‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অভিযান সফল করতেই হবে
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:১৩
সারা দেশে শয়তান ধরার অভিযান শুরু হয়েছে। দেশের সর্বস্তরের মানুষের সাথে আমরাও এ খবরে আনন্দিত। তবে সাথে শঙ্কাও আছে। কারণ ‘মুখ ঢাকা মুখোশের এ দুনিয়ায় মানুষ চেনা বড় দায়।’ ২০২৪-এর গণআন্দোলনের পর রং বদল করে ফ্যাসিবাদের অনেক দোসরÑ চাঁদাবাজ, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী শয়তান মুখোশ পরে মানুষের সমাজে মিশে গেছে। হ্যাঁ, তাদেরসহ চিহ্নিত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতেই সারা দেশে গত ৮ ফেব্রুয়ারি শনিবার বিশেষ অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে যৌথবাহিনী। এ অভিযানেরই নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ বা শয়তান শিকার অভিযান।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ অভিযানের কথা জানানোর পর জনমনে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। তবে এ অভিযান শুরুর পরও এমন কিছু সংবাদ শিরোনাম এবং ঘটনা আমাদের নজরে আসছে, যা কাক্সিক্ষত নয়। শঙ্কার কারণ এটিই। যেমনÑ ‘ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আজ (৯ ফেব্রুয়ারি) রোববার বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় কয়েকটি গুলি ছোড়ার ঘটনাও ঘটে। এতে এক কিশোর গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এছাড়া ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন আরও একজন।’ (দৈনিক প্রথম আলো, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫)। সিরাজগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ২০। (দৈনিক মানবজমিন, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫)। এছাড়া চাঁদাবাজি, ঘুষসহ দুর্নীতি এখনো বন্ধ হয়নি। বন্ধ হয়নি বাজার সিন্ডিকেট, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের বুুলিং। একটি প্রভাবশালী নিউজ পোর্টালের খবরে প্রকাশ, গণঅভ্যুত্থানের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো অব্যাহতভাবে সাইবার বুলিং ও প্রাণনাশসহ নানা ধরনের হুমকির শিকার হচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীরা। এর থেকে রেহাই পাচ্ছেন না অভ্যুত্থানের পক্ষের সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীও। এ অবস্থায় অনেকেই মানসিকভাবে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; এমনকি জেলা-উপজেলার ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। সম্প্রতি ফোনকলে হত্যা ও পরিবারের ক্ষয়ক্ষতির হুমকি, সামাজিক মাধ্যমে হয়রানি ও ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে হয়রানিসহ নানা হুমকির ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের কোনো কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে।’ আমরা মনে করি, সরকারের ব্যর্থতার কারণেই ফ্যাসিবাদের দোসর শয়তানরা (ডেভিল) এমন দুঃসাহস দেখাচ্ছে।
ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়েছে ৬ মাস হয়েছে অথচ সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো ফ্যাসিবাদের দোসর শয়তানদের (ডেভিল) গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করতে পারেনি। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকেও দায়ী করছে জনগণ। কারণ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অনেক দলের নেতা-কর্মীদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা না থাকলেও তারাই এখন বড় বেনিফিশিয়ারি। তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে অপরাধীরা দিব্যি আছেন। অতীত অপরাধের কালি মুখোশের আড়ালে ঢেকে তাদের চাঁদাবাজি, দখলবাজি, ঘুষ দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ নতুন পরিচয়ের কারণে তারা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ডেভিল হান্টার বা শয়তান শিকারিদের তাই খুব সতর্কতার সাথে তীর ছুড়তে হবে। যেন রং বদলানো অপরাধীরা রেহাই না পায়। অন্যদিকে যারা অপরাধী ননÑ এমন কোনো নিরীহ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হন। আমরা মনে করি, তবেই ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অভিযান সফল হবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, এ অভিযানের সফলতার ওপর নির্ভর করছে আমাদের আগামী দিনের সুখী, সমৃদ্ধ, মানবিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের বাস্তবায়ন। তাই ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অভিযান সফল করতেই হবে।