সম্পাদকীয়

ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসরদের দ্রুত বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি সময়ের দাবি


১০ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:০০

ফ্যাাসিস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পালিয়েছেন। তার দীর্ঘ দেড় দশকের দুঃশাসনে লাখ লাখ মানুষ নির্যাতিত হয়েছেন হাসিনার নির্যাতনের মধ্যে ছিল জোর করে গুম, খুন, হত্যা, বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে বিনাবিচারে হত্যা, সাজানো ভিত্তিহীন অভিযোগে জুডিশিয়াল কিলিং (বিচারিক হত্যা), আটক ব্যক্তিদের ধরে নিয়ে চলন্ত ট্রেন, বাস, ট্রাকের নিচে ফেলে হত্যা, বিনাবিচারে আটক ব্যক্তিদের নিয়ে হেন অপরাধ নেই, যা তিনি করেননি। এসব কিছুই তিনি করেছেন অগণতান্ত্রিকভাবে বিনাভোটে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ঠেকাতে রাষ্ট্রক্ষমতাকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বাধ্য করা হয়েছে নিরস্ত্র জনতার বিক্ষোভ-সমাবেশে গুলি চালিয়ে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করতে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার মতো রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন হাসিনা। বাংলাদেশ কেন, এ উপমহাদেশে জনতার বিক্ষোভ দমনে হেলিকপ্টার থেকে গুলির ঘটনা এটিই প্রথম। নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু অতিউৎসাহী দলান্ধ সদস্য এসব অপরাধে হাসিনা ও আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করেছে। তাদের হাতে লেগে আছে শহীদের রক্ত। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয়ে এখনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকে চিরজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্ব বরণ করেছেন।
ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার এখন সময়ের দাবি। দিন যতই যাচ্ছে, বিচারের দাবি ততই জোরালো হচ্ছে। যদিও একটি বড় রাজনৈতিক দল বিচার ও সংস্কারের চেয়ে নির্বাচন নিয়ে বেশি ব্যস্ত। আমরাও মনে করি, হাসিনা ও তার দোসরদের দ্রুত বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিবিপ্লব হলে ফ্যাসিস্ট শক্তি তাদের লুটের টাকায় বিচার প্রক্রিয়ায় শুধু বাধাই সৃষ্টি করবে না, অভ্যুত্থানের নায়কদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলকভাবে প্রতিশোধ নিতেও মরিয়া হবে। অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ প্রতিশোধ নিতে ভয়ংকর নির্মম। তাই তাদের মিষ্টি কথায় ভুলে গেলে বিপদ বাড়বে বৈ কমবে না।
তবে আশার কথা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও জোরপূর্বক গুমের অভিযোগে দুটি মামলায় এ পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। প্রসিকিউশন এ ১১ জনকে গ্রেফতারের জন্য দুটি আবেদন করলে গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেখ হাসিনাসহ অন্য আসামিদের গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ২০২৫ সাল বিচারের বছর, ফ্যাসিস্টদের বিচারের বছরÑ এ কথা ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আমরাও মনে করি, বিলম্বিত বিচার অবিচারের শামিল। বিচার প্রক্রিয়া যত বিলম্বিত হয়, ন্যায়বিচারের সম্ভাবনা ততই হ্রাস পায়। এজন্যই দ্রুত বিচার আবশ্যক। বিষয়টি আরো কড়াভাবে ব্যক্ত হয়েছে ইংরেজি ভাষার প্রচলিত প্রবাদবাক্য Justice delayed is justice denied-এ। অর্থাৎ দেরিতে বিচার মানে বিচার অস্বীকার করা। ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসরদের দ্রুত বিচারের ব্যর্থতা হবে জাতি হিসেবে আমাদের আত্মহত্যার শামিল। তাই এ ভুল করা যাবে না।