সরকারের ওপর চাপ : চাঁদাবাজি : রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আঘাত : ফ্যাসিবাদের সাথে সমঝোতা

সংস্কার ও নির্বাচন থেকে বিচ্যুতির ষড়যন্ত্র


৬ মার্চ ২০২৫ ১১:৩১

॥ ফারাহ মাসুম॥
সংস্কার নির্বাচনের পথ থেকে বিচ্যুতির জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। একদিকে সংস্কার না করেই দ্রুত নির্বাচনের ঘোষণা দেয়ার জন্য সরকারের ওপর ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে; অন্যদিকে চাঁদাবাজি ও দখল-বাণিজ্যে ফ্যাসিবাদের সাথে সমঝোতার নানা ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিশানা বানানোর একের পর এক ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ ধরনের অস্থির পরিস্থিতি এমন সময় তৈরি করা হচ্ছে, যখন পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়ে বিশ্ব সংস্থার মানবাধিকার কমিশনে জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করা হচ্ছে। এদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টার পাশাপাশি এখানকার ডিসিপ্লিনড ফোর্সগুলোর মধ্যে অস্থিরতা তৈরির জন্য প্রতিবেশী ভারতীয় মিডিয়ায় অভ্যুত্থানের নানা ধরনের কল্পিত গুজব ছড়ানো হচ্ছে। তাদের অপতৎপরতা এতটাই বেড়েছে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের আফ্রিকায় রুটিন শান্তি মিশনে গমনকে বর্ণনা করা হয়েছে তাকে ‘বিদায় করার আয়োজন’ হিসেবে।
নির্বাচনের প্রস্তুতি, তবু সংশয় : অন্তর্বর্তী সরকার জরুরি সংস্কার শেষে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরুর পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে দৃশ্যমান হচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি। গত ৩ মার্চ সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশনার আদজা লাবিবের সাথে আলাপে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘ভোট সম্ভবত এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে’ বলে উল্লেখ করেছেন।
এর পরদিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীন বলেছেন, ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন ধরেই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। অক্টোবরের দিকে তফসিল, ডিসেম্বরে ভোট ও জানুয়ারিতে সরকার গঠন- এমন লক্ষ্য নিয়ে নির্বাচনী রোডম্যাপ সাজানোর প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
এ অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোও মাঠে নেমেছে। ভোটের মেরুকরণ কী হবে, কোন দলের সঙ্গে কার জোট হবে; কার সঙ্গে কোথায় আসন সমঝোতা হবে- এসব বিষয়েও আলোচনা শুরু হচ্ছে। ছাত্র-তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল নিজেদের গুছিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছে। আর ঠিক এমন সময়ে সারা দেশে দখল, চাঁদাবাজি ও অপকর্মের অভিযোগ বাড়ছে। পতিত সরকারের চাঁদাবাজদের সাথে মিলেমিশে এসব অপতৎপরতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ডাকাত আসার ধোঁয়া তুলে জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী জামায়াতের দুই নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। পাবনায় ইউএনও কার্যালয়ে চার জামায়াত নেতাকর্মীকে লাঞ্ছিত করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। বিএনপি উদ্যোগ নিয়েও এসব ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। বহিষ্কৃত নেতাকর্মীদের আর সুযোগ দেবে না বলে ঘোষণা দেয়ার পরও চাঁদাবাজি ও দখলবাজিতে বেপরোয়া অবস্থা দেখা যাচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের বলা হয়েছে যে, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভবিষ্যতে যারা দখল, চাঁদাবাজি ও আইশৃঙ্খলা ভঙ্গ করবে, তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। একইসঙ্গে দলের সৎ ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা এবং আওয়ামী লীগের দোসরদের জায়গা বিএনপিতে হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলে কোনো সন্ত্রাসী, অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিডদের জায়গা না দেয়ার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে হাইকমান্ড। এসব সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও মাঠের বাস্তবতায় এর কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।
মাঠের এ অস্থিরতার পেছনে সূক্ষ্মভাবে একটি চক্র কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে। এ চক্রটি সংস্কারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তরকে মেনে নিতে চাইছে না। বিবিসি বাংলার সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, একটা পলাতক দল দেশ ছেড়ে চলে গেছে বা তাদের নেতৃত্ব চলে গেছে। তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করছে দেশটাকে অস্থিতিশীল করার জন্য।
দেখা যায়, এ অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টার সাথে বৈষম্যবিরোধী রাজনৈতিক শক্তির কোনো কোনো পক্ষকে জড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের দ্রুত নির্বাচনের জন্য চাপ সৃষ্টির অংশ হিসেবে বিভিন্ন কর্মসূচিকে এক্ষেত্রে কাজে লাগানো হচ্ছে। সরকারের নির্বাচনের আয়োজন নিয়ে বিএনপি নেতৃত্বের সংশয় প্রকাশও এটিকে উৎসাহিত করছে। বিবিসি প্রসঙ্গটা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করেছিল যে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আগে অন্তর্বর্তী সরকারের যে সম্পর্কটা ছিল, এখনো কী সেটা আছে কিনা? প্রধান উপদেষ্টা জবাবে উল্লেখ করেন, ‘আমার তো অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না। কেউ আমাকে অসমর্থন করছে, এরকম কোনো খবর তো আমি পাই নাই এখনো। সবাই সমর্থন করছে, সবাই চাচ্ছে যে সুন্দরভাবে দেশ চলুক, তাদের সবার মধ্যে ঐক্য আছে। রাজনৈতিক বক্তব্যের মধ্যে অনেক তফাৎ আছে। কিন্তু তার মানে এই নয়, ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরেছে। এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা যখন বসি, কেউ তো বলে নাই যে সন্দেহ হচ্ছে। তারা বলছেন, আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। আমাদের সঙ্গে সম্পর্কের কোনো ঘাটতি হয়নি।’
সরকারের প্রতি অবিশ্বাস সৃষ্টির একটি অজুহাত হিসেবে তুলে আনা হচ্ছে ছাত্রদের দল গঠনের ইস্যুটিকে। বিবিসি প্রশ্ন করেছে ছাত্ররা একটা রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। সে বিষয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে সরকার তাদের সহায়তা করছে। সরকার কি তাদেরকে সহায়তা করছে বা করেছে? প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে পরিষ্কার করে বলেন, ‘না, সরকার কোনো সহায়তা করে না। যে রাজনীতি করতে চায়, সে নিজেই ইস্তফা দিয়ে চলে গেছে। তিনজন ছাত্র প্রতিনিধি ছিল সরকারের ভেতরে। যিনি রাজনীতি করতে মন স্থির করেছেন, তিনি ইস্তফা দিয়ে সরকার থেকে চলে গেছেন। উনি প্রাইভেট সিটিজেনশিপে রাজনীতি করবেন, কার বাধা দেওয়ার কী আছে? প্রত্যেকের তো মনোভাব থাকবে যে, ওই রাজনৈতিক দলটা সুন্দর কাজ করছে, ওই রাজনৈতিক দলটা ঠিক কাজ করছে না। এ মনোভাব হতে পারে ব্যক্তিগতভাবে। সরকার হিসেবে আমাদের কোনো পজিশন নেই। এ নিয়ে অভিযোগটা সঠিক নয় মোটেই।’
সেনা প্রতিষ্ঠান নিয়ে সংশয়ের চেষ্টা
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সংশয় ও অস্থিরতা তৈরি করার কৌশল একটি দেশের পুরনো। দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিভিন্ন ভারতীয় মিডিয়া দিয়ে এ কাজ করে থাকে। ফ্যাসিবাদের পতনের পর এ তৎপরতা বিস্ময়করভাবে বেড়েছে। বিশেষভাবে শাসকদল বিজেপির মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত রিপাবলিক টিভি অবিরত ভিত্তিহীন প্রচার চালিয়েছে। এর সাথে যোগ দেয় কলকাতা নিউজ। এ দুটি মাধ্যম সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে একের পর এক সেনা অভ্যুত্থান ঘটানোর প্রচেষ্টার কথা বলে যাচ্ছে গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে। রাওয়া ক্লাবে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের পিলখানা ম্যাসাকার নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যকে ঘিরে এ প্রচারণা আরো জোরালো করা হয়েছে। সেনাপ্রধানের শান্তি মিশনে বাংলাদেশি সেনাদের কার্যক্রম তদারকি করার একটি রুটিন সফরকে কেন্দ্র করে বলা হয়েছে, তাকে বিদায় করা হয়েছে। তিনি ৭ মার্চ দেশে ফেরার পর আর কমান্ডে বসতে পারবেন না। এসব প্রচারণার মূল উদ্দেশ্য এখানে অস্থিরতাকে জিইয়ে রাখা, যাতে সরকার ঠিকমতো তার কাজ এগিয়ে নিতে না পারে।
বিবিসি বাংলা সেনাবাহিনী থেকে সহযোগিতা পাচ্ছেন কিনা- প্রশ্ন করলে প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা পাচ্ছেন। এরপর বিবিসি জানতে চায় সম্প্রতি সেনাপ্রধান একটি বক্তব্য দিয়েছেন, যেখানে তিনি বলেছেন, অনেক বিষয়ে তিনি এবং আপনি একমত। তার মধ্যে তার একটি বক্তব্য ছিল যে, সবাই একসাথে কাজ করতে না পারলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে বা বিপন্ন হতে পারে। এ বক্তব্যের সাথে প্রধান উপদেষ্টা একমত কিনা। জবাবে প্রফেসর ইউনূস বলেন, এটা ওনার বক্তব্য উনি বলবেন। আমার ওনাকে এনডোর্স করা না করার তো বিষয় না। আর স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনার বিষয়টি সবসময় থাকে। একটা পলাতক দল দেশ ছেড়ে চলে গেছে বা তাদের নেতৃত্ব চলে গেছে। তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করছে এটাকে আনসেটেল করার জন্য। তো সবসময় থ্রেট আছেই। প্রতি ক্ষণেই আছে, প্রতি জায়গাতেই আছে। কাজেই এটা তো সবসময় থাকবে। হুমকিটা অবভিয়াস ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ থেকে। তারা মাঝে মাঝেই ঘোষণা করছে। বক্তৃতা দিচ্ছে। এড্রেস করছে। আপনি-আমরা সবাই শুনছি। মানুষ উত্তেজিত হচ্ছে।
সংস্কারের চেষ্টা
ড. ইউনূস তার কর্মপ্রচেষ্টা প্রসঙ্গে বলেন, সরকার যখন গঠন হলো, আমার কোনো চিন্তা ছিল না, ভাবনা ছিল না যে আমি হঠাৎ করে একটা সরকারের প্রধান হবো, দায়িত্ব পাবো এবং সেই দেশ এমন দেশ, যেখানে সব তছনছ হয়ে গেছে। কোনো জিনিস আর ঠিকমতো কাজ করছে না। যা কিছু আছে ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে কাজ করতে হবে। কাজেই আমার প্রথম চেষ্টা ছিল সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে আসল চেহারাটা বের করে আনা। মানুষের দৈনন্দিন জীবন সহজ করে আনা। সেই চেষ্টাটার মধ্যে ছিলাম। তারপর আস্তে আস্তে ভবিষ্যৎটা কী হবে, সেটার জন্য চিন্তা করা- কোনদিকে আমরা অগ্রসর হবো। প্রথম চিন্তা এলো যে একটা সংস্কার দরকার আমাদের। যে কারণে এসব ঘটনা ঘটেছে, ফ্যাসিবাদী সরকার চলতে পেরেছে। ১৬ বছর ধরে চলতে পেরেছে, আমরা কিছুই করতে পারি নাই। তিন-তিনটা নির্বাচন হয়ে গেল, ভোটারের কোনো দেখা নাই। এই যে অসংখ্য রকমের দুর্নীতি এবং ব্যর্থতা, মিসরুল ইত্যাদি- সেখান থেকে আমরা কীভাবে টেনে বের করে আনবো। টেনে বের করে আনতে গেলে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারগুলো করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, আমি বলবো, যে ধ্বংসাবশেষ থেকে এসেছিলাম, তার নতুন চেহারা আসছে। ভেসে উঠছে যে, আমরা অর্থনীতি সহজ করেছি। দেশ-বিদেশের আস্থা অর্জন করেছি। এটা তো পরিষ্কার- সারা দুনিয়ায় আমরা আস্থা স্থাপন করতে পেরেছি। এটা কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না যে আমি অমুক দেশের আস্থা অর্জন করতে পারিনি। যে দেশেই বলুন, তারা আমাদের ওপর আস্থা স্থাপন করেছে। শুধু আস্থা স্থাপন করছে না, বিপুলভাবে করেছে। তারা বলছে আমরা অতীতে যা করি নাই, তার চেয়ে বেশি করবো এখন, যেহেতু আমরা দেখছি যে সুন্দরভাবে সরকার চলছে এখন। সেজন্য তারা বলছে। কাজেই একটা তো বড় প্রমাণ। যখনই আপনি দেশের সারিগুলা দেখবেন- প্রত্যেকটা দেশ নিজে এসে বলেছে, আমরা তোমাদের সমর্থন করছি। তোমাদের যা দরকার আমরা দেবো। অবিশ্বাস্য রকমের সহায়তা দিয়েছে তারা।
অন্তর্বর্তী সরকারের একটা বড় লক্ষ্য হিসেবে আপনি সংস্কারের কথা বলেছেন। এটি নিয়ে আপনি অনেকগুলো কমিশনও গঠন করেছেন। কিন্তু এখন যেহেতু আপনারাই বলছেন যে, বছরের শেষে নির্বাচন হবে। তো এই অল্প সময়ের মধ্যে আপনারা সংস্কার কতটা করতে পারবেন বলে মনে করেন- বিবিসির এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা জানান, আমরা প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আমরা একেবারে প্রত্যেকটা সুপারিশ দেব। সুপারিশের সঙ্গে কথা থাকবে যে, আপনার রাজনৈতিক দল এটা কি সমর্থন করেন কিনা? এটাতে রাজি আছেন কিনা? রাজি থাকলে বলেন, রাজি না থাকলে বলেন। এই যে সুপারিশটা আছে সেটার মধ্যে যদি কোনো একটা সংশোধনী এনে রাজী হবেন, সেটা বলেন। এটা কি নির্বাচনের আগে সংশোধন করা ঠিক হবে নাকি নির্বাচনের পরে- সব প্রশ্নের এখানেই সমাবেশ তাতে আছে।
রাজনৈতিক দলকে শুধু বলতে হবে কোনটা? সবকিছু মিলানোর পর আমরা এটা ঠিক করবো কোন সুপারিশে সবাই একমত হয়েছে। সেটা আলাদা করবো যে এটাতে সবাই একমত হয়েছে। এরকম যে সব সুপারিশে তারা একমত হয়েছে, সেগুলো আমরা আলাদা একটা কাগজে নিয়ে আসবো যে, এসব বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে। তবে এটাকে আমরা বলবো একটা চার্টার- জুলাই চার্টার। আর সবাইকে আহ্বান জানাবো, আপনারা সবাই যেহেতু একমত হয়েছেন এটাতে সই করে দেন। জুলাই চার্টারের মতোই আমরা চলব। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই নির্বাচনটা হবে। নির্বাচনের আগে যেটা বলেছেন সেটা নির্বাচনের আগে হবে, যেটা নির্বাচনের পরে বলেছেন, সেটা নির্বাচনের পরে হবে। এটা আপনাদের বিষয়। কিন্তু আপনারা একমত হয়েছেন। সেই ঐকমত্যই আমরা গঠন করার চেষ্টা করছি।
এরপরও কেন সংশয়?
সরকারের সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে স্পষ্ট কথার পরও কেন সংশয়, সেই প্রশ্ন আসে। প্রধান উপদেষ্টার ইঙ্গিতে বোঝা যায়, অস্থিরতা সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির প্রধান ভারতে অবস্থান করে বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। তার সরকারের মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে জাতিসংঘের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের পর দলটির প্রধান শেখ হাসিনা ও অন্য নেতাদের অস্থিরতা বেড়েছে। ৫ মার্চ ২০২৫ তারিখে এ রিপোর্ট ইউএন হিউম্যান রাইটসের প্রধান ভলকার তুর্ক মানবাধিকার কমিশনে উপস্থাপন করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে বাংলাদেশের বিক্ষোভের ওপর ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং রিপোর্টটি পেশ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসকের সমর্থকরা শেষ যে জিনিসটি চায়, তা হলো বিশ্বকে জুলাই-আগস্টে বিক্ষোভকারীদের ওপর তার সরকারের দমন-পীড়নের বর্বরতার কথা মনে ভুলিয়ে দেওয়া। যতক্ষণ না স্বৈরাচারের সময় সংঘটিত অপরাধ এবং অন্যান্য অপরাধের বিচার ও জবাবদিহি না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত জাতীয় সমঝোতায় এগিয়ে যাওয়া কঠিন হবে। এ অপরাধগুলোর ওপর আলোকপাত করা অতীতকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য নয়, বরং নিরাময় ও দেশকে এগিয়ে যেতে সক্ষম হওয়ার জন্য।
জাতিসংঘের এ রিপোর্ট শেখ হাসিনা ও তার দলের গণহত্যার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিচারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই নানা উপায়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য নানা অপচেষ্টায় লিপ্ত এ শক্তি। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গ্রুপের সহিংসতা উসকে দেয়া হয়েছে। তাদের চাঁদাবাজির নেটওয়ার্কে ফ্যাসিবাদ বিরোধীদলকে যুক্ত করে অপকর্ম জারি রাখার চেষ্টা হচ্ছে। এমনকি ফ্যাসিবাদী সরকারের আনুকূল্যপ্রাপ্ত অলিগার্ক যার লাখ লাখ কোটি টাকা ব্যাংকের মালিকানা দখল করে বের করে নিয়েছে, তারা ফ্যাসিবাদ বিরোধীদলের শীর্ষনেতৃত্বের সাথে যোগাযোগ করার তথ্যও বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।
জানা যাচ্ছে, দ্রুত ও ইনক্লুসিভ নির্বাচনের কথা বলা হলেও ফ্যাসিবাদী শক্তি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবং এর নির্বাচন সংস্কার প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিতে চায়। এর সাথে ফ্যাসিবাদী সরকারের বাইরের পৃষ্ঠপোষকদের যোগসূত্র রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।