উপমহাদেশে ইসলামের আগমন ও আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ওলামায়ে কেরামের অবদান
৬ মার্চ ২০২৫ ১২:১৩
॥ ড. মুহাম্মদ খলিলুর রহমান মাদানী ॥
প্রাথমিক কথা : দেশ গঠন, দীনি চেতনা লালন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও আজাদী আন্দোলনে ভারতবর্ষের আলেম সমাজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ও অবিস্মরণীয়। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে প্রকৃত নেতৃত্বে ছিলেন এদেশের একঝাঁক বিশিষ্ট আলেমেদীন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলেই আমাদের নতুন প্রজন্ম জানবে দেশ গঠন, উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এদেশের ওলামায়ে কেরামের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও কার্যকর ভূমিকার কথা। সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজদের গোলামির শৃঙ্খল থেকে স্বদেশকে মুক্ত করার জন্য আলেম সমাজের অসাধারণ ত্যাগ- কুরবানি, কঠোর সংগ্রাম-সাধনা এ উপমহাদেশের ইতিহাসের এক চিরস্মরণীয় অধ্যায়। ইংরেজ শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা দেখি আলেম সমাজকে লাখকোটি মুক্তিকামী মানুষের নেতৃত্ব দিতে, দেখি তাদের ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলতে, বুলেটের সামনে দাঁড়াতে, কারাগারের অভ্যন্তরে বন্দীরূপে ও দ্বীপান্তরে নির্বাসিত হতে। উল্লেখ্য যে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্যবসার উপলক্ষেই এদেশে আগমন করে। তখনই এদেশের আলেম সমাজ তাদের ফারাসাত তথা দূরদৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করেছিলেন দেশের আসন্ন বিপদের কথা। ফলে সকল মাকতাবে ফিকারের তথা সকল দলের ও মারকাজের আলেম-ওলামা, পীর মাশায়েখ বারবার সিরিজ বৈঠক করে বিভিন্নমুখী প্রতিরোধ কর্মসূচি গ্রহণ করেন। ভারতবর্ষের ওলামায়ে কেরামের সে সব প্রতিরোধ কর্মসূচি বিশ্বব্যাপী নন্দিত হয়েছিল এবং কালের সাক্ষী হিসেবে অকাট্য দলিল হয়ে রয়েছে। শিরক বিদ’আতমুক্ত সমাজ গঠন এবং অপরাধমুক্ত আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ভারতবর্ষের আলেম-ওলামা পরবর্তীতে বাংলাদেশের ওলামায়ে কেরামের অবদান অব্যাহত রয়েছে।
উপমহাদেশের প্রতি ইউরোপিয়ানদের আকর্ষণ
সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলে ভরপুর; ঐশ্বর্য আর প্রাচুর্যে সমৃদ্ধ ভারতীয় উপমহাদেশের ধন-সম্পদ একসময় ইউরোপীয় বণিক গোষ্ঠীকে আকৃষ্ট করেছিল। তাই তারা ভারতে আসার পথ অনুসন্ধান করতে লাগলো।
পর্তুগালের নাবিক ভাস্কো-দা-গামা (১৪৬৯-১৫২৫ খ্রি:) আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে ভারতে আসার জলপথ আবিষ্কার করলেন। ১৪৯৮ সালে তিনি সামুদ্রিক জাহাজে ভারতের ‘কালিকট’ বন্দরে এসে পৌঁছেন। পর্তুগিজদের পর ওলন্দাজ ও ফরাসি বণিকদের আগমন ঘটে।
সব শেষে ১৬০১ সালে ইংরেজ বণিকরা ভারতবর্ষে। ব্যবসা বাণিজ্যের কলাকৌশলে বণিকদের প্রভাব সারা উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হলে বিদেশি বণিক ইংরেজ ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ এদেশের রাজদণ্ডের অধিকারী হয়ে বসলেন।
উপমহাদেশের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি : এশিয়া মহাদেশের মধ্যে অবস্থিত মহাদেশতুল্য একটি অঞ্চল ভারতীয় উপমহাদেশ। এর উত্তরে অবস্থিত হিমালয় পর্বতমালা চীনসহ এশিয়ার অন্য অঞ্চলসমূহকে পৃথক করে রেখেছে। এর উত্তর-পশ্চিমে রয়েছে সুলেমান ও হিন্দুকুশ পর্বতমালা এবং উত্তর-পূর্বে আরাকান পর্বতমালা। আর এর পশ্চিম, দক্ষিণ ও পূর্বে রয়েছে ভারত মহাসাগর, আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর। এর পূর্ব সীমান্তে মিয়ানমার, উত্তরে চীন, পশ্চিমে আফগানিস্তান। মোগল শাসনামলে আফগানিস্তান ভারতের অংশ ছিল। আবার দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, উত্তরের পার্বত্য দেশ নেপাল, ভুটান তিব্বতকেও বৃহত্তর ভারত উপমহাদেশের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করা হয়। মূল ভূখণ্ড থেকে দূরে অবস্থিত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ভারত প্রজাতন্ত্রের অংশ, ১৮২৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মিয়ানমার ভারতের বাইরে ছিল।
(গড়হঃবশ ঝরহময অযষঁধিষরধ. “ঊপড়হড়সরপ জবভড়ৎসং রহ ওহফরধ ংরহপব ১৯৯১: ঐধং এৎধফঁধষরংস ডড়ৎশবফ?” (গঝ ডড়ৎফ). ঔড়ঁৎহধষ ড়ভ ঊপড়হড়সরপ চবৎংঢ়বপঃরাবং. জবঃৎরবাবফ ড়হ ২০০৭-০৬-১৩. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১০-০৩-০৪ তারিখে)
উপমহাদেশে সাহাবীদের আগমন
* রাসূল সা. নবুয়্যতপ্রাপ্তির পর গোটা আরব উপদ্বীপের কাফির-মুশরিক, ইহুদি- খ্রিস্টানদের কঠোর বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। সে কারণে রাসূল সা. তাদের ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে প্রবেশ করানোর চেষ্টায় নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। রাসূল সা.-এর ২৩ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে গোটা আরব উপদ্বীপে ইসলাম শুধু প্রবেশ করে নাই, বরং রাসূল সা.-এর মোবারক সুহবত এবং ইসলাম গ্রহণকারীদের ইখলাসের বরকতে রাসূল সা.-এর শিক্ষা ও আদর্শ আরববাসীদের জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে এমনভাবে প্রভাব ফেলেছে যে, ঐ যুগের মানুষ এবং ইসলামী শিক্ষা যেন উভয়টিই এক ও অভিন্ন। ইসলামকে তাদের থেকে আলাদা ভাবার কল্পনাও করা যায় না। পবিত্র কুরআনে করীমে আল্লাহ তায়ালা তাদের ব্যপারে নিজের সন্তুষ্টির কথা ঘোষণা দিয়ে বলেন, (আল্লাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়েছে তারাও আল্লাহর ওপর রাজি হয়েছে)। সে কারণে নবীদের পরে যাদের স্থান ও মর্যাদা, তারা হলেন ঐ স্বর্ণযুগের লোকগুলোই।
* রাসূল সা. এ ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া থেকে বিদায়ের পর ঐ সাহাবারা দীনে তাবলিগকে নিজের মিশনে পরিণত করেছিলেন, সংকল্প করেছিলেন দীনের পয়গামকে সারা বিশ্বের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর, কথা আর কাজে মিল রেখেছেন তারা, সত্যি সত্যি পৌঁছে দিয়েছেন দীনের মহান দাওয়াত।
আবু বকর রা.-এর খেলাফত : আবু বকর রা. যখন খেলাফত গ্রহণ করেন, তখন সব দিকে ফিতনা আর ফিতনা, ভণ্ড নবীর ফিতনায় পড়ে মানুষ দলে দলে ইসলাম ত্যাগ করছিল। আবু বকর রা. ফিতনাগুলোর মোকাবিলা করতে গিয়ে আরবের বাইরে ইসলাম প্রচারে মনস্থ করতে পারেননি।
সাহাবী ওমর রা. খেলাফত : আবু বকর রা.-এর ওফাতের পর হযরত ওমর রা. খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন, আবু বকর রা.-এর খেলাফত আমলেই সকল প্রকার ফিতনা ধূলিসাৎ হয়েছিল। নতুন করে কোনো ফিতনার আশঙ্কা ছিল না, সুতরাং ওমর রা. ইসলামকে বিশ্বের সকল সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছানোর প্রতি মনোযোগ দিলেন।
আলহামদুলিল্লাহ, যেই অঞ্চলে আমাদের বসবাস সেটা এমন একটি অঞ্চল, যেখানে পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকেই নবী রাসূলদের অগমন ঘটেছিল। যার বরকতে ইসলাম এমন কঠিন ফিতনার যুগেও অত্র অঞ্চলের মুসলমানদের অন্তরে এখনো পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত আছে। আমিরুল মু’মিনীন হযরত ওমর রা. খেলাফতে অধিষ্ঠিত হওয়ার ৪ বছর পর হিজরী ১৫ সালে হযরত উসমান বিন আবুল আস রা.-কে বাহরাইন এবং ওমানের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দিলেন, হযরত উসমান রা. নিজ ভাই হাকীম বিন আবিল আস রা.-কে একটি বাহিনীর কমান্ডার নিযুক্ত করে ভারতের সমুদ্র বন্দর ‘থানা’ এবং ‘ভরুজ’ এর উদ্দেশ্যে অভিযানে পাঠিয়েছিলেন এবং দ্বিতীয় ভাই মুগীরা বিন আবিল আস রাঃকে ছোট্ট একটি বাহিনী দিয়ে অন্য সমুদ্র বন্দর ‘ডাবীল’ এর উদ্দেশ্যে প্রেরণ করলেন। সম্ভবত এটাই ছিল ভারতীয় উপমহাদেশে সাহাবীদের প্রথম আগমন, কিন্তু এই অভিযান কোনো নিয়মিত বা সিডিউল করা কোনো অভিযান ছিল না, যার কারণে সাধারণত ইতিহাসের কিতাবগুলোয় এদের আলোচনা পাওয়া যায় না। এছাড়া হিন্দুস্তানের বিভিন্ন অঞ্চল যেমনÑ কিরমান, মকরান, বেলুচিস্তান, মুলতান, লাহোরসহ অনেক জায়গাতে সাহাবাদের আগমনের বিষয়ে বর্ণনা পাওয়া যায়।
বিশিষ্ট প্রবীণ ইতিহাসবিদ আল্লামা কাজী আতহার মুবারকপুরী রহ.-এর গবেষণায় ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ১৭ জন সাহাবীর পদচারণে ধন্য হওয়ার কথা জানা গেলেও বর্তমান যুগের ইতিহাসবিদ আল্লামা মুহাম্মদ ইসহাক ভাট্টি ২৫ জন সাহাবীর ভারতীয় উপমহাদেশে আগমনের কথা জানিয়েছেন।
কিছু কিছু হাদীস মোতাবেক হযরত আদম আ.-এর অবতরণ ভারতীয় উপমহাদেশের জমিনে হয়েছে আবার কোনো হাদীস মতে তিনি বায়তুল্লাহ নির্মাণের পর তিনি উপমহাদেশে আগমন করেন। এতে বোঝা গেল যে, উপমহাদেশের জমিন হযরত আদমের মতো নবীর পদচারণের সম্মান অর্জন করেছে। শুধু তাই নয়, হযরত আদম আ.-এর পরে পর্যায়ক্রমে এই অঞ্চলে নবীদের আগমনের সিলসিলা অব্যাহত ছিল, যেমন ভারতীয় উপমহাদেশে সরহিন্দ ‘এলাকার একটি গ্রামে দুজন নবী’ ইব্রাহীম এবং ‘খজির’ নামের কবর এখনো বিদ্যমান, তারা সম্পর্কে ছিলেন বাবা-ছেলে।
রাসূল সা.-এর নবুয়্যতের প্রাথমিক যুগেই এ অঞ্চলে ইসলাম প্রবেশ করেছে। ঐতিহাসিকদের মতে উপমহাদেশের শহর ‘কুনূজ’ এর রাজা ‘স্রীবানক’ তিনি চাঁদ বিদীর্ণ হওয়ার অলৌকিক ঘটনা দেখে রাসূল সা. দরবারে উপস্থিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন।
অন্য বর্ণনা মতে, ভারতীয় এক সাহাবী ‘বা-বারতান হিন্দী’র সাক্ষাৎ রাসূল সা.-এর সাথে হয়েছে এবং তিনি রাসূল সা. কয়েকটি হাদীসও বর্ণনা করেন বলে উল্লেখ আছে, এ সাহাবীর কবর পূর্ব পাঞ্জাবের ভান্ড়া শহরে বিদ্যমান আছে। হাদীসের গ্রন্থ ‘আল্ মুসতাদরিক’ এ হাকিম নিশাপুরী ভারতীয় উপমহাদেশের এক সাহাবী রাসূল সা. জন্য হাদিয়া পাঠানোর কথা উল্লেখ করেছেন।
সরন্দ্বীপ (বর্তমান মালদ্বীপ) বাসীরা আরব ব্যবসায়ীদের কাছে রাসূলের (সা.) কথা জানতে পরে একজন বুদ্ধিমান লোককে প্রতিনিধি হিসেবে আরব ব্যবসায়ী কাফেলার সাথে পাঠিয়েছিল, যাতে সে রাসূল সা.-এর শিক্ষা কী? নিজ চোখে দেখে আসে, বর্ণিত আছে তিনি যখন মদিনায় পৌঁছালেন তখন রাসূল সা. ইন্তেকাল করেছিলেন, হযরত আবু বকর রা.-কে খলিফা নিযুক্ত করা হয়েছিল, তিনি নিজ দেশ মালদ্বীপে ফিরে ইসলামের ভূয়সী প্রশংসা করলেন এবং সবাইকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দিলেন, শেষে সবাই ইসলাম গ্রহণ করল, বলা যায় সেই কারণে আজ মালদ্বীপ নামের রাষ্ট্রটি ইসলামী চেতনায় পরিপূর্ণরূপে উজ্জীবিত।
হযরত আলী রা.-এর অধীনে ইয়ামামার যুদ্ধের পর ভারতীয় এক মহিলা ছিল যার নাম ছিল ‘খাওলা সিন্দিয়া হানাফিয়া’ তার একটা পুত্র সন্তান ছিল যার নাম ছিল ‘মুহাম্মদ বিন হানাফিয়া’, আল্লামা ইবনে খাল্লেকান তার প্রসিদ্ধ কিতাব ‘ওয়াফাতুল আ’য়ান’ এ ঐ মহিলা সাহাবীকে ভারতীয় হিসেবে প্রমাণ করেছেন।
সাহাবীদের যারা ভারতীয় উপমহাদেশে আগমন করেছেন
ভারতের বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আল্লামা কাজী আতহার মুবারকপুরী রহ.-এর গবেষণা মতে, ভারতীয় উপমহাদেশের ১৭ জন এবং বর্তমান যুগের অন্যতম ইতিহাসবিদ মুহাম্মদ ইসহাক ভাট্টির গবেষণা মতে ২৫ জন সাহাবী উপমহাদেশের আগমন করেছেন।
(খেলাফতে রাশেদা ও হিন্দুস্তান:২৩৩,আবু জাফর সিরাজ উদ্দিন মু. বাহাদুর শাহ জাফর ২৮/৯/১৮৩৭-১৪/০৯/১৮৫৭)
তারা হলেন :
১. হাকাম বিন আবিল আছ রা.,
২. হাকাম বিন আমার সা’লবী গিফারী রা.,
৩. খরীত বিন নাজিত সামী রা.,
৪. রুবাই বিন জিয়াদ হারেছী রা.,
৫. সিনান বিন সালমা হুযালী রা.,
৬. সাহাল বিন আদী খাজরাজী আনছারী রা.,
৭. ছাহ্হার বিন আব্বাস আবদী রা.,
৮. আছিম বিন আমার তামীমি রা.,
৯. আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল্লাহ বিন ইতবান আনছারী রা.,
১০. আব্দুল্লাহ বিন উমাইর আশজায়ী রা.,
১১. আব্দর রহমান বিন সামুরা কুরাইশী রা.,
১২. উবাইদুল্লাহ বিন মু’মার কুরাইশী তায়মী রা.,
১৩. উসমান বিন আবিল আ’ছ সাকাফী রা.,
১৪. উমাইর বিন উছমান বিন সা’দ রা.
১৫. মুজাশিয় বিন মাসউদ সালামী রা.,
১৬. মুগীরা বিন আবিল আ’ছ সাকাফী রা.,
১৭. মুনযির বিন জারুদ আবদী রা.,
([মূল : মাওলানা হুজায়ফা, মহারাষ্ট্র ভারত সূত্র : মাসিক দারুল উলুম, দেওবন্দ, ভারত। সংখ্যা : জুলাই ২০০৮]।
উপরোক্ত সাহাবীদের নাম কাজী আতহার মুবারকপুরী রহ. তার প্রসিদ্ধ কিতাব (খেলাফতে রাশেদা আউর হিন্দুস্তান) কিতাবে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া আরো কয়েকজন সাহাবীদের নাম ইসহাক ভাট্টি তার রচনা : (বররে ছগীর মেঁ ইসলাম কে আওয়ালীনে নুকূশ) নামক প্রসিদ্ধ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তারা হলেনÑ
১৮. শিহাব বিন মুখারিক বিন শিহাব তামীমি রা.,
১৯. নুসাইর বিন দিসম বিন আজালী রা.,
২০. হাকীম বিন জাবালা আসাদী রা.,
২১. কালীব আবু ওয়ায়িল রা.,
২২. মুহলাব বিন আবু সফরা আযদী রা.,
২৩. আব্দুল্লাহ বিন সিওয়ার আবদী রা.,
২৪. ইয়াসির বিন সিওয়ার আবদী রা.,
২৫. আব্দুল্লাহ বিন সুয়াইদ তামীমি রা.।
তবে এ নামগুলোর মধ্যে কয়েকজনের ব্যাপারে তারা কি সাহাবী নাকি তাবেয়ী মতভেদ আছে।
উপমহাদেশে আগমনকারী তাবেঈদের এ সংখ্যা ৪৩
সাহাবীদের পর উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ যারা তারা হলেন তাবেয়ীনে কিরাম রহ.
এখন আমরা ঐ মহান তাবেয়ী সিপাহসালারদের নাম জানার চেষ্টা করব যারা উপমহাদেশের জমিনকে ইসলামের আলোতে আলোকিত করেছিলেন, পৌঁছায়েছিলেন প্রতিটি ঘরে ঘরে ইসলামের দাওয়াত। তাদের অন্যতম হলেন,
১. হযরত ছগির বিন যাআর রহ.,
২. হরিছ সুলায়মানী রহ.,
৩. হাকীম বিন জাবালা (অনেকে উনাকে সাহাবী হিসেবে উল্লেখ করেছেন)
৪. হাসান বিন আবুল হাসান ইয়াসার বছরী রহ.
৫. সায়ীদ হিশাম আনছারী রহ.,
৬. সায়ীদ বিন কিনদিয়া কুশাইরী রহ.,
৭. শিহাব বিন মখারিক তামিমী রহ.,
৮. ছাইফী বিন পসীল শায়বানী রহ.,
৯. নাসীর বিন ওয়াসীম আজালী রহ।
এ নয়জন বুজুর্গ তাবেয়ীদের উপমহাদেশের আগমনের ব্যাপারে প্রসিদ্ধ ইতিহাসবিদ কাজী আতহার মুবারকপুরী রহ. এবং ইসহাক ভাট্টি রহ. একমত, তবে ইসহাক ভাট্টি রহ. আরো কিছু নাম উল্লেখ করেছেন। তারা বলেন,
১০. ইবনে উসাইদ বিন আখনাস রহ.,
১১. আবু শাবীহ জওহরী রহ.,
১২. হাতিম বিন কাবীছা রহ.,
১৩. রাশেদ বিন আমর আল জাদিদী রহ.,
১৪. যায়েদা বিন উমাইর তায়ী রহ.,
১৫. যিয়াদ বিন হাওয়ারী আম্মী রহ.,
১৬. আবু কায়স যিয়াদ বিন রাবাহ বাছারী রহ.,
১৭. হাকাম বিন আওয়ানা কালবী রহ.,
১৮. মুআবিয়াহ বিন কুররাহ মুযনী বাছারী রহ.,
১৯. মকহুল বিন আব্দুল্লাহ সিনদী রহ.,
২০. আব্দুর রহমান সনদী রহ.,
২১. আব্দুর রহমান বিন আব্বাস রহ.,
২২. কুতুন বিন মুদরেক কিলাবী রহ.,
২৩. কায়স বিন ছা’লবা রহ.,
২৪. কমস বিন হাসান বছরী রহ.,
২৫. ইয়াযিদ বিন আবু কবশা দেমশকী রহ.,
২৬. মুসা সুলাইমানী রহ.,
২৭. মুসা বিন ইয়াকুব ছকফী রহ.,
২৮. আব্দুর রহমান সলায়মানী রহ.,
২৯. আব্দুর রহমান বেয়লমানী রহ.,
৩০. ওমর বিন আব্দুল্লাহ কুরাইশী রহ.,
৩১. শামার বিন আতিয়্য়া আসাদী রহ.,
৩২. সাঈদ বিন আসলাম কিলাবী রহ.,
৩৩. হাব্বাব বিন ফযালাহ রহ.,
৩৪. আব্দুর রহমান বিন আব্দুল্লাহ রহ.,
৩৫. হরিছ বিন মুররাহ আবদী রহ.,
৩৬. আইয়ুব বিন যিয়াদ হিলালী রহ.,
৩৭. হারিই বিন হারিই বাহেলী রহ.,
৩৮. উব্বাদ বিন যিয়াদ উমাবী রহ.,
৩৯. ইয়াযিদ বিন মাফরাগ হিময়ারী রহ.,
৪০. রাবীয় বিন ছাবীহ বাছারী রহ.,
৪১. মুজা’আ বিন সা’আর তামিমী রহ.,
৪২. আবু সালেমা রহ.,
৪৩. মুহাম্মদ বিন কাসেম ছাকাফী রহ. যিনি সিন্দু বিজয় করেছেন। (চলবে)।
(খেলাফতে রাশেদা ও হিন্দুস্তান:২৩৩,আবু জাফর সিরাজ উদ্দিন মু. বাহাদুর শাহ জাফর ২৮/৯/১৮৩৭-১৪/০৯/১৮৫৭)।
তাবেয়ীনদের এমন পবিত্র জামাত যাদের মাধ্যমে ইসলাম গোটা ভারতবর্ষে প্রচার-প্রসার পেয়েছে এবং ইসলামের জন্যই নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছিলেন।
লেখক : গবেষক, কলামিস্ট, অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা, যাত্রাবাড়ী।