ইসলামী আন্দোলন, আনুগত্য এবং নফস ও শয়তানের দ্বন্দ্ব
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:১৭
॥ আশরাফ নুয়াইম ॥
ইসলামী আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হলো আল্লাহর দীনকে প্রতিষ্ঠা করা, ন্যায় ও শান্তি নিশ্চিত করা, এবং মানুষের আত্মিক ও সামাজিক জীবনে ইসলামের সুমহান আদর্শ বাস্তবায়ন করা। এ পথে চলতে গিয়ে একজন মুমিনকে আনুগত্যের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হয় এবং নিজের নফস ও শয়তানের সঙ্গে নিরন্তর দ্বন্দ্বে লিপ্ত হতে হয়। নিচে বিষয়গুলো আলোচনা করা হলো।
১. ইসলামী আন্দোলনের মূলনীতি
ইসলামী আন্দোলন হচ্ছে এমন একটি প্রচেষ্টা, যা সমাজে ইসলামী জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এর মূলনীতি হলো-
ক. তাওহিদ প্রতিষ্ঠা : আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস এবং জীবনের সব ক্ষেত্রে তার আনুগত্য।
খ. ইবাদত : ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ।
গ. শরিয়াহর অনুসরণ : ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ইসলামী আইন মেনে চলা।
ঘ. আদর্শ চরিত্র গঠন : মুমিন ব্যক্তির মধ্যে নৈতিকতা, ধৈর্য এবং আত্মত্যাগের গুণাবলি তৈরি করা।
২. আনুগত্যের গুরুত্ব
ইসলামে আনুগত্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আল্লাহর প্রতি আনুগত্য হলো ঈমানের মৌলিক শর্ত। একইভাবে ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যও অত্যাবশ্যক।
ক. আল্লাহর প্রতি আনুগত্য:
আল্লাহ বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং নিজেদের কর্মগুলো নষ্ট করো না।” (সূরা মুহাম্মদ: ৩৩)। আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি শয়তানের প্ররোচনা থেকে বাঁচতে পারে।
খ. নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য : ইসলামী আন্দোলনে নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য আন্দোলনের শৃঙ্খলা বজায় রাখে। সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে ইসলামী আন্দোলন বিভ্রান্তিতে পড়তে পারে।
৩. নফসের সঙ্গে দ্বন্দ্ব
নফস হলো মানুষের অন্তর্গত চাহিদা ও প্রবৃত্তি, যা তাকে ভালো বা মন্দ কাজের দিকে ধাবিত করে। নফসের সঙ্গে দ্বন্দ্ব মানবজীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ক. নফসের প্রকারভেদ : নফসে আম্মারা: মন্দ কাজের প্রতি প্ররোচিত করে। নফসে লাওয়ামা: ভুল কাজের জন্য অন্তরে অনুশোচনা সৃষ্টি করে। নফসে মুতমাইন্না: শান্ত ও আল্লাহর সন্তুষ্টিতে তৃপ্ত।
খ. নফসকে নিয়ন্ত্রণের উপায় : ইবাদত ও দোয়া: আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে নফসকে সংযত রাখা যায়। তাকওয়া অর্জন: আল্লাহভীতি বৃদ্ধি করলে নফসকে নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
সুন্নাহ অনুসরণ: রাসূল (সা.)-এর জীবনাদর্শ অনুকরণ করে নফসের প্ররোচনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৪. শয়তানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব
শয়তান মানুষের প্রধান শত্রু, যা তাকে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করতে চায়।
ক. শয়তানের কৌশল : প্ররোচনা: শয়তান মানুষকে গুনাহের দিকে আহ্বান জানায়। সন্দেহ সৃষ্টি: ঈমান ও আমলের ব্যাপারে সন্দেহ ঢুকিয়ে দেয়। অলসতা: ইবাদত ও ভালো কাজ থেকে মানুষকে বিমুখ করে।
খ. শয়তানের প্রতিরোধ : ইস্তেগফার ও তাওবা : আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
জিকির : নিয়মিত জিকির শয়তানের কুমন্ত্রণাকে দুর্বল করে।
জ্ঞানচর্চা : ইসলামের সঠিক জ্ঞান অর্জন করলে শয়তানের ধোঁকা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
৫. ইসলামী আন্দোলনে নফস ও শয়তানের বাধা
ইসলামী আন্দোলনে জড়িত ব্যক্তিদের নফস ও শয়তানের দ্বন্দ্ব আরও প্রবল হয়।
ক. আত্মসংশোধনের চ্যালেঞ্জ : নফসের কারণে অহংকার, হিংসা এবং ক্ষমতার লোভ দেখা দিতে পারে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে কুরআন-হাদিসের ওপর ভিত্তি করে আত্মসংশোধনের চেষ্টা করতে হবে।
খ. আন্দোলনের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুতি : শয়তানের প্ররোচনায় আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। একতা ও দৃঢ় বিশ্বাস বজায় রেখে শয়তানের প্রভাব প্রতিহত করতে হবে।
৬. সফলতা অর্জনের উপায়
ইসলামী আন্দোলন সফল করতে হলে নফস ও শয়তানের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে।
ক. আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল : সব কাজে আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখতে হবে। তার সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে।
খ. সংগঠনের ঐক্য ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা : নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য এবং সবার মধ্যে একতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। মতবিরোধ দূর করে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
গ. দাওয়াহ কার্যক্রম : ইসলামের সৌন্দর্য এবং আদর্শ মানুষের সামনে তুলে ধরা। মানুষকে ন্যায় ও সত্যের পথে আহ্বান করা।
ঘ. ধৈর্য ও সংকল্প : ইসলামী আন্দোলনে সফলতা অর্জনে ধৈর্য অপরিহার্য। সংকল্প দৃঢ় রেখে সব বাধা অতিক্রম করতে হবে।
সমাপনী : ইসলামী আন্দোলন আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি মহান প্রচেষ্টা। এ পথ সহজ নয়; এখানে নফস ও শয়তানের সঙ্গে নিরন্তর দ্বন্দ্ব। আনুগত্য, তাকওয়া, ধৈর্য এবং একাগ্রতার মাধ্যমে এ দ্বন্দ্বে জয়লাভ করা সম্ভব। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা যদি আত্মশুদ্ধি, সঠিক দিকনির্দেশনা এবং আল্লাহর সাহায্য লাভের জন্য সচেষ্ট হন, তবে সমাজে ন্যায়, শান্তি এবং ইসলামের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। আমার সীমাবদ্ধ জ্ঞান ও ত্রুটিগুলোর জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি। আশা করছি, তিনি আমাদের সুপথগামী হিসেবে কবুল করবেন। আমীন।