মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করুন
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:৩৯
রহমত, বরকত, মাগফিরাতের সওগাত নিয়ে মাহে রমজান আমাদের দ্বারে কড়া নাড়ছে। এবার মাহে রমজান আমরা পালন করব ইসলামবিদ্বেষী-স্বৈরাচারমুক্ত ভয়হীন পরিবেশে, ইনশাআল্লাহ। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এ সরকার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সম্মত রাখতে জনগণের অধিকার সংরক্ষণ অর্থাৎ মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় যথাযথ কার্যকর ভূমিকা পালন করবে- এমনটাই আমাদের আশা।
বিগত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার আমলে মাহে রমজানের শুরুতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম জনগণের নাগালের বাইরে চলে যেত। তিনি বাজার নিয়ন্ত্রণ না করে খাবারের নানা হাস্যকর মেনু জাতির সামনে তুল ধরতেন। যেমন- তেল ছাড়া রান্না, মিষ্টি কুমড়ার বেগুনি, পেঁয়াজের বদলে আপেল খাওয়া, গোশতের বদলে কাঁঠাল ইত্যাদি। এবার সবজির দাম জনগণের নাগালের মধ্যেই আছে। পেঁয়াজও ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। সিন্ডিকেট করে সয়াবিন তেল ও গরুর গোশতের দাম বাড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডিমের বাজারের নিয়ন্ত্রণও নাকি পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের হাতেই আছে। আমদানি পণ্য খালাসে জটিলতা সৃষ্টি করছে জনগণের লুটের টাকায় পতিত স্বৈরাচারের দোসররা- এমন খবরও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। এ কথা কারো অজানা নয়- পতিত স্বৈরাচার ও তার দোসররা যেকোনো মূল্যে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টার কমতি করছে না। আর এ কাজে তারা তাদের লুটপাটের অর্থ ব্যবহার করছে এবং আরো করবে। আমদানিকারকদের সাথে অশুভ আঁতাত করে পণ্যবাহী জাহাজ ডুবিয়ে দেয়া, পণ্য খালাস না করে পচিয়ে নষ্ট করা, পানিতে ফেলে দেয়ার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগও পতিত স্বৈরাচারদের বিরুদ্ধে অনেক পুরনো। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের এদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। জনগণকে সাথে নিয়ে তাদের সব অপতৎপরতা নস্যাৎ করতে হবে। মাহে রমজানে সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং ইসলামের সুমহান আদর্শ জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার কাছে পৌঁছানোর অন্যতম অনুষঙ্গ ইফতার মাহফিল হাসিনা সরকার নিষিদ্ধ করেছিল। আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার ইফতার মাহফিলকে উৎসাহিত করবে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ভূমিকা পালন করবে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই বহুলব্যয় বর্জন এবং সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কথা মনে রাখতে হবে।
মাহে রজমানের শিক্ষা ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও ত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহভীতি অর্জন। আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের কল্যাণে কাজ করার যোগ্যতা অর্জন হয় এ গুণাবলির মাধ্যমে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনও পবিত্র কুরআনে বলেছেন, রোজা ফরজ করা হয়েছে আমাদের তাকওয়া বা আল্লাহভীতির গুণ অর্জন করার জন্য। আমরা মনে করি, একজন মুমিন যথাযথভাবে সিয়াম বা রোজা পালনের মাধ্যমে তাকওয়ার গুণাবলি অর্জন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং আত্মশুদ্ধির সুযোগ পায়। এক মাস সিয়াম বা রোজা পালনের মাধ্যমে যে গুণাবলি তিনি অর্জন করেন, তার আলোকে বছরের বাকি বারো মাস জীবনযাপন করলে তার দ্বারা ঘুষ-দুর্নীতি, চুরি-ডাকাতি, জনগণের সম্পদ লুট, কারো অধিকারহরণ ও মানবতাবিরোধীসহ কোনো অপকর্মই করা তাদের দ্বারা সম্ভব নয়। মাহে রমজানের এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আল্লাহর বান্দাদের যে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়, তা সত্যিকার অর্থে একটি মানবিক সমাজ, দেশ ও বিশ্ব গড়ার জন্য খুবই জরুরি। কিন্তু যথাযথভাবে সিয়াম পালনের ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্র ও সরকারের। মাহে রমজানে অশ্লীলতা বন্ধ, দিনের বেলা হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ এবং প্রকাশ্যে পানাহার বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। অবশ্য এক্ষেত্রে যাদের জন্য রোজা ফরজ নয়, যেমন- শিশু, অসুস্থ, বৃদ্ধ, অক্ষম ও মুসাফিরদের কথা বিবেচনায় নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে হবে। তবে অবশ্যই তা প্রকাশ্যে নয়। বিশেষ করে রাস্তা-ঘাটে চলতে গেলে দেখা যায়, রোজাদারের সামনে শয়তানের অনেক চেলা প্রকাশ্যে ধূমপান করে, প্রকাশ্যে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি দেখায়, উচ্চ ভলিউমে গান-বাজনা বাজায়, যা মাহে রমজানের ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশ নষ্ট করে। এ মাসের পবিত্রতার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছোড়ার এমন দৃষ্টতা যারা দেখাবে, তাদের নিবৃত করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
আসুন, আমরা সবাই মিলে মাহে রমজানের পবিত্র রক্ষা করি। যথাযথভাবে সিয়াম পালন করি এবং তারাবি নামাজ আদায় করি। এবারের মাহে রমজানে রহমত, বরকত ও মাগফিরাত লাভের তাওফিক দান করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের তার প্রিয় বান্দা হিসেবে কবুল করুন। আমীন।