নরেন্দ্র মোদিদের বিজয় : বাংলাদেশে স্বাধীনতা সমাচার


১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:৩০

॥ জামশেদ মেহ্দী॥
কথা ছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের ভিত্তিহীন, উন্মাদ ও উসকানিমূলক সুসংগঠিত প্রচারণার বিরুদ্ধে লিখব। যেভাবে ভারত কোমর বেঁধে এ মিথ্যা প্রচারণায় লিপ্ত হয়েছে, সংগতভাবেই আশা করা গিয়েছিল যে, বাংলাদেশের সব ধরনের রাজনৈতিক দল ও নেতা এবং সব মত ও পথের গণমাধ্যম সেই মিথ্যা প্রচারণার দাঁতভাঙা জবাব দেবে। কিন্তু যতখানি জোরদার জবাব আশা করা গিয়েছিল, বাংলাদেশের একশ্রেণির রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যম জনগণকে তা থেকে নিরাশ করেছে। কথা ছিল বাংলাদেশের তরফ থেকে সমুচিত জবাব না দেওয়ার বিষয়েও লিখব। আসলে লিখব ঠিকই, কিন্তু এর মধ্যে দুটি ঘটনা ঘটে গেছে। আমার লেখার মূল উপজীব্যের সাথে ঐ দুটি ঘটনাও সংযুক্ত করছি। কারণ ঐ দুটি ঘটনার সাথে আমাদের জাতীয় মর্যাদা এবং সার্বভৌমত্বও জড়িয়ে আছে।
প্রথমটি হলো, বিজয় দিবস উপলক্ষে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাণী। তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, Today on Vijay Diwas we honour the courage and sacrifices of the brave soldiers who contributed to India’s historic victory in 1971. Their selfless dedication and unwavering resolve safeguarded our nation and brought glory to us. This day is a tribute to their extraordinary valour and their unshakable spirit. Their sacrifices will forever inspire generations and remain deeply embedded in our nation’s history. অনুবাদ: ‘আজ বিজয় দিবসে ১৯৭১ সালে ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়ে অবদান রাখা সাহসী সেনাদের সাহস ও আত্মত্যাগকে আমরা সম্মান জানাই। তাদের নিঃস্বার্থ আত্মোৎসর্গ ও অটল সংকল্প আমাদের জাতিকে রক্ষা করেছে এবং আমাদের গৌরব এনে দিয়েছে। এ দিনটি তাদের অসাধারণ বীরত্ব ও অদম্য চেতনার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। তাদের আত্মত্যাগ চিরকাল প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে এবং আমাদের জাতির ইতিহাসে গভীরভাবে গেঁথে থাকবে।’
গত ১৬ ডিসেম্বর সোমবার সন্ধ্যায় এ রাজনৈতিক ভাষ্য লেখার সময় পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদির এ ফেসবুক পোস্টের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ। আসিফ নজরুল লিখেছেন, ‘তীব্র প্রতিবাদ করছি। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ ছিল বাংলাদেশের বিজয়ের দিন। ভারত ছিল এ বিজয়ের মিত্র, এর বেশি কিছু নয়।’ হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু মোদি দাবি করেছে, এটি শুধু ভারতের যুদ্ধ এবং তাদের অর্জন। তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশের অস্তিত্বই উপেক্ষিত। যখন এ স্বাধীনতাকে ভারত নিজেদের অর্জন হিসেবে দাবি করে, তখন আমি একে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতার প্রতি সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখি। ভারতের এ হুমকির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী। এ লড়াই আমাদের চালিয়ে যেতেই হবে।’ সোমবার রাত পৌনে ৮টায় যখন এ লেখা লিখছি, তখনো বিএনপির প্রতিক্রিয়া অনলাইন পেপারে দেখিনি।
এ ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য খুব পরিষ্কার এবং দ্ব্যর্থহীন। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এবারই ভারত সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধকে এমন অপমান এবং ছোট করেনি। এর আগে ভারতের অনেক নেতা এবং ভারতে নির্মিত বিগ বাজেটের অনেকে হিন্দি ছবিতে বার বার বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের যুদ্ধ ছিল ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ। ঐ যুদ্ধে ভারতীয় বাহিনী পাকবাহিনীকে পরাস্ত করে। আমার এ কথার প্রমাণ হিসেবে ভারতীয় হিন্দি ছবি ‘গুন্ডে’ দেখুন।
ওরা বার বার একাত্তরের যুদ্ধকে মুক্তিযুদ্ধ না বলে পাক-ভারত যুদ্ধ বলছে এবং মুক্তিবাহিনীর অংশগ্রহণকে কার্পেটের তলে ঠেলে দিচ্ছে। মুক্তি-সংগ্রামে রণাঙ্গনে নিহত অসংখ্য শহীদের রক্ত এবং দেশের অভ্যন্তরে অসংখ্য শহীদের রক্তকে ছোট করা হচ্ছে এবং অপমান করা হচ্ছে। কিন্তু চরম পরিতাপের বিষয় এই যে, যারা স্বাধীনতার সোল এজেন্ট, যারা মুক্তিযুদ্ধের সোল এজেন্ট, যারা মুক্তিযুদ্ধের একচেটিয়া চেতনাবাজ, তারা ভারতের এ বেয়াদবির ব্যাপারে টুঁ শব্দ করছেন না। ঐসব ভারতপ্রেমীর কাছে ভারত যখন বাংলাদেশকে অপমান করে অথবা সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা করে, তখন সেটি কোনো গর্হিত কাজ হয় না। অন্যরা করলেই যত দোষ, তা নন্দ ঘোষের হয়। স্থান সংকুলানের জন্য এ ব্যাপারে আর বিস্তারিত আলোচনা করা গেল না।
দ্বিতীয় যে ঘটনা, সেটিও দারুণ ভয়াবহ। গত ১৪ ডিসেম্বর শনিবার গুম সম্পর্কিত তদন্ত কমিশন তাদের প্রথম ইন্টারিম রিপোর্ট বা প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছে। দৈনিক ইনকিলাব ১৬ ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রথম পৃষ্ঠায় ডাবল কলামে যে রিপোর্ট করেছে, তার শিরোনাম, “বিবিসির প্রতবেদন/বাংলাদেশে গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন”। একই দিন ইংরেজি দৈনিক নিউএজ প্রথম পৃষ্ঠায় ডাবল কলাম শিরোনাম করেছে, “Enforced Disappearance/Commission finds Indian involvement”. অনুবাদ: বলপূর্বক অপহরণ/কমিশন ভারতীয় সম্পৃক্ততা পেয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, The Commission of Inquiry on Enforced Disappearance has found prima facie evidence of the involvement of Indian authorities in the system of enforced disappearance in Bangladesh. In its first interim report titled Unfolding the Truth submitted to chief adviser Professor Muhammad Yunus on Saturday, the commission stated that it came to the conclusion after recording statements of victims, their families and members law enforcement agencies. অনুবাদ: বাংলাদেশে বলপূর্বক গুমের ঘটনায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষের জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে গুম সংক্রান্ত কমিশন। এ সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টার কাছে কমিশন যে রিপোর্ট দাখিল করেছে, সেই রিপোর্টের শিরোনাম, “সত্যের উদ্ঘাটন”। রিপোর্টে আরো বলা হয়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যবৃন্দ, গুম ও নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তির পরিবারবৃন্দ এবং গুম হওয়া ব্যক্তিবর্গের বিবৃতি (Statement) রেকর্ড করার পর কমিশন এ উপসংহারে উপনীত হয়েছে। এ বিষয়টিও একটি স্বতন্ত্র এবং পূর্ণাঙ্গ ভাষ্যের দাবি রাখে। আজ আমরা শুধু এটুকু বলতে চাই, আজ থেকে ১৫ বছর আগে যখন এ নারকীয় হত্যাকাণ্ড হয়, তখন থেকেই দেশি ও বিদেশি গণমাধ্যমে এ অভিযোগ করা হয়েছে যে, ভারতীয়রা এ বিডিআর গণহত্যার পেছনে রয়েছে। হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরে টুঁটি চেপে ধরা শাসনামলে এ বক্তব্য বলিষ্ঠভাবে দেওয়া যায়নি। এখন এ বিষয়টি তদন্ত করে জনগণের কাছে উপস্থিত করা উচিত। এখন আমরা ফিরে যাচ্ছি আমাদের মূল আলোচনায়।
গত ১৩ ডিসেম্বর শুক্রবারের ভাষ্যে আমি বলেছিলাম, ভারত উন্মত্তভাবে বাংলাদেশের মাইনরিটি কার্ড খেলছে। ইংরেজিতে যেটিকে বলা হয়, White Lies বা Tissue of Lies, অর্থাৎ ডাহা মিথ্যা। সেই কাজটি ভারত নির্লজ্জভাবে করে যাচ্ছে। যতই দিন যাচ্ছে, ততই তাদের মিথ্যা প্রচারণা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এখন ভারতের প্রধান গণমাধ্যম এনডিটিভি থেকে শুরু করে টাইমস অব ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস হয়ে রিপাবলিক টেলিভিশন বাংলা ও ইংরেজি, দ্য ওয়ার (The Wire), দি ওয়ালসহ ভারতজুড়ে অসংখ্য টিভি-চ্যানেল এবং পত্রপত্রিকায় গুজব ও মিথ্যা ছড়ানো হচ্ছে। কথায় বলে, গাঁজার নৌকা পাহাড় বইয়া যায়। ইন্ডিয়ার গাঁজার নৌকাসমূহ যখন দেখে যে- এসব চরম মিথ্যাচারকে বাংলাদেশ মোটেই পাত্তা দিচ্ছে না, তখন তারা বাংলাদেশকে দেখে নেওয়ার হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।
কলকাতার রিপাবলিক বাংলার উপস্থাপক ময়ূখ রঞ্জন ঘোষের চিৎকার শুনে তার নাম দেওয়া হয়েছে মলম বিক্রেতা। তো এই মলম বিক্রেতা থেকে শুরু করে মেজর জেনারেল গণদ্বীপ বকশির (G D Bakshi) মতো দায়িত্বশীল ব্যক্তিও এ হুমকি-ধমকির অভিযানে নেমে পড়েছেন। গণদ্বীপ বকশি সমস্ত সভ্যতা ভব্যতার সীমা ছাড়িয়ে ইউনূস সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা যেমন দেশ গঠন করতে পারি, তেমনি দেশ ধ্বংসও করতে পারি। বাংলাদেশ তো সৃষ্টি করেছি আমরাই। এখন এ দেশটিকে ধ্বংস করতে হবে। সেই দায়িত্বও হবে আমাদেরই।’ (দৈনিক সংগ্রাম, মঙ্গলবার ১০ ডিসেম্বর, পৃষ্ঠা ৪)। এজন্য বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার জন্য তিনি মোদি সরকারকে উসকানি দিয়েছেন।
শাসকদল বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ এবং আসাম সীমান্তে জড়ো হয়ে স্লোগান দিয়েছে, “দুনিয়ার হিন্দু এক হও”। এ যেন কমিউনিস্টদের স্লোগান, দুনিয়ার মজদুর এক হও-এর আংশিক পরিবর্তন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির সভাপতি শুভেন্দু অধিকারী ইতোপূর্বে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিমন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। এহেন শুভেন্দু অধিকারী হাজার হাজার লোকের সামনে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বাংলাদেশের হিন্দুদের উদ্দেশে বলেছেন, আপনারা ইউনূসের নির্যাতনের মুখে সীমান্তের এপারে চলে আসুন। আপনারা যতজনই আসেন না কেন, আপনাদের থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা আমরা করবো। আসাম, বিহার এবং ঊড়িষ্যায় আপনাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। খাওয়ার ব্যবস্থাও বিজেপি রেডি রেখেছে।
তবে তাদের এ মিথ্যার বেসাতি এবার আর হালে পানি পায়নি। কারণ এটা ১৯৭১ সাল নয়। এখানে বাংলাদেশের হিন্দুরা অনেক ভালো আছেন। মিথ্যার বেসাতি দিয়ে সত্যকে ঢাকা যায় না। কলকাতার অপর একটি ইউটিউব চ্যানেল ‘বাংলা বাজারে’ বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানদের সংখ্যা ৩৫ শতাংশ। অথচ সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে তাদের সংখ্যা মাত্র ৬ শতাংশ। সারা ভারতে মুসলমানদের সংখ্যা ১৫ শতাংশ। অংকের হিসাবে ২২ কোটি। অথচ নিখিল ভারতকেন্দ্রিক চাকরিতে তাদের অবস্থান মাত্র ৪ শতাংশ। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে হিন্দুদের সংখ্যা হলো মাত্র ৮ শতাংশ (২০২৩ সালের আদমশুমারি মোতাবেক)। অথচ সরকারি চাকরিতে তাদের অবস্থান ৩৫ শতাংশ। এটি আমাদের কথা নয়। কলকাতায় বিজেপিবিরোধী সাংবাদিক, সুধী এবং সমাজকর্মীদের কথা। এই সুখ, এ বিপুল সুবিধা পেয়ে বাংলাদেশের হিন্দুরা শুভেন্দুর ডাকে কেন ভারত যাবেন? এখন তো কোনো কোনো হিন্দু ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় বলেন, সুখে থাকতে ভূতে কিলায়। আমরা বাংলাদেশে সুখে আছি। ভূতের কিল খাওয়ার জন্য সীমান্ত পাড়ি দিতে যাবো কেন?
ওপার থেকে শুভেন্দু বাবুরা যতই চিৎকার করুন না কেন, এবারে হিন্দুদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আর বিজেপির পাতা ফাঁদে পা দিচ্ছে না। কিন্তু এটা ভেবে বিস্মিত হতে হয় যে, সরকারি লেভেলেও অনবরত সংখ্যালঘু তাস খেলা হচ্ছে। অবাক ব্যাপার হলো যে, তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করও বাংলাদেশের হিন্দুদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অথচ তাকে এতদিন একজন যোগ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং যুক্তিবাদী মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
কিন্তু ভারতপ্রেমে এবার সকলকে টেক্কা মেরেছেন বাংলাদেশের সেই পুরনো মুখচেনা চেতনাবাজ ও সেক্যুলারিস্টরা। আজ মুক্তিযুদ্ধকে ওরা পাক-ভারত যুদ্ধ বলে চালিয়ে দিচ্ছে। তখন কোথায় গেলেন বাঙালিত্বের ধ্বজাধারী নাসির উদ্দিন বাচ্চু? যখন ওরা বলছে, বাংলাদেশে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাকি হিন্দু নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, তখন কোথায় গেলেন সুলতানা কামাল, সুবর্ণা মোস্তফা, ফেরদৌসি মজুমদার গং? যখন বলা হচ্ছে যে বাংলাদেশে হিন্দুদের কচুকাটা করা হচ্ছে, তখন কোথায় গেলেন খুশী কবির, রাশেদা কে চৌধূরী গংরা? ছায়ানট, উদীচী প্রভৃতি সাংস্কৃতিক সংগঠন সাম্প্রয়িকতাবিরোধী স্লোগানে উচ্চকণ্ঠ। কিন্তু আজ তারা তো দেখছেন যে, বাংলাদেশের শুধু ঢাকা মহানগরই নয়, সারা দেশের কোথাও কোনো হিন্দু নির্যাতন চলছে না। সেই কথাটি তারা মুখফুটে বলেন না কেন?
আওয়ামী লীগ, সিপিবি, বাসদ, জাতীয় পার্টি প্রভৃতি সংগঠনের সকল নেতা ও কর্মীর বিরুদ্ধে তো গ্রেফতারি পরোয়ানা নেই। এদের অনেকেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যাদের ওপর জনগণের নজর নেই, পুলিশের নজর নেই, তারা আজ ভারত এবং পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশবিরোধী অপতৎপরতার প্রতিবাদে আওয়াজ তোলেন না কেন?
মানুষ আরো অবাক হয়ে যান মিডিয়াজগতের অধিকাংশ মিডিয়ার নিষ্ক্রিয়তা দেখে। আমরা কোনো পত্রিকা বা টেলিভিশনের নাম নিতে চাই না। কিন্তু জনগণ তাদের চেনে। যারা মুক্তবাক বলে নিজেদের দাবি করেন, যারা কথায় কথায় গণতন্ত্রের দোহাই পাড়েন সেই সব ইংরেজি ও বাংলা দৈনিক পত্রিকা এসব ব্যাপারে কোনো উপসম্পাদকীয় লেখে না। কোনো কলাম লেখে না। এরাই স্বাধীনতা পক্ষশক্তি আর বিপক্ষশক্তি বলে দিন-রাত চিৎকার করতে করতে মুখে ফেনা তোলেন। এরাই সারা দেশে বিগত সাড়ে ১৫ বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ফেরি করে বেড়িয়েছেন। আজ যখন বাংলাদেশের ফেনীকে কেটে চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দেওয়া হয়, তখন ঐসব চেতনাবাজ এবং মেইন স্ট্রিম পত্রিকা বলে জাহিরকারীরা মুখে গোমাই লাগিয়ে রাখেন কেন?
জুলাই-আগস্ট বিপ্লব এবং তার পরবর্তী ৪ মাস ১২ দিন অতিক্রান্ত হয়েছে। যারা হিন্দুদের তথাকথিত নির্যাতনে কেঁদে কেটে জারে জার, তাদের আজ হিন্দুদের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি কেন? আজ হিন্দুদের রক্ষার জন্য, তাদের নিরাপত্তায় তাদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য পাহারা দিয়েছেন ঐ কওমি মাদরাসার হাজার হাজার ছাত্র। হিন্দুদের নির্ভয়ে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াত নেতৃবৃন্দ। ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসকগোষ্ঠী এবং কায়েমি স্বার্থবাদীরা যখন গায়ের জোরে বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে পড়তে চেয়েছিলেন, তখন এ জামায়াত এবং অন্যান্য ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ বজ্রের ধ্বনি কেড়ে নিয়ে আওয়াজ তুলেছিলেন, জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করব। তারা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা কুমিল্লা এবং ফেনীতে গিয়েছিলেন উগ্র হিন্দুদের মোকাবিলা করতে। ইসলামী জনগণের জানবাজি প্রতিজ্ঞা দেখে উগ্র হিন্দুরা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে গেছে।
এসব ঘটনায় স্বাধীনতার পক্ষের সোল এজেন্সি নেওয়া রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং প্রিন্ট এবং ইলকট্রনিক মিডিয়া সম্পূর্ণ খামোশ মেরে বসে আছে। ৩৬ জুলাই বিপ্লবের পর সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে- বাংলাদেশের শত্রু হলো ভারত। আর সেই শত্রুর ভয়াল থাবা থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষার বজ্র কঠোর শপথ নিয়েছেন জামায়াতে ইসলামী, অন্যান্য ইসলামী দল এবং বৈষম্যবিরোধী নেতৃবৃন্দ এবং তাদের অনুসারীরা।
প্রমাণ হয়েছে, স্বাধীনতার পক্ষশক্তি হলো ইসলামী দলসমূহ এবং বিপ্লবী ছাত্রসমাজ। আর স্বাধীনতার বিপক্ষশক্তি হলো আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের ছাত্র, যুব ও সাংস্কৃতিক ফ্রন্ট।
Email: [email protected]