দেশে দেশে স্বৈরশাসকের পতন : হাসিনা-আসাদের পর কার পালা?


১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:৫২

॥ ফেরদৌস আহমদ ভূইয়া ॥
একটি দেশ কোনো ব্যক্তি, পরিবার বা গোষ্ঠীর নয়, সকলের তথা সাধারণ জনগণের এবং একটি দেশে এক পরিবার বা শুধুমাত্র একটি গোষ্ঠীই বাস করে না। বরং বিশ্বের প্রতিটি দেশে লাখ থেকে শুরু করে কোটি কোটি মানুষের বসবাস। আল্লাহর সেরা সৃষ্টি মানুষ সামাজিক জীব হওয়ায় তাদের একসাথে বসবাস করতে হয়। মানুষের আলাদা হয়ে একা একা বসবাস করার সুযোগ কম। মানুষকে একটি বিধিবদ্ধ সংগঠিত পদ্ধতিতে একটি সমাজ ও রাষ্ট্রে বসবাস করতে হয়। তাই এ বিধিবিধানের আওতায় একটি সমাজ ও দেশের মানুষকে পরিচালনার জন্য কিছু লোককে দায়িত্ব গ্রহণ ও পালন করতে হয়। আদর্শিক; এমনকি প্রচলিত বিধিবিধানের আলোকেও এ দায়িত্ব নিজ থেকে নেওয়ার সুযোগ নেই।
যুগ যুগ ধরেই এ দায়িত্বটা সমাজের মানুষ একদলকে দিয়েছে এবং তারা এ দায়িত্ব গ্রহণ করে সমাজ ও রাষ্ট্রকে সঠিকভাবে পরিচালনা করেছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের একদল মানুষকে এ দায়িত্বটা দেয়ারও বিভিন্ন পদ্ধতি ও বিধান রয়েছে। যুগ যুগ ধরেই একটি আদর্শিক পদ্ধতি ও বিধানের বিকাশ হয়েছে। বিশ্বে এ দায়িত্ব প্রদান ও গ্রহণের এ বিকশিত পদ্ধতিটা হচ্ছে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একদল মানুষকে দায়িত্ব দেয়া হয়ে থাকে। আদর্শিক ভাষায় এটাকে দায়িত্ব পালনই বলা হয়ে থাকে। যদিও কালের পরিক্রমায় এটাকে রাজনৈতিক ভাষায় ক্ষমতা বলা হচ্ছে। রাজনৈতিক ময়দানে দূষণটা মারাত্মক আকার ধারণ করায় এটাকে এখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বটাকে ক্ষমতা বলা হচ্ছে। সক্রেটিস ও প্লেটোর আমল থেকে শুরু করে হযরত মুহাম্মদ সা. আমল এবং পরবর্তী পর্যায়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই সমাজ তথা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বটি দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার এ দায়িত্বটি প্রতিনিয়ত বিকশিত হচ্ছে এবং হয়েছে। আধুনিক বিশ্বে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের মতামত নিয়েই রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একদল লোক দায়িত্ব পালন করেন। আর সেটা হচ্ছে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সাধারণ জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে। এটা আধুনিক বিশ্বে সবজনস্বীকৃত যে, দেশের প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ভোটেই সরকার তথা শাসনকারী তথা দায়িত্ব পালনকারী নির্বাচিত হবেন। খুবই উন্নত পদ্ধতি যার বিকাশ হয়েছে কয়েক হাজার বছর ধরে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে এখন সাধারণ জনগণের ভোটেই সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গরা নির্বাচিত হয়ে থাকেন। এটাই এখন সারা বিশ্বে স্বীকৃত পদ্ধতি যে, সাধারণ জনগণের সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত নেতারাই সরকার পরিচালনা করবে।
কিন্তু একদল অনৈতিক ক্ষমতাদর্পি, আহংকারী ও শয়তান প্রকৃতির মানুষ এ স্বীকৃত পদ্ধতিটাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্বৈরতান্ত্রিক উপায়ে এককভাবে রাষ্ট্রের পুরো ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে নিজে দেশ শাসন করছে এবং করতে চাচ্ছে। তারা জনগণের ভোট বা নির্বাচনকে বাদ দিয়ে স্বৈরশাসন চালায়। নির্বাচিত সরকারের বিপরীতে এ ধরনের স্বৈরাচারী শাসন যাকে ইংরেজিতে বলে অটোক্রেটিক রুল। স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থায় একজন ব্যক্তির শাসন বলে যাকে ইংরেজিতে বলে অটোক্রাট বাংলায় স্বৈরাচারী। অটোক্র্যাট একটি গ্রীস শব্দ যার অর্থ হচ্ছে নিজের শাসন, একক শাসন। স্বৈরশাসকরা দেশ শাসন করে নিজের একক কর্তৃত্বে, তারা কোনো আইনকানুন সাংবিধানিক বিধিবিধান মানে না। স্বৈরতন্ত্র, স্বৈরাচার বা স্বৈরশাসন একটি সরকার ব্যবস্থা যাতে শাসনকর্তা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার ধারক। এ শাসনকর্তাকে বলা হয়ে থাকে স্বৈরশাসক, যিনি দেশের জনগণ, সংবিধান, আইনের রীতিনীতি অগ্রাহ্য করে জোর করে ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে তার অধীনস্থ করে রাখেন। বিশ্বে কয়েক ধরনের স্বৈরশাসন রয়েছে যেমন ডিক্টেটরশিপ অর্থাৎ একনায়কতন্ত্র, নির্বাচিত একনায়কতন্ত্র, রাজতন্ত্র, নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র, নির্বাচিত রাজতন্ত্র, ইত্যাদি।
কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশে এখনো অনেক স্বৈরাচার ও স্বৈরাচারী শাসন রয়েছে। ভ্যারাইটিস অব ডেমোক্রেসি (ডি-ডেম)-নামের একটি প্রতিষ্ঠানের তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সাল পযন্ত বিশ্বের ৮৮টি দেশে স্বৈরশাসন চলছে। এসব স্বৈরাচাররা যারা সাধারণ জনগণের ভোটের কোনো তোয়াক্কা করে না। তারা সামরিক শক্তির বলে বা ভোটের নামে জোর করে ব্যালট বাক্স ভরে ক্ষমতা ধরে রেখে দেশ শাসন করে বা করার কোশেশ করে। তবে আখেরে তাদের পরিণতি ভালো হয় না। তাদের জনরোষে পড়ে শুধু মসনদ নয় দেশ ছেড়েও পালাতে হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। ইতোপূর্বে এমন অনেক স্বৈরশাসককে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। ডি-ডেম স্বৈরতন্ত্রকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। একটা হচ্ছে প্রকৃত বা সাচ্চা কট্টর স্বৈরাচার আর একটি নির্বাচিত স্বৈরাচার। প্রকৃত স্বৈরাচাররা নির্বাচনের মাধ্যমে কোনো প্রধান নির্বাহী বা আইন বিভাগ তৈরি করে না এবং দেশের সাধারণ জনগণের নেতা নির্বাচনের কোনো সুযোগ থাকে না।
অপরদিকে নির্বাচিত স্বৈরাচাররা সাধারণ জনগণকে ভোটের মাধ্যমে দেশের প্রধান নির্বাহী নির্বাচনের সুযোগ দেয়; এমনকি দেশে বহুদলীয় রাজনীতিও থাকে। কিন্তু এসব নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয় না বা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ থাকে না। বাংলাদেশ ও রাশিয়া এ ধরনের নির্বাচিত স্বৈরাচারের উদাহরণ।
স্বৈরশাসকরা উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের কথা বলতে মুখে ফেনা তুলে দেশ শাসন করে থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের কপালে দেশের মাটিতে শেষ নিশ্বাস নেয়ার সুযোগ থাকে না। অগণতান্ত্রিক অপকর্মের জন্য তাদের নিজ ভূমি ছেড়ে বিদেশেই পালাতে হয়। বিংশ শতকে যেমন এমন শাসকদের দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে, তেমনিভাবে একবিংশ শতকে ঘটছে। ইতোপূর্বেকার স্বৈরশাসকদের পরিণতি দেখে পরের স্বৈরশাসকদের হুঁশ হয়নি। ১৯৭৯ সালে ইরানের স্বৈরশাসক রেজা শাহ পাহলভীকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। ১৯৮৬ সালে ফিলিপাইনের মার্কোসকেও জনগণের প্রতিরোধের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে।
তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখনো আরো স্বৈরশাসক রয়েছে। মাত্র চার মাসের ব্যবধানে দুই স্বৈরশাসককে জনতার প্রতিরোধের মুখে দেশ থেকে পালাতে হয়েছে। বিশ্বের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন প্রশ্ন এর পর কোনো স্বৈরশাসকের পালা। কারণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শেখ হাসিনা ও আসাদের মতো আরো অনেক স্বৈরশাসকরা রয়েছেন। যারা অবৈধ ক্ষমতার বলে সাধারণ মানুষকে অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। উত্তর কোরিয়া, চীন, মিয়ানমার, রাশিয়া, বেলারুশ, কম্বোডিয়া ও ভেনিজুয়েলাসহ অনেক দেশে এখনো অনেক স্বৈরশাসক রয়েছে। শেখ হাসিনা ও আসাদের মতো যুগে যুগে এমন অনেক স্বৈরশাসককে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। আরব বসন্তে মিশরের হোসনী মোবারক, তিউনিশিয়ার জেন আল আবেদিন বেন আলী, রুমানিয়ার নিকোলাস চসেস্কু, ইউক্রেনের ভিক্টর ইউনোকুভিচ, মিয়ানমারের থান শ, থাইল্যান্ডের থাকসিন সিনাওয়াত্রা, শ্রীলঙ্কার গোতাবায়ে রাজাপাকসে, কিরঘিস্তানের কুরমানবেক বাকায়েভ, আফগানিস্তানের আশরাফ ঘানি, ইয়েমেনের আবদুল্লাহ সালেহ, জিম্বাবুয়ের রবার্ট মুগাবে, চাদের হুসনি হাবরে, চিলির অগাস্তো পিনোচেট, বলিভিয়ার ইভো মোরালেস, ইকুয়োডরের লুসিও গুতরেজসহ আরো অনেক।
একবিংশ শতাব্দীতে এসে ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট মাসে আফগানিস্তানে তৎকালীন পুতুল প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি সরকারের পতন ঘটে। তালেবানদের ভয়ে প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানিও রাতের আঁধারে দেশত্যাগ করেন। সরকারের মন্ত্রীরাও বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যায়। তালেবানরা ক্ষমতা দখল করে নতুন সরকার গঠন করে।
২০২২ সালের জুলাই মাসে শ্রীলঙ্কার আর এক স্বৈরশাসক গোটাবায়ে রাজাপাকসে গণপ্রতিরোধের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। শ্রীলঙ্কার ৭৩ বছর বয়সি নেতা গোটাবায়ে, তার স্ত্রী ও একজন দেহরক্ষীসহ চার যাত্রী নিয়ে একটি সামরিক বিমানে করে বন্দরনায়েক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মালদ্বীপে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন।
তারপর ২০২৪ সালে আগস্ট মাসে বাংলাদেশের স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকে ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মুখে সপরিবারে দেশ থেকে পালিয়ে পাশের দেশ ভারতে আশ্রয় নিতে হয়েছে। তার মাত্র চার মাস পর গত ৮ ডিসেম্বর রোববার সিরিয়ার আর এক স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদকে গোপনে দেশ ছেড়ে রাশিয়ায় আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়েছে।
এশিয়ার দূরপ্রাচ্যের দেশ উত্তর কোরিয়া একটি উন্নত রাষ্ট্র। কিন্তু কিম জং উন নামের এক স্বৈরশাসক দেশটি একনায়কতন্ত্র চালাচ্ছে। পারিবারিকভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কিম সাধারণ জনগণের ওপর প্রতিনিয়ত অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে জোর করে ক্ষমতা ধরে রেখেছে। সমাজতন্ত্রের নামে দেশটিকে একটি কারাগারে পরিণত করেছে মি কিম। সাধারণ জনগণের কোনো বাকস্বাধীনতা নেই।
ইউরোপের উত্তর প্রান্তের দেশ বেলারুশ। স্বৈরশাসক আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কো দীর্ঘদিন ধরে বেলারুশ শাসন করছেন। বিরোধীদের দমন করে ও নির্বাচনে কারচুপি করে ক্ষমতায় টিকে আছে লুকাশেঙ্কো।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারেও চলছে সামরিক স্বৈরতন্ত্র। বিগত কয়েক দশক ধরেই সামরিক স্বৈরাচারের অধীনে অত্যাচারিত হচ্ছে মিয়ানমারের জনগণ। ২০০৭ সালে এক বিপ্লবের পর থান শকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। অবশ্য কিছুদিন গণতান্ত্রিক শাসন চলার পর আবার মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর স্বৈরশাসন চলছে।
চীন বর্তমান বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতির দেশ। চীনেও গণতান্ত্রিক শাসন নেই। চলছে একদলীয় শাসন। দলের নেতাই দেশটির সর্বেসবা। সাধারণ জনগণের কোনো ভোটাধিকার নেই। বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশটির ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করছে।
বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়ায় চলছে গণতন্ত্রের নামে স্বৈরাচারী শাসন। ভøাদিমির পুতিন কথিত নির্বাচনের ব্যবস্থা করলেও বিরোধীদলকে অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ সুবিধা দেন না। পুতিন সর্বদা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বললেও ক্ষমতাকে সুসংহত করার জন্য সংবিধান সংশোধন করে বিভিন্ন অগণতান্ত্রিক ধারা যুক্ত করেছেন। পুতিন ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাশিয়ার নির্বাচন ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ। প্রতিবার সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ-মিছিল অনুষ্ঠিত হলেও উল্টো পুলিশ দমন-নিপীড়ন করে মিছিল সমাবেশ বন্ধ করে। পুতিনের কট্টোর সমালোচক বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনিকে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগ রয়েছে পুতিনের বিরুদ্ধে। একটি তদন্তেও ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসের (এফএসবি) এজেন্টরা জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল নাভালনিকে ‘ভøাদিমির পুতিন সবচেয়ে বেশি ভয় পায়’ বলে বর্ণনা করেছে। পুতিন স্বৈরাচারী কায়দায় দুই যুগেরও অধিক সময় রাশিয়ার ক্ষমতা দখল করে আছেন।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলায়ও চলছে গণতন্ত্রের নামে অগণতান্ত্রিক শাসন। গত জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত ভোটে নিকোলাস মাদুরোকে দেশটির নির্বাচন কমিশন তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়ী ঘোষণা করেছে। বিরোধীদলগুলো নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বলেছে নির্বাচনে কারচুপি করে মাদুরোকে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। টানা তৃতীয় বারে পুনরায় ছয় বছরের জন্য প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিচ্ছেন মাদুরো। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর শাসনকে ‘অপ্রিয় এবং স্বৈরাচারী’ বলে উল্লেখ করেছেন।
কম্বোডিয়ার শাসনব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক বলা হলেও দেশটি কার্যত স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অধীনে রয়েছে বলে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন। বিশেষ করে হুন সেনের কয়েক দশকের শাসনকালে এটি আরও স্পষ্ট হয়েছে। ২০২৩ সালে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন হুন সেনের ছেলে হুন মানেত। অনেকটা পারিবারিকতন্ত্র চলছে কম্বোডিয়ায়। গত আগস্টে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল, বাংলাদেশের ঘটনায় অনুপ্রাণিত হয়ে কম্বোডিয়ায়ও সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হতে পারে।
সারা বিশ্বেই প্রতিনিয়ত স্বৈরশাসকের সংখ্যা বাড়ছে বৈ কমছে না। লন্ডনের ইন্ডিপেডেন্ট পত্রিকায় এক নিবন্ধে ব্রিটিশ দার্শনিক ও সাংবাদিক জুলিয়ান বাগিনি বলেছেন, ‘ক্ষমতাবানরা নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে নিষ্ঠুর আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।’ তিনি পশ্চিমা শক্তিগুলোকে দোষারোপ করে বলেন, ‘এ অবক্ষয়ের কারণে উন্নয়নশীল বিশ্বে স্বৈরশাসকের সংখ্যা বাড়ছে এবং তারা সব ধরনের নিষ্ঠুরতার আশ্রয় নিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করছে।’
ক্ষমতাবান বলি আর শাসকগোষ্ঠী বলি, তাদের নৈতিকতার মান উন্নত হতে হয়। বিশেষ করে রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকরাই দেশ তথা রাষ্ট্র পরিচালনায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব রাখে। তাদের যদি নৈতিক মান উন্নত হতো, তাহলে রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বৈরাচারের উদ্ভব হতো না। বিশ্বের শাসকগোষ্ঠী তথা রাজনীতিক ও সাংবাদিকসহ রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা আছেন বা থাকবেন, তারা যদি নৈতিক মানের উন্নয়নে সচেষ্ট হন, তাহলে পুরো পৃথিবীই কল্যাণময় হয়ে উঠবে।