হার্ম হ্যাচ, হার্ম ক্যাচের ফাঁদে ভারত

হারুন ইবনে শাহাদাত
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০০:০০

হার্ম হ্যাচ, হার্ম ক্যাচের (Harm hatch, harm catch) ফাঁদে পড়েছে ভারত। অর্থাৎ অন্যকে বিপদে ফেলে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য গর্ত খুঁড়ে সেই গর্তে নিজেই পড়েছে। ভারতের বর্তমান শাসকরা দাবি করেন, তারা হিন্দু ধর্মের একনিষ্ঠ অনুসারী। হিন্দুশাস্ত্রের পণ্ডিতরা মনে করেন, নিজের সুখের জন্য প্রতিবেশী বা অন্যের ক্ষতি করলে সেই পাপের পরিণতি হয় খুবই ভয়াবহ। মহারৌরব (অতি হিংস্র) নরক সেই মহাপাপিষ্ঠের জন্য অপেক্ষা করছে। এ নরকে ক্রাব্যদ নামক অতীব হিংস্র রুরুরা অপরাধীর শরীরের মাংস টুকরো টুকরো করে ভক্ষণ করবে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ভারতের বর্তমান হিন্দুত্ববাদী শাসকরা তাদের পাপের শাস্তি ইতোমধ্যে দুনিয়াতেই পেতে শুরু করেছেন। ভারত আগ্রাসী ও দাদাগিরি ফলাতে গিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করে হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন চাপিয়ে দিয়েছিল। বিগত দেড় দশক সেই দুঃশাসনে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে এদেশের প্রতিটি সেক্টর। জনগণ অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে হামলা-মামলা, জেল-জুলুম, গুম-খুনের শিকার হয়েছে। অবশেষে বিগত ৫ আগস্ট হাজার হাজার ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে তারা শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে। কিন্তু ভারত আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হাসিনাকে এখনো আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতের এক কূটনীতিকের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি জাতীয় দৈনিক লিখেছে, ‘ভারত শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু কৌশলগত কারণে তা প্রকাশ করছে না। কারণ গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ায় তিনি এখন আন্তর্জাতিকভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে স্বীকৃত। এমন অপরাধীকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়ার কথা স্বীকার করলে আন্তর্জাতিকমহলের চাপ আরো বাড়বে। তাই কোন ট্যাটাসে শেখ হাসিনা ভারতে আছে, তা পরিষ্কার করছে না। কারণ এমনিতেই চতুর্মুখী সঙ্কটে আছে ভারত।
কী সেই চতুর্মুখী সংকট: ১. অভ্যন্তরীণ: রেসিজম ও ফ্যাসিজম। যেমন- কাশ্মীর, মনিপুরসহ সেভেন সিস্টারর্সের স্বাধীনতার দাবি। ২. প্রতিবেশীদের সাথে দূরত্ব। ৩. ইউরোপ-আমেরিকা, মুসলিমবিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের সাথে সখ্যে ভাটা।

পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ভারতের আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, শাসকদের ‘গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল’ মনোভাব। বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের রিপোর্টে বলেছে, খোলা জায়গায় মলত্যাগের অভ্যাস সবচেয়ে বেশি ভারতে। দেশটির ষাট কোটির বেশি মানুষ উন্মুক্ত জায়গায় মলত্যাগ করে। ভারত সরকার স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা তৈরির জন্য শত শত কোটি ডলার ব্যয় করেও পরিস্থিতি খুব বেশি বদলাতে পারেনি। সভ্যতার ন্যূনতম দাবি পূরণে ব্যর্থ জাতি হিসেবে তারা পরিচিতি পেয়েছেÑ এমন অনেক অসভ্য অভ্যাসের কারণে। তাছাড়া দেশটি বর্তমানে শাসন করছে একটি রেসিস্ট ও ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। অথচ সেই ভারত নিজেকে মনে করে পরাশক্তি। আয়তনে বড় হলেই যে পরাশক্তি হওয়া যায় না, এ কথা তাদের বোঝাবে কে? তাই তো আয়তনের দিক থেকে ছোট অথচ সভ্য দেশগুলোর ওপর চণ্ডালি অসভ্যতার দাদাগিরি ফলাচ্ছে ভারতের শাসকগোষ্ঠী। এভাবে ভারতের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী শুধু নিজ দেশ ও জনগণেরই ক্ষতি করছে না, গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় অসহিষ্ণুতার বিষ ছড়াচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব সোশ্যাল সিস্টেমের প্রফেসর ড. অভিজিৎ পাঠক ‘ডেকান হেরাল্ড’-এ সম্প্রতি প্রকাশিত একটি নিবন্ধে ভারতের বর্তমান শাসকদের এমন নীতির কী ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনছে, সে মন্তব্য করে বলেছেন, ‘বিপদ হলো উপমহাদেশে আরও বেশি করে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, সংখ্যাগরিষ্ঠ আগ্রাসন, সামরিকবাদ ও সাংস্কৃতিক অবক্ষয় এবং একই সাথে নব্য উদারনীতির ফ্যাসিস্টের উত্থান ঘটতে পারে।’ এর ফলে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিপদও বাড়ছে।
ভারতের অভ্যন্তরীণ বিপদ

ভারতের অভ্যন্তরীণ বিপদের কথা বলতেই মনের পর্দায় ভেসে ওঠে সেভেন সিস্টার্সের মনিপুর, নাগাল্যান্ড, আসাম এবং কাশ্মীরসহ বিভিন্ন রাজ্যের নির্যাতিত স্বাধীনতাকামী মানবতার আর্তনাদ। কিন্তু এর মূলে লুকিয়ে থাকা রেসিজম (বর্ণবাদ) ও ফ্যাসিজমের (চরম স্বৈরতন্ত্র) দিকে অনেক গবেষকই গভীর দৃষ্টিপাত করছেন না। অথচ ইতিহাসের সাথে মিলিয়ে সমাজ পরিবর্তন ও স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা সৃষ্টির কারণগুলো বিশ্লেষণ করলে অবশ্যই উল্লেখিত দুটি বিষয় নিয়ে গবেষণার বিকল্প নেই। কারণ সমস্যা ও সঙ্কটের বীজ লুকিয়ে আছে সেখানেই। হিন্দুত্ববাদ ও বর্ণবাদ (রেসিজম)-এর বিষ ছড়িয়েই ১৯৪৭ সালে ভারতের তৎকালীন নেতারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে লাখ লাখ মানুষ (মুসলমান) হত্যা করেছে এবং তাদের দেশত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। যতই দিন যাচ্ছে, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-এর শাসনে সেই ধারা আরো তীব্র হয়ে ফিরে আসছে।
নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. অভিজিৎ পাঠক এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “ভারতে গণপিটুনি থেকে শুরু করে গো-সতর্কতা’, ‘বুলডোজার দিয়ে মুসলিমদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুঁড়িয়ে দেয়াকে’ স্বাভাবিকীকরণ করা হয়েছে। একের পর এক সিরিজ মসজিদের নিচে ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরগুলোকে ‘আবিষ্কার’ করার মতো বিজয়ী এজেন্ডা বাস্তবায়ন হয়ে চলেছে। গুজরাটে ২০০২ সালের দাঙ্গার ভয়াবহতা থেকে শুরু করে মুসলমানদের ‘উইপোকা’ বা ‘বাবুর কি আউলাদ’ বলে নিশ্চিহ্ন করার প্রচেষ্টা চলছে। নাগরিক সংশোধনী আইন এবং নাগরিকদের জাতীয় নিবন্ধনের রাজনীতির টার্গেট করা হয়েছে। এমনকি বিজেপিতে একজনও মুসলিম সংসদ সদস্য নেই। কঠোর বাস্তবতা হলো ভারতে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সামাজিক/রাজনৈতিক মর্যাদা নিয়ে গর্ব করার মতো কোনো কারণ নেই। প্রকৃতপক্ষে গোলওয়ালকর, সাভারকর এবং গডসদের বক্তৃতায় নিহিত থাকা একটি আদর্শ নেহরুর ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদ বা গান্ধীর ভালোবাসা ও করুণার ধর্মকে নিন্দা করবে এটাই স্বাভাবিক। সম্ভবত বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের জন্য তাদের ‘উদ্বেগ’ নিছকই একটি ভণ্ডামি। এটি একটি ম্যাকিয়াভেলিয়ান হাতিয়ার মাত্র। ভারতে হিন্দু জনতাকে উত্তেজিত করে ‘মুসলিম শত্রুদের’ আরো নিশ্চিহ্ন করা এবং হাইপার-পুরুষালী হিন্দু জাতীয়তাবাদের আদর্শকে বৈধতা দিতেই এটাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’

শুধু পুরনো বর্ণবাদ বা রেসিজম নয়, ভারত ফ্যাসিজমের কবলে পড়েছে বলেও বলছেন ভারতীয় সাংবাদিক ও বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, বিজেপির ফ্যাসিবাদী নীতির কারণে সেদেশের জনগণের ভোটাধিকার আজ প্রশ্নবিদ্ধ। এশিয়া টাইমসের দিল্লিভিত্তিক কলাম লেখক রবি কান্ত সম্প্রতি এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর বোঝা যাচ্ছিল মোদির বিজেপি তাদের শক্তি ও জনসমর্থন হারিয়েছে।.. কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফল সবাইকে হতবাক করে দেয়। ভোটের প্রাথমিক প্রবণতা কংগ্রেসের পক্ষে থাকলেও চমক লাগানো মোড় নিয়ে শেষ পর্যন্ত বিজেপি জয়লাভ করে। ভোট গণনার পর দেখা যায়, বিজেপি ৯০টির মধ্যে ৪৮টি আসনে জিতে হ্যাটট্রিক করেছে এবং ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছে। ২০০০ সালের পর থেকে এটি ছিল তাদের সেরা ফল। অথচ ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি ১০টির মধ্যে ৫টি সংসদীয় আসনে পরাজিত হয়েছিল। এ রাজ্যে বিজেপি ১৯টি আসনে ৫০ শতাংশের বেশি এবং ৩৯টি আসনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোট পেয়েছে; যেখানে কংগ্রেস যথাক্রমে ১২ ও ৩২ আসনে এ পরিমাণ ভোট পেয়েছে। এ রাজ্যে বিজেপি ৪৬ আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতার লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। এটি কেমন করে সম্ভব হলো, তা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে একটি বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারবিরোধী মনোভাবের তীব্রতা, মোদির জনপ্রিয়তায় ধস, নেতৃত্বের সংকট, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের পরও বিজেপি যে অসাধারণ সাফল্য পেয়েছে, তা যেকোনো রাজনৈতিক দলের জন্য প্রায় অসম্ভব একটি অর্জন।’ এ অসম্ভব সম্ভব হওয়া প্রসঙ্গে রবি কান্ত মন্তব্য করেছেন, এখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য স্বচ্ছতার অভাব স্পষ্ট। এ তো গেল অভ্যন্তরীণ বিপদ। এর সাথে যোগ হচ্ছে গোটা দুনিয়ার সাথে বৈরিতা।
নিকট প্রতিবেশী ও দূরের মিত্রদের সাথে বৈরিতা বাড়ছে

বাংলাদেশের জনগণের ঘাড়ের ওপর সিন্দাবাদের ভূতের মতো শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন চাপিয়ে দিতে সুজাতা সিং মিশন পরিচালনা করেছিল, সেই সময়ের ভারতের শাসকদল নিখিল ভারত কংগ্রেস। অবশ্য তার ফলাফল অর্থাৎ ‘হার্ম হ্যাচ, হার্ম ক্যাচ’ কংগ্রেসের ওপর পড়তে খুব একটা দেরি হয়নি। বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার লুটে হাসিনাকে সহযোগিতার পরপরই ভারতে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে কংগ্রেস শুধু ক্ষমতাই হারায়নি, সংসদীয় বিরোধীদলের মর্যাদার জন্য যে ন্যূনতম আসন প্রয়োজন তাও লাভ করতে ব্যর্থ হয়। ২০১৪ সালে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস মুখ থুবড়ে পড়েছিল। দলটি তখন ১৬২টি আসন হারায় এবং ভাগে প্রায় ৯.৩ শতাংশ ভোট কম পায়। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ভারতের কংগ্রেস সরকার বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করতে সুজাতা সিংকে পাঠিয়ে আওয়ামী লীগকে দিয়ে একতরফা নির্বাচন আয়োজন করিয়ে ফ্যাসিবাদের উত্থানে সহযোগিতা করেছে। একটি মাত্র দল আওয়ামী লীগ ও একজন নেতা শেখ হাসিনার সাথে সম্পর্ক রাখতে গিয়ে ভারত বাংলাদেশের ১৮ কোটি জনগণের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করেছে। ভারতের দাদাগিরির বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবেশী পাকিস্তান ও চীনের সাথে স্থায়ী বৈরিতা দিন দিন বাড়ছেই। সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত হিন্দু রাষ্ট্র নেপাল, ছোট রাষ্ট্র ভুটান, মালদ্বীপ এবং বৌদ্ধ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার কারো সাথেই ভারতের সুসম্পর্ক নেই।

কানাডার সাথে বৈরিতা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোও। ভারতকে ‘অসহযোগী’ দেশগুলোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ সংস্থা (আইসিই)। সবচেয়ে পছন্দেরে দেশের (এমএফএন) তালিকা থেকে ভারতের নাম বাদ দিয়েছে সুইজারল্যান্ড। ভারতের সুপ্রিম কোর্টে নেসলে-সংক্রান্ত একটি মামলার রায়ের পর সুইজারল্যান্ড ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি থেকে সরে গিয়ে ডাবল ট্যাক্সেশন এভয়ডেন্স এগ্রিমেন্ট (ডিটিএএ) চুক্তির আওতায় ভারতকে ‘সর্বাধিক পছন্দের দেশ’ বা এমএফএন তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, সুইজারল্যান্ডের এ পদক্ষেপ দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। ফলে সুইজারল্যান্ডে কার্যক্রম পরিচালনাকারী ভারতীয় কোম্পানি ও ভারতে সুইস বিনিয়োগে বড় প্রভাব পড়বে।
ভারতীয় পর্যটকদের ভিসার আবেদন গণহারে বাতিল করে দিচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। নতুন করে আরোপিত কঠোর নীতিমালার কারণে দিনে ৫ থেকে ৬ শতাংশ ভিসা আবেদন বাতিল করা হচ্ছে। কদিন আগেও ভারতীয় পর্যটকদের ভিসা বাতিলের হার ছিল মাত্র ১-২ শতাংশ। নতুন নীতিমালা কার্যকর হওয়ার পর ভিসা বাতিলের হার ৫-৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ভারতীয় ট্রাভেল এজেন্টরা বলছেন, কঠোর নীতিমালার কারণে প্রয়োজনীয় সব নথি থাকার পরও অনেক ভিসা আবেদন বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সম্প্রতি পর্যটক ভিসার ক্ষেত্রে নতুন এবং কঠোর নিয়ম চালু করেছে। নতুন নিয়মানুযায়ী, আবেদনকারীদের হোটেল বুকিং ও ফিরতি টিকিট জমা দিতে হবে। যারা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে থাকবেন, তাদের ক্ষেত্রে আমন্ত্রণকারী আত্মীয়ের বাসস্থান সংক্রান্ত প্রমাণপত্র দাখিল করাও বাধ্যতামূলক। অথচ একসময় সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ভারতীয়রা তাদের দ্বিতীয় দেশ বলে ভাবত। মসজিদ ভেঙে মন্দির করার কারণে ভারতের ওপর ক্ষুব্ধ অন্যান্য মুসলিমদের শাসক এবং নাগরিকরাও। এরমধ্যে আছে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আবর, মিশর ও ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত ইরান। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, আমরা যদি ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে মুসলিমদের দুঃখ-কষ্টের প্রতি উদাসীন থাকি, তাহলে আমরা নিজেদের মুসলমান ভাবতে পারি না। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারও ভারতীয়দের জন্য ভিসা সীমিত করার ঘোষণা দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারতের বর্তমান পররাষ্ট্রনীতিই দেশটির এ পরিণতির জন্য দায়ী। ভারতের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ও নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি উপলব্ধি করে গণতন্ত্র, মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার দিয়ে সবার সাথে সুসম্পর্কের নীতি গ্রহণ করলেই ভারতের সাথে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলো এবং প্রতিবেশীদের সম্পর্ক উন্নয়ন সম্ভব হবে। অন্যথায় সংকট আরো বাড়বে বৈ কমবে না।