পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনতে আইন হচ্ছে


১৩ মার্চ ২০২৫ ১৬:০৪

স্টাফ রিপোর্টার : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গত সাড়ে ১৫ বছরে যে টাকা পাচার হয়েছে, তা ফিরিয়ে আনার জন্য বিশেষ একটি আইন করতে যাচ্ছে সরকার। অধ্যাদেশ আকারে খুব শিগগির এ আইনটি হবে। গত ১০ মার্চ সোমবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
দেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে অন্তর্বর্তী সরকার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছিল। সেই বিষয়টি উল্লেখ করে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সেই কমিটির তথ্য বলছে ২০০৯ থেকে গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনার শাসনামলে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়। এর মধ্যে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার হয় ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে। এ টাকা উদ্ধারের জন্য প্রথম থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রয়াস ছিল। প্রধান উপদেষ্টা প্রথম থেকেই বলে আসছেন এটি তাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের একটি। কারণ এটি বাংলাদেশের মানুষের টাকা।
প্রেস সচিব বলেন, এ টাকা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১১ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এ টাস্কফোর্সের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এ টাস্কফোর্স এবং অন্যান্য সংস্থা-প্রতিষ্ঠান পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার বিষয়ে কে কী করছে, অগ্রগতি কতটুকু, তা নিয়ে ১০ মার্চ সোমবার এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এ বৈঠকে নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস সচিব বলেন, প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠকে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে প্রথম সিদ্ধান্ত হলো পাচার হওয়া এ টাকা কীভাবে ফেরত আনা যায়, সে বিষয়ে একটি বিশেষ আইন খুব শিগগির করা হবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে এ আইনটি দেখা যাবে। এ টাকা ফেরত আনার কাজটি কীভাবে ত্বরান্বিত করা যায়, সেটির জন্য আইন লাগবে। যারা এ টাকা ফেরত আনতে সাহায্য করছে, সেটি তাদেরও একটি চাহিদা।
পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার বিষয়ে অনেকগুলো আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার ও টাস্কফোর্স কথা বলছে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতেও এ আইনটি সহায়তা করবে। ২০০টি আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে এখনো নির্বাচিত হয়নি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম আছে, এমন ৩০টির মতো আইনি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হবে।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, শেখ হাসিনা, তার পরিবার ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ১২৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এসব হিসাবে মোট টাকা রয়েছে ৬৩৫ কোটি ১৪ লাখ। রাজউকের ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা মূল্যের ৬০ কাঠার প্লট পাওয়া গেছে। ৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা দামের ১০ শতাংশ জমিসহ ৮টি ফ্ল্যাট পাওয়া গেছে। শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মোট ছয়টি মামলা হয়েছে। ছয়টি মামলার তদন্ত শেষে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। শেখ হাসিনার পরিবারের সাত সদস্যকে আন্তর্জাতিক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
৫৯৪ শতাংশের বেশি সম্পত্তি জব্দের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে অবরুদ্ধ করা হয়েছে ৩৯টি ব্যাংক হিসাব, যাতে টাকা আছে ৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এছাড়া ১০২ কোটি ৮৫ লাখ টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) ২২৮টি, যুক্তরাষ্ট্রে ৭টি এবং যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি সম্পত্তি জব্দ করার জন্য বলেছে সরকার।
প্রেস সচিব বলেন, টাকা পাচারের বিস্তারিত তথ্য এখনো জানা যায়নি। বৈঠকে এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান জানিয়েছেন, একটি ঘটনায় দেখা গেছে, এক ব্যক্তি তার সন্তানের টিউশন ফি (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার খরচ) পাঠিয়েছেন ৪০০ কোটি টাকার ওপরে। এটি এক সেমিস্টারে নিয়েছে। তবে এই কাজ কে করেছেন, তা বলেননি প্রেস সচিব।
পাচার হওয়া টাকা উদ্ধার সময়সাপেক্ষ উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা আশা করছি, এ বছর নাগাদ কয়েক বিলিয়ন ডলার উদ্ধার করতে পারব, যদি সেই অনুযায়ী অগ্রগতি করতে পারি। প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে একটি দিন যেন নষ্ট করা না হয়।’
নতুন আইনে কী কী থাকবে, তা বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, চলতি বছরের মধ্যে কয়েকশ কোটি টাকা ফেরত আনা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়।