আগস্ট বিপ্লবের শহীদরা জাতীয় বীর : ডা.শফিকুর রহমান
১ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:১৭
স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আগস্ট বিপ্লবের শহীদরা জাতীয় বীর। দেশ ও জাতির জন্য তাদের এ আত্মত্যাগের কথা কোনভাবেই মুছে ফেলা যাবে না। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের জন্য যথাযথ সম্মানের ব্যবস্থা করতে হবে। ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ৫ আগস্টের বিপ্লব পর্যন্ত সকল শহীদের অবদানের কথা জাতীয় পাঠ্যপুস্তকের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে তাদের অবদান ও বীরত্বগাঁথা। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। তাদের পরিবারকেও করতে হবে যথাযথ মূল্যায়ন। প্রতিটি শহীদ পরিবারের কমপক্ষে ১ জনের জন্য সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে রাষ্ট্রকে শহীদ পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। সকল ক্ষেত্রেই তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাহলে তারা আগামী দিনে দেশ ও জাতির জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকবে। তিনি জামায়াতের পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারের জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
গত ২৭ অক্টোবর রোববার সকালে রাজধানীর আগারগাঁও বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত শহীদ পরিবারের গর্বিত সদস্যদের সাথে মতবিনিময় সভা, প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংগঠনের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, ১২ দলীয় জোট প্রধান ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী ড. রেদোয়ান আহমদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম ফরহাদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ফারুক হাসান, জাতীয় গণতান্ত্রিক দল জাগপার মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, গণঅধিকার পরিষদের (নুর) সদস্য সচিব রাশেদ খান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন। উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় প্রচার সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মূসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন ও কামাল হোসেন প্রমুখ।
ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, গণহত্যার নেত্রী ও তাদের দোসররা ভারতে পালিয়ে গেছে। তাদেরকে দেশে ফেরৎ এনে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শান্তি নিশ্চিত করতে হবে। শুধু ব্যক্তির বিচার করলেই চলবে না বরং দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে। তিনি অর্জিত বিজয় যাতে কেউ নস্যাৎ করতে না পারে সে জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
সালাহউদ্দীন আহমদ বলেন, কেউ কেউ আওয়ামী লীগকে ঐতিহ্যবাহী দল বলে দাবি করেন। কিন্তু তাদের ঐতিহ্য হলো দেশে একদলীয় বাকশালী শাসন প্রতিষ্ঠা, হত্যা, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য এবং ভোট চুরি। তারা ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার তাণ্ডবের মাধ্যমে রাজপথে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছিল। তাই তাদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, শহীদরা মরে না বরং তারা সবসময় জীবিত। আমাদের আগস্ট বিপ্লবের শহীদদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তারা দুনিয়া ও আখেরাতে পুরস্কৃত হবে। তিনি পতিত ফ্যাসীবাদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ২৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার নির্দেশে নির্মম ও নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। তাই তাদের বিচার নিশ্চত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ ত্যাগ ও কুরবানির মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন ঘটিয়ে আমরা দ্বিতীয়বারের মত স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কিন্তু আমাদের সংগ্রাম এখানেই শেষ নয় বরং সবে যাত্রা শুরু হয়েছে। কারণ, ফ্যাসীবাদীদের দোসররা এখনো ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা ও অসংখ্য আলেম-উলামাদের হত্যা এবং আয়নাঘরের মাধ্যমে জাতীয় নেতাদের নির্যাতন চালিয়েছে। তারা বিশ্ববরেণ্য আলেমে দীন ও প্রখ্যাত পার্লামেন্টারিয়ান শহীদ আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা, মীর কাসেম আলী, অধ্যাপক গোলাম আযম, মাওলানা একেএম ইউসুফ ও মাওলানা আব্দুস সুবহানকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। তিনি শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধ হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং তাদেরকে জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণার আহ্বান জানান।
মতবিনিময় সভায় কূটনৈতিক কোরের সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধান, বিভিন্ন সামাজিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী জুলুমের শিকার হয়ে শাহাদাতবরণকারীদের সম্মানিত পরিবারের সহস্রাধিক সদস্য এবং অর্ধ সহস্রাধিক হাত-পা হারানো ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। ৩টি অধিবেশনে উক্ত আয়োজন ছিলো। সকাল ১০টায় শুরু হয়ে ১.৩০টা পর্যন্ত শহীদ পরিবার, জাতীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। ১.৩০টায় প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন, ৩টা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। সকালের মতবিনিময় সভায় ১১ সহস্রাধিক সুধী অংশগ্রহণ করেন।