মাহে রমজানে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে
১৩ মার্চ ২০২৫ ১৬:২০
সংযমের মাধ্যমে আত্মা ও দেহের পরিশুদ্ধির মাস মাহে রমজান। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য বিশেষ উপহার হিজরি ক্যালেন্ডারের এ নবম মাস। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম বা রোজা পালনের পর শাওয়ালের নতুন চাঁদ উদিত হয় খুশির বার্তা নিয়ে। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে মাহে রমজানের প্রথম সপ্তাহ থেকেই চলে ঈদের আয়োজন। এ আয়োজন বর্ণিল করতে মুসলিম দুনিয়ার বিপণিবিতানগুলো সাজে নানা সাজে। নতুন পোশাক, গৃহসজ্জার সামগ্রী এবং মজার মজার খাবার রান্নার উপকরণের দোকানগুলোয় পসরা সাজিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা। পরিশুদ্ধ আত্মার সফল মানুষ চেষ্টা করেন আনন্দ আয়োজনে সবাইকে শামিল করতে। তারা দরিদ্র আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও সাধারণ মানুষের মাঝে ঈদের দিনের আগে ইসলামের বিধানমতো যাকাত, ফিতরা বিতরণ করেন। সৎ ও ধর্মপ্রাণ ব্যবসায়ীরা চেষ্টা করেন সুলভমূল্যে ক্রেতাদের হাতে ভালোমানের পণ্য তুলে দিতে। কিন্তু সমাজের ডেভিল বা শয়তানরা ব্যস্ত হয় অবৈধভাবে নিজেদের পকেট ভারী করতে। ভদ্রবেশী শয়তানরা পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়, নিম্নমানের পণ্য বাজারজাত করে ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা করে। অন্যদিকে চিহ্নিত শয়তান সমাজের অপরাধী চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারীদের তৎপরতাও বেড়ে যায়। বিশেষ করে বিভিন্ন বিপণিবিতান, রাস্তাঘাট; এমনকি বাড়িঘর, বাস, ট্রেন, লঞ্চেও হানা দেয় এ দুর্বৃত্তরা।
২০২৪-এর ৩৬ জুলাই বিপ্লবকে ব্যর্থ করতে পতিত আওয়ামী লীগের দোসররা বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে দেশ অস্থিতিশীল করতে। পত্রপত্রিকার খবরে প্রকাশ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে ডাকাত ভাড়া করে পতিত আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করছে। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস একাধিকবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে উল্লেখ করেছেন, পতিত স্বৈরাচার দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করছে। আমাদের এখন ততটাই সতর্ক থাকতে হবে, যেমনটা আমরা যুদ্ধের মতো পরিস্থিতিতে ছিলাম।
সম্প্রতি ঢাকা মহানগরী পুলিশের পক্ষ থেকেও সাংবাদিকদের জানানো হয়েছে, ‘রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ঢাকা মহানগরীর মার্কেট ও শপিংমলগুলো অনেক রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। এসব স্থানে জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অক্সিলিয়ারি পুলিশ ফোর্স নিয়োগ দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তাদের পুলিশের মতো গ্রেফতারি ক্ষমতা দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, আবাসিক এলাকা, বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমলে নিয়োজিত বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মীরা অক্সিলিয়ারি পুলিশ ফোর্স হিসেবে কাজ করবেন। তাদের গ্রেফতারের ক্ষমতাও থাকবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন আইন অনুযায়ী তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার বলেন, সন্ধ্যা হলে ঢাকাবাসী মুসল্লিরা মসজিদে যান। দেড় থেকে দুই ঘণ্টা তারাবির নামাজের সময় যায়। ওই সময় ঢাকা শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে জনশূন্যতা তৈরি হয়। বিশেষ করে পুরুষ মানুষ তারাবির নামাজে থাকেন। এ সময় আপনাদের বাড়ির ফ্ল্যাট ও দোকান সযত্নে রেখে আসতে হবে। নিরাপত্তা খেয়াল করবেন। ১৫ রমজান থেকে ঢাকাবাসীর অনেকেই ঈদ উপলক্ষে গ্রামে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে যাবেন। তখন আপনার বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিজ দায়িত্বে নিশ্চিত করবেন। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি।’ আমরা মনে করি, পুলিশের এ উদ্যোগের উদ্দেশ্য মহৎ। কিন্তু এক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন- যেন কোনো দুর্বৃত্ত অক্সিলিয়ারি পুলিশ ফোর্সে যোগ দিয়ে কিংবা এর নাম করে কোনো নিরীহ মানুষকে হয়রানি করতে না পারে। কারণ আমরা প্রায়ই পত্রিকায় ভুয়া পুলিশ; এমনকি সেনাবাহিনীর সদস্য পরিচয়ে প্রতারকদের ধরা পড়ার খবর দেখি। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং জনগণকে বিষয়টি সচেতনতার সাথে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, ২০২৪-এর ৩৬ জুলাই বিপ্লবের চেতনা ধারণ করে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো অপশক্তিই আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সফল হবো, ইনশাআল্লাহ।
আমাদের প্রার্থনা, পবিত্র মাহে রমজান এবং ঈদ হোক জাতীয় ঐক্য সংহতির বন্ধন দৃঢ় করার আনন্দময় অনুষঙ্গ।