ফ্যাসিস্টদের দ্রুত গ্রেফতার বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করুন
২২ মে ২০২৫ ১৭:০৮
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের স্বৈরাচার ও অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পালিয়েছেন। তিনি পালানোর পর প্রশাসনের বর্ণচোরা কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় একে একে দেশ ছেড়েছেন হাসিনার ঘনিষ্ঠ দোসররা। তারা শনাক্ত হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারা এখন রং বদল করে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছেন। তারা আরো দ্বিগুণ-তিনগুণ শক্তি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ চেয়ার দখল করে আছেন। তাদের আশকারা এবং পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের লুটপাটের টাকায় আওয়ামী লীগের কর্মী, সমর্থক ও নেতারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিলের নামে জনমনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। হাসিনা ভারতে বসে হুঙ্কার দিচ্ছেন, তিনি ফিরে আসবেন। ভয়ংকর রূপে ফিরবেন। তারপর দেশে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়ে প্রতিশোধ নেবেন। ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া আহত ও শহীদ অসহায় পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিচ্ছে হাসিনার কারাগারের বাইরে থাকা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সমর্থকরা। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা যারা আন্দোলনে অংশ নিয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের পরিবারও হয়রানির শিকার হচ্ছে। পতিত ফ্যাসিস্টরা নেপথ্যে থেকে লুটের টাকায় জেলা-উপজেলায় কিশোর গ্যাং গঠন করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছে। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক, জুয়া, সেক্স গ্যাং তৈরি করে কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ-তরুণীদের বিপথগামী করছে। দেশের রাজনীতিকে স্বচ্ছধারায় ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। দেশে আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত ভারতপন্থি বামধারার রাজনৈতিক দল এবং নবগঠিত বিভিন্ন দলের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে ইন্ডিয়ান বয়ান ফেরি করে আবারও জাতিকে বিভক্ত করে ইসলামপন্থি দেশপ্রেমিক শক্তির বিরুদ্ধে অপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের অতীত ও বর্তমান কার্যক্রম পর্যালোচনা করে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সরকার আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ভার্চুয়ালজগতেও তারা নিষিদ্ধ। এর কোনো বিকল্প ছিল না। কিন্তু তারা নতুন কায়দায় বিএনপি ও জামায়াতের নাম ব্যবহার করে দুটি দলের মধ্যে বিরোধ উসকে দিতে ফেক আইডি খুলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
কথায় আছে, কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না। ফ্যাসিস্টদের চরিত্রও কোনোদিন ভালো হয় না। তাই পৃথিবীর প্রত্যেকটি সভ্য-গণতান্ত্রিক দেশেই ফ্যাসিবাদ নিষিদ্ধ। সাপ্তাহিক সোনার বাংলায় সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ এবং বিগত অপরাধের বিচার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘শাপলা চত্বরের ঘটনা প্রত্যক্ষ করে মন্তব্য করতে গিয়ে বিশ্লেষকরা ফিরে গেছেন দার্শনিক রবার্ট পল উলফ, সমাজবিজ্ঞানী ব্যারিংটন মুর জুনিয়র এবং দার্শনিক হারবার্ট মার্কুসের ১৯৬৫ সালে লেখা একটি বইয়ের পাতায়। বইটির নাম ‘আ ক্রিটিক অফ পিওর টলারেন্স’। যার বাংলা অর্থ, বিশুদ্ধ সহনশীলতার সমালোচনা। এতে তারা মন্তব্য করেছেন, ‘ভবিষ্যৎ (নাৎসি) নেতারা গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে যখন তাদের আন্দোলন শুরু করে, তখন যদি তাদের প্রতি গণতান্ত্রিক সহিষ্ণুতা প্রত্যাহার করা হতো, তাহলে মানবজাতি গণহত্যা (হলোকাস্ট) এবং একটি বিশ্বযুদ্ধ থেকে রক্ষা পেত।’ মৃত বাকশালের প্রেতাত্মাকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সহিষ্ণুতায় আবার আওয়ামী লীগ নামে পুনর্গঠনের সুযোগ না দিলে এ জাতিকে হয়তো শাপলা হত্যাকাণ্ডের মতো ১৯৭৫-পরবর্তী অনেক রাজনৈতিক নির্মম ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে হতো না। রাজনৈতিক-নির্মমতা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টই সিলগালা হয়ে যেত। কিন্তু ভারতের বর্ণবাদী আগ্রাসী অপশক্তি এবং তাদের প্ররোচনায় বিভ্রান্ত পশ্চিমাশক্তিকে খুশি করতে উদার গণতন্ত্রের নামে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করেন সঙ্কটকালে ক্ষমতায় আসা শহীদ রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। ফ্যাসিস্ট অপশক্তির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, প্রথমেই তাকে খতম করা, যার উদারতায় সে পুনর্জীবন লাভ করে। এক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবরণ এর প্রমাণ। এ হত্যাকাণ্ডের পরই ধীরে ধীরে মনস্টার রূপে ফিরে এসেছে বাকশালী খোলস বদল করা আওয়ামী লীগ।’ কথায় আছে, বার বার ভুল করে বোকারা। আমরা আশা করি, দেশের নীতিনির্ধারকরা আর ভুল করবেন না। আওয়ামী লীগের চিহ্নিত অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকার যথাযথভাবে পালন করবে। কারণ এ সরকারের উপদেষ্টারা ৩৬ জুলাই বিপ্লবের শহীদের চেতনার আলোকে দেশ গড়ার স্বপে¦র বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তাই এ কাজে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করা প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের পবিত্র দায়িত্ব। কারণ বিচার যত বিলম্বিত হবে, ফ্যাসিস্টদের দোসররা ততই শক্তিশালী হবে। দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়বে।