দেশ ডেভিলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অপারেশন চলবে


১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:৩৬

স্টাফ রিপোর্টার : ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে পরিচালিত হচ্ছে এ ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’। এ অপারেশন যৌথভাবে পরিচালনা করছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্যানুযায়ী বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পতিত আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন অবনতি ঘটাতে না পারে, সেজন্য এ অপারেশন চালানো হচ্ছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত থেকে সারা দেশে একযোগে শুরু হওয়ায় এ অপারেশনে ১১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত ২ হাজার ২৫৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ তথ্য পুলিশ সদর দপ্তরের দেওয়া।
ইংরেজি শব্দ ডেভিল অর্থ শয়তান আর হান্ট অর্থ শিকার। ফলে ডেভিল হান্টের অর্থ দাঁড়ায় শয়তান শিকার করা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষিত ডেভিল হান্ট বলতে দেশবিরোধী চক্র, সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের বোঝানো হয়েছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেন, প্রতিটি অপারেশনের একটি কোড নেম দেওয়া হয় অপারেশনকে ফোকাস করার জন্য।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সন্ত্রাসীরা দেশকে অকার্যকরের উদ্দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে। তারা ষড়যন্ত্র করে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে। এর মধ্যে তাদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেশে কয়েকটি সন্ত্রাসী কার্যক্রম সংঘটিত হয়েছে। তাই দেশের সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে এ অপারেশন শুরু করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর যৌথভাবে পরিচালিত এ অপারেশনের প্রাথমিকভাবে বেশ কয়েকটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্য পূরণে সারা দেশে একযোগে অপারেশন পরিচালনা করা হচ্ছে।
সূত্রে আরও জানা যায়, এ লক্ষ্যগুলোর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি কারা করছে এবং এ সন্ত্রাসীরা কীভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, সেগুলো শনাক্ত করা। শনাক্তের পর দেশব্যাপী অভিযান পরিচালনা করে সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা। এছাড়া আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা যেন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করতে না পারে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল এবং উন্নত করার লক্ষ্যে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ কাজ করবে। পাশাপাশি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে গোয়েন্দাদের মাধ্যমে। পরে গোয়েন্দারা তথ্য দিলে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে দমন করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ডেভিল ধরতে শুরু হওয়া অপারেশনের সর্বশেষ পাওয়া তথ্যানুযায়ী, গত ১০ ফেব্রুয়ারি সোমবার থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ৬০৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিশেষ এ অভিযানে একই সময়ের মধ্যে ২টি পিস্তল, ১টি এলজি, ১টি ওয়ান শুটারগান, ১টি পাইপগান, ২টি গুলিসহ বেশকিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। অপারেশন ডেভিল হান্ট ছাড়াও বিভিন্ন মামলায় ২৪ ঘণ্টায় (১০ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি) ১ হাজার ৭৭৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর বিশেষ অভিযান শুরুর পর শনিবার দিবাগত রাত থেকে মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত ২ হাজার ২৫৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যৌথবাহিনী দেশজুড়ে অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু করেছে। গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে এক সভায় এ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। অভিযান সম্পর্কে এর আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ঘোষণা দিয়েছেন, দেশ ডেভিলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অপারেশন ডেভিল হান্ট চলবে। এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাতে গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাড়িতে মারধরের শিকার হন ১৫-১৬ শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলছেন, শিক্ষার্থীরা ওই রাতে ডাকাতির খবর পেয়ে তা প্রতিহত করতে সেখানে গিয়েছিলেন। তখন তাদের মারধর করা হয়।