সম্পাদকীয় : ভারতের ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে
৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৮
প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার পূর্বশর্ত। পারস্পরিক সমমর্যাদার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয় এ সম্পর্ক। সমমর্যাদা রক্ষায় আকার-আয়তন ও শক্তিতে বড় দেশগুলোর ভূমিকা নিঃসন্দেহে বেশি। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়াবাসীর দুর্ভাগ্য, এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় দেশ ভারত। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই দেশটি এ অঞ্চলের স্বাধীন-সার্বভৌম দেশগুলোর জন্য হুমকি। তারা ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রচার করে- ভারতবর্ষ খণ্ড খণ্ড করে ব্রিটিশরা এ অঞ্চলে অনেকগুলো স্বাধীন দেশ সৃষ্টি করে দিয়ে গেছে। কিন্তু এ কথা যে মিথ্যা তা প্রমাণ করতে ইতিহাসের ব্যাপক গবেষণা এবং পর্যালোচনার প্রয়োজন নেই। একটি ঘটনার দিকে দৃষ্টিপাত করাই যথেষ্ট। তা হলো- ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন বর্ণ-হিন্দু ও ক্ষমতালোভী মুসলিম অমাত্যদের ষড়যন্ত্রের কারণে পলাশী যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ্দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে এ দেশ স্বাধীনতা হারায়। অর্থাৎ বাংলাদেশ তখনই স্বাধীন ছিল। এর সীমানাও তখন অনেক বড় ছিল। পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং উড়িষ্যা মিলেই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ। এমনভাবে গোটা ভারতবর্ষের অনেক ভূখণ্ডই তখন স্বাধীন ছিল। অথচ ভারত তার আগ্রাসনের সুবিধার জন্য এ বয়ান চালু করেছে গোটা ভারতবর্ষ একটা দেশ ছিল। শ্রী ভরত হলো শ্রীরামের ভাই। তার নামের সাথে ভারতের নাম মেলানোর ব্যর্থ ও বিকৃত চেষ্টা চালাচ্ছে অব্যাহতভাবে। অথচ ঐতিহাসিকভাবে সত্য, ভারত নয়, এ অঞ্চলের নাম ছিল হিন্দুস্তান। এ নামের সাথে জড়িয়ে আছে মুসলিম ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
ঐতিহাসিক ও গবেষক ড. মোহাম্মদ হান্নান লিখেছেন, হযরত আদম আ. থেকে আমাদের এ মানবজাতির শুরু। কিন্তু নূহ (আ.)-এর সময় সমগ্র পৃথিবীতে এক মহাপ্লাবন ঘটে। এ মহাপ্লাবনে দুনিয়ার সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। কেউ জীবিত ছিল না। শুধু নূহ (আ.)-এর নৌকায় আরোহণ করেছিলেন তাঁর ৮০ জন ভক্ত। এ ৮০ জন থেকেই মানবজাতির আবার নতুন যাত্রা। এ নতুন যাত্রায় জাতিরও সম্পর্ক ছিল। বেঁচে যাওয়া ৮০ জনের মধ্যে ছিলেন নূহ (আ.)-এর এক পুত্র। তাঁর নাম ‘হাম’। নূহ (আ.) তাঁর পুত্র হামকে বললেন, ‘তুমি মানববসতি স্থাপনের জন্য চলে যাও পৃথিবীর দক্ষিণ দিকে’। পিতার নির্দেশ পেয়ে হাম চলে এলেন আমাদের এশিয়া মহাদেশের কাছাকাছি। সেখানে এসে তিনি তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র হিন্দকে পাঠালেন ভারতের দিকে। অনেকে মনে করেন, হামের পুত্র হিন্দের নাম অনুসারেই ভারতের নাম হয়েছে হিন্দুস্তান। হিন্দের দ্বিতীয় পুত্রের নাম ছিল ‘বঙ্গ’। এই ‘বঙ্গ’র সন্তানরাই বাঙালি বলে পরিচিতি লাভ করেন। অর্থাৎ বাঙালির আদি পুরুষ হচ্ছেন ‘বঙ্গ’। (সূত্র : ড. মোহাম্মদ হান্নান : দেশের নামটি বাংলাদেশ কে রেখেছে এ নাম, অনুপম প্রকাশনী, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯, পৃষ্ঠা ১৫-১৬)। ইতিহাসের এ বিকৃতির কারণেই অনেকে মনে করেন, হিন্দু জনসংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে ভারতের নাম হিন্দুস্তান, যা আসলে ভুল। হিন্দু কোনো ধর্মের নাম নয়, ভৌগোলিক জাতিগত পরিচয়, ধর্মের নাম সনাতন। অথচ ভারতের উগ্রবাদীরা স্লোগান দেয়, ‘হিন্দু, হিন্দি, হিন্দুস্তান মুসলিম ভাগো পাকিস্তান।’ এ আক্রোশের শিকার আজ বাংলাদেশের মুসলমানরাও। ভারতের শাসকরা বাংলাদেশিদের সেবাদাস করে রাখতে চায়। তাই গণতন্ত্র ও সুশাসন উপেক্ষা করে তারা তাদের অনুগত সরকারকে টিকিয়ে রাখতে আগ্রাসী আচরণ চালাচ্ছে। বিশেষ করে তাদের সর্বশেষ সেবাদাসী হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে দেশ জেগে উঠলে আওয়ামী শাসনের পতন হয়। হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়ার পর ভারত তাকে সাথে নিয়ে অব্যাহতভাবে ষড়যন্ত্র করছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। দেশকে অস্থিতিশীল করতে তাদের সব ধরনের টুলস ব্যবহার করছে। বিশেষ করে গদি ও মোদি মিডিয়া ব্যবহার করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী মিথ্যাচার করছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার হাসিনামুক্ত দেশে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করে বৈষম্যহীন দুর্নীতিমুক্ত ও উন্নত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ভারত ও পতিত স্বৈরাচার হাসিনা অন্তর জ¦ালায় জ¦লছে।
আমরা মনে করি, ঐক্যবদ্ধ থাকলে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার প্রভু ভারত কিছুতেই সফল হবে না। তাই ভারতের মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় আমাদের নিজের ছোট-খাটো মতবিরোধ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকার বিকল্প নেই। ভারতের বর্তমান সরকার ও জাতীয় নেতাদেরও বুঝতে হবে দাদাগিরি করলে মাথা উঁচু হয় না। বরং যারা প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে, দাদাগিরি ফলায় এবং গণতন্ত্র, মানবাধিকার উপেক্ষা করে, তারা নিজ দেশেও শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়। তাই আসুন, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সবাই সার্ককে জাগ্রত করি। সব দেশের শান্তিবাদী মানুষ মিথ্যুক ও ষড়যন্ত্রকারীদের বয়কট করি।