জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের বার্ষিক সম্মেলনে তারেক রহমান : সংস্কার নিয়ে সরকারের সাথে বিএনপির কোনো বিরোধ নেই
২৯ নভেম্বর ২০২৪ ০০:০০
সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে জামায়াত পাশে আছে, থাকবে-গোলাম পরওয়ার
সোনার বাংলা রিপোর্ট: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, কেবল একটি নির্বাচনের জন্যই গণঅভ্যুত্থান হয়নি, এটি যেমন এক ধরনের বাস্তবতা; অপরদিকে গত দেড় দশকে আরেকটি নির্মম বাস্তবতা ছিল জনগণকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন রেখে নির্বাচন ছাড়াই বার বার সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে পলাতক স্বৈরাচার দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছিল। জনগণকে তাদের সব রাজনৈতিক ও ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিল। এ কারণে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চায় জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন অবশ্যই একটি মুখ্য বিষয়।
সংস্কার আগে না নির্বাচন আগেÑ এ ধরনের প্রশ্ন তুলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তারেক রহমান বলেন, সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির কোনো বিরোধ নেই। সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে- যারা এ ধরনের প্রশ্ন তুলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন, তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু ভিন্ন।
গত ২৫ নভেম্বর সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সম্মেলনে যুক্ত হন।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং দিদারুল আলম ও সাঈদ খানের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এম আবদুল্লাহ, বর্তমান মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ইউনিয়নের সাবেক নেতা এম এ আজিজ, আবদুল হাই শিকদার, এলাহী নেওয়াজ খান, বারেক হোসাইন, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, সহ-সভাপতি রাশেদুল হক প্রমুখ।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের আকাক্সক্ষা একটি বৈষম্যহীন, মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা- এ মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘শহীদদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করা আমাদের দায়িত্ব। একই সঙ্গে পলাতক স্বৈরাচার ও তার দোসররা যাতে রাজনীতিতে আর পুনর্বাসিত হতে না পারে, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করাও কিন্তু আমাদের কর্তব্য। এজন্যই যথাযথ আইনগত এবং রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। এর জন্য পলাতক মাফিয়াদের পুনর্বাসন ঠেকাতে আদালতে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা প্রয়োজন। অপরদিকে তাদের অবশ্যই জনগণের আদালতে রাজনৈতিক বিচারে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরিস্থিতিতেও ফেলতে হবে। যদি আমরা এ দুইয়ের সমন্বয় ঘটাতে পারি, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বিতাড়িত অপশক্তি বাংলাদেশের রাজনীতিতে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে সক্ষম হবে না।’
সাংবাদিকতায় বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখা প্রয়োজন উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ফ্যাসিবাদের আমলে গণমাধ্যমের প্রতিটি শাখায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতা প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী কিংবা যেকোনো মানুষের মধ্যেই যেকোনো বিষয়ে যেকোনো ইস্যুতে দ্বিমত-ভিন্নমত থাকবে, থাকতেই পারে। এটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সৌন্দর্য। কিন্তু ভিন্নমত অথবা দ্বিমতকে শত্রুতা কিংবা নির্লজ্জ দলাদলিতে পরিণত করলে কী পরিণতি হতে পারে, গত দেড় দশকে দেশের জনগণ তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পলাতক স্বৈরাচারের সঙ্গে তার অবৈধ মন্ত্রী, এমপি, বুদ্ধিজীবী বা বিচারপতি, বায়তুল মোকাররমের খতিব, প্রেস ক্লাবের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক কিংবা কতিপয় সাংবাদিকের পলায়নের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হয়েছে যে অবৈধ রাষ্ট্রশক্তি নয়, বরং শেষ পর্যন্ত জনগণের রায়ই কিন্তু চূড়ান্ত।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের বলা হয় সভ্যতার ব্যারোমিটার। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের শাসনকালে ভিন্নমতের সাংবাদিকরা অনেক জুলুম-নির্যাতন ও মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন। মানুষের ও সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না। সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জামায়াত পাশে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সাংবাদিক ভাইয়েরা আমাদের রাজপথের সহযোদ্ধা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা পতনের আন্দোলনে সাংবাদিক ভাইদের ভূমিকা ছিল স্মরণীয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত সাংবাদিকদের অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি এবং তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের শাসনকালে রাষ্ট্রের সব যন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। আহতদের সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাচ্ছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ৪০ হাজার আহত ও প্রায় ২ হাজার শহীদ হয় এবং ২ হাজারের মতো পঙ্গু ও চোখ হারায়। গণতন্ত্রের পথে অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সমর্থন দিয়েছি। হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার আমরা স্বপ্ন দেখি। ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। গণতন্ত্রের সাথে তাদেরই মানায়, যারা গণতন্ত্র চর্চা করে। গণতন্ত্র ও আওয়ামী লীগ একসাথে যায় না। তারা অতীতের মতো বাকশাল কায়েম করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা চালায়। তারা বরাবরই ফ্যাসিস্ট ও বাকশালী এবং সংবাদপত্রের বিরোধী ছিল। তিনি বলেন, আসুন- আমরা জাতীয় নির্বাচনের জন্য কাজ করি। একটি সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে এবং জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের হাতেই দেশ নিরাপদ। নির্বাচনের মাধ্যমেই আমরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবেও পরাজিত করি চিরকালের জন্য।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণাকে আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা নিগৃহীত করেছে। আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের নির্যাতন করে কিয়ামত পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছে। কিন্তু পারেনি, পালিয়ে যেতে হয়েছে। তিনি ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিলের দাবি জানান। সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানকে হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করেছে। সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন ফ্যাসিস্টমুক্ত করতে হবে। ফ্যাসিবাদমুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে হবে। বেকার সাংবাদিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। সাংবাদিকদের সুরক্ষা আইন তৈরি করতে হবে।