ছাত্র-জনতার বিপ্লব : গৌরবগাথা ‘পিঠ ভেদ করে নাভির পাশে আটকে ছিল বুলেট’


২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:০২

ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা: জুলাই আন্দোলনে নিহত সাদিকুর রহমানের বাড়িতে এখনো কাটেনি শোকের মাতম। সন্তানের কথা মনে হলেই ছবি বুকে ধরে কবরের কাছে চলে যান তার মা শাহানাজ বেগম। তিনি বলেন, সাদিকুর বলতো মা, আমি একদিন বড় মাওলানা হবো। তুমি শুধু আমার জন্য দোয়া কইরো মা। ওরা আমার বাবার স্বপ্নটা পূরণ হতে দিলো না।
সাদিকুর রহমানের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদীঘি ইউনিয়নের ফুলমালীচালা গ্রামে। বাবা লুৎফর রহমান কুয়েতপ্রবাসী। আর মাতা শাহানাজ বেগম। সাদিক ঢাকার আব্দুল্লাহপুরে জামিয়া দ্বীনি ইসলামিয়া মাদরাসার কিতাব বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। গত ১৯ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাযের পর রাজধানীর উত্তরা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে নিহত হন তিনি।
সাদিকুরের চাচা প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন বলেন, ‘পিঠ ভেদ করে নাভির পাশে আটকে ছিল একটি বুলেট।’ তৎকালীন ভয়াবহ আন্দোলনের কারণে আমরা থানায় অভিযোগ করতে পারিনি। এছাড়া ওর বাবা বিদেশে থাকে। এ বিষয়টি ঢাকার উত্তরা ও টাঙ্গাইলে আন্দোলনকৃত শিক্ষার্থীদের সমন্বয়করা জানেন। তাদের কাছে ওর প্রয়োজনীয় তথ্য জমা দেয়া হয়েছে। ইউপি মেম্বার মো. মজিবর রহমান বলেন, ছেলের জন্য সারা দিন কান্না করে সাদিকুরের মা পাগলের মতো হয়ে গেছেন। এসব দেখে আমরা যারা প্রতিবেশী স্বজন আছি, তারা খুব কষ্ট পাই। খুব হৃদয়বিদারক ঘটনা।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই সাদিকুর তার এক বন্ধুর সঙ্গে ঢাকার উত্তরা এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেন। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ওই দিন শুক্রবার জুমার নামায শেষে সাদিকুরসহ দুই শিক্ষার্থীকে মাদরাসায় না পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। দিনভর খোঁজাখুঁজির পর ওই রাতেই বিষয়টি প্রত্যেকের পরিবারকে জানানো হয়। পরিবারের লোকজন ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন থানা ও হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় জানতে পারেন সাদিকুর মারা গেছেন। উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার লাশ পাওয়া যায়। ওই রাতেই পরিবারের লোকজন হাসপাতাল থেকে সাদিকুরের লাশ বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরের দিন রোববার (২১ জুলাই) সকালে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় মামলা করতে চান কি না, জানতে চাইলে সাদিকুরের মা শাহানাজ বেগম বলেন, অনেকেই তাকে কল করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে মামলা করতে বলছেন। তবে মামলা করবেন কি না, এখনো সিদ্ধান্ত নেননি।
পরিবারটিকে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান সাগরদীঘি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ বাহার। তিনি বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে পরিবারটিকে বেশকিছু নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে।
জামায়াত নেতৃবন্দের কবর জিয়ারত: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত মাদরাসা শিক্ষার্থী সাদিকুর রহমানের (২১) কবর জিয়ারত করেছেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা জামায়াতের নেতৃবৃন্দ।
গত বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার সাগরদীঘি ইউনিয়নের ফুলমালীচালা গ্রামে সাদিকুর রহমানের বাড়িতে যান তারা। সেখানে কবর জিয়ারত শেষে তার পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
এ সময় ঘাটাইল আসনের বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত এমপি প্রার্থী ও টাঙ্গাইল জেলা শাখার সহকারী সেক্রেটারি হুসনী মোবারক বাবুল, ঘাটাইল উপজেলা আমীর মো. রাসেল মিয়া, ঘাটাইল উপজেলা পেশাজীবী ফেডারেশনের সভাপতি আসলাম সরকার, উপজেলা সেক্রেটারি হুমায়ুন কবিরসহ দলীয় নেতাকর্মীরা সঙ্গে ছিলেন।