আ’লীগ নিষিদ্ধ মানতে পারছে না দিল্লি : জুলাই সনদ চূড়ান্ত হচ্ছে শিগগির

সংস্কার ও নির্বাচন চ্যালেঞ্জে


১৫ মে ২০২৫ ১৫:০৪

॥ ফারাহ মাসুম ॥
ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির তীব্র চাপে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের কার্যক্রমকে গণহত্যার বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। একই সাথে এক মাসের মধ্যে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে নির্বাচন ও সংস্কারের পথে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করার প্রচেষ্টা নিয়েছে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত, জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ এবং একটি সত্য ও পুনর্মিলন কমিশন প্রতিষ্ঠা হবে নির্বাচনের পথে ইতিবাচক পদক্ষেপ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার সময়সীমার কাছাকাছি আসার সাথে সাথে জুলাই জোটকে একত্রিত রাখতে এ পদক্ষেপগুলো সাহায্য করবে।
বিশ্লেষকদের ধারণা, সংস্কার প্যাকেজ চূড়ান্ত ও তা বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে এখনো অনেক কিছু করার বাকি আছে সরকারের জন্য। সংস্কার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য একটি নাগরিক জোট গঠনও ছিল সময়ের দাবি। রাজনৈতিক দলগুলো এ সময়টিকে তাদের নির্বাচনী প্ল্যাটফর্ম তৈরি এবং প্রচারণার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারে। আর অন্তর্বর্তী সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চূড়ান্ত রূপান্তরের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া এবং মূল বিষয়গুলোয় ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার উপায় সন্ধান করা উচিত।
নতুন চ্যালেঞ্জ
পর্যবেক্ষকদের ধারণা, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মিত্ররা আগামী মাসগুলোয় অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে থাকা কাজে সহায়তা করার জন্য যথেষ্ট সুযোগ পাবে। তবে ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক শক্তির নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে আসবে। এর মধ্যে প্রতিবেশী ভারত আওয়ামী লীগের কার্যক্রমকে গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে। আর সে দেশে বসে শেখ হাসিনা নতুন করে ১৩ মিনিটের এক ভিডিও ছেড়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও এর প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে নেতাকর্মীদের অস্থিরতা ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করার জন্য আরেক দফা উসকানি দিয়েছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতির নিবিড় পর্যবেক্ষকদের অনেকের মূল্যায়ন অনুসারে, ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থান সাড়ে ১৫ বছর ধরে জাতিকে আঁকড়ে ধরে থাকা একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন ঘটানোর বিষয় শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামী লীগের স্বৈরশাসক ও শাসনের পতন কেবল রাজনৈতিক পরিবর্তনের চেয়েও বেশি কিছু ছিল। এটি গণতান্ত্রিক পুনর্নবীকরণের জন্য একটি ঐতিহাসিক জানালা খুলে দিয়েছে। ‘জুলাই বিপ্লব’ নামে পরিচিত এ নাগরিক আন্দোলন, রাজনৈতিক দমন, নজরদারি, সহিংসতা এবং পদ্ধতিগত দুর্নীতি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত একটি কর্তৃত্ববাদী যুগের অবসান ঘটিয়েছে। তবে ইতিহাসের শিক্ষা অনুসারে একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন কেবল ভূমিকা। আর আসল চ্যালেঞ্জ হলো গণতান্ত্রিক স্থাপত্য গড়ে তোলা, যা পরিকল্পিতভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছিল।
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করছে। এ কাজ এমন একটি অঞ্চলে করা হচ্ছে. যেখানে গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসারণকে প্রায়ই স্বাভাবিক করা হয়েছে আর বাংলাদেশ একটি বিরল ও উচ্চাকাক্সক্ষী পথ অনুসরণ করার চেষ্টা করছে। তবে সংস্কারগুলো যতই দূরদর্শী হোক না কেন, কায়েমি স্বার্থের কাছ থেকে তা নিত্যভাবে প্রকৃত প্রতিরোধের মুখোমুখি হচ্ছে এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় ধরনের বাধা বাংলাদেশের অগ্রগতিকে লাইনচ্যুত করার জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।
একটি ফাঁকা রাষ্ট্রের সংস্কার
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণতান্ত্রিক শাসন এবং আইনের শাসন পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ব্যাপক সংস্কার উদ্যোগ শুরু করেছে। সংবিধান, নির্বাচনী ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতিবিরোধী ব্যবস্থা এবং জনপ্রশাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোয় মনোনিবেশ করে এগারোটি সংস্কার কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ কমিশনগুলোর মধ্যে ছয়টি ইতোমধ্যেই তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়ে পদ্ধতিগত পরিবর্তনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপের রূপরেখা তুলে ধরেছে।
এর মধ্যে সাংবিধানিক সংস্কার কমিশন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন প্রস্তাব করেছে, যার মধ্যে রয়েছে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা প্রবর্তন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ দুই মেয়াদে সীমাবদ্ধ করা এবং একটি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদারকি বোর্ড। ইতোমধ্যে নির্বাচনী সংস্কার কমিশন ১০০টিরও বেশি সুপারিশ করেছে; যেমন সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদনের ওপর নির্ভর করে ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতা দেওয়া এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত প্রার্থীদের অযোগ্য ঘোষণা করা।
এ সংস্কারগুলো ব্যাপক ঐকমত্যের ভিত্তিতে নিশ্চিত করার জন্য ২৬টি রাজনৈতিক দল এবং ১০০ জন জাতীয় নেতার সমন্বয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছিল। ডিক্রির চেয়ে সংলাপের ওপর জোর দেওয়ার এ পদ্ধতিটি বাংলাদেশের প্রায়ই সংঘাতপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে একটি উল্লেখযোগ্য প্রস্থান চিহ্নিত করে।
সংস্কার-নির্বাচনের দ্বিধা
পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের সময় নির্ধারণ একটি কেন্দ্রীয় বিতর্কে পরিণত হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তাব করেছে, যুক্তি দিয়ে যে উদারনীতিহীন শাসনব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তন এড়াতে ভোটের আগে মূল সংস্কারগুলো অবশ্যই করতে হবে। বিপরীতে বর্তমানে বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গণতান্ত্রিক বৈধতার কথা উল্লেখ করে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য জোর দিচ্ছে।
বলা হচ্ছে, কাঠামোগত পরিবর্তন ছাড়া একটি আগাম নির্বাচন স্বজনপ্রীতি এবং মক্কেলবাদের চক্রের পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি তৈরি করে, যা প্রথমেই গণতান্ত্রিক পতনের দিকে পরিচালিত করে। এ গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে রাজনৈতিক দায়িত্ববোধের অর্থ হলো সুবিধাবাদী সময়সীমার চেয়ে সংস্কারকৃত এবং শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
এদিকে বাংলাদেশের বর্তমান পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে। অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীদের মনোভাব উন্নত হয়েছে। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনে ২৬০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি এফডিআই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসার সাথে সাথে বিনিয়োগকারীদের মনোভাব উন্নত হচ্ছে, যার প্রমাণ পুঁজিবাজার এবং অবকাঠামো প্রকল্পের প্রতি নতুন করে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। রেমিট্যান্স শক্তিশালী রয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে শক্তিশালী করছে। কেন্দ্রীয় বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী মন্দার মধ্যে অর্থনৈতিক প্রত্যাশা স্থিতিশীল করার জন্য বিশেষ করে ব্যাংকিংয়ে নিয়ন্ত্রক তদারকি বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা
বাংলাদেশের বাস্তবতা এমন যে, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ-এর মতো বিশ্বব্যাপী পরাশক্তিগুলোকে বাংলাদেশের সাথে যোগাযোগের সময় ভারতকেন্দ্রিক কূটনীতির দিকে ফিরে যাওয়ার প্রলোভন প্রতিরোধ করতে হবে। এটি নীতিগত অংশীদারিত্বের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এ কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সংস্কার রোডম্যাপটির স্বীকৃতি এবং সমর্থন দিতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জটিল কাঠামোগত এবং পদ্ধতিগত সংস্কারগুলো গ্রহণ করছে, তা যেন উপরিকাঠামোর পরিবর্তনের বাইরে যায় এবং শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের সাথে টেকসই গণতন্ত্রের লক্ষ্য ঠিক রাখে, সেটির প্রতি দৃষ্টি দান করা প্রয়োজন।
একই সাথে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জুলাই-আগস্টের অভিযুক্ত মানবতাবিরোধী অপরাধীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ভারতকে ব্যবহার বন্ধ করার এবং মিথ্যা তথ্য মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ার ওপর জোর দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো দরকার। এক্ষেত্রে লভ্য তথ্য-পরীক্ষা এবং বাংলাদেশের চারপাশে সত্য-সত্য বর্ণনাকে সমর্থন করা দরকার। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক নীতিমালা সমুন্নত রেখে বাংলাদেশের উন্নয়ন লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিনিয়োগ এবং সহযোগিতা সহজতর করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শ্রমবান্ধব, জলবায়ু স্থিতিশীল খাতে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় ও অর্থনীতিতে গতি আনতে হলে কূটনৈতিক অংশীদারদের পাচার করা সম্পদ পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে হবে। চুরি যাওয়া জনসাধারণের সম্পদ ফিরিয়ে আনার জন্য আইনি ও কূটনৈতিক কাঠামো প্রদান করতে হবে। যেকোনো দেশের জন্যই বাস্তবতা হলো একজন স্বৈরশাসকের পতনের সাথে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয় না, যদি কর্তৃত্ববাদ দ্বারা ফাঁকা করে দেয়া দেশটির ধ্বংসাবশেষে পুনর্নির্মাণ করা হয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের যাত্রা দীর্ঘ এবং অগোছালো হতে পারে। তবে এটি গভীরভাবে আশাব্যঞ্জকও। এখানে হাজার হাজার তরুণ একটি মুক্ত, ন্যায্য এবং শক্তিশালী বাংলাদেশের জন্য তাদের জীবন দিয়েছেন। এটি কেবল একটি বাংলাদেশি মুহূর্ত নয়, সে সাথে এটি একটি বিশ্বব্যাপী মুহূর্ত হিসেবেও মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
বিভেদ কোনোভাবেই নয়
বাংলাদেশের এ জটিল রাজনৈতিক সময়ে বিভেদকে উসকে দেয়ার চেষ্টাও লক্ষণীয়। অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টার মতো দায়িত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তির বক্তব্য বিভেদকে উসকে দিয়েছে। উপদেষ্টা মাহফুজ আলম কয়েকদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়ে পরে তা ডিলিট করে দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, একজন উপদেষ্টা কী এমন পোস্ট দিয়েছেন যে সেটি আবার ডিলিট করে দিতে হলো।
তথ্য উপদেষ্টা তার ভেরিফায়েড আইডির পোস্টে লিখেছিলেন, ‘আমাকে নিয়ে নোংরামি করতেসো, ঝামেলা নেই। ফ্যামিলি টাইনো না, যুদ্ধাপরাধের সহযোগী রাজাকারেরা। এটা লাস্ট ওয়ার্নিং। আর যে চুপা শিবিররা এ সরকারে পদ বাগাইসো আর বিভিন্ন সুশীল ব্যানার খুলে পাকিস্তানপন্থা জারি রাখসো, তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষ রাজাকার আর দালালদের তুলনায় আরো অধিক ভুগবা। যারা বিতর্কের এবং গালাগালির লিমিট জানে না, তাদের আমি সহনাগরিক মনে করি না। পাকিস্তানপন্থিরা যেখানেই থাকবে, সেখানেই আঘাত করা হবে। আমৃত্যু! ঢাবিতে এ রাজাকারদের আগে ঠেকানো হবে, যারা এদের স্পেস দিসে তাদের জন্য গত পঞ্চাশ বছরের তুলনায় অধিক জিল্লতি অপেক্ষা করসে!’
ধারণা করা হচ্ছে, আগের দিনের একটি পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ পোস্ট দেন। ওই পোস্টে তিনি যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। মাহফুজ আলম তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “’৭১ এর প্রশ্ন মীমাংসা করতেই হবে। যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে পাকিস্তানপন্থা বাদ দিতে হবে। পাকিস্তান এদেশে গণহত্যা চালিয়েছে। (পাকিস্তান অফিসিয়ালি ক্ষমা চাইলেও তদুপরি আবারও ক্ষমা চাইতে রাজি হলেও যুদ্ধাপরাধের সহযোগীরা এখনো ক্ষমা চায়নি।) ইনিয়ে বিনিয়ে গণহত্যার পক্ষে বয়ান উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। জুলাইয়ের শক্তির মধ্যে ঢুকে স্যাবোটাজ করা বন্ধ করতে হবে। সাফ দিলে আসতে হবে।…”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন উপদেষ্টার এমন পোস্ট কেউই স্বাভাবিকভাবে নেননি। অনেকেই তার এ পোস্টের স্ক্রিনশট নিয়ে পাল্টা পোস্ট করেছেন। বিভিন্নজন বিভিন্ন ক্যাপশন দিয়ে সেই পোস্ট শেয়ার করেছেন। যার মধ্যে অধিকাংশই নেতিবাচক। হাবিবুল্লাহ মিসবাহ নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করে লিখেছেন, ‘মাহফুজ আলমের মনে যদি এরকম ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও প্রতিশোধের আগুন থাকে, তাইলে তো তাকে নেতা বা উপদেষ্টা মানাটা একটু কঠিনই হয়া গেল। যদিও মাহফুজ আলম পোস্ট ডিলিট দিছেন। কিন্তু পোস্ট ডিলিট করলে তো মন ডিলিট হয়া যায় না।’
পেছনে কারা?
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার বিষয়টি যারা দলটিকে পরিশুদ্ধ করে নির্বাচনে নিয়ে আসতে চেয়েছিল, তারা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি। তারা শুরু থেকেই অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের কথা বলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার সুযোগ তৈরি করতে চেয়েছিল। সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সিঙ্গাপুর/থাইল্যান্ড যাবার সাথে এর একটি সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
নানা সূত্র জানিয়েছে, এ সফরে পতিত স্বৈরাচারের নায়িকা শেখ হাসিনার সাথে তার আবদুল হামিদের আলোচনা হওয়ার কথা। কীভাবে পরিশুদ্ধ আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম চালানো হবে, সে বিষয়ে তার নির্দেশনা আনার কথা। আর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকারের ভেতরে থাকা একটি শক্তি নিরাপদে আবদুল হামিদকে বিদেশে যেতে দেয়া হয়।
কিন্তু সাবেক রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে খুনের মামলা থাকার পরও এভাবে নিরাপদে বিদেশযাত্রার বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে অনেক কিছু পাল্টে যায়। ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে অন্তর্বর্তী সরকার গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের কাজ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অধ্যাদেশ জারি করে।
এ ঘটনার পর শেখ হাসিনার ছেলে সজীব জয় বাংলাদেশের পাসপোর্ট সারেন্ডার করে আমেরিকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। আর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রতিবাদ করে ভারত। ফ্যাসিবাদবিরোধীদের এ ঐক্যবদ্ধ অবস্থানকে ভাঙার জন্য উপদেষ্টার মতো দায়িত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিকে দিয়ে একটা ইস্যু তৈরির চেষ্টা করা হয়। এ কাজে সরাসরি জামায়াতকে টার্গেট করা হলেও দলটি ধৈর্যের সাথে এর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
নানা সূত্রের তথ্যানুসারে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পর আরো কিছু সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা তৈরির জন্য দেশ-বিদেশের কায়েমি শক্তি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ উদ্দেশ্যে তারা নানাভাবে গুজবও ছড়িয়ে যাচ্ছে। তবে আশার কথা হলো সরকার ও সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক শক্তির সতর্কতার কারণে অনেক ষড়যন্ত্রই সফল করা সম্ভব হচ্ছে না।