আলোকে তিমিরে : মহীউদ্দীন আহমদের ‘দৈনিক জেহাদ’


১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:২৩

॥ মাহবুবুল হক ॥
সময় বলে কথা, ১৯৪০ দশকের আলোচিত প্রকাশক খোশরোজ কিতাব মহলের মহীউদ্দীন আহমদ এক দশকের ব্যবধানে সংবাদপত্রশিল্পের সিঁড়িতে পা দিলেন। তখন ঢাকা শহর থেকে প্রকাশিত হচ্ছে মাওলানা আকরম খাঁর দৈনিক আজাদ, আবুল মনসুর আহমদের দৈনিক ইত্তেহাদ, মওলানা ভাসানীর দৈনিক সংবাদ, মানিক মিয়ার দৈনিক ইত্তেফাক ও সম্ভবত মোহাম্মদ মোদাব্বেরের দৈনিক মিল্লাত। যাদের নাম উচ্চারণ করলাম, তারা প্রত্যেকেই পত্রিকার মালিক ছিলেন- এমনটা নয়। কেউ উদ্যোক্তা, কেউ রাজনৈতিক দলের ‘খয়ের খাঁ’, কেউ সত্যিকার অর্থে সংবাদপত্রের মালিক, আবার কেউ পত্রিকার সম্পাদক। পাঠকগণ অবশ্য এসব নিয়ে মাথা ঘামাতেন না। দৈনিক সংবাদপত্রের মালিক, উদ্যোক্তা, প্রকাশক ও সম্পাদক- এদের যার নাম সমাজে উচ্চকিত ছিল, তার পত্রিকা বলে পরিচয় বহন করত। যেমন আকরম খাঁর দৈনিক আজাদ, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর দৈনিক সংবাদ এবং মানিক মিয়ার দৈনিক ইত্তেফাক। এদিক থেকে মাওলানা আকরম খাঁ ও মানিক মিয়া সৌভাগ্যবান। এখনো দৈনিক আজাদ ও আকরম খাঁর কথা উচ্চকিত হয়। মানিক মিয়ার নাম উঠলে দৈনিক ইত্তেফাকের কথা আসে। এদিক থেকে মওলানা ভাসানীর অবস্থান বলতে গেলে দুর্ভাগ্যের কাতারে। সে বিষয়ে এখানে কিছু বলব না।
তখন সম্ভবত ঢাকা থেকে প্রকাশিত হতো মাত্র দুটি ইংরেজি পত্রিকা। একটি ছিল পাকিস্তানের চতুর্থ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরীর ‘দ্য পাকিস্তান অবজারভার’, আর একটি ছিল মুসলিম লীগ সরকারের ‘মর্নিং নিউজ’। উর্দু ভাষায় ছিল সম্ভবত ‘পাশবান’। এসব নিয়ে আজ আর কথা বলব না।
ক্ষমতায় তখন তো মুসলিম লীগ। দৈনিক আজাদ ও মর্নিং নিউজকেই সরকারি কাগজ বলে গণ্য করা হতো।
বায়ান্নর পর মুসলিম লীগ থেকে তখন শিক্ষিত মানুষ, বুদ্ধিজীবী, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসা শুরু করেছেন। কমিউনিস্টরাও ধীরে ধীরে সংগঠিত হতে লেগেছেন। তারা স্লোগান তুলতে লাগলেন- ‘এ আজাদী ঝুটা হ্যায়, লাখো ইনসান ভুখা হ্যায়’।
দৈনিক আজাদ ছাড়া আর অন্য কোনো পত্রিকা মুসলিম লীগের পারপাস সার্ভ করছিল না। কমিউনিস্টরা ঝুঁকে পড়ল দৈনিক সংবাদ-এর দিকে। পূর্ব বাংলার সাধারণ মানুষ ঝুঁকে পড়ল শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের কৃষক শ্রমিক পার্টির দিকে। আবুল মনসুর আহমদ তখন ইত্তেহাদের সম্পাদক। তিনিও খানিকটা সেদিকে। মানিক মিয়া চলে গেলেন ধর্ম বাদ দিয়ে সেক্যুলার জীবন ব্যবস্থার দিকে। মিল্লাতের অবস্থা খুব স্টেবল ছিল না। ফরিদপুরের সাবেক মুসলিম জমিদার ও তালুকদাররাই যেমন মোহন মিয়া, আবদ-আল্লাহ-জহিরউদ্দিন লালমিয়াসহ অনেকেই ছিলেন দৈনিক মিল্লাতের পৃষ্ঠপোষক। অর্থাৎ যে দলটি পাকিস্তান আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন এবং পরবর্তীতে ভাষা আন্দোলন সেই দলটিকে একদম কাবু করে তুলল।
এ ধরনের একটি সময়ে কবি গোলাম মোস্তফার ভাবশিষ্য মহীউদ্দীন আহমদ ‘দৈনিক জেহাদ’ নামে একটি সংবাদপত্র প্রকাশ করলেন। সম্পাদক হলেন আবুল মনসুর আহমদের একান্ত বন্ধু দৈনিক আজাদ ও ভাষা আন্দোলনখ্যাত আবুল কালাম শামসুদ্দীন। তিনি ছিলেন তখন সাচ্চা ভাষাসৈনিক। পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের ছিলেন এমএলএ (মেম্বার অব লেজিসলেটিভ এসেম্বলি)। এই ভাষা আন্দোলনের সময় ছাত্র ও সাধারণ আন্দোলনকারীদের বুকে গুলি চালানোয় তিনি একই সাথে দৈনিক আজাদের সাংবাদিকতা এবং পূর্ব পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেন।
একটা বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের ঝড়ের শেষে মহীউদ্দীন আহমদ এ পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। সংবাদপত্র ও রাজনৈতিক জগতে তখন আবুল কালাম শামসুদ্দীনের দারুণ জয়জয়কার। তিনি তখন ত্যাগের প্রতীক, ন্যায়পরায়ণতার প্রতীক, সত্যের প্রতীক।
মুসলিম লীগের সরকার। মুসলিম লীগ সরকারের সংবাদপত্রে তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছিলেন। মূলত এ কারণেই দৈনিক আজাদ থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছিলেন।
এখানে এসে নির্দ্বিধায় বলা যায়, পুস্তক প্রকাশনার অগ্রদূত মহীউদ্দীন আহমদ অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ মানুষ ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি না থাকলেও তিনি সময় এবং সময়ের মূল্য সঠিকভাবে চিহ্নিত ও উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। বুঝতে পেরেছিলেন, মুসলিম লীগের ধর্ম-ব্যবসা ও গোত্র-ব্যবসা আর পূর্ব পাকিস্তান তথা পূর্ব বাংলায় থাকছে না। খুব পরিষ্কারভাবে বলা যায়, ঠিক এ সময় থেকে পূর্ব পাকিস্তানের নাম ধীরে ধীরে মুছে যেতে শুরু করে। কেউ কিন্তু ঘোষণা দেয়নি। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে পূর্ব পাকিস্তানকে পূর্ব বাংলা বলতে থাকে।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো পত্রিকার নামটি ইনকিলাব বা সংগ্রাম না রেখে, নাম রাখা হলো ‘দৈনিক জেহাদ’। বলুন তো, কোথা থেকে শব্দটি এলো। শব্দটি এলো কবি গোলাম মোস্তফা, আবুল মনসুর আহমদ, আবুল কালাম শামসুদ্দীন এবং তাদের একান্ত শিষ্য মহীউদ্দীন আহমদের মাথা থেকে। তারা সবাই ছিলেন বাংলাদেশের ক্লাসিক্যাল মানুষ। ‘খোশরোজ কিতাব মহলে’র নাম দিয়েছিলেন কবি গোলাম মোস্তফা, আর ‘দৈনিক জেহাদে’র নাম দিয়েছিলেন উপর্যুক্ত তিনজন মুসলিম বাংলার স্বাপ্নিক বুদ্ধিজীবী।
সবাই জানেন, উপর্যুক্ত তিনজনের বাংলা ভাষা কলকাতার বাংলা ভাষা ছিল না। ছিল এই ব-দ্বীপের মুসলিমদের উচ্চারিত ভাষা। যেমন আবুল মনসুর আহমদ একবার আমাদের বলেছিলেন, জওহরলাল নেহরুর বাসায় আমরা ডিম খাইনি, আন্ডা খেয়েছি। শরৎবসু বা বুদ্ধদেব বসুর বাসায় আমরা কখনো জল খাইনি, পানি খেয়েছি। হিন্দুরা কখনো কখনো আমাদের সম্মানে আল্লাহ বা ঈশ্বর বললেও আমরা কখনো ভগবান বা ঈশ্বর বলিনি। এ নিয়ে কথা বাড়াতে চাই না।
এ বিদ্বজ্জনদের উপলব্ধি ছিল, পূর্ব বাংলার মানুষের বাংলাভাষা, পশ্চিম বাংলার মানুষের বঙ্গভাষা, এক নয়। দুটি অনেকটাই আলাদা; যেমন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ইংরেজি ভাষা এক নয়। এ জায়গা থেকে যদি বিশ্লেষণ করা যায়, তাহলে বেশ উচ্চকণ্ঠে বলা যায়, রাষ্ট্রভাষা বাংলা ভাষার আন্দোলনে এক নতুন চিন্তার দিগন্ত খুলে দেয়। সেই দিগন্তের একটি উজ্জ্বল তারকা হলো ‘দৈনিক জেহাদ’।
এ পত্রিকায় পূর্ব বাংলা অঞ্চলের বাংলা ভাষাই ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হতো। এর সাথে দৈনিক ইত্তেহাদের ভাষা ছিল মূলত একই রকম। যাদের স্মরণ আছে তারা বলবেন, আরে বলেন কী! দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদকীয়ের ভাষাও ছিল সামঞ্জস্যপূর্ণ।
পূর্ব বাংলার ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, যাপিত জীবন এসব নিয়েই ‘দৈনিক জেহাদে’র যাত্রা শুরু হয়েছিল। পত্রিকাটি শিক্ষিত মহলে প্রশংসাও পেয়েছিল। এই পত্রিকার অ্যাপ্রোচ বা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে শিক্ষিত মানুষ অনুধাবন করেছিল ‘জেহাদ’ মানে ‘কতল্’ নয়। ‘জেহাদ’ মানে চেষ্টা, প্রচেষ্টা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, অনুসন্ধান, গবেষণা, গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ, গভীরভাবে বিশ্লেষণ, পরিমার্জিতকরণ, শুদ্ধিকরণ, মোটকথা নিরন্তর শুচিকরণ। ব্যক্তি, সমাজ, দেশ ও জাতিকে এবং ব্যাপক অর্থে দুনিয়ার সবকিছুকে নির্মল করা। এখনো যা বাঙালি মুসলমান উপলব্ধি করতে পারেনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ এককালে যে শিখাগোষ্ঠী তৈরি করেছিলেন, যার স্লোগান ছিল ‘বুদ্ধির মুক্তি’। তার স্পষ্ট ছায়া পড়েছিল এ কাগজে।
মুসলিম লীগরা ধর্ম ব্যবসা, গোত্র ব্যবসা অর্থাৎ সংকীর্ণ দৃষ্টির কারণে ‘জেহাদ’ নাম সত্ত্বেও এর বিরোধিতা শুরু করেন। নামের কারণে প্রাদেশিক সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার অনুমান করেছিল এ সংবাদপত্রটি নিশ্চয়ই মুসলিমপন্থী বা পাকিস্তানপন্থী হবে। কিন্তু রাষ্ট্রভাষা বাংলা ভাষা আন্দোলনের অগ্রজ সৈনিক আবুল কালাম শামসুদ্দীন এ পত্রিকার সম্পাদক হওয়ায় তারা অনুধাবন করেছিল ‘ডাল মে কুচ কালা হ্যায়’। পূর্ব পাকিস্তানের সরকারের পক্ষ থেকে পত্রিকার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করা হয়। মহীউদ্দীন আহমদ ইউনাইটেড স্টেট্স ইনফরমেশন সার্ভিসেস ও ফ্রাঙ্কলিন পাবলিকেশন্সের বই মুদ্রণ ও প্রকাশন করতেন বলে একদিক দিয়ে এর মালিককে বলা হলোÑ সিআইএ-এর দালাল। অপরদিকে বাংলা মুলুকে অনেকগুলো বাংলা দৈনিক থাকতে নবতর এ বাংলা পত্রিকার কেন প্রয়োজন? গবেষণায় গিয়ে তারা আবিষ্কার করল এরা নিশ্চয় ভারতের দালাল। এরা রাষ্ট্রভাষা বাংলা চায় আবার কায়দা করে ‘জেহাদ’ নাম রাখে। নিশ্চয়ই এর মধ্যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র বিদ্যমান রয়েছে।
ততদিনে সম্ভবত মুসলিম লীগ ভাগ হয়ে কাউন্সিল মুসলিম লীগ ও কনভেনশন মুসলিম লীগে বিভক্ত হতে শুরু করেছে। আইয়ুব খান কনভেনশন মুসলিম লীগের নেতা হতে যাচ্ছেন। কাউন্সিল মুসলিম লীগ সরকারি দলে না গিয়ে বিরোধীদলে পরিণত হয়।
মহীউদ্দীন আহমদ মহাফাঁপড়ে পড়ে যান। একদিকে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার চাচ্ছেন মহীউদ্দীন আহমদ যেন সরকারের ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ পত্রিকাটি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অপরদিকে কাউন্সিল মুসলিম লীগ চায় ‘দৈনিক জেহাদ’ যেন তাদের মুখপত্র হয়। আরেকদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসার দিচ্ছিলেন সব ছেড়ে দিয়ে মহীউদ্দীন আহমদ যেন ‘সোনার বাংলা’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। বঙ্গবন্ধু এ বিষয়ে লিয়াজোঁ করার জন্য তার বড় ভাগিনা শেখ মনিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
কোন দিকে যাবেন মহীউদ্দীন আহমদ? এ সময় লাহোরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের সঙ্গে দেখাও করেছিলেন। ওয়াদা করে এসেছিলেন সাপ্তাহিক বা অর্থ সাপ্তাহিক ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ পত্রিকা প্রকাশ করবেন। ঢাকায় ফিরে এসে তিনি প্রায় একই সময়ে মৌলিক গণতন্ত্র ও সাপ্তাহিক সোনার বাংলা প্রকাশ করেছিলেন। নিজের ওপর তার অগাধ কনফিডেন্স ছিল। সবকিছু সামলে এগিয়ে যেতে পারবেন বলে আশাও করেছিলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন, “এই যে আমি সবাইকে নিয়ে কাজ করার সৌভাগ্য অর্জন করেছি, তাতে কখনো আমার মনে হয় নাই পাকিস্তানকে কেউ ভাঙতে চাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও আমার মনে হয়নি তিনি পাকিস্তান ভাঙতে চাচ্ছেন। আমার যেটা মনে হচ্ছিল, তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চান। আরো যেটা মনে হয়েছে তা হলো, সমাজের সর্বশ্রেণির মানুষ পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন চাচ্ছেন।”
আবুল মনসুর আহমদ তাকে বুঝিয়েছিলেন, ধর্মশাসিত রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রশাসিত ধর্ম কোনোটাই ঠিক হবে না। সবাই আপন আপন ধর্ম পালন করবেন, রাষ্ট্র সকল ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা করবে। সবাই ভালো মানুষ হবে। নিজ নিজ ধর্ম পালন করে সবাই সুনাগরিক হবে। সুনাগরিক হলেই দেশটা বড় হবে এবং সমৃদ্ধ হবে। তবে এ ব্যাপারে তার সংশয় ছিল।
সাংবাদিকগণের কেউ কেউ একই সাথে তিনটি পত্রিকায় চাকরি করার সুযোগও পেয়েছিলেন। অধিকাংশ বরেণ্য সাংবাদিক সূত্রাপুরের ১০৯, ঋষিকেশ দাস রোডের অফিসে সাংবাদিকতার চাকরি করে সচ্ছলতার মুখও দেখেছিলেন। আব্দুল গাফফার চৌধুরী থেকে শুরু করে কবি শামসুর রাহমান, মোহাম্মদ হোসেন, মীর নুরুল ইসলাম, আখতার উল আলম, ওসমান গনি, মোবায়দুর রহমান, সুলতান আহমেদ, সানাউল্লাহ নূরী, হাসান ইকবাল, আনোয়ারুল ইসলামসহ অনেকেই এসব পত্রিকায় আনন্দের সাথে কাজ করেছেন। (আমি এখন বয়স্ক মানুষ। ডিমেনসিয়ায় ভুগছি। কিছু নাম-ধাম ও সময় আমার ভুল হতে পারে। যারা জানেন, অনুগ্রহ করে জানাবেন। আমরা সংশোধনের ব্যবস্থা করব)। আব্দুল গাফফার চৌধুরী ও সুলতান আহমদ আমাদের বলেছেন, পত্রিকার মালিক হিসেবে মহীউদ্দীন আহমদের তিনটি বড় গুণ ছিল। প্রথমটি তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাহসী ও প্রজ্ঞাবান। দ্বিতীয়ত, তিনি ছিলেন সাংবাদিকদের স্বাধীনতায় পরিপূর্ণ বিশ্বাসী মানুষ। তৃতীয়ত, সাংবাদিকদের বেতন-ভাতার বিষয়ে তিনি খুব বেশি গড়িমসি করতেন না।
যা হোক, এসব গুণের সমাবেশ থাকা সত্ত্বেও তিনি নির্বিবাদে পত্রিকাগুলো চালাতে পারেননি। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের রোষানলে পড়ে সে সময় তিনি কয়েকটি মামলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। ফেরারি হয়ে কয়েক মাস বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর নৌকায় অবস্থান করেছিলেন। এতে তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙে যায়। অবশেষে একে একে সব সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে যায়।