বিনিদ্র সতর্কতা দরকার সরকারের
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:৩৬
॥ ফারাহ মাসুম ॥
মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সাথে গোপন সমঝোতার খবর দিয়েছে ভারত ও মিয়ানমারের একাধিক গণমাধ্যম। ভারতের একটি গণমাধ্যম উল্লেখ করেছে আরাকান আর্মির সেনারা টেকনাফে ঢুকে পড়েছে। প্রতিবেশী দেশের গণমাধ্যমের খবর ও প্রচারণায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, তারা আরাকান আর্মিকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চাইছে। এ বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীটি রাখাইন রাজ্যের মংডুর পর তাংআপ টাউনশিপের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। উল্লেখযোগ্য অঞ্চলের মধ্যে সিটওয়ে কিউকফিউ ও মুয়াং জান্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অন্যদিকে আন ও গুওয়াতে দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে। এতে রাখাইন স্টেটের ১৭টি টাউনশিপের মধ্যে ১২টির নিয়ন্ত্রণ আরাকান আর্মির হাতে চলে গেছে। মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে নতুন উত্তেজনা এমন একসময় ঘটছে, যখন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর যৌথ নিরাপত্তা টহল বাড়ানো হয়েছে। এখনো ত্রিপুরার পরিস্থিতি উচ্চ উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তবর্তী বিজেপিশাসিত রাজ্যটিতে বাংলাদেশি কনস্যুলার ভবনে হামলার মতো ঘটনাগুলো পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটিয়েছে।
মিয়ানমারের নারিনজারা নিউজে ভারত ও আরাকান আর্মির সম্পর্ক জোরদার হবার বিষয়ে একটি বিস্তৃত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, ভারতীয় সরকার এবং আরাকান রাজ্যের ৮৫% ভূমি নিয়ন্ত্রণকারী আরাকান আর্মির মধ্যে সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী হয়েছে। গত নভেম্বরের শুরুতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরাকান আর্মিসহ মিয়ানমারের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাকামী প্রতিরোধ গোষ্ঠীকে আলোচনার জন্য নয়াদিল্লিতে আমন্ত্রণ জানায়।
আরাকান আর্মির সাথে যুক্ত একটি রাজনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, এর একটি প্রতিনিধিদল আলোচনার জন্য ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের আমন্ত্রণে নয়াদিল্লিতে ভ্রমণ করেছে। সফরকালে দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। ভারত সরকার মিয়ানমারের পরিস্থিতির উন্নয়ন, আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং সীমান্ত বাণিজ্যসংক্রান্ত উদ্বেগ নিয়ে আরাকান আর্মির সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা করে।
আলোচনার সাথে যুক্ত এক সূত্র একটি বেসরকারি মিডিয়া সংস্থাকে জানিয়েছে, নভেম্বরের শুরুতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি) আরাকান আর্মি (এএ), চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (সিএনএফ) ও চিন ব্রাদারহুড (সিবি) সাথে গোপন বৈঠক করেছে।
এ সূত্র স্পষ্ট করে যে, ভারতীয় পক্ষ তাদের সাথে একত্রে বৈঠক না করে প্রতিটি গ্রুপের সাথে পৃথকভাবে আলোচনা করে। আলোচনায় সীমান্ত বাণিজ্য, নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থান পায়। ভারত সীমান্ত অঞ্চলগুলো পরিচালনাকারী দলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি, তাদের প্রয়োজন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যগুলোর প্রতি মনোযোগ দেয়।
এ সূত্র তথ্য দেয় যে, মিয়ানমারের প্রতিরোধী দলগুলোর সাথে এ বৈঠকের পর নভেম্বরের প্রথম দিকে ভারতীয় কাউন্সিল অব ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স (আইসিডব্লিউএ) রাজনৈতিক দল, জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন এবং মিয়ানমারে সামরিক জান্তার শান্তি প্রতিনিধিদলকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে এবং সাংবিধানিক ও ফেডারেল বিষয়ে আলাদাভাবে আলোচনা করে।
আরাকান প্রতিরোধ গোষ্ঠী এবং ভারতের মধ্যে সম্পর্ক ১৯৯৮ সাল থেকে স্থবির হয়ে পড়েছিল, যখন ভারতীয় সামরিক বাহিনী ন্যাশনাল ইউনাইটেড পার্টি অব আরাকান (এনইউপিএ) এবং আরাকান আর্মির প্রধান মেজর-জেনারেল খাইং রাজাকে আরও পাঁচ নেতাসহ প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আন্দামান সাগরের ল্যান্ডফল দ্বীপে নিয়ে হত্যা করে। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে বৈরী সম্পর্কের কারণে আরাকান আর্মি প্রকল্প অঞ্চলে শক্তি বাড়ালে কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৮ সালে মিয়ানমার ও ভারতের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত একটি চুক্তির আওতায় ভারত সরকার আরাকান রাজ্যে কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টকে এগিয়ে নিচ্ছে। প্রকল্পটি ২০০৯ সালে শুরু হয় এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সিটওয়ে বন্দরের নির্মাণকাজ এখন শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি সিটওয়ে বন্দর, পালেতোয়া অভ্যন্তরীণ জল পরিবহন টার্মিনাল, কালাদান নদী সেতু এবং পালেতোয়া-মিজোরাম মহাসড়ককে অন্তর্ভুক্ত করে, যেখানে সিটওয়ে বন্দরটি ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর সাথে বাণিজ্যকে উন্নীত করার জন্য কাজ করে।
মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইঙ্গিত দেয় যে, ভারত এ উদ্যোগে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ভারতের সাথে এ যৌথ প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হলো মিয়ানমার ও ভারতের মধ্যে পরিবহন ও বাণিজ্য বাড়ানো।
স্থানীয় প্রতিবেদনগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, ভারত সরকার বর্তমানে পালেতোয়া টাউনসহ কালাদান নদীর তীরবর্তী শহরগুলো নিয়ন্ত্রণকারী আরাকান আর্মির সাথে আলোচনার মাধ্যমে প্রকল্পটিকে পুনরুজ্জীবিত করতে আগ্রহী। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতীয় প্রশাসন মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে চীনের উপস্থিতি রোধ করতে এবং ভারত মহাসাগর নিয়ন্ত্রণের জন্য কিউকফিউ গভীর সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতেও আগ্রহী।
নারিনজারা নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, আরাকান আর্মি তার চূড়ান্ত আক্রমণ শুরু করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেÑ এমন তিনটি স্থানের মধ্যে কিউকফিউ হলো একটি। তারা সফলভাবে আরাকান রাজ্যের ১৭টি টাউনশিপের মধ্যে ১২টি দখল করেছে। এর সাথে রয়েছে ভারতীয় সীমান্তে অবস্থিত পালেতোয়া টাউনশিপ। আরাকান আমি মংডু দখলের পর, অ্যান, গওয়া এবং টাংগুপ শহরগুলোয়ও আক্রমণ করছে। এ তিনটি শহর জয়ের পর, আরাকান আর্মি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করার জন্য আক্রমণ চালিয়ে যেতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে- যেমন আরাকান রাজ্যের রাজধানী সিটওয়ে, কিউকফিউ ও আন। কিউকফিউতে প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তেলের পাইপলাইন এবং মানাউংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ চীনা প্রকল্পগুলো রয়েছে। কিয়াউকফিউয়ের কাছে মানাউং দ্বীপ চীনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জনপদ।
এদিকে আরাকান আর্মি মংডুর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর বান্দরবান ও টেকনাফে অনুপ্রবেশের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। কক্সবাজার ক্যাম্পগুলোয় নানা ধরনের হতাশায় রোহিঙ্গা যুবকদের প্রতিরোধে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। পার্বত্য বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির পাহাড়িদের মধ্য থেকে আরাকান আর্মির যোদ্ধা নিয়োগে বাংলাদেশের জন্য আন্তঃসীমান্ত হুমকি বাড়ছে। একাধিক নিরাপত্তা সূত্র নতুন পরিস্থিতিতে অনিরাপদ রুটগুলোকে কাজে লাগিয়ে বান্দরবানের আশপাশে সশস্ত্র আরাকান আর্মির অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা রয়েছে বলে আভাস দিচ্ছে। গত ৭২ ঘণ্টায় টেকনাফ অভিমুখে উদ্বাস্তুদের আনাগোনা ২০ শতাংশ বেড়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে।
আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ জোরদারে স্থানীয় যোদ্ধা গোষ্ঠীগুলোর ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশে অস্ত্র চোরাচালান বৃদ্ধির ইঙ্গিত একাধিক নিরাপত্তা সূত্র থেকে দেয়া হয়েছে। এতে বান্দরবান একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট হাব হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সাথে সাথে ছোট অস্ত্র পাচারের রুটগুলো স্থানান্তরিত হতে পারে। বাংলাদেশ ডিফেন্স জার্নালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ডিসেম্বরের শেষার্ধে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজন হবে এবং এ সময় রোহিঙ্গা জনসংখ্যার পালিয়ে যাওয়ার সাথে জড়িত আন্তঃসীমান্ত সংঘাতের ঘটনা ঘটবে।
বান্দরবান ও টেকনাফের আশপাশে সশস্ত্র অনুপ্রবেশ বাড়ার কারণ হতে পারে আরাকান আর্মির যোদ্ধারা তাদের দখলকে সুসংহত করছে। এতে বাংলাদেশে অস্ত্র পাচার বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বান্দরবান ও টেকনাফে সম্ভাব্য অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটতে পারে। ফলে বান্দরবান ও টেকনাফের গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিংগুলোয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) টহল বাড়াতে হবে।
ইরাবতীর ১৬ ডিসেম্বরের এক প্রতিবেদনে রাখাইন বিদ্রোহীরা তাংআপ টাউনশিপের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সর্বশেষ খবর অনুসারে, জাতিগত আরাকান আর্মি গত ১৪ ডিসেম্বর শনিবার সেখানে শাসকের শেষ শক্ত ঘাঁটি দখল করে দক্ষিণ রাখাইন রাজ্যের তাংআপ টাউনশিপের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী উত্তর রাখাইনের মংডু টাউনশিপের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার মাত্র ছয় দিন পর বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিজয় এসেছে।
তাংআপ টাউনশিপ ঘেরাও করা এবং সামরিক বাহিনীতে প্রবেশের সব রাস্তা অবরুদ্ধ করার পর আরাকান আর্মি গত ৪ নভেম্বর আক্রমণ শুরু করে, ২০ নভেম্বরের মধ্যে তাংআপ শহরের মধ্যে এবং বাইরে এক ডজন সরকারি ঘাঁটি দখল করে। চার দিন পর এটি টাংআপ শহরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং পরবর্তীতে লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ৩৪৬ এবং ৫৪৪-এর সদর দফতর দখল করে নেয়।
অবশেষে গত শনিবার এটি শহরের বাইরে শেষ জান্তা ঘাঁটি, সামরিক অপারেশন কমান্ড নং ৫ দখল করে বলে আরাকান আর্মির মুখপাত্র খাইং থুখা দ্য ইরাবতীকে জানিয়েছেন। আরাকান আর্মি ৮ ডিসেম্বর থেকে গোটা মংডু শহর দখল করে রেখেছে। তারা জান্তা বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরেইন তুনসহ শত শত শাসক সেনাকে গ্রেফতার করেছে। এর সাথে বিদ্রোহীরা এখন বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের ২৭০ কিলোমিটার সীমান্তের সম্পূর্ণ দায়িত্বে রয়েছে।
রাখাইন রাজ্যের গভীর দক্ষিণেও যুদ্ধের খবর পাওয়া গেছে। কারণ আরাকান আর্মির সৈন্যরা আইয়ারওয়াদি অঞ্চলের সীমান্তবর্তী গওয়া শহর দখল করার চেষ্টা করেছিল। রাখাইনের জাতিগত সেনারাও অ্যান টাউনশিপ দখল করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আরাকান আর্মি গত বছরের নভেম্বরে তার নিজ রাজ্য রাখাইনে অভিযান প্রসারিত করে এবং তখন থেকে তার ১৭টি টাউনশিপের মধ্যে ১২টি এবং অন্য শহরগুলোর পাশাপাশি প্রতিবেশী চিন রাজ্যের পালেতোয়া টাউনশিপ দখল করেছে।
কক্সবাজার সীমান্তে সৃষ্ট পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য চরম নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি করেছে। পাবর্ত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী পাহাড়ি গোষ্ঠীগুলোর পাশাপাশি ভারতের সাথে আরাকান আর্মির যোগসূত্র নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে। মংডু দখলের পর তারা নাফ নদীতে কোনো দেশের নৌ চলাচল না করার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারির কথা বলেছে। রোহিঙ্গারা এতদিন বাংলাদেশের জন্য বাফার জোন হিসেবে কাজ করেছিল। এখন বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের অধিকাংশ আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে থাকায় ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। আরাকান আর্মির এক নেতা এর মধ্যে চট্টগ্রাম দখলের হুমকি দিয়েছে। এ ধরনের হুমকির বিষয় ফলাও করে প্রচার করছে ভারতের শাসকদল বিজেপির রিপাবলিক বাংলা টিভিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম।
নানা সূত্রের খবর অনুসারে, আরাকান আর্মির সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে প্রতিবেশী বড় দেশটির পক্ষ থেকে তাদের আর্থিক ও সমরাস্ত্র সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। এ ধরনের ঘটনার পরই আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত মংডুসহ অন্যান্য মুসলিম জনপদ দখলের জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে জানা যাচ্ছে। বাংলাদেশ এ বিষয়ে শক্তিধর দেশগুলোর সাথে নিরাপত্তা চুক্তিতে আবদ্ধ না হতে পারলে দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের সামনে নজিরবিহীন হুমকি সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নিরাপত্তা সূত্রের তথ্যানুসারে, বাংলাদেশকে চাপে রাখার জন্য পতিত স্বৈরাচার ও প্রতিবেশী নেটওয়ার্ক যৌথভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশকে অস্থির করার জন্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের স্লিপার সেলগুলোকে সক্রিয় করার প্রচেষ্টার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা এবং আরাকান আর্মির কৌশলগত লাভের পর মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি সৃষ্টি করা হচ্ছে। স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক, সামাজিক, সীমান্ত এবং সাইবার ডোমেনে এ ঝুঁকির ব্যাপারে প্রাক-প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সর্বোপরি সরকারকে সবদিকেই সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।
সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের স্লিপার সেলগুলো পোশাক কারখানা এবং পরিবহন কেন্দ্রগুলোর বিরুদ্ধে লজিস্টিক অবরোধ ও ধর্মঘট কার্যকর করার জন্য একত্রিত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপ দেওয়ার জন্য রপ্তানি অঞ্চলগুলোয় ফোকাস করে ডিসেম্বরের শেষার্ধে ব্যাপক অসন্তোষ ও বিঘ্ন ঘটানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এসব অপতৎপরতায় ফান্ডিংয়ের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক এস আলমের হুন্ডি নেটওয়ার্ক থেকে ফান্ডিং করা হচ্ছে। আর্থিক নেটওয়ার্ক বিস্তার ও অন্যান্য পরিকল্পনা সম্পন্ন হলে ঢাকার পরিবহন রুট এবং নারায়ণগঞ্জের শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের সম্ভাবনা রয়েছে। একই সাথে চট্টগ্রামে বৃহত্তর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমানার পাশাপাশি ফেনী নদীর নিরাপত্তার ব্যাপারে বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, প্রতিবেশী দেশটি ত্রিপুরায় সামরিক শক্তি জোরদার করার বিষয়টি দেশের নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক।