সম্পাদকীয়

ফিলিস্তিন মুক্ত কর, বর্বর ইসরাইল ধ্বংস হোক


১৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:৩১

বিশ্ব মোড়লদের কুটিল ষড়যন্ত্র আর জায়নবাদী ইহুদিদের বর্বরতায় পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিন আজ বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর সকল মানববাদী মানুষের কান্না ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ জনপদ গাজার নিপীড়িত মজলুমের আর্তনাদের সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী একটাই আওয়াজÑ ‘ফিলিস্তিন স্বাধীন করতে হবে’, ‘ফিলিস্তিন মুক্ত কর’, ‘বর্বর ইসরাইল ধ্বংস হোক’। ১৯৪৮ সালের ১৫ মে অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইউরোপ ও আমেরিকার জায়নবাদ তোষণকারী শাসকগোষ্ঠী ফিলিস্তিনের আরবদের বসতবাড়ি, জমি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জবরদখল শুরু করে। তাদের নীলনকশা মিশরের নীলনদ থেকে শুরু করে ইরাকের ফোরাত নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ইসরাইল প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত তারা জবরদখল বন্ধ করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। ফিলিস্তিনের গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে নতুন করে নির্বিচার ও নৃশংস হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। এতে এ পর্যন্ত প্রায় ৫১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগ শিশু ও নারী। আমরা ফিলিস্তিনে বর্বরতার শিকার হয়ে নিহতদের শাহাদাতের মর্যাদা কামনা করছি।
১৯৪৮ সালে যেভাবে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, এবারো ঠিক সেভাবে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু তারপরও আরব লীগ, ওআইসি (অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন) এবং মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদশালী দেশগুলো নীরব। আমরা মনে করি, তাদের নীরবতা ভেঙে জাগার বিকল্প নেই। অথচ মসনদ হারানোর ভয়ে তারা ধরি মাছ না ছুঁই পানি ভূমিকা পালন করছে। গাজা শাসন করছে একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার। ছোট এ জনপদের বিরুদ্ধে জায়নবাদী ইহুদি ইসরাইল ও আমেরিকার মতো বড় শক্তির আগ্রাসন নগ্ন দম্ভেরই বহিঃপ্রকাশ। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এমন দম্ভের পরিণতি শুভ হয় না। ইতিহাসের পাতায় পাতায় তার প্রমাণ বিদ্যমান। নিপীড়িত মানবতার বিজয় একদিন আসবেই। গাজা উপত্যকায় নির্মম হত্যা ও রক্তপাত বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরিভাবে পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হলে দায় তাদের বহন করতে হবে, ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না। ইসরাইল শুধু আগ্রাসী আর বর্বরই নয়, মিথ্যুক, প্রতারক ও চুক্তি ভঙ্গকারী। তারা বার বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে। আন্তর্জাতিক আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত একজন মানবতাবিরোধী অপরাধীকে বিশ্ব মোড়লরা সেল্টার দিয়ে জাতিসংঘকে নাট্যশালায় পরিণত করেছে। মিত্রদের পাঠানো মিসাইল, রকেট আর বিমান থেকে বোমা ফেলে প্রতিদিন ইসরাইল গাজার শত শত নারী-পুরুষ ও নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করছে। অথচ জাতিসংঘ পরাশক্তিগুলোর দাপটে অসহায় হয়ে দিন দিন কার্যকারিতা হারাচ্ছে, তা এক অশুভ অশনিসংকেত।
আমরা মনে করি, আন্তর্জাতিক রীতিনীতি উপেক্ষা করে নির্বিচারে হামলায় নারী ও কোলের শিশুসহ ৫১ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনিকে নির্মমভাবে হত্যা এখনই বন্ধ করা ছাড়া জাতিসংঘের প্রতি বিশ্ববাসীর আস্থা ফেরানোর আর কোনো পথ নেই। এ অবস্থা চলমান থাকলে পৃথিবী হয়তো প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো আরেকটি ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। সভ্যতার এ চরম উৎকর্ষতার যুগে সেই যুদ্ধ এতটাই ভয়াবহ হতে পারে বলে সমরবিদরা আশঙ্কা করছেন যে, পৃথিবী নামের গ্রহটিই ধ্বংস হয়ে যাবে। সমরবিদদের এ আশঙ্কার বাস্তবায়ন আমাদের কারো কাম্য নয়। তাই আসুন, বর্বরতার বিরুদ্ধে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হই। বর্বর আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে সিসাঢালা প্রাচীরের মতো প্রতিরোধ গড়ে তুলি। নিপীড়িত মানবতার মুক্তির লড়াইয়ে সবাই শামিল হই।