ট্যাঙ্কারভ্যান ব্যবহারে গোয়ালা হুমায়ুনের স্বপ্ন জয়


৮ নভেম্বর ২০২৪ ১১:২৭

এম লোকমান হোসেন, চরফ্যাশন (ভোলা) : নাম হুমায়ুন, বয়স প্রায় ২৭ বছর। প্রতিদিন সকালে নিজের খামারের পাশাপাশি আশপাশের বিভিন্ন গরুর খামার থেকে দুধ সংগ্রহ করে বাসা-বাড়ি এবং মিষ্টির দোকানে বিক্রয় করেন তিনি। ক্রেতারা তাকে চেনেন গোয়ালা হুমায়ুন নামে। চরফ্যাশন উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নে তার বাড়ি। স্ত্রী, দুই বছর বয়সের মেয়ে এবং মা-বাবাকে নিয়ে নিজ গ্রামের বাড়িতে বসবাস করেন তিনি। এক বছর আগেও হুমায়ুন অন্যের অধীনে চাকরি করতেন, এখন তিনি সফল উদ্যোক্তা, তার সফলতার গল্প শুনতে গিয়ে জানা যায়, ছোট বেলায় হুমায়ুনের মৎস্যজীবী বাবা রফিকুল ইসলাম মৎস্য আহরণ করে যে অর্থ আয় করতো সেটা দিয়েই অভাব অনটনে কোনোরকমে দুই ভাই এক বোনসহ পাঁচজনের সংসার চলতো। সংসারে হুমায়ুন বড় ছেলে। অভাবের সংসারে খুব পড়ালেখা সম্ভব হয়নি। সংসার চালাতে গিয়ে কিছু ধার-দেনায় পড়ে তার বাবা নিজ গ্রাম ছেড়ে চট্টগ্রাম চলে যেতে বাধ্য হন।
এ অবস্থায় হুমায়ুন বাবার অবর্তমানে সংসার চালাতে গ্রামে কাজের সন্ধান করে না পেয়ে চট্টগ্রামে বাবার কাছে চলে যান। সেখানে দীর্ঘ ৫ বছর একটি টিন ফ্যাক্টরিতে মাসিক চুক্তিতে লেবার হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু নিজ গ্রামে ফিরে নিজে কিছু করবেন এ স্বপ্ন তাকে পেয়ে বসে। সেই লক্ষ্যে তিনি ধীরে ধীরে বাবার দেনা পরিশোধ করে নিজের সঞ্চিত কিছু টাকা নিয়ে গ্রামে এসে ছোট একটি গরুর খামার শুরু করেন। কিছু দিনের মধ্যেই হুমায়ুন বুঝতে পারেন, অল্প পুঁজি নিয়ে শুধুমাত্র গরুর খামার করে জীর্বিকা নির্বাহ করা কঠিন, এজন্য তিনি নিজের এবং বিভিন্ন খামার থেকে দুধ সংগ্রহ করে চরফ্যাশনে বাসাবাড়ি এবং স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে দুধ ফেরি করে বিক্রি শুরু করেন। প্রথমে তিনি সাইকেল দিয়ে দুধ বিক্রি করেন, কিন্তু তার কর্মস্থলে দুধের প্রচুর চাহিদা থাকায় পায়ে চালিত সাইকেলে সব স্থানে সময় মতো দুধ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছিল না, ফলে অনেক সময় দুধ নষ্ট হয়ে যেতো, তাই তিনি তার এক বন্ধুর কাছ থেকে ২৫,০০০ টাকা ধার নিয়ে একটি পুুরাতন মোটরবাইক ক্রয় করে তা দিয়ে সময়মতো ক্রেতাদের কাছে দুধ পৌঁছে দেন। কিন্তু মোটরবাইকে জ্বালানির খরচ মিটিয়ে দিন শেষে তার মুনাফা খুব একটা হয় না। তাছাড়া ক্রেতার সংখ্যা বাড়ায় দৈনিক ১১০ কেজি দুধ মোটরবাইকে পরিবহন করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়। এতে তিনি বিভিন্ন পরিকল্পনা করলেও তাতে আশানুরূপ কোনো ফলাফল পাচ্ছিলেন না। একদিন তিনি দক্ষিণ আইচা বাজারে মিষ্টির দোকানে দুধ দেওয়ার সময় পরিবার উন্নয়ন সংস্থা (এফডিএ) আরএমটিপির “নিরাপদ গোশত ও দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার উন্নয়ন” শীর্ষক ভ্যালু চেইন উপপ্রকল্পের সহকারী ভ্যালু চেইন ফ্যাসিলিটেটরের সাথে দেখা হয় এবং তার কাছ থেকে গোয়ালাদের নিরাপদ দুধ পরিবহনে “আরএমটিপি” প্রকল্পের আধুনিক ট্যাঙ্কারভ্যান সম্পর্কে তিনি জানতে পারেন। তিনি আধুনিক ট্যাঙ্কারভ্যানে নিরাপদে সামান্য খরচে বেশি দুধ পরিবহনের ধারণা পেয়ে নতুন উদ্যমে কাজে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি সংস্থাটির কাছ থেকে ট্যাঙ্কারভ্যান ক্রয়ে অনুদান পান।
পরে তার ব্যবহৃত মোটরবাইক বিক্রয় করে, অনুদান পাওয়া টাকার সাথে আরও কিছু টাকা যুক্ত করে একটি ইজিবাইক এবং সংস্থাটির সহায়তায় ১৪০ লি. দুধ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি ফুডগ্রেড ট্যাঙ্কার ক্রয় করেন, যা দিয়ে সময়মতো, মান রক্ষা করে দৈনিক প্রায় সাড়ে তিন মণ দুধ বিক্রি করে খরচ বাদে মাসে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা তার আয় হয়। বর্তমানে তার দুধ সংগ্রহের খামার সংখ্যা ৭টি, দুধ বিক্রয়ে ক্রেতার সংখ্যা ৪৩ জন। সে এখন আর্থিকভাবে সচ্ছল। গোয়ালা হুমায়ুন বলেন, প্রচুর পরিমাণ দুধের সহজ পরিবহন ও মান রক্ষায় ফুডগ্রেড ট্যাঙ্কারভ্যান ব্যবহার করছি বিধায় আমাকে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে হচ্ছে। এতে আমার প্রতিষ্ঠানে কয়েকজন বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।