১৮ কোটি মানুষের দেশ একটি সাজানো ফুলের বাগান-ডা. শফিকুর রহমান


১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:১৮

নারায়ণগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : গত ৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিশাল জনসমাবেশ। ঢাকা জেলা থেকে আলাদা হওয়ার ৩৯ বছর পর নারায়ণগঞ্জে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে সফল জনসভা করলো বাংলাদেশের অন্যতম সর্ববৃহৎ ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এর আগে জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের নারায়ণগঞ্জ আসার কথা থাকলেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। যদিও এখন তিনি নিজেই পলাতক। তবে এবারের জনসভাকে কেন্দ্র করে কঠোর অবস্থানে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ সদস্যদের। হাজার হাজার নেতাকর্মীর সমাগমে নারায়ণগঞ্জের মানুষের কাছে অস্তিতের জানান দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
সরেজমিন পূর্ব ঘোষিত সময়ের আগেই ভোর থেকে ফতুল্লার ইসদাইর এলাকায় ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে লোকজন আসতে শুরু করে। নগরজুড়ে বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে স্বেচ্ছাসেবীদের উপস্থিতির মাধ্যমে নগরীর শৃঙ্খলা বজায় রাখা হয়েছে। সমাবেশস্থল থেকে শুরু করে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। এছাড়া সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার উপস্থিতি ছিলো বলে জানায় পুলিশ। ভোরের আভাস শেষ হতেই স্টেডিয়ামের মাঠে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে। স্টেডিয়ামের বাইরে বড় পর্দায় জনসভা দেখার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে সেখানেও মানুষের জায়গা দেয়া সম্ভব হয়নি, এতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। জনসভার শুরুতেই বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য পেশ করেন।
নারায়ণণগঞ্জ জেলা ও মহানগর জামায়াতের নেতাকর্মীদের আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। এছাড়া জনসভায় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর সাবেক আমীর মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমদ, জেলা আমীর মমিনুল হক সরকার ও মহানগরী আমীর মুহাম্মদ আবদুল জব্বার, নারায়ণগঞ্জ জেলা শিবিরের সভাপতি আবু সুফিয়ানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
জামায়াতে ইসলামীর এ জনসভায় শুধু মুসলমান নয়, সনাতন ধর্মের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিও লক্ষ করা গেছে। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ট্রাস্টের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জয় কে রায় চৌধুরী বাপ্পী, নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন, মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বিষ্ণুপদ সাহা, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক সুশীল দা প্রমুখ।

সব হত্যাকাণ্ডের বিচার অবশ্যই করতে হবে
কক্সবাজার সংবাদদাতা: কক্সবাজারের বিশাল কর্মী সম্মেলনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা প্রতিশোধে বিশ্বাস করি না। তবে আমরা অবশ্যই অপকর্মের বিচার চাই। আমাদের কথা স্পষ্ট, সব হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। বিশেষ করে ২৪-এর গণহত্যার বিচার অবশ্যই হতে হবে। আগে বিচার, পরে অন্য কাজ। এ বিচার না হলে শহীদদের আত্মার সাথে বেঈমানী করা হবে। যারা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, সম্মান ও মর্যাদার সাথে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছে, আমরা তাদের সাথে বেঈমানী করতে পারি না।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি শনিবার কক্সবাজার সরকারি কলেজ মাঠে বিশাল কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ডা. শফিকুর রহমান। জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা নূর আহমদ আনোয়ারীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান এবং চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর ও সাবেক এমপি আলহাজ শাহজাহান চৌধুরী। এছাড়া বক্তব্য রাখেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি ডা. পরিমল কান্তি শীল।
ডা. শফিকুর রহমান আগামী নির্বাচনে সৎ মানুষকে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যদি তাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন, তাহলে সুশাসন, সুবিচার ও সুষম উন্নয়ন পাবেন। তিনি কক্সবাজারের চারটি আসনেই জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদের জয়ী করার আহ্বান জানান।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ স্বাধীনতা অর্জন করার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আমাদেরও সে রকম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের সেই আশা পূরণ হয়নি। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আমরা একটি স্বাধীন বিচারব্যবস্থা আজও পেলাম না। আমাদের সর্বোচ্চ বিচারালয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারক আদালতের এজলাসে বসেই বলেছেন, ‘আমি একজন শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ।’ আমি জানতাম, ছাত্রজীবনে তিনি একটি রাজনৈতিক দলের ক্যাডার ছিলেন। আমরা ধারণা করেছিলাম, বিচারকের আসনে বসার পর তারা বিচারকের আচরণ করবেন। দুইজন একই কথা বলেছিলেন। তার মধ্যে একজন আগে প্রধান বিচারপতির এজলাস ভাঙচুর করেছিলেন। আরেকজন দরজায় লাথি দিয়েছিলেন। এদের বিচারে আমাদের ১১ জন দায়িত্বশীলকে হারিয়েছি। আমাদের কাউকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। কাউকে কারাগারে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। অধ্যাপক গোলাম আযমের জেলখানায় মৃত্যুর জানাযায় যাতে মানুষ অংশ নিতে না পারে, সেজন্য ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল। এরপরও আমাদের কোনো নেতা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার চিন্তাও করেননি, চেষ্টাও করেননি। বরং মীর কাসেম আলী আমেরিকা থেকে চলে এসেছেন। এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। যারা প্রতিবাদ করেছিল, তাদের কেটে কেটে টুকরা টুকরা করা হয়েছিল। কেবল পুরুষ না, মহিলাদেরও একইভাবে হত্যা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সন্তানদের আওয়াজ ছিল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিজ’। আমরা বৈষম্য চাই না। আমরা ন্যায়বিচারপূর্ণ একটি সাম্যের সমাজ চাই। কিন্তু যারা বৈষম্য তৈরি করেছিল সমাজে। সমাজকে পক্ষ-বিপক্ষের রূপ দিয়েছিল। সমাজের মধ্যে মেজরিটি-মাইনরিটি, সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু বলে যুদ্ধ লাগিয়ে রেখেছিল। তাদের প্রয়োজন ছিল পুলিশ দিয়ে গুলি করে আন্দোলন দমন করা। কিন্তু দুনিয়া সাক্ষী যে, দেশের যুবকরা জীবন দেওয়ার জন্য তৈরি হয়ে যায়, কোনো স্বৈরাচারী সরকার কোথাও কোনোভাবে দমন করে তারা সফলতা লাভ করতে পারেনি।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের গর্বিত সন্তানদের স্যালুট জানাই। আমরা সাড়ে ১৫ বছর আন্দোলন করেও স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে পারিনি। এটাই সত্য কথা। শেষ আঘাতটা তোমাদের নেতৃত্বে হয়েছে এবং জাতি সফল হয়েছে। এর কৃতিত্ব আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের। কেউ কেউ অবশ্য নিজেরা দাবি করে আমি মাস্টারমাইন্ড, অমুক ভাই মাস্টারমাইন্ড, তমুক নেতা মাস্টারমাইন্ড। আল্লাহর আইন চাওয়ার কারণে জামায়াতের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্যাতন চালানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন জামায়াতের আমীর।
জামায়াতের আমীর জিজ্ঞেস করেন কক্সবাজারে চাঁদাবাজি-দখলবাজি আছে কি-না। উপস্থিত জনতা বলেন, ‘আছে’। কারা করেন? তারা কী অন্য কোনো গ্রহ থেকে এসে করে? জবাব আসে ‘না’। এদেশের কিছু মানুষ করে। তাদের কাছে আমাদের বিনীত অনুরোধ। এগুলো করবেন না। এগুলো করলে শহীদের আত্মা কষ্ট পায়। আহতরা কষ্ট পায়। সবাই যার যার জায়গায় রাজনীতি করবেন যার যার আদর্শ নিয়ে। কিন্তু চাঁদাবাজি-দুর্বৃত্তপনা করবেন না। তিনি বলেন, আপনারা কি জানেন, চাঁদাবাজির মাধ্যমে এদেশের একজন ভিক্ষুককেও কষ্ট দিচ্ছেন? চাঁদাবাজি বাদ দিয়ে ভিক্ষা করার পরামর্শ দেন জামায়াতের আমীর। আওয়ামী লীগের দিকে ইঙ্গিত করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এরাই মূলত ডাকাত। এরা দেশের সবকিছু লুণ্ঠন করেছে। মানুষের জায়গা-জমি দখল করেছে। মানুষের ইজ্জতের ওপর হাত দিয়েছে। মানুষকে বাস্তুভিটাহারা করেছে। আমরা এদের সব অপকর্মের বিচার চাই। আমরা আমাদের ভাইদের আশ্বস্ত করতে চাই, আমরা এদেশে মেজরিটি-মাইনোরিটি মানি না। যারাই বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছে, তারা সবাই এদেশের মর্যাদাবান নাগরিক। ধর্ম যার যার, বাংলাদেশ আমাদের সবার। ইসলাম কারো ওপর জোর করার অধিকার রাখে না। অন্য ধর্মও আরেক ধর্মের ওপর জোর খাটাতে পারবে না, যদি সেটা ধর্ম হয়ে থাকে। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সবাই প্রতিবেশী ভাই ভাই হয়ে থাকবো, ইনশাআল্লাহ।
কারো উসকানিতে কারো ক্ষতিসাধন করতে দেওয়া হবে না জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এদেশের সব মানুষ আমাদের কাছে আমানত। একজন অপরাধী হলেও তাকে আইনের হাতে তুলে দেবো। তবে এ কথাও বলতে চাই, বিচারকরা আইনের নামে অবিচার করুক, তা দেখতে চাই না। দুর্ধর্ষ অপরাধী লুটেরাদের জনগণ আপনাদের হাতে তুলে দিল আর আপনারা পরেরদিন তাদের ছেড়ে দেবেন- এটা আমরা দেখতে চাই না। আমরা দেখতে চাই, যারা এ সমাজকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছিল; তাদের জেলের জিম্মায় রেখে বিচারকাজ সম্পন্ন করতে হবে। আর যারা এখনো ধরা পড়েনি, জনগণ সহযোগিতা করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। তাদের পাকড়াও করে জেলের মধ্যে নিক্ষেপ করতে হবে। কক্সবাজারকে বিশাল সম্ভাবনাময় উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আশ্চর্যের বিষয় হলো, এখানে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই। কক্সবাজার কী সৎমায়ের এলাকা? না-কি বাংলাদেশের অংশ।
উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা যদি মেহেরবানি করে আমাদের হাতে এদেশের সেবা করার তাওফিক দান করেন, তাহলে ইনশাআল্লাহ যে এলাকাগুলো বৈষম্যের শিকার হয়েছে, আমাদের দায়িত্ব হবে সেই জায়গায় প্রথমে উন্নয়ন পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু তাই বলে অন্যরাও বঞ্চিত হবেন না। যার যেটা ন্যায্য পাওনা, সে সেটা পাবেন। অধিকার পাওয়ার জন্য রাজপথ অবরোধ করতে হবে না; এখন যেভাবে হচ্ছে। যখন যা দরকার, বৈষম্যহীন দৃষ্টিকোণ থেকে তখন তা করবো, ইনশাআল্লাহ। সরকারে যারা যাবেন, সেবার দায়িত্ব যারা পাবেন, তাদের বাংলাদেশের প্রতি ইঞ্চি জায়গাকে সম্মান করতে হবে। প্রতিটা মানুষকে সম্মান করতে হবে। আপনারা মানুষের মালিক নন, মানুষের সেবক- এটা মাথায় রেখে যদি কাজ করেন, তাহলে মানুষের ওপর তাণ্ডব ও ফ্যাসিজম চালানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশ আবার ফ্যাসিজমের হাতে ফিরে যাক, সন্ত্রাসীদের হাতে ফিরে যাক- এটা কি বাংলাদেশের মানুষ চায়? নিশ্চয়ই না। যদি আমরা না চাই, তাহলে দেখতে হবে আল্লাহর দেওয়া সর্বশ্রেষ্ঠ আইনে কারা দেশকে গড়ে তুলতে চাইছে? তাদের হাতের সাথে আগামীতে জনগণকে হাত মেলাতে হবে।
তিনি কক্সবাজারের চারটি আসনে ন্যায় এবং ইনসাফের ভিত্তিতে দেশ চালাতে বদ্ধপরিকর এবং যারা অতীত ও বর্তমানে তার প্রমাণ দেখিয়েছে, আমি অনুরোধ করবো আপনাদের প্রত্যেকটা ভোট মা-বোনসহ সবাই ভোট দেব তাদের বাক্সে। কারণ ভোট আপনার আমানত। আপনার ভোটেই সরকার নির্বাচিত হবে। অতএব ভালো মানুষকে ভোট দেবেন বলে আশা রাখি। তাহলে সুশাসন, সুুবিচার ও সুষম উন্নয়ন উপহার দেব। তিনি বলেন, তাহলে আজ থেকে শুরু হলো পরিপূর্ণ লড়াই।
এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, সারা দেশে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে জোয়ার শুরু হয়েছে। আজকের সমাবেশ প্রমাণ করে জামায়াতে ইসলামী গণমানুষের সংগঠন। আজকে মানুষ বুঝতে শুরু করেছে বিগত ৫৩ বছর আমরা যা দেখিনি, করতে পারিনি; আজ সেই স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাস্তব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিচার দাবি করে তিনি আরও বলেন, এদের বিচার না করা হলে ছাত্র-জনতা আবার রাস্তায় নামবে। এরপরও বিচার করে ছাড়বে। তিনি বলেন, দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কেবল ক্ষমতার পালাবদল হলেই হবে না। ভালো মানুষের শাসন লাগবে। একদিকে ন্যায় বিচারের জন্য ভালো আইন লাগবে আর আইন বাস্তবায়নের জন্য সৎ নেতৃত্ব লাগবে। কুরআন-সুন্নাহর বাইরে রাষ্ট্রীয় কোনো আইন করা যাবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, জাস্টিস নিশ্চিত করতে হলে আমাদের মদিনার মডেল অনুসরণ করতে হবে।
মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা হলেও মানুষ সেই স্বাধীনতার সুফল পায়নি। দেশের শাসকরা মাথা উঁচু করে দেশ শাসন করতে ব্যর্থ হয়েছে। আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি শাসন করেছে এবং ফ্যাসিজম কায়েম করেছে। সর্বশেষ ছাত্ররা ফ্যাসিজম থেকে দেশ মুক্ত করেছে। তিনি বলেন, হাসিনার পলায়নের পর দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তা সহ্য হচ্ছে না। তাই দিল্লিতে বসে হাসিনা আবারো ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
আওয়ামী লীগ এবং ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে গোটা দেশ ঐক্যবদ্ধ জানিয়ে মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, দেশবাসী বিডিআর হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনার বিচার দেখতে চায়। সুবিচার হলে ফ্যাসিস্ট হাসিনার ফাঁসি হবে।
আলহাজ শাহজাহান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ৮৩ বছর ধরে একই বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে; ন্যায় ইনসাফ ও বৈষম্যহীন ইসলামী ওয়েলফেয়ার রাষ্ট্র কায়েম করলেই মানবতার মুক্তি হবে। তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো ইসলামিক কাজ করতে দেওয়া হয়নি। ১৯৭৪ সালে শেখ মুজিব বলেছিলেন, আমি জামায়াতকে দাবিয়ে দিয়েছি। আজ আমি জানতে চাই, আপনি কি জামায়াতকে দাবিয়ে দিতে পেরেছেন? ১ আগস্ট আবার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হলো, ৫ তারিখেই হাসিনা দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হলেন। আমাদের চেতনা হবে বৈষম্যবিরোধী। আগে ফ্যাসিস্টদের বিচার হতে হবে।
হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি ডা. পরিমল কান্তি শীল বলেন, হামিদুর রহমান সাহেব এমপি থাকাকালে কেউ বলতে পারেনি যে অনুদান পায়নি। এ জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টানের মধ্যে কোনো পার্থক্য তৈরি করে না। তিনি বলেন, ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম। আমাদের সবার শরীরে একই রক্ত। তিনি ডাক্তার শফিকুর রহমানের মতো মানবিক মানুষ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শুধু এখানে নয়, সারা দেশের আনাচে-কানাচে থাকা হিন্দুদের দেখে রাখবেন আপনারা।
কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহসান উল্লাহ, কক্সবাজার জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান, নায়েবে আমীর মুফতি হাবিবুল্লাহ, এডভোকেট ফরিদ উদ্দিন ফারুকী, সাবেক এমপি অধ্যাপক এনামুল হক মঞ্জু, এডভোকেট শাহজালাল চৌধুরী, অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরী, শ্রমিক নেতা শামসুল আলম বাহাদুর, জেলা জামায়াত নেতা মুহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ, ওলামা মাশায়েখ নেতা মাওলানা শফিউল হক জিহাদী, কক্সবাজার শহর জামায়াতের আমীর আব্দুল্লাহ আল ফারুক, ছাত্রনেতা আবদুর রহীম নূরী, সাবেক ভিপি শহিদুল আলম বাহাদুর, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট সলিমুল্লাহ বাহাদুর, সদর উপজেলা আমীর অধ্যাপক খুরশীদ আলম আনসারী, সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল প্রমুখ।