মহেশখালী-কুতুবদিয়া রক্ষায় সুপার ডাইকে বেড়িবাঁধ নির্মাণ সময়ের দাবি


২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৩৮

কক্সবাজার থেকে মাহবুবুর রহমান : মহেশখালী-কুতুবদিয়া দ্বীপ রক্ষায় বিদেশি আদলে বেড়িবাঁধ নির্মাণ এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে উন্নয়নবঞ্চিত মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সাড়ে ৫ লাখ মানুষ বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। কুতুবদিয়ায় ৬টি ইউনিয়ন, মহেশখালীতে একটি পৌরসভাসহ ৮টি ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষ দীর্ঘদিন থেকে উন্নয়নবঞ্চিত। তারা ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও সাগরের সাথে যুদ্ধ করে টিকে আছে। বিগত ৫৩ বছরে শুধু সরকার পরিবর্তন হয়েছে, মহেশখালী-কুতুবদিয়া দ্বীপের সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি, অথচ মহেশখালী- কুতুবদিয়ায় উৎপাদিত লবণ সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করছে এবং মহেশখালী- কুতুবদিয়ায় উৎপাদিত চিংড়ি বৈদেশিক বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাছাড়া মহেশখালীর মিষ্টি পান, সোনাদিয়ার শুঁটকি দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জন করেছে। মহেশখালী-কুতুবদিয়া দুটি আলাদা উপজেলা হলেও মহেশখালী ৩টি আলাদা দ্বীপ নিয়ে মহেশখালী উপজেলা গঠিত। তার মধ্যে ধলঘাট, মাতার বাড়ি মূল ভূখণ্ডের সাথে একীভূত হলেও সোনাদিয়া দ্বীপ সম্পূর্ণ আলাদা, এখানকার মানুষের জীবনযাপন, শিক্ষা, চিকিৎসা ও তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। সোনাদিয়ায় কোনো বেড়িবাঁধ নেই, ফলে দুর্যোগকালীন সোনাদিয়ায় বসবাসকারী নারি, শিশু, বৃদ্ধরা ও গবাদিপশুর আশ্রয় নেয়ার কোনো উপযুক্ত স্থান না থাকায় জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে। মহেশখালী দ্বীপের ঢাল হিসেবে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট সোনাদিযা দ্বীপের সবুজ প্যারাবন নিধন করে চিংড়ি ঘের নির্মাণ করে দখলের মহোৎসব চলছে, প্যারাবন দখল নিয়ে কয়েকটি গ্রুপের মধ্যে রীতিমতো ঝগড়া, হানাহানি, মারামারি ও খুনের ঘটনাও ঘটেছে। ফলে সোনাদিয়ার জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন। জলদস্যু, ভূমিদস্যু প্যারাবন নিধনকারীদের হাত থেকে সোনাদিয়াকে উদ্ধার করে সোনাদিয়ায় বসবাস কারি মানুষ ও জীববৈচিত্র্যকে রক্ষার উপায় বের করতে হবে।
সাবেক সংসদ সদস্য এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া বঙ্গোপসাগর বেষ্টিত পৃথক দুটি উপজেলা। এর মধ্যে রয়েছে পৃথক তিনটি দ্বীপ। এখানে অনেক রিসোর্স ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিরাজমান। মানুষের সম্পদ ও জীবন রক্ষায় উপকূলীয় অঞ্চলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সংসদ সদস্য থাকাকালে আমি অব্যাহতভাবে চেষ্টা করেছি। এখনো সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত সুপার ডাইক প্রকল্পে ধলঘাট-মাতারবাড়ী এবং কুতুবদিয়া এ দুইটি দ্বীপ অন্তর্ভুক্ত হলেও সোনাদিয়া দ্বীপকে কেন প্রকল্পের বাইরে রাখা হয়েছে, তা বোধগম্য নয়। প্রস্তাবিত সুপার ডাইক প্রকল্পের উদ্দেশ্য সফল করতে হলে সরকারকে প্রথমত, প্রকল্পের মধ্যে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি; বিশেষ করে দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের অর্থ লুটপাটের অসৎ উদ্দেশ্যে ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখতে হবে। দ্বিতীয়ত, সরকার কর্তৃক প্রকল্পের ত্রুটি-বিচ্যুতি যাচাইপূর্বক তা পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। তাতে অসৎ উদ্দেশ্যে প্রণীত প্রাক্কলিত অতিরিক্ত ব্যয় কমে আসবে। তৃতীয়ত, সোনাদিয়া দ্বীপ এবং দ্বীপে বসবাসরত মানুষের জীবন রক্ষা ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে সোনাদিয়াকে সুপার ডাইক প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এরপর প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে নতুন মাত্রা যোগ হবে। সেইসাথে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার মানুষের জীবন থেকে প্রতি বছর আপনজন ও বিপুল সম্পদ হারানোর দুঃখ-বেদনা দূর হবে। তাই আমি সাড়ে ৫ লক্ষাধিক অবহেলিত দ্বীপবাসীর নিরাপদ জীবনযাপন ও তাদের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে আগামী বাজেটে সুপার ডাইক প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ রাখার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।