অনৈক্যের সুযোগ সন্ধানে ফ্যাসিবাদ
২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:০৯
জুলাই বিপ্লবের পক্ষের শক্তিসমূহের অনৈক্যের সুযোগ নিতে চাইছে ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা। জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার ও ব্যাংক লুটপাটের জবাবদিহিতার উদ্যোগ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই অস্থির হয়ে উঠছে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা। ফ্যাসিবাদের আইকনদের বড় একটি অংশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়ে তাদের লুটে নেয়া অর্থ দেশের ভেতরে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য কাজে লাগাচ্ছে। অন্যদিকে ব্যাংক থেকে লুটে নেয়া অর্থ এবং দেশের ও বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা- থেকে হাতিয়ে নেয়া টাকা উদ্ধারে যাতে প্রশাসন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে না পারে, তার জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় তাদের পক্ষের লোকদের বসাতে চাইছে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীরা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন ব্যাংকের শীর্ষ পদে ফ্যাসিবাদের নানাভাবে সুবিধাভোগীদের বসানো হয়েছে। এ কাজে ভেতর থেকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন এক প্রভাবশালী উপদেষ্টা।
বহুমুখী পরিকল্পনা : জানা গেছে, পতিত ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক শক্তি বহুমুখী পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতে চাইছে। প্রথমত, তারা আন্তর্জাতিক পরিসরে থাকা তাদের মিত্রশক্তি ভারত-ইসরাইলি লবিকে দিয়ে প্রফেসর ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে কোণঠাসা করতে চাইছে এই বলে যে, এ সরকারের আমলে উগ্রবাদীরা শক্তিশালী হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে ফ্যাসিবাদী আমলে নানা ধরনের কল্পিত অভিযোগ তুলে আলেম-ওলামা ধার্মিক মানুষকে আয়নাঘরে বন্দি ও জঙ্গি নাটক সাজিয়ে হত্যাযজ্ঞ ঘটানোর ঘটনা এখন আর না ঘটাকে তারা উগ্রবাদের উত্থান বলে বয়ান তৈরি করছে। ড. ইউনূসের পটভূমির কারণে পশ্চিমাদের কাছে এ প্রচারণা হালে পানি না পেলেও এ প্রচেষ্টা এরপরও অব্যাহত রাখা হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনে থাকা কিছু ভারতীয় বংশোদ্ভূতের সহযোগিতায়।
দ্বিতীয়ত, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদের রাজনৈতিক সুবিধা নেয়া অলিগার্করা তাদের লুটে নেয়া অর্থ যাতে সরকার বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে না পারে এবং দেশে থাকা সম্পদ জব্দ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়, তার জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করছে সিন্ডিকেট তৈরি করে। এক্ষেত্রে প্রধান টার্গেট ঠিক করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে। বাংলাদেশ ব্যাংকে ডেপুটি গভর্নর পদে দায়িত্ব পালনকারী প্রায় সবাই সাবেক সরকারের নানাভাবে সুবিধাভোগী। এর সাথে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান পদেও একই ঘরানার লোক বসানোর কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের পক্ষে সরকারের লুটেরা ও পাচারকারীদের হাত থেকে অর্থ উদ্ধার কঠিন হয়ে পড়েছে। মানি লন্ডারিং সংশ্লিষ্ট কাজে একসময় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মূল উদ্যোগ সূচিত হতো। এখন সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি কোনো তথ্য চাইলেই কেবল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তা সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব উদ্যোগে এখন আর অর্থ পাচারের ঘটনা উদ্ঘাটনে কিছু করছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছাড়াও অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পদগুলোয় আগের সরকারের আমলের কর্মকর্তারাই অধিকাংশ পদে বসে আছেন। এর ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এস আলম, সালমান রহমান ও নাসার নজরুলের মতো ফ্যাসিবাদের আনুকূল্যপ্রাপ্ত ব্যক্তি তাদের আস্থাভাজনদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান ও এমডি পদে বসাতে পেরেছে। এর ফলে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে এ অলিগার্করা যে অর্থ বের করে নিয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ চিত্র পেতে বিলম্ব হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে যারা সততার সাথে ব্যাংক লুটপাটের বিষয় আড়াল থেকে বের করে আনতে চাইছে, সেই কর্মকর্তাদের নানা অজুহাতে ভিকটিম করা হচ্ছে। সম্প্রতি প্রভাবশালী একটি শীর্ষ ইসলামী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন ৮ কর্মকর্তাকে সামরিক বরখাস্তের ঘটনায় এটি দেখা গেছে। এর বাইরে অলিগার্কবিরোধী বিভিন্ন কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে বিদায়ের ঘটনাও নিয়মিতভাবে ঘটছে। এসব ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদবিরোধী কোনো কোনো রাজনৈতিক দলকেও ব্যবহার করা হচ্ছে।
তৃতীয়ত, সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যুতে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমতের সুযোগ নিয়ে মাঠে নামার ব্যাপক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে পতিত স্বৈরাচার। প্রতিবেশী ভারতে থাকা শেখ হাসিনা ও তার কিছু সহযোগী এ কাজে সমন্বয় করছে। আর তাদের অর্থের সরবরাহ করছে এস আলমের মতো সুবিধাভোগীরা। তারা দুটি কৌশল অবলম্বন করছে ফ্যাসিবাদকে আবার ফেরানোর জন্য। এর মধ্যে একটি হলো কয়েক মিনিটের ঝটিকা মিছিল করে দলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে আবার আস্থা ফেরানো। এর একপর্যায়ে গোপনে হামলা ও হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটিয়ে জুলাই বিপ্লবের পক্ষের মাঠের শক্তিকে ভীত করার প্রচেষ্টা নেয়া হবে। দ্বিতীয় কৌশলটি হলো প্রশাসনের সর্বস্তরে এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোয় অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে প্রশাসনিক শক্তিকে আওয়ামী পুনর্বাসনে কাজে লাগানো। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ তৎপরতার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এরপরও হতাশা
এত কিছুর করার পরও তাদের হতাশার একটি কারণ হলো আন্তর্জাতিক সমর্থন এখনো বিপুলভাবে প্রফেসর ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি রয়ে গেছে। ভারত ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো কূটনৈতিক অংশীদার দেশ ফ্যাসিবাদী শক্তিকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিচ্ছে না। একসময়ের নিষ্ক্রিয় পুলিশ প্রশাসন ধীরে ধীরে সক্রিয় হয়ে উঠছে। বিচারাঙ্গনে দৃশ্যমানভাবে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের প্রভাব কমে যাচ্ছে। ব্যাংকের ১৭ লাখ কোটি টাকা আমানতের এক-চতুর্থাংশের মতো লুট করে বিদেশে পাচার করা হলেও সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানই কিছু সীমাবদ্ধতার মধ্যেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পক্ষের শক্তিসমূহের মধ্যে সংস্কার ও নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কিছু দূরত্ব তৈরি হলেও ফ্যাসিবাদের ফিরে আসার ইস্যুতে মোটাদাগে তাদের মধ্যে ঐকমত্য দেখা যাচ্ছে।
সার্বিকভাবে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের প্রথম প্রান্তিকে একটি মুক্ত-অবাধ নির্বাচনের পথে অগ্রসর হচ্ছে। তার আগে কিছু মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নও সম্ভব হতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে। এর পাশাপাশি বিপুল বিনিয়োগ কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক কর্মকা- সফল করার প্রচেষ্টায় এক ধরনের স্থিতি ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
এদিকে একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. ইউনূস বলেছেন যে, তিনি ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার শাসনামলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের শাস্তি এড়াতে দেবেন না। মুহাম্মদ ইউনূস দ্য ন্যাশনালকে বলেন যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করে আইনের পূর্ণ শক্তির মুখোমুখি করার জন্য দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
গত গ্রীষ্মে শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবনে বিক্ষোভকারীদের হামলার পর পালিয়ে যাওয়ার আগে তিনি ১৫ বছর ধরে একদলীয় শাসনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। জুলাই ও আগস্ট মাসে ছাত্র বিক্ষোভে তার পুলিশ ও সমর্থকরা প্রায় ১,৪০০ জনকে হত্যা করে এবং আরও ১১,০০০ জন আহত হয়। তিনি ভারতে পালিয়ে যান, যেখানে তিনি এখনো নির্বাসনে রয়েছেন।
ড. ইউনূস দুবাইতে বিশ্ব সরকার সম্মেলনে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা ভারতে নোটিশ পাঠিয়েছি যে, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা উচিত। আমাদের কাছে প্রচুর প্রমাণ রয়েছে, যার মধ্যে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের প্রতিবেদনও রয়েছে।’
তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, আমরা তাকে বিচারের আওতায় আনব। এটা অবশ্যই ঘটবে, অন্যথায় জনগণ আমাদের ক্ষমা করবে না। তাদের সব কাজের প্রমাণ রয়েছে। জাতিসংঘ এটি নথিভুক্ত করেছে এবং হাসিনা তার সরকার এবং তার সমর্থকরা দেশের সাথে কী করেছেন, তার প্রচুর প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছি। তাই আমরা আশা করছি যে, আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে এবং আমরা তাকে বিচারের আওতায় আনব। এটা অবশ্যই ঘটবে, অন্যথায় জনগণ আমাদের ক্ষমা করবে না।’
এর আগে একসময়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বর্তমানে তথ্য উপদেষ্টা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা মাহফুজ আলম চাঁদপুর জেলার এক পথসভায় ঘোষণা করেন, ‘নির্বাচনে শুধুমাত্র বাংলাদেশপন্থি দলগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।’
শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে ভবিষ্যৎ নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা করায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে নাটকীয় মোড় নেয়। তখন মাহফুজ আলম বলেছিলেন, ফ্যাসিবাদের পতন ঘটানোর গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী রাজনৈতিক দল খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য ‘বাংলাদেশপন্থি’ দলগুলো দেশে তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, ‘একটি সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ শাসন প্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন এদেশে হতে দেওয়া হবে না।’ তিনি জোর দিয়েছিলেন যে ‘ন্যূনতম সংস্কার’ বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত এবং ‘ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকার’ দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্গঠিত না করা পর্যন্ত কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না।
৫ আগস্ট ২০২৪-এর ঘটনার পর থেকে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্য থেকে কার্যত মুছে গেছে, এর বেশিরভাগ নেতা হয় হত্যা নয় তো দুর্নীতির অভিযোগে কারারুদ্ধ অথবা দেশে এবং বিদেশে আত্মগোপনে। বিএনপি অবশ্য আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিমাপিত অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার বিরোধিতা করেছে। দলটি ন্যূনতম সংস্কার করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক বক্তব্যে বলা হয়, ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক পুনর্বাসন কেউ কামনা করেন না।
২৬ সালের প্রথম প্রান্তিকে নির্বাচন
গত মাসে মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন ২০২৫ সালের শেষের দিকে বা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে হতে পারে। তিনি উল্লেখ করেছেন, নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক ঐকমত্য অর্জন এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের পরিমাণের ওপর নির্ভর করবে।
ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ আশঙ্কা রয়েছে যে, পতিত স্বৈরাচার প্রতিবেশী দেশের সহায়তায় যেভাবে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে, তাতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সংস্কার বাস্তবায়নে অনেক বেশি সময় নেয়া হলে তারা নানা কিছুর সুযোগ নিতে পারেন। নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি সংস্কার হোক বা না হোক, দ্রুত নির্বাচন করতে হবে বলে দাবি করছে। অন্যদিকে জামায়াত মূল সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচন অনুষ্ঠান চাইছে। ছাত্রদের দল এনসিপি চাচ্ছে সংস্কার ছাড়া কোনোভাবেই নির্বাচন করা যাবে না। বৈষম্যবিরোধী দলগুলোর মতের এ ব্যবধান কমাতে বিএনপি ও ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি বৈষম্যবিরোধী দলগুলোর মধ্যে মতের ব্যবধান দূর করার জন্য পরস্পরের মধ্যে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে। অধিকাংশ দলই এখন ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে।
সরকারের পক্ষ থেকে ঐকমত্য তৈরির কাজে নিয়োজিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রধান দলগুলোর সাথে আলোচনা করে সংস্কারের ব্যাপারে ঐকমত্য তৈরির সূত্র বের করে আনতে চাইছে। এর মধ্যে সংস্কার নিয়ে সবচেয়ে কট্টর অবস্থান নেয়া বিএনপি অনেকটাই নমনীয় হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যাচ্ছে, ২০২৬ সালের প্রথম প্রান্তিকেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য ঠিক করে নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনও এ সময়রেখা সামনে রেখে কাজ করার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
কতটা সংস্কার?
প্রফেসর ইউনূস এবং তার উপদেষ্টাদের মনোযোগ এখন সংস্কারের দিকেÑ যাতে একটি শক্তিশালী, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতৃত্বের মাধ্যমে আরও সমৃদ্ধ, সুরক্ষিত জাতি পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা নেয়া যায়। বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ এবং প্রশাসনসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য আটটি কমিশন তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এর মধ্যে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট বাদ দেয়া হলে অন্য কোনো রিপোর্ট নিয়ে বড় ধরনের বিতর্ক হয়নি। হয়তো কোনো কোনো প্রস্তাবে দ্বিমত পোষণ করেছে কোনো দল। কিন্তু নারীবিষয়ক সংস্কারের জন্য কথিত নারীবাদীদের নিয়ে একতরফা কমিশন গঠন এবং তাদের একতরফা রিপোর্ট নিয়ে পুরো সরকারই বিতর্কের মধ্যে পড়ে গেছে।
সংস্কার প্রসঙ্গে এর আগে ড. ইউনূস বলেছেন, ‘আমাদের তাৎক্ষণিক লক্ষ্য হলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করা এবং অর্থনীতিকে ঠিক করাÑ যাতে এটি ব্যাংকিং ব্যবস্থার সাথে সাথে আবার কার্যকর হয়।’
তিনি গত ২১ এপ্রিল উল্লেখ করেন, ‘আমরা সুপারিশগুলো গ্রহণ করি এবং সব রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের কাছে এ সম্পর্কে মত নিতে চাই যে, আপনারা এখন কোনটি বাস্তবায়ন করতে চান, ভবিষ্যতে কোনটি বাস্তবায়ন করতে চান এবং কোনটি আপনি একেবারেই বাস্তবায়ন করতে চান না।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এখন আমাদের কাছে একটি ঐকমত্য তৈরির কমিশন আছে, যা একটি সনদের জন্য একমত হওয়া সুপারিশগুলো নিয়ে কাজ করবে। এই সনদ তৈরি ও বাস্তবায়নের পর আমাদের কাজ শেষ হবে একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দেয়ার মাধ্যমে।