আওয়ামী দুঃশাসনে ভগ্ন প্রায় সব সেক্টর, প্রয়োজনীয় সংস্কারে উদগ্রীব মানুষ


১০ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:০০

॥ সাইদুর রহমান রুমী ॥
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা এবং তার নেতা কর্মীদের অপশাসন আর দুর্নীতিতে দেশের প্রতিটি সেক্টর ধ্বংসপ্রায়। ১৬ বছরে অবিরত টাকা পাচার, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোয় ঘুষ-দুর্নীতি, ব্যাংকিং সেক্টরে ব্যাপক লুটপাটসহ প্রতিটি সেক্টরে অপশাসন-দলীয়করণে ভেঙে পড়েছিল রাষ্ট্রব্যবস্থা। তৈরি হয় ফ্যাসিজম, ব্যাপক সামাজিক বৈষম্য আর অস্থিরতা। কোটাবিরোধী থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়া ছাত্র-জনতার ব্যাপক অভ্যুত্থানে হাসিনার পলায়নের পর নতুন বাংলাদেশে প্রয়োজন দেখা দিয়েছে ব্যাপক সংস্কার। বৈষম্য নিরসনে শত প্রাণের বিনিময়ে বহু আকাক্সিক্ষত এ সংস্কারের আশায় মুখিয়ে আছে সাধারণ মানুষ। নির্বাচনপূর্ব এ সংস্কার যেন সত্যিকারের অর্থবহ হয়, তাই দেখার অপেক্ষায় মানুষ।
ফ্যাসিস্ট হাসিনার ১৬ বছরে ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রতিটি সেক্টর : হাসিনার পলায়নের পর অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা শ্বেতপত্র কমিটির সদস্যরা অবাক হয়ে যান সর্বগ্রাসী দুর্নীতির চিত্র দেখে। এমন কোনো সেক্টর বাদ যায়নি, যেখানে ঘুষ-দুর্নীতি আর টাকা পাচার করা হয়নি। যেটুকু সামান্য তথ্য পাওয়া যায়, তাতে দেখা যায় মোট ২৮টি উপায়ে করা হয়েছে এসব দুর্নীতি- যাতে ২৮ লাখ কোটি টাকা অবৈধভাবে পাচারের তথ্য পাওয়া যায়। শ্বেতপত্র কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবারিত দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার অপপ্রয়োগের মাধ্যমে দেড় দশক ধরে বাংলাদেশে একটি ‘চোরতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।
দেউলিয়ার দ্বারপ্রান্তে ব্যাংকিং খাত
প্রকাশিত শ্বেতপত্রে ব্যাংক খাতকে সবচেয়ে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, এ খাতে অনিয়মের মূল হোতা ‘সরকারদলীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা’, যার ফলে ২০২৪ সালের জুন মাসের শেষে মোট ৬ দশমিক ৭৫ লাখ কোটি টাকা অবলোপনযোগ্য সম্পদ সৃষ্টি হয়েছে, যা ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণের ৩১.৭%। ব্যাংকিং খাতে এস আলমসহ কয়েকটি গোষ্ঠীকে নামে-বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সুযোগ দেয়া হয়, যার নেপথ্য ছিল শেখ পরিবার সদস্যরা। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা ব্যাংক খাতকে কৃষ্ণগহ্বরের (ব্ল্যাকহোল) সঙ্গে তুলনা করেছেন। বলা হয়েছে, দেশের ব্যাংক খাতে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা, যা দিয়ে ১৩টি মেট্রোরেল বা ২২টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত। শ্বেতপত্রে বলা হয়, ভেতরে ভেতরে দেউলিয়ার দ্বারপ্রান্তে ১০টি ব্যাংক রয়েছে। বেনামি এসব ঋণ বিতরণে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতোমধ্যে এক্সিম ব্যাংকসহ ৬ ব্যাংকের এমডিকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো- এক্সিম, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, এসআইবিএল, আইসিবি ইসলামিক, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক।
২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ এ হিসাবে প্রতিবছর গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। যদিও পাচারের সঠিক সংখ্যা আরো বেশি বলে ধারণা করা হয়। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি রিপোর্টর্স (জিএফআইআরএস) এবং কিছু নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে টাকা পাচারের হিসাব করেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। টাকা পাচারের বিষয়টিকে অর্থনীতিতে ক্ষতিকর ‘টিউমার’ হিসেবে তারা আখ্যা দেন। এতে বলা হয়, বিগত সরকারের আমলে অর্থনীতি ও সম্পদের বড় অংশ এ ক্ষতিকর টিউমার চুষে নিয়েছে যা প্রতি বছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ৪ শতাংশের পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। এছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রফতানি আয় ও প্রবাস আয় থেকে যত অর্থ এসেছে, এর এক-পঞ্চমাংশ অর্থ এক বছরে পাচার হয়। বিদেশি ঋণ ও বিনিয়োগ হিসেবে যত অর্থ আসে, এর দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থ পাচার হয়। এ টাকা পাচার যজ্ঞে হতবাক অর্থনীতিবিদরা।
আড়াই লাখ কোটি টাকার ঘুষ লেনদেন
আওয়ামী আমলে অবৈধ ঘুষ বাণিজ্য শিল্পে রূপ নিয়েছিল। সরকারি বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন পণ্য ও সেবা কেনা হয়েছে, তাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭ লাখ কোটি টাকা। এই অর্থ সড়ক, সেতু, বিদ্যুৎ অবকাঠামো, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ ইত্যাদি খাতে ব্যয় হয়েছে। এ থেকে ঘুষ হিসেবেই দিতে হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার কোটি থেকে দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো। ঘুষের টাকার মধ্যে ৭৭ হাজার থেকে ৯৮ হাজার কোটি টাকা গেছে আমলাদের পকেটে। রাজনৈতিক নেতা ও তাদের সহযোগীদের কাছে গেছে ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা।
পুঞ্জীভূত ঋণ বেড়ে ১৫৫ বিলিয়ন ডলার
আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের লুটপাটের দায় এখন সাধারণ মানুষের ঘাড়ে। ক্রমাগত লুটপাটে সরকারি প্রকল্পগুলোর জন্য পুঞ্জীভূত ঋণ বর্তমানে ১৫৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা স্থানীয় মুদ্রায় ১৭ লাখ কোটি টাকার বেশি। এতে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯৮ হাজার ৫৫৪ টাকা।
শেয়ারবাজার থেকে আত্মসাৎ ১ লাখ কোটি টাকা
সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতারণা, কারসাজি, প্লেসমেন্ট শেয়ার ও আইপিওতে জালিয়াতির মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ১ লাখ কোটি বা ১ ট্রিলিয়ন টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রভাবশালী উদ্যোক্তা গোষ্ঠী, ইস্যু ম্যানেজার, নিরীক্ষক ও বিনিয়োগকারীদের একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির মাধ্যমে কারসাজির একটি বড় নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে। বাজারের মধ্যস্থতাকারী দেউলিয়া হয়েছে, তাদের ইক্যুইটি ৩০ হাজার কোটি টাকা নেতিবাচক।
বার্ষিক উন্নয়ন ব্যয়ের অর্ধেক টাকাই লুটপাট
বার্ষিক উন্নয়ন ব্যয়ের প্রায় অর্ধেক টাকাই লুটপাট হয়ে যেত গত ১৬ বছরে। অথচ উন্নয়নের ভুয়া বুলি আওড়িয়ে এক শ্রেণির পোষ্যতোষী পুঁজিবাদ তৈরি করা হয়েছিল, যার সুবিধাভোগী ছিল স্বৈরাচার ও তার সহযোগীরা। জানা যায়, নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে যে পরিমাণ কর ছাড় দেওয়া হয়েছে, সেটা অর্ধেকে নামিয়ে আনা গেলে দেশের শিক্ষা বাজেট দ্বিগুণ, স্বাস্থ্য বাজেট তিনগুণ করা সম্ভব ছিল।
বহু প্রতীক্ষিত সংস্কার
সর্বগ্রাসী দুর্নীতি-অনিয়ম আর বৈষম্য নিরসনে শত প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত সত্যিকার স্বাধীনতার পর বহু প্রতীক্ষিত সংস্কারের জন্য মুখিয়ে রয়েছে সাধারণ মানুষ। দীর্ঘদিনের অপশাসনে সৃষ্ট সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ভঙ্গুর অবস্থা থেকে জাতিকে রক্ষার লক্ষ্যে সংস্কারের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ছয়টি কমিশন গঠন করে ইউনূস সরকার। ৫ অক্টোবর পাঁচটি কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এরপর তা গ্যাজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারকে প্রধান করে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চেয়ারম্যান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীকে প্রধান করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, বিচারপতি শাহ আবু নাইমকে প্রধান করে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, সাবেক সচিব সফর রাজ হোসেনকে প্রধান করে পুলিশ সংস্কার কমিশন এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানকে প্রধান করে দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। এরপর ১৮ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আরও পাঁচটি কমিশন গঠন করা হয়। সেগুলো হলো গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন, শ্রম সংস্কার কমিশন এবং নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। সাংবাদিক কামাল আহমেদকে প্রধান করে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ প্রফেসর তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি প্রফেসর এ কে আজাদ খানকে প্রধান করে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে শ্রম সংস্কার কমিশন এবং নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভিন হককে প্রধান করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। এর মাঝে প্রথম ধাপে গঠিত ছয় সংস্কার কমিশনের সবগুলোরই মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এগুলো হলো জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও সংবিধান সংস্কার কমিশন। তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় পেয়েছে। আর বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনকে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন অক্টোবরে গঠনের পর এ পাঁচ কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ৯০ দিন সময় দেয়া হয়েছিল। সে হিসাবে ২ জানুয়ারির মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমার কথা ছিল। এছাড়া সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল ৬ অক্টোবর। ৫ জানুয়ারির মধ্যে এ কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। এদিকে দ্রুত নির্বাচন দেয়ার জন্য বিএনপির ক্রমবর্ধমান চাপ প্রয়োগের মাঝে সাধারণ মানুষের সংস্কার কার্যক্রমগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন না হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিগত এত বছরের হাজারো বৈষম্য প্রতিরোধে আগে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারগুলো জরুরি। সাধারণ মানুষের এ টোন রাজনৈতিক দলগুলো যত সহজে বুঝতে পারবে ততই মঙ্গল।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, বিগত সময়ে চরম ত্রুটিপূর্ণ তিনটি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে গেছে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করা না হলে পুরনো খেলোয়াড়রা (যারা এসব খাত ধ্বংস করেছে) ফিরে আসতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ফাহিম মুসফিক বলেন, আমাদের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতারা ভাবছেন, এ অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনই আমাদের মূল লক্ষ্য, যা অর্জনের জন্য তারা গত ১৫-১৬ বছর ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন। কিন্তু সফল হননি। এর মূল কারণ ছিল তারা মানুষকে রাস্তায় নামাতে পারেননি। ফলে তারা যেসব আন্দোলন গড়ে তুলেছেন, তা ধোপে টেকেনি। এত বছরে মানুষ যা দেখেছে, তা হলো, বিভিন্ন সরকার মানুষের সত্যিকার প্রত্যাশা পূরণ করেনি। সবাই ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার বন্দোবস্তের দিকে ছুটেছে। প্রতিটি সরকারই পূর্ববর্তী সরকারের চেয়ে অধিক দলীয়করণ, একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরাচারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে। এর মাঝে হাসিনা সরকার সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। সে পূর্ববর্তী সকল সরকারের চেয়ে জ্যামিতিক হারে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অর্থশালী হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। ফলে একটানা ১৫ বছরের আওয়ামী সরকারের পতনের জন্য বিরোধীদলগুলো উল্লেখযোগ্য আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। তাদের ডাকে সেভাবে মানুষ রাস্তায় নামেনি, গণআন্দোলন সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ‘পুরোনো বাংলাদেশের’ চিন্তা-চেতনা মানুষ গ্রহণ করেনি। অথচ ছাত্র আন্দোলন এক দফায় রূপ নিলে তাদের ডাকে সারা দেশের লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। ছাত্র আন্দোলন বৈষম্যহীন বাংলাদেশের ডাক দিয়েছিল, যেটি ছিল মানুষের বহু দিনের স্বপ্ন। আর বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন ব্যাপক সংস্কার। আর গণমানুষের এ প্রত্যাশার বিষয়টি যত দ্রুত রাজনৈতিক দলগুলো বুঝবে, ততই দেশের জন্য মঙ্গলজনক।
কী বলছে সাধারণ মানুষ
আবরার সাজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং করছেন। থাকেন রাজধানীর মিরপুর এলাকায়। আগামীতে দেশ গঠনে সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে সোনার বাংলাকে বলেন, দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠনে এবং বেকারত্ব নিরসনে বর্তমান সরকার ছাত্র-জনতার প্রাণ বিসর্জন অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে দেখবে। একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন অবশ্যই এ সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। কিন্তু তার আগে দুর্নীতিমুক্ত ও বৈষম্যহীন দেশ গঠনে অবশ্যই কতগুলো সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। রাজনৈতিক সরকারগুলো অনেক সময় ইচ্ছে করলেও অনেক বিষয় করতে পারে না, যা এ সরকার স্বাচ্ছন্দ্যে করতে পারে।
রাজধানীর মুগদা সরকারি হাসপাতালের সামনের সবজি বিক্রেতা তবারক আলী বলেন, আমরা বেশি কিছু চাই না। চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতিমুক্ত ব্যবসা করতে চাই। বউ-বাচ্চাকে নিয়ে দুইটা ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচতে চাই। মতিঝিল এলাকার কথা হয় ব্যাংকার ফয়েজ আহমদের সাথে। সোনার বাংলাকে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ অন্যসব সেক্টরের মতো ব্যাংকিং সেক্টরও শেষ করে দিয়ে গেছে। খোদ সরকারি মদদে দেশের আর্থিক খাত পরিকল্পিতভাবে নষ্ট করে দেয়ার ইতিহাস অন্য দেশে আছে কিনা, সন্দেহ। তাই নির্বাচনের আগে সর্বাগ্রে প্রয়োজন একটি অর্থবহ সংস্কার, যেটি গণমানুষের প্রত্যাশা।