আলোকে তিমিরে

সরকার এখন সচল, সজীব ও সতর্ক অবস্থানে


৬ মার্চ ২০২৫ ১২:১৮

॥ মাহবুবুল হক ॥
জুলাই-আগস্টের পর আমাদের চিন্তা-চেতনায় সনাতনী ভাবটা অনেক জায়গায় নড়বড়ে অবস্থান সৃষ্টি করলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্ট্যাটিক রয়ে গিয়েছিল। যেমন অনেক সমালোচনার পরও অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে খুব সামান্যই রদবদল হয়। সেই প্রেক্ষাপটে ধরে নেয়া হয়েছিল, এ সরকার যতদিন আছে, ততদিন ভেতর কাঠামোয় তেমন কোনো পরিবর্তন করবে না। এদিক থেকে তারা বিগত সরকারের অনুশীলন করছে বলে কিছু মৃদু সমালোচনাও বিরাজ করছিল। দুনিয়ার সকল স্বৈরাচারী ব্যক্তি ও দল, ব্যক্তি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অস্থিরতার নিদর্শন রাখে না। তাদের বিশ্বাস জনগণের কাছে অস্থিরতা ও পেরেশানি বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো অবস্থার সৃষ্টি করে থাকে। এক্ষেত্রে তাদের একটা স্থায়ী সিদ্ধান্ত আছে, তা হলো ‘স্লো এন্ড স্টেডি উইনস দা রেইস’। কচ্ছপের কাহিনী এক্ষেত্রে এক বিশাল নমুনা বা দৃষ্টান্ত। লোক পরিবর্তন না করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দ্বারাই ধীরে ধীরে প্রয়োজনীয় রীতিনীতি পরিবর্তন করাই বহু ক্ষেত্রে শ্রেয় বলে বিবেচিত হয়েছে।
যার তুমুল সমালোচনা করা হয়, তাকে যদি সাথে সাথে অব্যাহতি দেয়া হয়, তাহলে দৃশ্য এবং অদৃশ্য অনেক ভুল-ত্রুটি ধরা পড়ে যায়। যাকে অব্যাহতি দেয়া হয়, সাধারণত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং তার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, অনুরক্ত-ভক্ত, শিষ্য এবং অনুগামীদের সহানুভূতি সেই গোষ্ঠী বা দল হারাতে বসার আশঙ্কা থাকে। সবাই ধৈর্যশীল হয় না। আমাদের দেশে প্রতিক্রিয়াশীল মানুষই বেশি। কারণ আমরা ধীরে ধীরে ছোট থেকে বড় হই না। কোনো না কোনো অবস্থা ও ব্যবস্থার কারণে বা কারো না কারো প্রশ্রয়ে হঠাৎ বড় হয়ে যাই। সে কারণে বাইরের ঝড় বা বাতাস আমাদের তীব্রভাবে স্পর্শ করে বা আঘাত হানে। তাদের স্পষ্ট ধারণা হয়, হঠাৎ করে যা পাওয়া গেছে, তা যদি কোনো কারণে হারিয়ে যায়, তাহলে পুনরায় তা অর্জন করা কঠিন হয়ে যাবে। সময় সবসময় বহতা নদীর মতো প্রবহমান থাকে না। এছাড়া অন্যান্য আরও অনেক জাগতিক প্রসঙ্গ আছে। নিজের বয়স, সহায়-সম্পত্তি, ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা, বিয়ে শাদী, নিজেদের অসুখ-বিসুখ (নিত্যতার বিষয়) ইত্যাদি। এসব প্রক্রিয়ায় বহুদিনের একটা সম্পর্ক শিথিল হয়ে যায়। বরং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে যদি পরিস্থিতির বাধ্যবাধকতায় এই বলে রেখে দেয়া যায়, জনগণের একটি অংশ আপনাকে চাচ্ছে না। আপনার বিদায় চাচ্ছে। এ অবস্থায় আপনাকে বিদায় দিলে আমাদের জনপ্রিয়তা কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এর বিকল্প হিসেবে আপনাকে যদি আমরা স্ব-স্থানে রেখে দিয়ে বিরোধীদের পরামর্শ বা কাম্য অনুযায়ী রেজাল্ট অরিয়েন্টেড কাজ বাড়াতে পারি এবং আপনি যদি প্রতিবাদীদের মানসিকতা ও পরিবর্তনকে মেনে নিয়ে সংশোধনের পথে দ্রুত বেগে এগিয়ে যেতে পারেন, তাহলে আমাদের কিছুটা ক্ষতি হলেও খুব বেশি অসুবিধা হবে বলে মনে হয় না। পরিবর্তনের মধ্যে স্থায়ী সাফল্য থাকে না। স্থায়ী সাফল্য আসে আপন আপন চিন্তার বলিষ্ঠ প্রণোদনায়। সম্ভবত বর্তমান সরকার এ পলিসি ধারণ করে আছেন। কিন্তু এর ফলে এক এক করে উপদেষ্টা পরিষদের বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধেই অযোগ্যতার প্রসঙ্গ উঠেছে। গড়ে যেসব অভিযোগ উঠছে, তা হলো কাজের গতি মন্থর।
বয়স্ক উপদেষ্টাদের মধ্যে বিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থানে তেজদীপ্ততা ইতোমধ্যেই অনেকটা স্তিমিত বা ম্লান হয়ে গেছে। নবীনরা ভুল করবে, ভুল করে করেই তারা শিখবে। দেখা যাচ্ছে, বিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থানের চেতনা তাদের মধ্যে এখনো সমুজ্জ্বল রয়েছে। উদ্দীপ্ত অবস্থায় বিরাজমান রয়েছে। সচেতন নাগরিকদের পরামর্শ হলো জুলাই-আগস্টে যারা প্রকৃত ‘স্টেকহোল্ডার’, তাদেরকে সরকারি কাজে আত্মনিয়োগ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে।
অনেক পরামর্শ, দাবি-দাওয়া, প্রতিবাদ ও সমালোচনা সত্ত্বেও নতুন সরকারে তেমন কোনো রদবদল হয়নি। আমরা ধরে নিচ্ছি, সরকারের কার্যকরী ক্ষমতাটা প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কাছে। (মূল ক্ষমতা তো আল্লাহর কাছে)। যদিও সরকারের কোনো কোনো বিভাগের কর্মকর্তাদের কথাবার্তা ও আচরণে অন্যবিধ ইঙ্গিত পাওয়া যায়। সেই ইঙ্গিতটা পুরোটাই দেশের নয়। সেসবও বেশ চিন্তার বিষয়। আল্লাহ ভরসা, মহান আল্লাহ সবসময় মজলুম জাতির সাথে অবস্থান করেন। এছাড়া এটাও পরীক্ষিত যে, দেশের জনগণ অন্য কারো আধিপত্য কখনো পুরোপুরিভাবে মেনে নেয়নি। হয়তো কখনো কখনো সাময়িকভাবে বিভ্রান্ত হয়েছে। কিন্তু যখনই উপলব্ধির সীমানায় প্রকৃত সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে, তখনই জীবনের সকল শক্তি দিয়ে সেই আধিপত্যকে প্রতিরোধ করেছে। নিকট অতীতেও তো তারই প্রমাণ আমরা জ¦লন্তভাবে পেয়েছি। ইনশাআল্লাহ ওদিকে ভয় নেই।
তবে অন্যদিকে আমাদের কিছু সংকীর্ণতা আছে। যেমন বাণিজ্য উপদেষ্টার বিষয়ে যথেষ্ট সমালোচনা উঠে এসেছিল। তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা সবাই মিলে মনোযোগ দিলে ইনশাআল্লাহ রমাদানের আগে খাদ্যদ্রব্যসহ জিনিসপত্রের দাম কমে যাবে।’ আলহামদুলিল্লাহ, কিছুটা তো কমেছে। গত ৫৩ বছরে এ ধরনের কোনো পরিবর্তন আমরা প্রত্যক্ষ করিনি। এখন এ মুহূর্তে আমাদের কী করা উচিত ছিল? উচিত ছিল মহান আল্লাহর কাছে শোকর গুজার করা এবং সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টার প্রতি ধন্যবাদ প্রেরণ করা। কিন্তু তা আমরা করিনি। বরং আমাদের বৈঠকী আলাপ-আলোচনায় আমরা উচ্চারণ করেছি, ‘আরে ভাই সব তো ভেলকিবাজি।’ সামনে আগাও না। দেখো না আসলে কী হতে যাচ্ছে। ধন্যবাদ জানানোর সময় এখনো আসেনি। রমাদানটা ভালোই ভালোই পার হোক, তারপর দেখা যাবে। এই হলো বাঙালি মুসলমানের মানসিক অবস্থা। ভুল কথা, খারাপ কথা, নেগেটিভ কথা আমরা তাৎক্ষণিক উচ্চারণ করি, কিন্তু সত্য কথা, ভালো কথা ও পজিটিভ কথা উচ্চারণ করতে আমাদের অনেক অনেক দেরি হয়। এ বিষয়ে আমাদের অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকে। ভালো সংবাদ শুনে আমরা সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বাস করি না বা উচ্ছ্বসিত হই না, কিন্তু খারাপ সংবাদ শুনলেই আমরা সাথে সাথে বিশ্বাস করি এবং সংবাদটি ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করি।
আমরা যতটুকু জানি, প্রধান উপদেষ্টা তার সরকারে যাদের সম্পৃক্ত করেছেন, তাদের সবাইকে তিনি একা একা মনোনীত করেননি। করতে পারেননি। কারণ, বিপ্লবের সঙ্গে মূল ও শাখা-প্রশাখায় অনেক ‘স্টেকহোল্ডার’ ছিল, তাদের অনুরোধ তাকে গিলতে হয়েছে। কিন্তু সরকার গঠনের পর ভালোমন্দ সব কথা তার প্রতি ছোড়া হয়েছে। আল্লাহর রহমতে তার হজমশক্তি ভালো। তিনি এ বিষয়ে কোনো রি-অ্যাক্ট করেননি। তিনি জ্ঞানী, প্রজ্ঞাবান ও সহনশীল মানুষ। ধরেই নিয়েছেন, তাকে একটু কাউন্সেলিং করতে হবে। কিছু বুঝ-সুজ দিতে হবে। চট করে কাউকেই বাদ দেয়া যাবে না। এর মধ্যে উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন এমন কিছু ধ্রুপদি কথা আওড়ালেন, যা অন্য সময় বললে জ্ঞানী-গুণী মানুষ হয়তো এপ্রিসিয়েট করতো। স্থান-কাল-পাত্র বলে কথা। হয়ে গেল ডিপ্রেসিয়েটেড। প্রাজ্ঞ-বিজ্ঞজনসহ দেশবাসী ভিন্ন কিছু ভেবে বসলো। তাকে সন্দেহ করে নানা কথা ছড়িয়ে দিল। বিসমিল্লাহ করতেই গলদ হয়ে গেল। তাৎক্ষণিক তাকে অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলি করতে হলো। সাখাওয়াত সাহেব বিচক্ষণ মানুষ। তিনি ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে বিষয়টি মেনে নিলেন। কিন্তু এখানেই বিষয়টি সাঙ্গ হলো না। তাকে আবার আরেক মন্ত্রণালয়ের ডিপোট করতে হলো। সরকারের ভেতর এসব নেগেটিভ বিষয় নয়। পজিটিভ বিষয়। এ থেকে আন্দজ ও অনুমান করা যায় যে, সরকারের গাড়ি চলছে। হয়তো ডিজিটাল গাড়ির মতো নয়।
মাঝে উপদেষ্টাদের কেউ কেউ হাত ও গলা লম্বা করলেন। দেশে সাথে সাথে ঝড় উঠল ঘূর্ণিঝড়ের মতো। আল্লাহর রহমতে সে ঝড়ও থেমে গেল। জ্ঞান-গরিমা ও অভিজ্ঞতা থাকলেই সব পারঙ্গমতা অর্জন করা যায় না। নিজেদের দুর্বলতা ও কমতি সবাই সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারে না। এতে বড় কোনো অসুবিধা নেই। ভুল বা ত্রুটি অনুধাবন করতে পারলেই হলো। বিনয় এক্ষেত্রে সাগরসম কাজ করে। অহঙ্কার, রীয়া বা ইগো এসব ক্ষেত্রে খুব বেশি কাজ করে না। ভুল স্বীকার করে অনুতপ্ত হয়ে পরিস্থিতির উন্নতি সাধনে মনোযোগী হলেই মানুষ ভুলে যায়। আর মহান আল্লাহ তো তাঁর ভাষায় বিভিন্নভাবে বলেছেন, তিনি তাওবাকারীকে পছন্দ করেন। তিনি নিজেই বলেছেন, মানুষকে তিনি দুর্বলভাবে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং মানুষের কাজ হলো ‘অহম’ ছেড়ে দিয়ে বার বার সৃষ্টিকর্তার দিকে ফিরে আসা। ক্ষমা চাওয়া। মানুষের কাছেও ক্ষমা চাওয়া যায়, ক্ষমা চাইতে হয়। ক্ষমা একটা বড় গুণ। যিনি ক্ষমা করেন, তিনি তো নিশ্চয়ই বড়। কিন্তু যিনি ক্ষমা চাইতে পারেন, তিনিও কম বড় নন।
উপদেষ্টাদের মধ্যে যারা উচ্চবাচ্য করছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল, তারা এখন আর অতিরিক্ত কথা বলছেন না। তারা নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের কাজ করে যাচ্ছেন। তারা পরিস্থিতি বুঝেছেন। এটাও বুঝেছেন, কথা দিয়ে আর চিঁড়া ভেজানো যাবে না। শাশ্বত বা চিরকালীন পদ্ধতিতে চিঁড়া ভেজাতে হবে। শাসকরা আর এদেশে স্বৈরাচার হতে পারবে না। তাদের অবশ্যই সেবক হতে হবে। নিজেরা ভালো মানুষ হতে হবে এবং জনগণের মধ্যে ভালো মানুষের সংখ্যা বাড়াতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ভালো মানুষ হলে বার বার আর বিপ্লব বা অভ্যুত্থান করতে হবে না। ১৯৪৭ নিয়ে মানুষের মুক্তির জন্য কত ধরনের লড়াই-সংগ্রাম হলো, কিন্তু ভালো মানুষের অভাবের কারণে আমাদের মজলুম জনতা এখনো মুক্তি পেল না।
এই তো আবার অর্থ উপদেষ্টাকে নিয়ে নানা কথা উঠেছে। প্রাজ্ঞ, বিজ্ঞ ও অভিজ্ঞ মানুষ। সমাজে বা আমাদের রাষ্ট্রীয় বলয়ে তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। তাকে অর্থ উপদেষ্টা করায় কেউ বেজার হননি বা বিরোধিতা করেননি। তিনি ছাত্রজীবনে কোনো ছাত্র ফোরামের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না বা ব্যক্তিগতভাবে কোনো রাজনৈতিক দলকে তিনি পছন্দ করেনÑ এসব নিয়ে কোনো কথা ওঠেনি। সবাই উপলব্ধি করেন, তিনি ভালো ছাত্র ছিলেন, ভালো পেশাদার ছিলেন, সুতরাং তার মতো সিনিয়র একজন মানুষ, যিনি একসময় বাংলাদেশের সেন্ট্রাল ব্যাংকের (বাংলাদেশ ব্যাংক) গভর্নর ছিলেন, তিনি তো সরকারের উপদেষ্টা হতেই পারেন। তাছাড়া তিনি তো সারাটা জীবন সুনীতির মধ্যেই ছিলেন। তার বড় কোনো ভুল-ত্রুটি সম্পর্কে এ যাবত কখনো কিছু শোনা যায়নি। হঠাৎ একটা ত্রুটির খবর চাউর হয়ে গেছে। এটি নিয়ে এখন কোনো কিছু বলা সমীচীন হবে না। তবে আমরা এখন কোন অবস্থার মধ্যে বিরাজ করছি, বিজ্ঞজনরা তা বিশ্লেষণ করতে পারছেন না। সে অবস্থায় সরকারে কোনো আঁচড় পড়ুক, কোনো দেশপ্রেমিক মানুষ তা চায় না। সবাই চায় এ সরকার সফল হোক, সার্থক হোক।
সরকার চান বা না চান, সরকারের অভ্যন্তরে রদবদল চলছে। উপদেষ্টা হাসান আরিফ মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন। এখানেও তো একটা শূন্যতা সৃষ্টি হলো। এটা তো একটা প্রাকৃতিক পরিবর্তন। এ পরিবর্তন তো দুনিয়ার মানুষ ঠেকাতে পারে না।
হঠাৎ করে তরুণ উপদেষ্টা রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করার জন্য চলে গেলেন। সবই তো সরকারকে মেনে নিতে হচ্ছে। এসব পরিবর্তনের কারণে মাঝে মাঝে যে শূন্যতার সৃষ্টি হচ্ছে, তা আর পূরণ হচ্ছে না। এ বিষয়ে পত্র-পত্রিকাসহ সামাজিক মাধ্যমে নানা ধরনের উপদেশ-পরামর্শ, আলোচনা-সমালোচনা অনেক হয়েছে, এখনো হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। সে আলোচনার দিকে আমরা পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি না। তবে একটা বিষয়ে সচেতন নাগরিকবৃন্দ সরকারসহ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রশ্ন রাখছেনÑ দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তছনছ হয়ে আছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা এখনো যখন নির্ভয়ে সরকারি চাকরিতে যোগদান করতে আসছেন না। বিজিবি নিয়ে নানা টালমাটাল অবস্থা এবং যেখানে সুযোগ বুঝে দেশের সুবিধাবাদী মহল আনসার বাহিনীর অনুকরণ ও অনুসরণ করছে, সেখানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মানুষের জানমাল রক্ষায় নিজের সর্ব প্রচেষ্টা নিয়োগ করবেন, নাকি মৌসুমের ধান-চাল ও রবিশস্যের খবর নেবেন? ভাগ্য ভালো আমাদের কৃষান-কৃষানিরা ভদ্রলোক। তারা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মতো চরম আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে না। আমাদের কৃষক বা কৃষি সম্পর্কিত শ্রমিক আন্দোলন বেশ দুর্বল। এটা ‘ব্লেসিং ইন ডিজগাইজ’Ñ সরকারসহ সমগ্র জাতির জন্য। এরা কষ্ট করে, এরাই উৎপাদন করে, এদের দ্বারাই উৎপন্ন খাদ্যদ্রব্য এদেরই বেশি দামে ক্রয় করতে হয়। এরা আশায় আশায় ধৈর্যধারণ করে। শোকর গুজার করে।
একটু চিন্তা করলে দেখা যাবে, এরা এ সরকারের বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দটি পর্যন্ত করেনি। এমন একজন অভিভাবকের হাতে কৃষি ও কৃষকদের তুলে দেয়া হয়েছে, যিনি তাদের দিকে নজর পর্যন্ত দিতে পারেন না। দোষটা কার বোঝা যায় না। উপযুক্ত লোকের এত অভাব পড়ে গেল? দেশের; বিশেষ করে দেশবাসী জানে কৃষিতে সৎ, যোগ্য, উপযুক্ত লোকের কোনো অভাব নেই। দেশে যদি আরও ৫টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করতে হয়। তাহলেও বিদেশ থেকে কোনো প্রফেসর, গবেষক বা টেকনোপারসন আনতে হবে না। সেক্ষেত্রে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য কেন যে একজন উপদেষ্টা নেয়া হচ্ছে না।
মোদ্দাকথা, প্রি-কনসিভড আইডিয়া দিয়ে দেশ এখন আর চালানো যাবে না। স্থান-কাল-পাত্র সামনে রেখে কখনো কখনো নিজেদের পূর্ব ধারণাকে বা পূর্ব অভিজ্ঞতাকে পাশ কাটিয়ে বাস্তবধর্মী প্রেগমেটিক পরিকল্পনা করে এগোতে হবে। প্রয়োজনে কাউকে কাউকে সম্মানের সাথে অব্যাহতি দেয়ার চিন্তা করতে হবে। নতুন উপদেষ্টা সংযোগ করতে হবে। সরকারকে উন্নত, উদ্দীপ্ত, সমুজ্জ্বল, সজীব ও প্রাণবন্ত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করার জন্য যা যা করার দরকার, তাই করতে হবে। যে সকল বিষয়ে এ সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ, সেসব তো আমানতদারির সাথে পূরণ করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, সবকিছু গোছগাছ করে এবং সাজিয়ে-গুছিয়ে একটা বহু আকাক্সিক্ষত সত্য ও সুন্দর নির্বাচনের ব্যবস্থা তো করতে হবে।