বিশ্বের জনপ্রিয় কিছু ইফতার
৬ মার্চ ২০২৫ ১৩:০৮
রমজান মাসে ইফতারের সময় বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবার খাওয়ার প্রচলন আছে। বাংলাদেশে সাধারণত খেজুর দিয়ে রোজা ভাঙা হয়। এরপর আসে ছোলা, আলুর চপ, বেগুনি ও মুড়িমাখা। আমাদের ইফতার আয়োজনে লেবুর শরবত ও বিভিন্ন ফলের শরবতও অন্যতম উপাদান। তবে পৃথিবীর অন্য মুসলিম দেশে ইফতারে কী খাওয়া হয়? বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্যবাহী ইফতারি সম্পর্কে জেনে নিই।
খেজুর
বিশ্বজুড়েই ইফতারে সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার খেজুর। একদিকে মুসলমানদের জন্য কুরআনে উল্লিখিত পবিত্র ফল; অন্যদিকে সারা দিনের রোজার শেষে পুষ্টিগুণে ভরপুর খেজুর শরীরকেও দেয় জরুরি শক্তি।
ফলের সালাদ ও জুস
সারা দিনের ক্লান্তির শেষে রোজা ভাঙতে অনেকেই পছন্দ করেন ফলের জুস। এটি দেহ ও মনকে দেয় প্রশান্তি; পাশাপাশি শরীরে জোগায় প্রয়োজনীয় শক্তি। পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই ইফতার আয়োজনে ফল ও ফলের জুস স্থান পায়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় ডুমুর, কিউয়ির মতো ফলগুলো বেশি জনপ্রিয় হলেও উপমহাদেশে স্থানীয় ঋতুভিত্তিক ফলগুলোর জুসও কিন্তু যথেষ্ট পুষ্টিকর।
জিলাপি
বিশ্বজুড়ে তো বটেই, তবে ভারতীয় উপমহাদেশে ইফতারে জিলাপির মতো জনপ্রিয় খাবার কমই আছে। নানা ঢঙে, নানা ধরনে, নানা উপকরণ দিয়ে ভিন্নতা আনার মাধ্যমে এক জিলাপির মধ্যেই আছে অনেক প্রকার, অনেক রকম স্বাদ। চিকন জিলাপি কি ঘন চিনির শিরার ডুবানো ভারী জিলাপি, ইফতার টেবিলে জিলাপি ছাড়া অন্তত বাঙালির তো চলেই না। ঢাকার রাস্তার মতো দিল্লির রাস্তায়ও দেখা মেলে জিলাপির দোকান। তাই ইফতারের মধ্যে জিলাপি এখন উপমহাদেশের বাইরেও পেয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা।
কুনাফা ও বাসবৌসা
মধ্যপ্রাচ্যে খুবই জনপ্রিয় এ মিষ্টি খাবারটি তৈরি হয় সেমাই ও ঘন দুধ বা মালাই সহযোগে। দেখতে অনেকটা কেকের মতো এ খাবার বিশ্বজুড়েই বেশ সমাদৃত। রমজানে মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশেই এ খাবারের ব্যাপক প্রচলন দেখা যায়। একইভাবে বাসবৌসাও একটি ডেজার্ট, যা মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক হলেও পুরো পৃথিবীতে জনপ্রিয়। সুজি ও ঘন দুধের স্বাদের এ খাবারও ভীষণ জনপ্রিয়।
আঙুর পাতায় মোড়ানো ভাত
মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় এ খাবারকে একেক দেশে একেক নামে ডাকা হলেও তৈরির প্রণালি মূলত একই। আঙুর পাতায় মসলা ও টমেটো পেঁয়াজ দিয়ে ভাজা ভাত মুড়িয়ে তৈরি করা হয় এ খাবার। ইরাক ও তুরস্কে দোলমা নামে পরিচিত হলেও সিরিয়ায় এ খাবারের নাম ইয়াবরা। প্রায় পুরো মধ্যপ্রাচ্যেই এ পুষ্টিকর খাবার ইফতারের জন্য খুব জনপ্রিয়।
শাকশুকা
এ খাবার আফ্রিকা বিশেষত উত্তর আফ্রিকার দিকে বেশি জনপ্রিয় হলেও বর্তমানে সারা পৃথিবীতেই পেয়েছে ব্যাপক খ্যাতি। ডিম, সবজি ও কিমার মতো পুষ্টিকর খাবারের সমন্বয়ে তৈরি হওয়ায় এটি ইফতারের পুষ্টিমান নিশ্চিত করতে পারে সহজেই। এর সঙ্গে পাউরুটি বা আরব স্টাইলের রুটি হলে এ খাবার একাই একশ। বর্তমানে তাই আফ্রিকার সীমা পেরিয়ে সারা বিশ্বেই এ খাবারের ব্যাপক জনপ্রিয়তা।
কোলাক
ইন্দোনেশিয়ার এ ডেজার্ট আইটেম দেখতে যেমন খুবই সুন্দর, তেমনি খেতেও দারুণ। ঠাণ্ডা ও মিষ্টতায় ভরপুর এ খাবার তাই রমজানে হয়ে ওঠে ব্যাপক জনপ্রিয়। নারিকেল দুধের সঙ্গে পাম সুগার আর এর সঙ্গে কলা, কমলা ও অন্যান্য মৌসুমি ফলের সহযোগে তৈরি এ খাবার এখন তাই ভোজন রসিকদের খুবই প্রিয়।
কাতায়েফ
মিশরে ইফতারে কাতায়েফ নামের এ বিশেষ মিষ্টান্ন থাকবেই। মিষ্টিপ্রেমীদের মন জয় করে নেওয়ার মতো একটা খাবারই বটে। দেখতে অনেকটা প্যানকেকের মতো, তবে বিশেষ মিশ্রণ দিয়ে তৈরি। এর মধ্যে পুর হিসেবে মিষ্টি চিজ বা বাদাম ভরে ভাজা হয়, যতক্ষণ না সোনালি ও মচমচে হয়ে ওঠে। এরপর এর ওপর সিরা ও চিনি ছড়িয়ে পরিবেশন করা হয়। কাতায়েফের বিশেষত্ব হলো এর অনন্য টেক্সচার। মচমচে ও নরমও। কাতায়েফ হয় দুই ধরনের ভাজা কাতায়েফ, বাইরে মচমচে ও ভেতরে নরম। বেক করা কাতায়েফ, যা কেকের মতো ও স্পঞ্জি। কাতায়েফের উৎপত্তি মিশরে হলেও বর্তমানে এটি মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে জনপ্রিয় এক খাবার।
দোলমা
তুর্কি শব্দ ‘দোলমা’ অর্থ ‘স্টাফড’ বা ‘ভরা’। অটোমান সাম্রাজ্য থেকে উদ্ভূত এ খাবার মূলত আঙুরের পাতা, বেল মরিচ বা ক্যাপসিকামের মতো সবজির ভেতরে চাল, মসলা ও কিমা করা মাংস ভরে তৈরি করা হয়। দোলমা সাধারণত ঠান্ডা অবস্থায় অ্যাপেটাইজার হিসেবেই সমাদৃত। আবার দইয়ের সঙ্গে প্রধান খাবার হিসেবেও খাওয়া হয়। এর হালকা ও সতেজ স্বাদ ইফতারে নিয়ে আসে প্রশান্তি। তাই রমজান মাসে এটি তুরস্কের অন্যতম জনপ্রিয় খাবার।
হারিরা
মরক্কোর ঐতিহ্যবাহী ইফতারি হারিরা। এটা মূলত এক ধরনের সুস্বাদু স্যুপ। সাধারণত খেজুর ও মিষ্টি পেস্ট্রির সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। একে বাংলাদেশের হালিমের সঙ্গে তুলনা করা চলে। হারিরা তৈরি হয় মসুর ডাল, ছোলা, টমেটো, পেঁয়াজ, আদা, হলুদ, দারুচিনি ও বিভিন্ন সুগন্ধি মসলা দিয়ে। ধীরে ধীরে রান্নার কারণে এটি ঘন ও সুস্বাদু হয়। শেষে ময়দা ও ডিমের কুসুম দিয়ে করা হয় আরও ঘন। দীর্ঘসময় রোজা রাখার পর এ স্যুপ শরীরে শক্তি জোগায়, স্বস্তি দেয়।
মি গ্লোসর
ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভার বিখ্যাত খাবার মি গ্লোসর, যা ইফতারেও বেশ জনপ্রিয়। এটি মূলত এক ধরনের নুডলস। ‘মি গ্লোসর’ শব্দের অর্থ ‘স্লাইড’ বা ‘পিছলে পড়া’। মসৃণ ও নরম টেক্সচারের কারণে এমন নামকরণ। এ বিশেষ নুডলস তৈরি হয় কাসাভা ময়দা ও হলুদ দিয়ে। স্বাদ ও রঙে গমের নুডলসের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
হালিম
পাকিস্তানে ইফতারে জনপ্রিয় পদ হালিম। এর রেসিপি আমাদের আলাদা কিছু নয়Ñ মসুর ডাল, গম ও মাংসই (গরু, খাসি বা মুরগি) মূল উপকরণ। স্বাদ বাড়াতে দারুচিনি, এলাচি, লবঙ্গসহ বিভিন্ন সুগন্ধি মসলা দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধীরে ধীরে রান্না করা হয়। পরিবেশন করা হয় মূলত নান বা রুটি দিয়ে। পরিবেশনের সময় ওপরে ছড়িয়ে দেওয়া হয় বেরেস্তা, লেবু ও ধনেপাতা। এসব উপকরণ অবশ্য খাবারটাকে আরও সুস্বাদু করে তোলে। সূত্র: ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে।