সংক্ষিপ্ত বিশ্ব সংবাদ


২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০০

অক্সফোর্ডে ‘স্বাধীন কাশ্মীর’ নিয়ে বিতর্কসভা!
‘স্বাধীন কাশ্মীর রাষ্ট্র’-গঠনের স্বপক্ষে আয়োজিত বিতর্কসভাকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা ছড়াল যুক্তরাজ্যে। সংশ্লিষ্ট কর্মসূচির বিরোধিতায় একেবারে ‘মাঠে নেমে’ প্রতিবাদে সামিল হলেন ব্রিটিশ হিন্দু এবং ব্রিটেনে বসবাসকারী ভারতীয় শিক্ষার্থীরা। ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যে (ইউকে) বসবাসকারী হিন্দু ও ভারতীয়দের নিয়ে গঠিত একটি সংগঠন হলোÑ ইনসাইট ইউকে। তাদের তরফে গত ১৫ নভেম্বর শুক্রবার ভোর রাতে (স্থানীয় সময় অনুসারে) অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কসভা অক্সফোর্ড ইউনিয়নের বাইরে একটি প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়। ইনসাইট ইউকে-এর দাবি, ওই বিতর্কসভার যে বিষয়ে বিতর্কের আয়োজন করা হয়েছে, তার শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘এই হাউস স্বাধীন কাশ্মীর রাষ্ট্র গঠনে বিশ্বাসী’। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরই ব্রিটেনে বসবাসকারী ভারতীয় শিক্ষার্থীরা এবং ব্রিটিশ হিন্দু নাগরিকরা এর প্রতিবাদে সরব হন বলে দাবি করেছে ইনসাইট ইউকে কর্তৃপক্ষ। ইনসাইট ইউকে-এর তরফে ইতোমধ্যেই এ বিতর্কের বিরোধিতা করে অক্সফোর্ড ইউনিয়ন সোসাইটিকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেই চিঠিতে দুই ব্যক্তির নাম বিশেষ করে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ দুই ব্যক্তি হলেনÑ মুজ্জাম্মিল আয়ুব ঠাকুর এবং জাফর খান। তারাই এ প্রস্তাবের সপক্ষের বক্তা। ইনসাইট ইউকে-এর অভিযোগ, এ দুজনের বিরুদ্ধে আগেও হিংসাত্মক চরমপন্থী গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে। ইনসাইট ইউকে আরও দাবি করেছে, ইতোমধ্যেই ঠাকুরের বিরুদ্ধে ঘৃণাভাষণ এবং হিংসায় উসকানি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে যেসব সংগঠনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, তিনি তেমন সংগঠনের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে চলেন বলে দাবি করেছে ইনসাইট ইউকে।
তাদের তরফে আরও জানানো হয়েছে, ঠাকুরের নিজের একটি সংগঠন রয়েছে। যার নাম ‘ওয়ার্ল্ড কাশ্মীর ফ্রিডম মুভমেনট’। এছাড়া ঠাকুর ও তার বাবা যৌথভাবে একটি সংগঠন খুলেছেন। সেটি হলো- ‘মার্সি ইউনিভার্সাল’। ইনসাইট ইউকে-এর দাবি, এ সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ব্রিটেনের স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড তদন্ত করেছে। এমনকি এ সংগঠনগুলোর সঙ্গে সন্ত্রাসবাদীদের যোগাযোগ থাকার অভিযোগ ওঠায় চ্যারিটি কমিশন এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-ও তদন্ত চালিয়েছে। অন্যদিকে জাফর খান হলেন ‘জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট’ (জেকেএলএফ)-এর চেয়ারম্যান। তিনি কাশ্মীরি হিন্দুদের হত্যায় অভিযুক্ত সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে দাবি করেছেন ইনসাইট ইউকে। এছাড়া ১৯৮৪ সালে ব্রিটেনে থাকাকালীন ভারতীয় কূটনীতিক রবীন্দ্র মাতরের অপহরণ ও খুনের ঘটনাতেও জেকেএলএফ যুক্ত ছিল বলে ইনসাইট ইউকে-এর তরফে অভিযোগ করা হয়েছে। টিওআই।

মধ্যপ্রাচ্যে সংকট নিরসনে আরব দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করবে রাশিয়া
রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যের সংকট নিরসনে ও উত্তেজনা কমাতে আরব ও মুসলিম অংশীদারদের সাথে সমন্বয় করবে, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা আরব লীগ এবং অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) সাম্প্রতিক যৌথ শীর্ষ সম্মেলনের বিষয়ে তার মন্তব্যে বলেছেন। খবর তাস। ‘বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে উত্তেজনা হ্রাস করার স্বার্থে এবং সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত নীতিগুলোর ওপর ভিত্তি করে একটি ব্যাপক রাজনৈতিক-কূটনৈতিক মীমাংসার দিকে রূপান্তরের স্বার্থে আমরা আমাদের আরব এবং মুসলিম অংশীদারদের সাথে, সেইসাথে অন্যান্য সমমনা দেশগুলোর সাথে আরও ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের জন্য প্রস্তুত,’ কূটনীতিক জোর দিয়ে বলেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে, ১১ নভেম্বর সৌদি আরবের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ফোরামের পরে, একটি বিবৃতি গৃহীত হয়েছিল, যার মধ্যে অন্যান্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘গাজা উপত্যকায় এবং লেবাননে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান, বাস্তবায়নের জন্য প্রাসঙ্গিক জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ এবং নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলেশন এবং যাদের প্রয়োজন তাদের জন্য মানবিক সাহায্যের বিধান।
‘এ নথিটি ফিলিস্তিনি-ইসরাইল বন্দোবস্তের জন্য আন্তর্জাতিক আইনি নীতির ভিত্তিতে ফিলিস্তিনি জনগণের নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অধিকার বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিস্থিতির সাধারণ স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়,’ জাখারোভা উল্লেখ করেছেন, ‘এ লক্ষ্য অর্জনে অবদান রাখার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল।’ রিয়াদে আলোচনা করার অবস্থানটি রাশিয়ার মূল পদ্ধতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, মুখপাত্র বলেছেন। ‘আমরা মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতার অবসান ঘটাতে এবং এ বিশাল অঞ্চলজুড়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে অগ্রসর হওয়ার জন্য আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোর কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালনের অভিপ্রায়ের প্রশংসা করি,’ তিনি উপসংহারে বলেছিলেন। ২০২৩ সালের নভেম্বরে রিয়াদে এ ধরনের প্রথম বৈঠক হয়েছিল।

হতাশ যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম ভোটাররা
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার সদস্য বাছাই নিয়ে হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুসলিম নেতারা। গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধ ও লেবাননের ওপর হামলায় বাইডেন প্রশাসনের সমর্থনের প্রতিবাদে রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিলেন এ মুসলিম নেতারা। কিন্তু ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা পদের জন্য বাছাই করা ব্যক্তিদের দেখে গভীরভাবে হতাশ হয়েছেন বলে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থাকে জানিয়েছেন তারা। ফিলাডেলফিয়ার বিনিয়োগকারী রাবিউল চৌধুরী। পেনসিলভানিয়ায় কমলা হ্যারিসকে ত্যাগ কর প্রচারের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে ‘মুসলিমস ফর ট্রাম্প’ প্রতিষ্ঠা করেন। রয়টার্সকে তিনি বলেছেন, ‘ট্রাম্প আমাদের কারণে জিতেছেন। কিন্তু আমরা তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে বাছাই করা ব্যক্তি ও অন্যদের নিয়ে সন্তুষ্ট নই।’ কৌশলবিদরা মনে করেন, ট্রাম্পের প্রতি মুসলিমদের সমর্থন তাকে মিশিগান রাজ্যে জিততে সাহায্য করেছিল। এছাড়া অন্য দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতেও ট্রাম্পের জয়ে তারা ভূমিকা রেখেছেন। ট্রাম্প রিপাবলিকান সিনেটর ও ইসরাইলের কট্টর সমর্থক মার্কো রুবিওকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে নিয়োগ দিয়েছেন। চলতি বছরের শুরুতে রুবিও গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে, তিনি বিশ্বাস করেন ইসরাইলকে হামাসের ‘প্রত্যেকটি উপাদান’ ধ্বংস করা উচিত। তিনি হামাসকে ‘নিষ্ঠুর প্রাণী’ বলে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া সাবেক আরকানসাস গভর্নর মাইক হাকাবিকে ইসরাইলে পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করেছেন ট্রাম্প। হাকাবি কট্টর ইসরাইলপন্থি রক্ষণশীল নেতা হিসেবে পরিচিত। পশ্চিমতীরে ইসরাইলি দখলের সমর্থক এবং ফিলিস্তিনে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে ‘অকার্যকর’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি। রিপাবলিকান প্রতিনিধি এলিস স্টেফানিককে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাম্প। গাজায় হত্যার নিন্দা জানানোয় জাতিসংঘকে ‘ইহুদিবিদ্বেষের দুর্গন্ধময় স্থান’ বলেছিলেন তিনি। আমেরিকান মুসলিম এনগেজমেন্ট অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট নেটওয়ার্ক (এএমইইএন) এর নির্বাহী পরিচালক রেক্সিনাল্ডো নাজারকো বলেছেন, মুসলিম ভোটারদের আশা ছিল-ট্রাম্প শান্তির জন্য কাজ করবে এমন মন্ত্রিসভার সদস্যদের বেছে নেবেন। কিন্তু তার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ‘আমরা খুবই হতাশ’, তিনি বলেন। ‘মনে হচ্ছে এ প্রশাসন পুরোপুরি রক্ষণশীল, চরম ইসরাইলপন্থি ও যুদ্ধপন্থি লোকদের দিয়ে পরিপূর্ণ। ট্রাম্পের শান্তি এবং যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের পক্ষের প্রচারণার ব্যর্থতা এটি।’ নাজারকো আরও বলেন, ‘তবে গাজায় যুদ্ধের অবসান নিয়ে তাদের চাপ অব্যাহত থাকবে। অন্তত আমরা এখনো মানচিত্রে আছি।’ ডিয়ারবোর্ন হাইটসের মেয়র বিল বাজ্জিও ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছিলেন। বিল বাজ্জিও বলেছেন, তিনি নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিনবার সাক্ষাৎ করেছেন। মন্ত্রিসভার নিয়োগ সত্ত্বেও তিনি এখনো বিশ্বাস করেন যে, ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য কাজ করবেন। মিশিগানে রিপাবলিকান পার্টির ভাইস চেয়ার ফর আউটরিচ ও লেবানিজ আমেরিকান মুসলিম রোলা মাক্কি তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। বলেন, ‘আমি মনে করি না ট্রাম্পের প্রতিটি নিয়োগ সবাইকে খুশি করবে।’ তবে ফলাফলটাকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। রয়টার্স।
গ্রন্থনা ও সম্পাদনা : আবদুল কাইউম খান