পরিবার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে, দেশ ও জাতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে, কে তার হিসাব রাখে! শুধু কি ব্রেইন ড্রেন হচ্ছে না! জাতীয় শক্তি ধ্বংস হচ্ছে। যে স্বপ্নের ক্যানভাস তৈরি করা হয়েছিল, তা তো আর খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। এসবের অনেক রকম জবাব পেলাম আমরা। গত পাঁচ দশক ধরে। হাজারো জবাবের মধ্যে মাত্র কয়েকটি জবাবের বিষয় আজ আমরা এখানে সামান্য আলোচনা করার চেষ্টা করব।
প্রধান একটি জবাব হলো আমরা ছুটছি বলে, কাজ করছি বলে, দুর্নীতি করেছি বলে, লুটপাট করেছি বলে, হত্যা, গুম, খুন করেছি বলে এবং নির্বিচারে প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধগুলো ভেঙেছি বলে। আল্লাহ, রাসূল, আখিরাত, কুরআন, হাদিস, শিক্ষা-দীক্ষা, প্রতিষ্ঠিত জীবনব্যবস্থা। বাউন্ডারির বাইরে ফেলে দিতে পেরেছি বলে আজ আমরা দারিদ্র্য দূর করতে পেরেছি। সাধারণ মানুষের গায়ে টুপি-পাঞ্জাবি-পায়জামা-সেন্ডেল-জামা-জুতা, জিন্সের প্যান্ট-টি-শার্ট-সালোয়ার-কামিজ-রঙিন বোরকা-শতরকমের হিজাব আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি। দেখে দেখে সুখ পাচ্ছি। দেশের স্কুল-কলেজ-এতিমখানা-মাদরাসা-মসজিদ একদিন যেখানে বাঁশ আর টিন দিয়ে ঘেরা থাকতো, সেখানে প্রায় সবই আজ দৈর্ঘ্য-প্রস্থে বিশাল আকার ইমারতে পরিণত হয়েছে। একসময় শত শত ছাত্র ছিল। কিন্তু স্কুলের ঘর বা ইমারত ছিল না। এখন অনেকখানে তেমন কোনো ছাত্র নেই, পড়ালেখা নেই, আছে শিক্ষক, আছে ইমারত, আছে লজিস্টিক সাপোর্ট। মহানগর, নগর ও শহর, বন্দর, উপজেলায় হাজার হাজার উঁচু উঁচু ইমারতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। দেশের উর্বর মাটি, ইটের রূপ ধারণ করে আকাশচুম্বী হচ্ছে, মানুষজন কবুতরের খোপে আবদ্ধ হয়ে তৃপ্তির ঢেউ তুলছে। মহানগরের হতদরিদ্র কর্মজীবী মানুষও ফ্ল্যাটে বসবাস করার সৌভাগ্য অর্জন করছে। নৌকার পরিবর্তে হাইওয়ে সড়কপথ ও রাস্তা দিয়ে আমরা উদ্দাম বেগে ছুটছি। দেশের সাগর-নদী-খাল-বিল-দীঘি-পুকুর সব আবর্জনা দিয়ে ভর্তি করে কলকারখানা, বাড়িঘর গড়ে তুলছি। বিষাক্ত ওষুধ ব্যবহার করে ফল-ফসলের, মাছ-গোশতের উৎপাদন বৃদ্ধি করেছি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাট-বাজারও এখন ফল-ফসল-খাদ্য-শস্যে ঝলমল করছে। সবকিছু উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতার কোনো অভাব নেই। সারা বিশ্বে যতরকম খাদ্য উৎপাদিত হচ্ছে, সব আমরা দেশের মানুষের মুখে তুলে দিয়েছি। আমাদের ছেলেমেয়েরা এখন সারা বিশ্বে সব শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে পড়াশোনা করছে, চাকরি-বাকরি করছে, দেশে এসে চাকরি-বাকরি চাচ্ছে না। কারো দ্বারস্থ হচ্ছে না, কারো কৃপা, দয়া গ্রহণ করতে হচ্ছে না। বরং গত ৫৩ বছরে বাপ-দাদার গড়ে তোলা স্থায়ী-অস্থায়ী সম্পদ বিক্রি করে বিদেশকে সাজিয়ে তুলছি। আবার অন্যদিকে দেশকে আমরা সাজাইনি বললে ভুল হবে। উপজেলার পাশে যেসব গ্রাম আছে, সেসব গ্রাম তো এখন গ্রাম নেই। বাঁশ টিনের বাড়ি নেই। মাটির বাড়ি নেই, চুন-সুরকির বাড়ি নেই। সবই ইমারতে পরিণত হয়েছে। উপযুক্ত কথাবার্তা এবং সাধারণ বিশ্লেষণ থেকে আমরা কী পেলাম? আমরা যা পেলাম, তা এক দুর্ভাগ্যজনক ফিরিস্তি। টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত আমাদের প্রয়োজন ছিল, এটা আমরা অস্বীকার করতে পারি না। ’৪৭-এর আগে আমাদের গায়ে জামা ছিল না, পায়ে জুতা ছিল না, আমাদের খাট-পালং ছিল না, মাটির ডেকচি-হাঁড়ি, থালা-বাসন ছাড়া তৈজসপত্র ছিল না। মসজিদ-মাদরাসা ও ঘরবাড়ি কাঁচা ঘরের ছিল, পাকা ঘরের ছিল না। গরু-মহিষ, ঘোড়ার গাড়ি ছিল, মোটরগাড়ি ছিল না। ছোট-বড় নানা নৌকা ছিল, স্পিডবোট-লঞ্চ-ইস্টিমার ছিল না। কাঁচা রাস্তা ছিল, পাকা রাস্তা ছিল না। প্রতিবেশী জাতিদের গড়া যৎসামান্য স্কুল-কলেজ ছিল, যেখানে মুসলিমদের সহজ প্রবেশাধিকার ছিল না। ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল অন্যদের হাতে, কৃষ্টি-সংস্কৃতি-বিনোদন-খেলাধুলা সবই ছিল সনাতন প্রতিবেশীদের হাতে। আমরা ছিলাম খেতমজুর, বর্গাচাষি, ঋণ গ্রহণকারী। আমরা কখনো ঋণদাতা ছিলাম না। সেই অবস্থা থেকে দুই যুগে বাঙালি, বাংলাদেশি বা পূর্ব বাংলার মানুষ ১৯৭০-এ এসে যে জায়গায় পৌঁছেছিল, গত ৪ যুগেরও অধিককাল সময়ে তুলনামূলকভাবে পারিপার্শ্বিক সবকিছু বিবেচনা করে আমরা হয়তো ভাবছি অনেক বিষয়ে উন্নতি করেছি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের রেট অব ডেভেলপমেন্ট হয়তো সমান সমান, কিন্তু মূল্যবোধের দিক থেকে যেখানে আমাদের উন্নতি হওয়ার কথা, সেখানে আমাদের অবনতি হয়েছে অন্তত ৮০%। হিসাবটা সহজ, পূর্বে মূল্যবোধ থেকে সমাজে বিচ্যুতি ছিল ১০%। এখন সাধারণ বিবেচনায় মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুতির পরিমাণ বা অংশ হলো ৯০%। অর্থাৎ গত ৫৩ বছরে ৮০% মানুষ ধীরে ধীরে সুনীতি থেকে দূরে সরে পড়েছে এবং দুর্নীতিকে আশ্রয় করেছে। সমাজে সাধারণভাবে একটা চিন্তা বা ধারণা বদ্ধমূল হয়ে আছে যে, সুনীতির মধ্যে অনড় থাকলেও বেঁচে থাকা যাবে না, প্রজন্মকে মানুষ করা যাবে না, বড় হওয়া যাবে না, গাড়ি-বাড়ি করা যাবে না অর্থাৎ প্রতিষ্ঠিত হওয়া যাবে না। সে কারণে কুড়ি বছরের তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে নবতিপর বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পর্যন্ত সবাই এখন টাকার পেছনে ছুটছে। টাকাই এখন জীবন ও জগতের সবকিছু। এমনকি পরকালের মুক্তির জন্যও কিছু মানুষের ধারণা হলো, যাই করি না কেন, মাজারে, খানকায়, মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানায় টাকা-পয়সা দিলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
গত ৫৩ বছরে এদেশে যত সরকার এসেছে-গেছে খুব সোজাসাপ্টা সরলভাবে বলতে গেলে, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সব সরকারের সুনীতিবিরোধী অবস্থানের কারণে আমাদের দেশের জনগণ দুর্নীতিপরায়ণ হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো সরকারই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। অবস্থাদৃষ্টে সবসময় মনে হয়েছে, সরকারি দলের লোকেরা তাদের পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজন টাকাওয়ালা হোক, সম্পদের মালিক হোক, তাদের গাড়ি-বাড়ি হোক, তাদের ছেলেমেয়েরা বিদেশে লেখাপড়া করুক, বিপদ-আপদ থেকে বেঁচে থাকার জন্য তাদের ব্যাংক-ব্যালান্স হোক, তারা বিদেশে টাকা পাচার করুক- এটা যেন সরকার ও সরকারি দলের রাজনীতিবিদগণ তাদের স্বার্থে এ ধরনের একটা প্যাকেজ চিন্তাভাবনা ও জ্ঞান-গবেষণার মধ্যেই অবস্থান দেখেছে। সরকারি সম্পদ দলীয় লোকদের হাতে তুলে দেয়ার বিষয়টি এই পুরো অর্ধশতাব্দী ধরে জনগণ চাক্ষুস করেছে। ক্রমাগতভাবে ভোট পাওয়ার আশায় ঋণ করে করে সরকারি আমলা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও পদমর্যাদা বাড়ানো হয়েছে। প্রয়োজন নেই, এমন হাজার হাজার প্রজেক্ট আবিষ্কার করে দলীয় আমলা, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও কর্মীদের নেতা বানিয়েছে। পকেট অর্গানাইজেশনের নামে ছাত্র-যুবক-শিশু-মহিলা, কৃষক-শ্রমিক থেকে শুরু করে শত শত প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়ে এমন এক দুর্নীতিপরায়ণ সমাজ তৈরি করা হয়েছে, যাদের দাপটে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন অচল অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে। যে দেশের ছাত্ররা অর্ধেক ভাড়ায় চলাচলের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে না, সে দেশের ছাত্রনেতা ও এর পরের ধাপের কর্মীগণকে মানুষ কোটি কোটি টাকার গাড়িতে চলাচল করতে দেখেছে। নির্দিষ্ট আয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। যারা বেকার জীবনযাপন করতো, টিউশনি করে বা ‘অডজব’ করে ছাত্রজীবন অতিবাহিত করার চেষ্টা করতো, তাদের বাবা-মা যখন মাসে লাখ লাখ টাকা হাতে পেয়েছে, তখন তারা খুশি না হয়ে পারেনি। হাজার হাজার ছাত্রনেতার অভিভাবকরা উপজেলা বা জেলা শহরে শত শত অট্টালিকা তৈরি করেছে। এই ছিল এক দুর্নীতিজাত মহাবিপ্লব, যা মধ্যযুগে ইউরোপের শিল্প বিপ্লবকেও হার মানিয়েছে। চাকরি নেই, বাকরি নেই, ব্যবসা নেই, বাণিজ্য নেই, শিল্প নেই, কারখানা নেই। আছে শুধু লাখ লাখ ডলার ও কোটি কোটি টাকা। এ যেন এক ‘আলাউদ্দিনের চেরাগ বিপ্লব।’
এই যে তথাকথিত উন্নতি ও সমৃদ্ধি- এটা সম্ভব হয়েছে একমাত্র সেক্যুলার আদর্শের জন্য। এই আদর্শের প্রধান বিষয় হলো ‘ইট ড্রিংক এন্ড বি মেরি’। ক্যাসিনোয় ভরে গিয়েছিল সারা দেশ। ভারত, থাইল্যান্ড, দুবাই, ইউরোপ, আমেরিকায় আনন্দের জন্য, ভোগের জন্য, বিলাসিতার জন্য এবং নষ্ট জীবনযাপনের জন্য যাওয়ার প্রয়োজন ছিল না, তবুও হাজার হাজার নষ্ট মানুষ বিদেশে পাড়ি জমাতো। যাদের মধ্যে অনেকেই এখন বিদেশে বসবাস করছে। এসবই সেক্যুলারিজমের অবদান, যা শুধু ইহকালীন জীবনকে সাজাতে চায়। অর্থাৎ পরিণামে নষ্ট করতে চায়। ধ্বংস করতে চায়। প্রমাণ লুট করা টাকা-পয়সা বা ডলার থাকলেও বাবাহীন, চাচাহীন, মামাহীন, বড় ভাইহীন, ফ্যামিলি, স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা কী নিদারুণ যন্ত্রণায় যে ছটফট করছে, তাদের হিসাব কে রাখে!
দেশবাসী তাদের কথা ভাবে না। ভাবলেও ঘৃণার সাথে ভাবে। প্রতিনিয়ত তাদের আজাব ও গজব দেয়া চোরেরাও চোরদের, ডাকাতরাও ডাকাতদের, লুটপাটকারীরাও লুটপাটকারীদের যখনই সুযোগ পায়, তখনই চিহ্নিত করে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে শাস্তি গ্রহণের দিকে ঠেলে দেয়। ভালো হোক, মন্দ হোক, এই দুরাচারী পরিবারের দিকে শুধু তাকায় একেবারে নিকটাত্মীয়-স্বজনরা। সাধারণ মানুষ এদের পক্ষে নেই। এদের কল্যাণ ও মঙ্গল কেউ চায় না। এদেরও দুঃখ আছে, শোক আছে, বেদনা আছে, কিন্তু এরা কেউ সহানুভূতির জায়গায় নেই। এসবই মুদ্রার এক পিঠ। এদের মজলুম বলে কেউ শনাক্ত করবে না। মুদ্রার অপর পিঠে আছে, যাদের নিয়ে দেশবাসী এখন ভাবছে। সেই ভাবনা আনন্দের ভাবনা, গৌরবের ভাবনা, যারা এতকাল বঞ্চিত হয়েছে, লাঞ্ছিত হয়েছে, অত্যাচারিত হয়েছে, নিষ্পেষিত হয়েছে, খুন, গুম, আয়নাঘরসহ হত্যার সম্মুখীন হয়েছে। চাকরি-বাকরি পায়নি, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারেনি। যাদের বাড়িঘর লুটপাট করা হয়েছে, যারা পালিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছে। যাদের কোনো মান-সম্মান, ইজ্জতেরও নিশানা ছিল না। থানা যাদের মামলা দূরের কথা, জিডি পর্যন্ত গ্রহণ করতো না। উপরন্তু মিথ্যা মামলায় বছরের পর বছর যারা হয়রানির সম্মুখীন হতো সমাজ, সরকার ও রাষ্ট্র থেকে, যারা ন্যায্য হিস্যাটা পর্যন্ত পায়নি। এককথায় যাদের মানবাধিকার বলে কিছু ছিল না। যারা সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব জীবনযাপন করছে এবং সর্বশেষ ২৪-এর জুলাই-আগস্টে নবতর জাগরণে যারা জীবন দিয়েছে, ক্যারিয়ার নষ্ট করেছে, হাত-পা খুইয়ে প্রতিবন্ধীর মতো জীবনযাপন করছে, সেই অমিত সাহসী ছাত্র-জনতার জন্য দেশবাসী তাদের কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করছে। তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে এবং আশা করছে, নিশ্চয়ই সরকার এদের স্বপ্ন পূরণের জন্য কিছু একটা করবে।
তবে মোদ্দাকথা হলো, এত ধ্বংসের পরও কি দেশের মূলনীতি বা আদর্শ হিসেবে সেক্যুলারিজম বজায় থাকবে?