এবার বাংলা বর্ষবরণ ছিল ব্যতিক্রমী
১৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:১৮
গত ১৪ এপ্রিল সকালে চারুকলা অনুষদের সামনের সড়ক থেকে জনমানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। এবারের পহেলা বৈশাখের এ বর্ণিল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ছিল ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’
স্টাফ রিপোর্টার : অন্যান্য বছরের চেয়ে এবারের বাংলা নববর্ষবরণ ছিল অনেকটাই ব্যতিক্রম। যেখানে ফ্যাসিবাদীরা ছাড়া আর সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা আর উৎসবের মধ্য দিয়ে সারা দেশে উদযাপিত হয়ে গেল বাংলা নতুন বছর ১৪৩২-এর বরণ। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের মানুষ সর্বজনীন এ উৎসবে অংশ নিয়ে বর্ষবরণের আনন্দে মেতে ওঠেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, ইসলামী সংস্কৃতির ছোঁয়া লেগেছে এবারের বর্ষবরণে। ছিল ছায়ানটের বিশাল মঞ্চে একক ও সমবেত কণ্ঠে পরিবেশনা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর এবার নতুন পরিবেশে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হয়েছে। ফলে এবারের উৎসবের আয়োজনে কিছুটা ব্যতিক্রমও ছিল। ঢাকায় রমনার বটমূল থেকে চারুকলা-শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয় বৈশাখের অনুষ্ঠান। সংবাদপত্রগুলোয় পহেলা বৈশাখের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেছে।
বাঙালির প্রাণের উৎসব ছড়িয়েছে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত। উৎসবের রঙে নিজেদের রাঙিয়েছেন অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষও। শোভাযাত্রা, লোকজ সংস্কৃতি, নাচ-গান-আবৃত্তি সবই ছিল এসব আয়োজনে। দেশের নানা স্থানে বসে বৈশাখের ঐতিহ্যবাহী মেলা। কোথাও কোথাও কয়েকদিন পর্যন্ত চলবে এসব মেলা। শহরের ছোট-বড় অনেক আবাসিক ভবনের বাসিন্দারা নিজেদের মতো করে আয়োজন করেন নানা অনুষ্ঠান। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত এসব উৎসবে মানুষের পদচারণা ছিল।
প্রতিবারের মতো এবারও রাজধানীর বর্ষবরণের অন্যতম বর্ণাঢ্য আয়োজন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শোভাযাত্রা। তবে এবার ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র বদলে পূর্বের নাম ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে অনুষ্ঠিত হয় এ শোভাযাত্রা। হাজারো মানুষ অংশ নেন ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’য়। পহেলা বৈশাখের এ বর্ণিল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ছিলÑ ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’।
শোভাযাত্রায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি যুক্ত হন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের অংশগ্রহণ ছিল। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ফিলিস্তিনে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানও ছিল শোভাযাত্রায়। শোভাযাত্রার অন্যতম আকর্ষণ ছিল ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’। এছাড়া ছিল বিভিন্ন মোটিফ। শোভাযাত্রায় প্রতীকীভাবে বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়।
এবারের বর্ষবরণের সবচেয়ে আকর্ষণীয় আয়োজন ছিল ড্রোন শো। সংসদ ভবন এলাকায় আড়াই হাজারের বেশি ড্রোনের এ শোতে ফুটিয়ে তোলা হয় দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ২৪-এর বীর যোদ্ধাদের স্মৃতি। দেখানো হয় শহীদ আবু সাঈদ, মুগ্ধ; এমনকি ভাইরাল সেই রিকশা চালককেও। দেশের ইতিহাসে প্রথম এ ড্রোন শোর প্রশংসা ছিল সবার মুখে।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘসময়ে কোণঠাসা ছিল ইসলামী সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। পহেলা বৈশাখের মতো সর্বজনীন আয়োজনেও অংশ নিতে পারেনি তারা। তবে এবারের পহেলা বৈশাখে তাদের ব্যতিক্রমী অংশগ্রহণ দেখা গেছে। বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ বরণ করে নিতে ‘জাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ রাজধানী ঢাকায় ‘বাঙলা নবযাত্রা ১৪৩২’ নামে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করে। ১৪ এপ্রিল সকালে মুক্তাঙ্গন থেকে এ শোভাযাত্রা বের হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কবি মুহিব খান। উপস্থিত ছিলেন দেশের শতাধিক জনপ্রিয় শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ এবং বরেণ্য আলেম চিন্তাবিদ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীগণ। আয়োজকরা জানিয়েছেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘসময় ইসলামী সংগঠনগুলো তাদের সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামগুলো ঠিকমতো আয়োজন করতে পারেনি। এবার ফ্যাসিবাদমুক্ত স্বাধীন পরিবেশে স্বাভাবিকভাবে বাংলা নববর্ষ পালন করলেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার আয়োজনে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’য় অংশ নিয়ে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী বলেছেন, এবারের নববর্ষের শোভাযাত্রা রাজনৈতিক নয়। এবার শুধু ফ্যাসিস্টের মুখাবয়ব ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ ফ্যাসিস্ট কোনো রাজনীতির অংশ নয়। ফ্যাসিস্ট সবচেয়ে বড় অশুভ শক্তি।