আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পক্ষে জনমত বাড়ছে
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:৪৮
ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি উঠছে। বিশেষ করে ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়া ছাত্র-জনতা এবং রাজনীতিবিদরা সন্ত্রাস ও ভারতের আধিপত্যবাদমুক্ত দেশ গড়তে এর বিকল্প দেখছেন না। যতই দিন যাচ্ছে, ভারতে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি হাসিনা ও তার দোসরদের পক্ষ থেকে জ¦ালাও-পোড়াও, গুম-খুনের হুমকি বাড়ছে। সাথে সাথে দলটি নিষিদ্ধের পক্ষে জনমত বাড়ছে। কারণ পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র একসাথে চলতে পারে না। গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আওয়ামী লীগ দুটির কোনোটিই রক্ষা করতে পারেনি। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ তাদের রাজনৈতিক দর্শন। মতপ্রকাশ ও মিছিল-মিটিংয়ের স্বাধীনতারও তারা অপব্যবহার করে। মতপ্রকাশের নামে সন্ত্রাসের উসকানি, মিথ্যাচার করে। মিছিল-মিটিংয়ের সুযোগ পেলে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পেলে করে ভোট ডাকাতি। এককথায় তাদের হাতে গণতন্ত্র নিরাপদ নয়।
হাসিনার দোসরদের সেগুনবাগিচায় ব্যালট ভরার ২০০৮-এর নির্বাচন, তার শাসনে ২০১৪-এর একতরফা, ২০১৮-এর রাতের ভোট এবং ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচন জাতি প্রত্যক্ষ করেছে। তার বাবার আমলের ইতিহাসও কারো অজানা নয়। আওয়ামী লীগ নেতা রাজনীতিবিদ সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরী তার ‘রাজনীতির তিনকাল’ বইয়ের ১৪২ পৃষ্ঠায় ১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচন সম্পর্কে বলেছেন, কোনো কোনো আসনে বিরোধীদলীয় প্রার্থীকে বলপূর্বক পরাজিত করা হয়েছে।’
হাসিনা সরকারের দেড় দশকের দুঃশাসন জোর করে টিকিয়ে রাখতে ভূমিকা পালন করেছে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। তারা শুধু রাজনৈতিক দলের কর্মী হিসেবে নয়, দেশের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকার, প্রশাসন, বিচার, নির্বাহী বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যম, সাংস্কৃতিক কর্মী; এমনকি সামরিক বাহিনীর মধ্য থেকে হাসিনার সুতার টানে পুতুলের মতো তার আজ্ঞা পালন করেছেন। এদের মধ্যে ছিলÑ ১. দলান্ধ, দুর্নীতিবাজ নেতা-কর্মী, ২. লোভী দুর্নীতিবাজ, ৩. ভিতু বাধ্য হয়ে অনুগত শ্রেণি। ২০২৪-এর আগস্ট বিপ্লবের পর তাদের অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা ছাড়া ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগের দেড় দশকের অপরাধÑ বিশেষ করে ২০২৪-এর শান্তিপূর্ণ নিরস্ত্র গণআন্দোলন দমনের নামে গণহত্যা, অতীত ইতিহাস এবং তাদের রাজনৈতিক দর্শন বিবেচনায় আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন নিষিদ্ধের দাবি জোরালো হচ্ছে। অবশ্য দেশের রাজনীতি সম্পর্কে প্রচলিত একটি কথা হলো- ‘পল্টিবাজ’ যাকে অনেকে মার্জিত ভাষায় বলেন, ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।’ সেই লক্ষণও দৃশ্যমান। অর্থাৎ ফ্যাসিবাদবিরোধী অনেক রাজনৈতিক দলের নেতা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ প্রশ্নে দোদিল বান্দার ভূমিকায় অভিনয় করছেন, সকালে নিষিদ্ধের প্রশ্নে জোরালো মন্তব্য করেছেন তো বিকালে কোনো জাদুর কাঠির ছোঁয়ায়, ‘এভাবে নিষিদ্ধ নয়, ওভাবে হয়’- এভাবে পল্টিবাজি করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন। কিন্তু যারা সরাসরি আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন, হাসিনাকে দেশত্যাগে বাধ্য করেছেন, তারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নের কঠোর অবস্থানে অটল রয়েছেন।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, তাদের এ কঠোর অবস্থানের কারণ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দর্শন ও অতীত ইতিহাস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টকে নির্মম হত্যাকাণ্ড বলা হলেও ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িতরা মুখ খোলার পর জানা যাচ্ছে, হত্যাকাণ্ড ঘটানো তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। তারা মূলত গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল কায়েম এবং ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে তৎকালীন আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ও তার দোসররা হত্যাকাণ্ডসহ যত অপরাধ করেছিলেন, সেই অপরাধে তার বিচার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এমন ক্ষমতাধর ব্যক্তির বিচার কার কাছে চাইবেন, তাই নিজেরাই উদ্যোগ নিয়েছিলেন তাকে গ্রেফতার করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়ে গণআদালতে বিচার করতে। কিন্তু সেই কাজটি তারা শান্তিপূর্ণভাবে করতে পারেননি। তাদের ওপর শেখ মুজিবুর রহমানের বাসা থেকে গুলি চালানো হয়। এতে অপারেশনে অংশ নেয়া কয়েকজন সৈনিক নিহত হওয়ার পর একজন উত্তেজিত সেনাসদস্য গ্রেনেড চার্জ করলে ইতিহাসের এ নির্মম অধ্যায় রচিত হয়। মুজিবসহ বাসায় অবস্থানরত শেখ পরিবারের সব সদস্য নিহত হন। জাতি বাকশালী দুঃশাসনমুক্ত হয়। গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষার পক্ষের বিপ্লবী সৈনিকরা বিজয়ী হন। বিপ্লবী বিজয়ী পক্ষকে বিচারের মুখোমুখি করে শাস্তি দেয়ার কোনো অধ্যায় পৃথিবীর ইতিহাসে নেই। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। বাকশালের কবর রচনা হলেও সেই কবরের ধ্বংসস্তূপ থেকে আওয়ামী লীগকে পুনর্জীবন দিয়ে পুনর্বাসিত করা হয়েছিল। সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়েছে বিপ্লবীদের জীবনের বিনিময়ে। ২০২৪-এর আগস্ট বিপ্লবের প্রয়োজন হতো না ১৯৭৫-এর পর আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন না করলে। আবারও একই ভুল করলে ২০২৪-এর বিপ্লবী এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এজন্য চরম মূল্য দিতে হবে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। তাদের এমনটি মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে। কী সেই কারণ? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে ইতিহাস থেকে।
আওয়ামী লীগের জেনেটিক্যাল ক্যারেক্টার
আওয়ামী লীগের জন্ম ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দলটির যারা প্রথম প্রতিষ্ঠাতা, তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য মহৎ ছিল। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাকালে ‘মূল দাবি’ নামে ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম সম্মেলনে একটি ম্যানিফেস্টো (ঘোষণাপত্র) উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি অখণ্ড পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ ও পাকিস্তান)-এর মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধসহ সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের জন্য যে কল্যাণ রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্নে শরিক হয়েছিলেন অন্য নেতারাও। তাদের সেই স্বপ্নের রাষ্ট্রের যে বৈশিষ্ট্য দলটির প্রথম ম্যানিফেস্টোতে উল্লেখ করা হয়েছিল, তা হলো- ১. পাকিস্তান খেলাফত অথবা ইউনিয়ন অব পাকিস্তান রিপাবলিক ব্রিটিশ কমনওয়েলথের বাইরে একটি সার্বভৌম ইসলামী রাষ্ট্র হইবে। ২. পাকিস্তানের ইউনিটগুলোকে আত্মনিয়ন্ত্রণের পূর্ণ অধিকার দিতে হইবে। ৩. রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব আল্লাহর প্রতিভূ হিসেবে জনগণের ওপর ন্যস্ত থাকিবে। ৪. গঠনতন্ত্র হইবে নীতিতে ইসলামী গণতান্ত্রিক ও আকারে রিপাবলিকান। (সূত্র : স্বাধিকার আন্দোলন ও শামসুল হক পৃষ্ঠা-৫৮, লেখক : মোহাম্মদ হুমায়ুন করীর)।
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও শামসুল হকের কাছে থেকে নেতৃত্ব চলে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ ভারতের এজেন্টদের খপ্পরে পড়ে। গতিপথ হারিয়ে ফেলে, ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ফ্যাসিবাদী দর্শনের আলোকে নেতা-কর্মীদের প্রশিক্ষিত করে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মিছিল-মিটিংয়ে আক্রমণ করা শুরু করে। ঠিক হিটলারের নাৎসি পার্টির মতো। এর আগে এ দেশের রাজনীতিতে কোনো রাজনৈতিক দলের মিছিল-মিটিংয়ে অন্য দলের হামলার ঘটনা খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায় না। ১৯৭০ সালের ১৮ জানুয়ারি পল্টনে জামায়াতের সমাবেশে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। তৎকালীন নিখিল পাকিস্তান আমীরে জামায়াত মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (রহ.) পল্টনের সমাবেশে উপস্থিত হতেই পারেননি। প্রাদেশিক জামায়াতের আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবসহ নেতৃবৃন্দ মঞ্চ ছেড়ে পাশের মসজিদে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেদিন পল্টনে আবদুল মজিদ ও আবদুল আওয়াল নামে দুই জামায়াত কর্মী শহীদ হন; আহত হন শতাধিক।
স্বাধীনতার পরও তাদের এ চরিত্র বদল হয়নি। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী বুদ্ধিজীবী ও ভারত সরকারের সর্বোচ্চ পদক পদ্মশ্রী পাওয়া পরলোকগত অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিল, দেশ স্বাধীন করতে প্রাণ দেয়ার জন্য সদা প্রস্তুত থাকতো, তারাই ১৬ ডিসেম্বরে লুটপাটকারীতে পরিণত হয়।’ এ হলো আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের নমুনা। আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আশাহত মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবাদ শুরু করেন। তারা গঠন করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। তাদের দমন করতে তৎকালীন মুজিব সরকার শুরু করে খুন-গুম, জেল-জুলুম ও অত্যাচার-নির্যাতন। ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সমর্থকদের দমনের নামে গণহত্যা চালিয়েছিল মুজিব সরকার। সেদিন জাসদের আন্দোলনকারী কর্মীরা ঢাকার রমনা এলাকায় অবস্থিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুহাম্মদ মনসুর আলীর বাসভবন ঘেরাও করলে জাতীয় রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে, যার ফলে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অন্তত ৫০ জন নিহত হয়। অবাধ তথ্যপ্রবাহের সুযোগ না থাকায় সেই সময়ের সঠিক চিত্র পাওয়া যায় না। তবে বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ, মুজিবের শাসলামলে ‘জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল’ (জাসদ)-এর ৩০ হাজার নেতাকর্মী তৎকালীন জাতীয় রক্ষীবাহিনী ও আওয়ামী লীগের গুণ্ডাদের হাতে নিহত হয়েছিল। ক্ষমতা গ্রহণের আগের এবং পরের শেখ মুজিব এবং তার দল আওয়ামী লীগের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে হিটলার ও নাৎসি পার্টির সাথেই মিল পাওয়া যায়।
মওলানা ভাসানী এবং শামসুল হককে আওয়ামী লীগ থেকে বের করে দিয়ে শেখ মুজিব প্রথমে সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতির পদ দখলের ইতিহাসও রহস্যঘেরা। ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগে শামসুল হক গ্রেফতার হন। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি অসুস্থ এ অজুহাতে মুজিব ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের পদ ছাড়তে রাজি হননি। শামসুল হকের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা না করে তাকে পাগল বলে প্রচার করা হয়। পরে তিনি নিখোঁজ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। পদপদবি দখলের জন্য নিজ দলের নেতাদের প্রতি এমন নোংরা রাজনীতির সূচনার ইতিহাস এদেশে আওয়ামী লীগই করেছে। আবু জাফর শামসুদ্দীন তার ‘আত্মস্মৃতি : সংগ্রাম ও জয়’ বইতে লিখেছেন, ‘আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক শামসুল হকের চিকিৎসায় আওয়ামী মুসলিম লীগ কোনো উদ্যোগ নিয়েছিল বলেও মনে পড়ে না।’
নব্য স্বাধীন দেশে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতি বিশ্লেষণ করেও তাদের ফ্যাসিবাদী চরিত্রই প্রত্যক্ষ করা যায়। তারা নির্বাচনের নামে নাটক এবং পরে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) প্রতিষ্ঠা করে নির্বাচন ব্যবস্থাই বাতিল করে দিয়েছিল। বাকশালে একীভূত দলগুলোর মধ্যে ছিল আওয়ামী লীগ, সিপিবি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, জাতীয় লীগ। হাসিনা সুকৌশলে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে ১৪ দল নিয়ে অঘোষিত নব্য বাকশাল কায়েম করেছিলেন। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ইতিহাসের এ পাঠ বিশ্লেষণ করলে এ সত্যই ঘুরে ঘুরে আসেÑ দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ অপ্রাসঙ্গিক। আওয়ামী লীগের জেনেটিক্যাল ক্যারেক্টার নিয়ে যত বেশি বেশি নিরপেক্ষ গবেষণা হচ্ছে, দলটি নিষিদ্ধের পক্ষে তত জনমত তৈরি হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পক্ষে জনমত বাড়ছে
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে জনমত প্রসঙ্গে সরকারের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে আর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নামে কোনো সংগঠনকেই রাজনীতি করতে দেয়া হবে না। এসব সংগঠনকে আইনের মাধ্যমে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।’ দেশের মূলধারার প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দলীয় অবস্থান থেকে সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা না বললেও অনেকেই এ ব্যাপারে তাদের ব্যক্তিগত মতামত ব্যক্ত করেছেন। আগস্ট বিপ্লবের পর থেকেই তারা তাদের বক্তব্য অব্যাহত রেখেছেন, যা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, যারা জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল, তারা নির্বাচনে ভোট চাইবে কার কাছে? তাদের কোনো নৈতিক অধিকার নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা বলতাম, হাসিনাবিহীন বাংলাদেশ চাই। আজকে হাসিনাবিহীন বাংলাদেশ পেয়েছি। এখন আওয়ামীবিহীন বাংলাদেশ করতে হবে। আওয়ামী লীগ চলে গেছে, আমরা ভেবে খুশি হই। কিন্তু খুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই। এদের চর-অনুচর এখনো বাংলাদেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি, সচিবালয়, পুলিশ, মিলিটারি, যেখানে বলেন, এদের চর রয়ে গেছে। এদের রেখে কোনো পরিস্থিতিতেই আপনি পরিপূর্ণ গণতন্ত্র বাংলাদেশে কায়েম করতে পারবেন না।’
গণঅভ্যুত্থানের কয়েকদিন পর গত বছরের ১৪ আগস্ট সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে গণঅধিকার পরিষদের প্রধান নুরুল হক নূর বলেন, আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে জনগণের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে, যে দলের নেতা দেশদ্রোহী (শেখ হাসিনা) এবং এমন ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে কোনোভাবেই রাজনীতি করতে পারে না। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি এবং শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবিতে সমগ্র দেশবাসী আন্দোলন এবং প্রতিবাদ চলছে। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আমরা যাদের ক্ষমতায় বসিয়েছি, তারা (ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার) যদি জনমতের বিপক্ষে কথা বলে, তাহলে একটি প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে নিষিদ্ধের দাবি গণদাবিতে পরিণত হয়েছে।’
পর্যক্ষেবকরা মনে করেন, পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের হুমকি-ধমকি ও সন্ত্রাসের উসকানি ও তাদের অতীত বিশ্লেষণের পর নিঃসন্দেহে বলা যায়, আওয়ামী লীগ কোনো গণতান্ত্রিক শক্তি নয়, একটি জঙ্গি-সন্ত্রাসী জোট। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব দলটি নিষিদ্ধ করে নেতাদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।