আসুন, বই পড়ি
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:৪৯
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে প্রেরিত আমাদের জন্য প্রথম আদেশ, ‘পড়’। তিনি তাঁর নামে মানবজাতিকে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পড়া হলো জ্ঞানের দরজা। বিশ্বজাহানের মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে চেনা ও জানার জন্য জ্ঞানার্জন অপরিহার্য। জ্ঞান-বিজ্ঞানের যত অগ্রগতি হচ্ছে, সত্যের আলো তত বিকশিত হচ্ছে। জ্ঞানের আলো বিকাশের মাধ্যমেই মহান স্রষ্টার সাথে আমাদের সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। সুশৃঙ্খল লিপিতে মলাটবদ্ধ জ্ঞানই বই। অবশ্য বই বা পুস্তক মানেই জ্ঞানের আকর নয়। মানবজাতির চির দুশমন ইবলিস শয়তানের অনুসারীরাও বইয়ের মাধ্যমে তাদের ভ্রান্ত মতবাদ প্রচার করে থাকে। তাই বই নির্বাচনে আমাদের অবশ্যই সাবধান হতে হবে। প্রতিবছর একুশে বইমেলা উপলক্ষে প্রচুর নতুন বই প্রকাশিত হয়। মেলা উপলক্ষে প্রচুর বই বিক্রিও হয়। আসুন, এবারও আমরা মেলায় যাই, বই কিনি এবং পড়ি। বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না। বিশ্বে ধনে-জ্ঞানে উন্নত প্রকৃত জাতিই প্রচুর বই পড়ে। তাই শুধু জ্ঞানের জন্য নয়, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্যও বই পড়া জরুরি। নৈতিক চরিত্র সমৃদ্ধ করতেও চাই বই।
গত ১ ফেব্রুয়ারি শনিবার এবারের একুশে বইমেলার উদ্বোধন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এবারের অমর একুশে বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছেÑ ‘জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান এবং তার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ।’ সত্যি দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের অবসান শেষে এখন সময়, দেশ গড়ার। ফ্যাসিবাদমুক্ত উন্নত গণতান্ত্রিক রাজনীতি বিকাশের মাধ্যমে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়ার সমৃদ্ধ সংগ্রাম চলছে। এ সংগ্রামের অগ্রনায়ক আমাদের তরুণ যুবক সন্তানরা। স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে তাদের হাত ধরে আমাদের সবাইকে জেগে উঠতে হবে। প্রধান উপদেষ্টাও বইমেলার উদ্বোধনকালে বলেছেন, ‘বরাবরই একুশে মানে জেগে ওঠা। একুশে মানে আত্মপরিচয়ের সাথে মুখোমুখি হওয়া। একুশে মানে অবিরাম সংগ্রাম। নিজের পরিধিকে আরও অনেক বাড়িয়ে নেয়া। এবারের একুশের প্রেক্ষিত আমাদের নতুন দিগন্তে প্রতিস্থাপন করেছে। একুশ আমাদের মূল সত্তার পরিচয়। একুশ আমাদের ঐক্যের দৃঢ় বন্ধন।’ মূল সত্তার পরিচয় পেতে এবং ঐক্যের বন্ধন সুদৃঢ় করতে আমাদের মনের গহিনে লুকায়িত ঘুমন্ত বিশ্বাসকে (ঈমান) জাগিয়ে তুলতে হবে। আধিপত্যবাদী শক্তির চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস অর্জন করতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন অধ্যয়ন ও গবেষণার মাধ্যমে আমাদের শিকড়ের অনুসন্ধান। আগামী দিনের বংশধরদের কাছে আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরতে হবে। তাই জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল আকর আসমানী জ্ঞানের আলো বিচ্ছুরণসমৃদ্ধ বই বেশি বেশি পড়তে হবে। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগতের সাথে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে আমাদের অনেকে বই পড়া ভুলে ডিজিটাল ডিভাইস মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ, পিসি, টিভিতে মজে থাকেন। এতে বই পড়ার সৃজনশীলতার মূল দর্শনের খোঁজ মেলে না। তাই উল্লেখিত প্রযুক্তির প্রয়োজনীয় ব্যবহারের সাথে সাথে বই পড়া বাড়াতে হবে। প্রযুক্তি প্রয়োজনে ব্যবহার করতে হবে, এ নিয়ে বিতর্ক নেই। তবে পড়ার প্রকৃত আনন্দ ও লক্ষ্য পূরণে আমাদের বইয়ের কাছে ফিরে যেতে হবে। তাই আবার বলছি- আসুন, আমরা বই পড়ি।