রাজনীতিকদের কাছে এ মুহূর্তের প্রত্যাশা
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:৪০
॥ মুজতাহিদ ফারুকী ॥
বিশ্ব পরিস্থিতি এখন বেশ ঘোলাটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে পাশ্চাত্যের উন্নত দেশগুলোর উদ্যোগে উদারনৈতিক রাজনীতি, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিকতা ও আইনবিধির ভিত্তিতে যে নিয়মনির্ভর (জঁষব নধংবফ) বিশ্বব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল, মূলত তা এখন ক্ষয়িষ্ণু। এই বিশ্বব্যবস্থার যে মুখ্য প্রবক্তা ও রক্ষক সেই যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে হাঁটতে শুরু করেছে। এখন আর নীতি-নৈতিকতা, বিধিব্যবস্থা বা আইনকানুন নয়, আমেরিকা একক কর্তৃত্বশালী বিশ্বব্যবস্থার দিকে যাচ্ছে। অনেকটা মধ্যযুগের রাজা-মহারাজাদের সামন্তবাদী প্রবণতাই তার মধ্যে পরিস্ফুট। আমেরিকাই সেরা- এ স্লোগানে গোটা বিশ্বকে এক জটিল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছেন দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুদ্ধ বন্ধের কথা বলে তিনি গায়ের জোরে নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চাইছেন নানা দেশের ওপর। ফিলিস্তিনের গাজা গায়ের জোরে দখল করে নেওয়া এবং সেখানকার বাসিন্দাদের উৎখাত করে প্রতিবেশী দেশগুলোয় ঠেলে দিতে চাইছেন। রাশিয়ার সঙ্গে মিলে ইউক্রেনকে বাধ্য করতে চাইছেন তার ভৌগোলিক অখণ্ডতা বিসর্জন দিয়ে আপস-নিষ্পত্তি করতে। চীন, কানাডা, মেক্সিকোসহ অনেক দেশের ওপর অপরিমেয় শুল্কারোপ করেছেন বা করতে যাচ্ছেন। অর্থাৎ কোনো নিয়মনীতি নয়, আমেরিকা যা বলবে সেটাই আইন। সেটাই বাধ্যতামূলকভাবে অন্যদের মানতে হবে। এটি হলো জঙ্গলের আইন যাকে বাংলায় বলা হয় মাৎস্যন্যায়। যেখানে বড় মাছ ছোট মাছকে গিলে খাবেÑ এটাই সত্য, এটাই নিয়ম। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার ‘কুলি-মজুর’ কবিতায় যে প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘এমনি করে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল?’ সেই প্রশ্নই আজ সত্যে পরিণত করতে চাইছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সবলের রাজ্য তথা যোগ্যতমের ঊর্ধ্বতন নীতি কায়েম করছেন। কিন্তু এর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে সারা বিশ্বেই। যুক্তরাষ্ট্রের পরম মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, মেক্সিকো ও চীন পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছে। আর তাতে করে কার্যত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বে প্রথম একটি বৃহত্তম মেরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।
এমনই এক জটিল বিশ্বে স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশ নতুন করে পা রাখতে চাইছে। কিন্তু কাজটা সহজ নয়। বিশেষ করে পতিত স্বৈরাচারের একমাত্র বিদেশি মিত্র আমাদের বৃহত্তম প্রতিবেশী দেশটি চুপ করে বসে নেই। এরই মধ্যে দেশটির সরকারপ্রধান বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের কাছে নালিশ করে এসেছেন। সেভাবে পাত্তা না পেলেও তিনি যে চুপ করে বসে থাকবেন, এমন নয়। স্বৈরাচারী হাসিনার পতনের পর ছয় মাসে তারা বাংলাদেশের সরকারকে এক মুহূর্তের জন্যও স্বস্তির সাথে কাজ করতে দেয়নি, এখনো দিচ্ছে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নানা ঘটনার সূত্র মিলিয়ে বলছেন, ভারত এখন প্রচারণা শুরু করেছে এই বলে যে, বাংলাদেশে ইসলামী মৌলবাদী শক্তির উত্থান ঘটেছে। এ ধরনের প্রচারণা কেবল ভারত নয়, বাংলাদেশের ভেতরেও একটি মহল সেই হাসিনা যুগের জঙ্গিবাদের বয়ান সামনে আনার চেষ্টা করছে। এ মহলটিকে সবাই চেনে। এরা বিপদ নয়। বিপদ হলো, এদেশের ইসলামী শক্তিগুলোর মধ্যকার অনৈক্য এবং প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে এদের বোঝাপড়ায় শিথিলতা। বাংলাদেশে ইসলামী মৌলবাদের উত্থানের প্রসঙ্গ কোনোভাবে প্রতিষ্ঠা পেলে এটি অবধারিত যে, যুক্তরাষ্ট্র শুধু নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ গোটা পাশ্চাত্য বিশ্বই এ টোপ গিলবে। সন্ত্রাসবিরোধী বৈশ্বিক যুদ্ধের এরা সবাই সহযোদ্ধা। এটি যদি ঘটে, তাহলে বাংলাদেশে যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক, তাদের জন্য সময়টা সুখকর হবে না।
এ প্রসঙ্গটি কি রাষ্ট্রসমূহের ডায়নিং টেবিলে পাত পাবার মতো? আমরা তা মনে করি না। তবে বাইরের বিশ্বের মানুষ কিন্তু এমন অভিযোগ সত্য বলেই মনে করতে পারে। কারণ আমাদের ভেতর থেকেই তেমন ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। প্রথমত, স্বৈরাচারের দোসররা অপতথ্য ও অসত্য প্রচারে সব ধরনের মিডিয়া কাজে লাগাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, দেশে এমন কিছু অনাকাক্সিক্ষত কর্মকাণ্ড হয়েছে বা হচ্ছে, যেগুলো ওই প্রচারণায় ইন্ধন হিসেবে কাজ করতে পারে। যেমন, মাজার ভাঙা, ওরস বন্ধ, হঠাৎ প্রমীলা ফুটবল বন্ধ, বইমেলায় বিতর্কিত লেখিকার নিষিদ্ধ নয় এমন বই প্রত্যাহারে বাধ্য করা। জানি, এসবের অনেকটাই অপতথ্য, অপবাদ। কিন্তু সাধারণ মানুষ তা খতিয়ে দেখতে পারে না। তারা গণমাধ্যমের; এমনকি সামাজিক মাধ্যমের কথাও বিশ্বাস করে। ফলে ক্ষতি যা হবার, তা হয়ে যায়।
সব কাজেরই একটা ইসলামী তরিকা আছে। যাকে বলা হয় হিকমত। মদ খাওয়া নিষিদ্ধ করার আগে কী করা হয়েছিল, সেটি কাগজে-কলমে সংশ্লিষ্টরা সবাই জানেন। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে তার প্রয়োগ নেই। পত্রিকায় সম্পাদকীয় বা উপসম্পাদকীয় লিখে খুব একটা কাজ হয় না, যতটা হয় সাংস্কৃতিক উদ্বুদ্ধকরণে। আর সে কাজটি সবচেয়ে ভালোভাবে করা সম্ভব যদি দেশের শিক্ষা কারিকুলামে আপনার আশা-আকাক্সক্ষার বিষয়গুলো থাকে। তাহলে শিশুরা সেভাবেই বেড়ে উঠবে, যেমনটা আপনি চান। কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্র পাকিস্তানের ২৪ বছরে যেমন, তেমনই স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৪ বছরেও শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলাম শিক্ষার ন্যূনতম ব্যবস্থাও করা সম্ভব হয়নি। গত ১৫ বছরে বরং উল্টো বিধর্মের সংস্কৃতি পুরোদমে চালু করা হয়েছে, যা আমাদের পূজার আবহে নববর্ষ উদযাপন শিখিয়েছে।
যাই হোক, আমরা কিছুটা প্রসঙ্গবিচ্যুত হয়ে পড়েছি। প্রসঙ্গ ছিল, দেশের আগামীর রাজনীতি কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়তে পরে। সে কথায় ফিরে যাই। যারাই রাজনীতি করবেন, তাদেরকে এক-দুই বছর নয়, দুই-চার দশকের হিসাব করে নিয়ে পা ফেলতে হয়। আধুনিক বিশ্বের রাজনীতিকরা সেভাবেই কাজ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলছিলাম। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বে একটা জটিল পরিস্থিতিই শুধু সৃষ্টি করেননি। তার সরকারের অন্তত পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ অবস্থানে এমন কয়েকজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি রয়েছেন, যারা বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণায় ট্রাম্পকে প্রভাবিত করতে পারবেন। প্রথম ব্যক্তিটি হলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের স্ত্রী ঊষা চিলুকুরী ভ্যান্স, যিনি একজন নিষ্ঠাবান হিন্দু। অন্ধ্রপ্রদেশের দুজন খ্যাতিমান স্কলার দম্পতির মেয়ে ঊষা যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত সেকেন্ড লেডি। তার চেয়েও বড় কথা ঊষা নিজেও অত্যন্ত মেধাবী একজন স্কলার, যার জেডির ওপর রয়েছে প্রভূত প্রভাব।
দ্বিতীয় ভারতীয় হলেন কাশ প্যাটেল, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষমতাধর গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) পরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছেন। তৃতীয় হলেন বিবেক রামস্বামী, যাকে ট্রাম্প সরকারের নতুন সৃষ্ট দক্ষতা বিভাগের (উঙএঊ) যুগ্ম-প্রধান নিযুক্ত করা হয় ইলন মাস্কের সঙ্গে। বিলিয়নিয়ার মাস্কের দাপটে বিবেক এরই মধ্যে ছিটকে পড়ার উপক্রম হলেও ট্রাম্পের ওপর তার প্রভাব খর্ব হয়নি। এছাড়া আছেন একজন হরমিত কে. ধীলন, যিনি বিচার বিভাগে নাগরিক অধিকার বিষয়ক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে মনোনীত। আছেন কলকাতায় জন্মগ্রহণকারী জয় ভট্টাচার্য। ইনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের (এনআইএইচ) পরিচালক। এই যে মার্কিন সরকারে ভারতীয়দের শীর্ষ অবস্থান গ্রহণ এটিকে খুব কাকতালীয় মনে করার কারণ নেই। ছোট করে দেখারও অবকাশ নেই। এই ভারতীয়রা শুধু ক্ষমতাধর নয়, একইসঙ্গে তারা তুখোড় মেধাবী এবং মরিয়া অর্থাৎ ডেসপারেট। যা চাইবে তাই করার তাকদ ও সৎসাহস তাদের আছে। বিশ্বব্যাংক আইএমএফের মতো বৈশ্বিক সংস্থাগুলোয় বেশ অনেক বছর ধরে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের উচ্চপদ দখলের প্রক্রিয়া নিশ্চিতভাবেই সুপরিকল্পিত কার্যক্রমের অংশ। ট্রাম্পের প্রশাসনে যারা জায়গা পেয়েছেন, এদের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিষয়ে যেকোনো ইস্যুতে ভারতের জন্য মার্কিন সরকারকে প্রভাবিত করা যে পানির মতো সহজ হবে, সেটি বাংলাদেশি রাজনীতিকদের মাথায় রাখার দরকার আছে।
এ মুহূর্তে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বের অবস্থানের কারণে বাংলাদেশবিরোধী শক্তি হয়তো তেমন একটা ক্ষতি করতে পারবে না। কিন্তু আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে সম্ভাব্য যে সরকার আসতে পারে তারা কতটা সামাল দিতে পারবেন, তা নিয়ে এখনই ভাবতে হবে।
আমরা যদি ধরে নিই যে, বিএনপিই ক্ষমতায় আসবে, তাহলে তাদের অতীতের সফলতা ব্যর্থতার মূল্যায়ন জরুরি। ১৯৯১-৯৬ সালের বিএনপি সরকার অর্থনীতিতে যেসব সংস্কার করেছিল, তা দেশের ইতিহাসে একদিন হয়তো স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। কিন্তু রাজনীতি, আইনশৃঙ্খলা, সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের সফলতা প্রশ্নাতীত নয়। তারা সংসদে যেমন বিরোধীদল আওয়ামী লীগের মোকাবিলা করতে পারেনি, তেমনি মাঠের রাজনীতিতে এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে দলটির ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডও রোধ করতে পারেনি। এমনকি যে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব গঠন করেছিল বিএনপি, সেই র্যাবের হাতে প্রথম নিহত হয় বিএনপিরই এক কর্মী। হয়তো তার বিরুদ্ধে দুর্বৃত্তপনার অভিযোগ ছিল। কিন্তু বিষয়টা কি এমন যে, বিএনপিতেই সব দুর্বৃত্তের ঘাঁটি ছিল? প্রশাসনের আমলাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা বিএনপি সরকারের ব্যর্থতার আরেক উদাহরণ। এর প্রমাণ জনতার মঞ্চ এখনো আমলা-বিদ্রোহের অভাবিত দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
শুধু এইটুকু বলে শেষ করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু তা হবার নয়। এ মুহূর্তে রাষ্ট্র সংস্কার যেখানে অপরিহার্য, ঠিক তখন দলটি গণআকাক্সক্ষার প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা সম্মান বিসর্জন দিয়ে সংস্কার ছাড়াই নির্বাচনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এটি শুধু দৃষ্টিকটু নয়, বরং দলটির তা জনগণের আস্থা হারানোর কারণ হয়ে উঠতে পারে। জনগণ ভাবতে পারে, দেশের জন্য কোনটি ভালো হবে, কোনটিতে জনগণের দীর্ঘমেয়াদি কল্যাণ নিহিত, সে বিষয়ে বিএনপির আদৌ কোনো বিবেচনা নেই, তাদের কাছে দলই প্রথম বিবেচনা। দলকে ক্ষমতায় বসানোই তাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। জুলাই বিপ্লবের পর দলের অনেক নেতাকর্মীর অনাকাক্সিক্ষত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে এরই মধ্যে মিডিয়ার একাংশ প্রচারণা শুরু করেছে। যদি বিএনপি নেতারা সতর্ক না হন, তাহলে বলতেই হবে, দলটির কপাল মন্দ। মহান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের যে সমন্বয়ের রাজনীতি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শুরু করেন, অনেকে বলেন, দলটি সেখান থেকে অনেক আগেই দূরে সরে গেছে। সম্প্রতি বিএনপির একশ্রেণির নেতার বক্তৃতা-বিবৃতিতে অন্য দলের প্রসঙ্গে যেসব অনাকাক্সিক্ষত বিষোদ্গার শোনা যাচ্ছে সেটিও উদ্বেগের।
আমাদের এসব অপ্রিয় বিষয়ের অবতারণা নিছক বলার জন্যই বলা এমন নয়। আমরা জুলাই বিপ্লবের চেতনা সমুন্নিত রেখে দেশে একটি সুষ্ঠু রাজনীতির ধারার বিকাশ চাই। গণতন্ত্র, পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং নীতিনির্ভর রাজনীতির ভিত্তিতে দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি চাই। আর এটি কেবল বিএনপি বা জামায়াত নয়, সব রাজনৈািতক দলের কাছেই কাম্য। সেজন্যই তাদের কাছে আমাদের চাওয়া তুলে ধরার জন্য এ প্রয়াস। এটিকে সমালোচনা মনে করলে ভুল হবে।
এতক্ষণ যা বলার চেষ্টা করা হলো, তাতে মোটাদাগে কয়েকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য। ১. বিশ্ব পরিস্থিতি জটিলতর হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে রাজনীতিকদের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কর্মসূচি নিতে হবে। ২. দুর্বিনীত প্রতিবেশীর ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। ৩. ইসলামী মৌলবাদী শক্তির উত্থান বিষয়ক প্রচারণা রোধে সুচিন্তিত কৌশল উদ্ভাবন ও প্রয়োগ করতে হবে। ৪. ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে সর্বজন গ্রহণযোগ্য নীতি ও পন্থা নিতে হবে এবং তা স্পষ্টভাবে জনসমক্ষে তুলে ধরতে হবে। ৫. রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার ও নির্বাচন বিষয়ে সুস্পষ্ট ঐকমত্য ও বোঝাপড়া তৈরি করতে হবে।
রাজনীতিতে ভুল করার কোনো অবকাশ নেই। রাজনৈতিক দল কোনো এক ব্যক্তির জমিদারি নয়, এটি সম্মিলিত নেতৃত্বে পরিচালিত একটি সুসংগঠিত সত্তা। এর কোনো মানবিক ভুল গ্রহণযোগ্য নয়। তবু নিকট অতীতে দলগুলো এমন কিছু ভুল করেছে, যেজন্য গোটা জাতির ১৮ কোটি মানুষকে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে চরম খেসারত দিতে হয়েছে। আমাদের আশা, এবার অন্তত দলগুলো বুঝেশুনে পা ফেলবে।