দৃষ্টিনন্দন কাঞ্চনজঙ্ঘার হাতছানি
৮ নভেম্বর ২০২৪ ১১:২৮
আসাদুজ্জমান আসাদ, পঞ্চগড়: মহানন্দা নদী। প্রবাহিত বাংলা-ভারত সীমান্ত দিয়ে। বর্ষায় বিরতিহীন স্রোত। খরা মৌসুমে স্রোতহীন নদী। নদীর বুকে পাথর শ্রমিকরা মাটি খুঁড়ে পাথর তুলছে। বাহ! কী চমৎকার মনোরম দৃশ্য। নদীর ওপারে সবুজ চা পাতার দিগন্ত জোড়া মাঠ। তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো নদীর তীরে অবস্থিত। ডাকবাংলোর সুবিশাল ক্যাম্পাস। এটি পিকনিক স্পষ্ট। পিকনিক স্পষ্টটি সমতল ভূমি থেকে প্রায় ২০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। যার দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যপট, সৌন্দর্যের শোভাবর্ধন করেছে। পিকনিক স্পটে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, অধ্যাপক, সাংবাদিক, ক্লাবসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রকৃতি প্রেমিক পর্যটকরা প্রতি বছর ছুটে আসেন। এখানে রয়েছে খেলনার জন্য দোলনা, বসার গালিচাসহ নানরকম সুব্যবস্থা। গোলাপ, হাসনাহেনা, রজনীগন্ধ্যা, জুঁই চামেলীসহ নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশি ফুলের নজরকাড়া হাসি। এখানে খোদাই করে লিখা রয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি শামসুর রহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতাটি।
বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব ১৬০ কিলোমিটার। ডাকবাংলো থেকে হেমন্ত ও শীতকালে কাঞ্চনজঙ্ঘার মনো মুগ্ধকর সৌন্দর্য সহজেই উপভোগ করা যায়। মনোরম দৃশ্যাবলি যেন আরো মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে। শীতকালে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য দেশ-বিদেশ পর্যটকরা ছুটে তেঁতুলিয়ায় আসে। পর্যটকদের পদচারণে হয়ে ওঠে মুখরিত। কুয়াশা, মেঘে ঢাকা আকাশ না হলে উত্তরাকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘা ভেসে ওঠে, যা সহজে দেখা মেলে।
এ বিরল দৃশ্য দেখতে বিভিন্ন জেলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, অধ্যাপক, ক্লাবের সদস্য, সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক, নায়ক, নায়িকাসহ বিভিন্ন শ্রেণির নারী-পুরুষ কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য ভিড় জমান। বিশেষ করে ঐতিহাসিক ডাকবাংলো উঁচু হওয়ায় পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অপরূপ দৃশ্য ভাসে। পাহাড়িদের বাড়ির আলোতে দার্জিলিংকে রূপের রাণী হয়ে দেখা যেন তারার মেলা। এই দৃশ্য দেখার জন্য অবশ্যই অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে সুবর্ণ সুযোগটি থাকে। দেখা যাবে সেসব অপরূপ সৌন্দর্য ও মাধুরী। কাঞ্চনজঙ্ঘা হিমালয় পর্বতমালার একটি পর্বতশৃঙ্গ। মাউন্ট এভারেস্টের পরেই ভারতের উঁচু পর্বতশৃঙ্গ। যার উচ্চতা ৩ হাজার ৬৩০ মিটার। এর সাজানো আভা, দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য দেখে উল্লাসে মেতে উঠি। অনুভূতি, অনুভবে দেখা যায় সেই দৃশ্যপট। ক্ষণে ক্ষণে রূপ-লাবণ্য বদলায়। বিকাশ ঘটে অপরূপ সৌন্দর্যের রূপ মাধুরী। সূর্যের তাপ বাড়ার সাথে সাথে নববধূর ঘোমটা টেনে কোথায় যেন হারিয়ে যায়। বাহ! সে কী অপরূপ দৃশ্য? কাঞ্চনজঙ্ঘা রাজকীয় এ চূড়াটি সিকিম রাজ্যে এবং নেপালের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে অবস্থিত। তেঁতুলিয়া থেকে পর্বতের দূরত্ব ১৬০ কিলোমিটার। পর্যটক ও প্রকৃতিপ্রেমীকরা পর্বতশৃঙ্গের মনোমুগ্ধকর, অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য তেঁতুলিয়ায় ছুটে আসেন।
এছাড়া আটোয়ারী কেল্লা, বারো আউলিয়ার মাজার, মির্জাপুর শাহী মসজিদ, গোলকধাম মন্দির, পঞ্চগড় রক্স মিউজিয়ামসহ অনেক ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পরিশেষে পঞ্চগড় জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৌশলগত অবস্থান এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের হাতছানিতে একটি পর্যটন সম্ভাবনাময় জেলা। ইতোমধ্যে জেলাটি পর্যটকদের মুগ্ধতা কুড়িয়েছে, ভ্রমণপিপাসুদের আকৃষ্ট করেছে। নতুনভাবে পিকনিক স্পট, আবাসিক হোটেল, মোটেল, পুরাতন স্থাপনা সংস্কার ও দৃষ্টিন্দন কারুকাজের প্রয়োজন। পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার নিশ্চিত করতে হবে।