কীভাবে এলো ইংরেজি নববর্ষ
২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:০৭
পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়েছে নানা আয়োজন। কিন্তু কীভাবে এলো এ ইংরেজি নববর্ষ?
ইংরেজি নববর্ষের ইতিহাস
আধুনিক গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ও জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে শুরু হয় নতুন বছর। তবে ইংরেজি নতুন বছর উদযাপনের ধারণাটি আসে খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দে। তখন মেসোপটেমিয় সভ্যতার (বর্তমান ইরাক) লোকেরা নতুন বছর উদযাপন শুরু করে। তারা তাদের নিজস্ব গণনা বছরের প্রথম দিন নববর্ষ উদযাপন করত।
তবে রোমে নতুন বছর পালনের প্রচলন শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৩ সালে। পরে খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ অব্দে সম্রাট জুলিয়াস সিজার একটি নতুন বর্ষপঞ্জিকার প্রচলন করেন, যা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত। রোমে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের অন্তর্গত বছরের প্রথম দিনটি জানুস দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। জানুস প্রবেশপথ বা সূচনার দেবতা। তার নাম অনুসারেই বছরের প্রথম মাসের নাম জানুয়ারি করা হয়।
এ তো গেল যিশুর জন্মের আগের কথা। যিশুখ্রিষ্টের জন্মের পর তার জন্মের বছর গণনা করে ১৫৮২ সালে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি এ ক্যালেন্ডারের নতুন সংস্কার করেন, যা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত। বর্তমানে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই কার্যত দিনপঞ্জি হিসেবে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন বছর পালন শুরু হয় ১৯ শতক থেকে। নতুন বছরের আগের দিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর হচ্ছে ‘নিউ ইয়ার ইভ’। এদিন নতুন বছরের আগমনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ।
এদিকে ইংরেজি নতুন বর্ষ পালনে ব্যতিক্রমও রয়েছে। যেমন ইসরাইল, দেশটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করলেও ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না। কারণ বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী অ-ইহুদি উৎস থেকে উৎপন্ন এ রীতি পালনের বিরোধিতা করে থাকে। আবার কিছু দেশ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে গ্রহণই করেনি। যেমন- সৌদি আরব, নেপাল, ইরান, ইথিওপিয়া ও আফগানিস্তান। এসব দেশও ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না।
কীভাবে এলো ১ জানুয়ারি?
জানুয়ারির ১ তারিখে নববর্ষ উদযাপন করার রীতিকে মোটামুটি নতুনই বলা চলে। কারণ বেশিদিন হয়নি, যখন থেকে এ তারিখ সর্বজনীনভাবে নববর্ষ হিসেবে গৃহীত হয়ে আসছে। এই রীতিটি এসেছে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার হতে যেখানে বছরের শুরু হয় জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে। বিশ্বের যেসকল দেশ এ ক্যালেন্ডারকে সিভিল ক্যালেন্ডার হিসেবে গ্রহণ করেছে, তারা সবাই ইংরেজি নববর্ষ পালন করে থাকে। তবে অনেক দেশই ক্যালেন্ডারটি গ্রহণ করার পূর্বে নববর্ষের রীতিটি গ্রহণ করেছে। যেমন- ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে স্কটল্যান্ড এবং ১৭৫২ সাল থেকে ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং ব্রিটিশ কলোনিগুলো নববর্ষের রীতি অনুসরণ করতে শুরু করে। কিন্তু তারা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সাথে পরিচিত হয় ঐ বছরের সেপ্টেম্বরে!
বিভিন্ন সূত্রমতে, আধুনিক বিশ্বে নববর্ষ হিসেবে ১ জানুয়ারিকে প্রচলিত করার ব্যাপারে ‘রিপাবলিক অফ ভেনিস’ (দেশটি ১৭৯৭ সালে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ তারা ১৫২২ সাল থেকে এ দিনকে বছরের প্রথম দিন হিসেবে গণনা করতে শুরু করে। এরপর ১৫৫৬ সালে স্পেন, পর্তুগাল; ১৫৫৯ থেকে প্রুশিয়া, সুইডেন; ১৫৬৪ তে ফ্রান্স; ১৭০০ সাল থেকে রাশিয়া এই রীতি অনুসরণ শুরু করে।
ব্যতিক্রম
ব্যতিক্রম সব জায়গাতেই আছে। যেমন- ইসরাইল। এই দেশটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে থাকলেও ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না। কারণ বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী অইহুদী (হড়হ লবরিংয) উৎস থেকে উৎপন্ন এ রীতি পালনের বিরোধিতা করে থাকে।
আবার কিছু কিছু দেশ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে গ্রহণ করেনি। যেমন- সৌদি আরব, নেপাল, ইরান, ইথিওপিয়া এবং আফগানিস্তান। এসব দেশও ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না।
পেছনের ইতিহাস
প্রথম রোমান ক্যালেন্ডারটি ছিল চন্দ্রকেন্দ্রিক এবং এতে মাস ছিল দশটি। এ ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছরের প্রথম মাসটি ছিল মার্চ। তাই তখন মার্চের ১ তারিখকে বছর শুরুর দিন হিসেবে উদযাপন করা হতো। ৭০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে রোমের রাজা নুমা পম্পিলিয়াস এ ক্যালেন্ডারে নতুন দুটি মাস যুক্ত করেন। জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি। এরপর Roamn Consul-এর ইচ্ছানুযায়ী বছরের প্রথম মাস মার্চ থেকে জানুয়ারিতে পরিবর্তন করা হয়।
তবে জানুয়ারির ১ তারিখকে নববর্ষ হিসেবে চালু করতে বেশ সময় লাগে। এটি প্রথম চালু হয় ১৫৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে, রোমে। তখন এটি অনিয়মিতভাবে পালিত হতো। কিন্তু ৪৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে রোমসম্রাট জুলিয়াস সিজার যখন সূর্যকেন্দ্রিক “জুলিয়ান ক্যালেন্ডার” চালু করেন, তখন জানুয়ারির ১ তারিখকেই নববর্ষের প্রথম দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মূলত তখন থেকেই এ রীতি ছড়িয়ে পড়ে।
বিতর্ক
মধ্যযুগের ইউরোপে চার্চ কর্তৃক জানুয়ারির ১ তারিখ নিয়ে শুরু হয় হাঙ্গামা। এটি একটি গ্যাগানীয় এবং অখ্রিষ্টান কৃষ্টি বলে রব ওঠে। জের হিসেবে Counsil of Tours কর্তৃক ৫৬৭ খ্রিষ্টাব্দে পহেলা জানুয়ারিকে নববর্ষের প্রথম দিন হিসেবে বর্জন করা হয়। মধ্যযুগীয় খ্রিষ্টান অধ্যুষিত ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে যীশুখ্রিষ্টের জন্মদিনের দিন (২৫ ডিসেম্বর) কিংবা ১ মার্চ বা ২৫ মার্চ অথবা ইস্টার সানডের দিনকেই বেছে নেওয়া হয়েছিলো বছর শুরুর দিন হিসেবে।
১ জানুয়ারি পুনরুদ্ধার
ইউরোপের কাহিনীর পরও ছাড়া ছাড়া ভাবে পহেলা জানুয়ারিতে উদযাপিত হচ্ছিল নববর্ষ। তবে এছাড়া ছাড়া ভাব দূর করে স্থায়ীভাব আনার জন্য ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার জানুয়ারির ১ তারিখকে আবারো বছরের প্রথমদিন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। ১৫৮২ সালে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি কর্তৃক সংশোধিত ‘জুলিয়ান ক্যালেন্ডার’ই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে পরিচিত। সাথে সাথেই অধিকাংশ ক্যাথলিক দেশ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে সিভিল ক্যালেন্ডার হিসেবে গ্রহণ করে নেয়। কিন্তু প্রোট্যাস্টান্ট দেশগুলো একে ধীরে ধীরে গ্রহণ করে।
অন্যান্য
নিউইয়ার রেজোল্যুশন : এই বিষয়টি পাশ্চাত্য বিশ্বে একটি প্রচলিত ব্যাপার হলেও ইদানীং প্রায় সব জায়গায় পালন করতে দেখা যায়। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী প্রথা যেখানে ব্যক্তি আত্মোন্নয়নের জন্য নববর্ষের দিন বিভিন্ন প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করে।
অন্যান্য- চেজ রিপাবলিক, ইউনাইটেড কিংডম, স্পেন, ইতালি ইত্যাদি দেশে ১ জানুয়ারিকে ‘National Holiday’ হিসেবে পালন করা হয়।
সূত্র : উইকিপিডিয়া এবং Infoplease