লোকগান ও ছড়ায় আঠারো শতকের ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’ এর ছবি

অতিথি লেখক
৮ মে ২০২৫ ১৪:৫০

॥ শাহানারা স্বপ্না ॥
কালপ্রবাহে সমাজ জীবনে নানারকম ঘটনা ও উত্থান-পতন ঘটে। লোকজীবনে এসবের অনেক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সমকালীন ইতিহাসে তার সবটুকু উঠে আসে না। রাজকীয় উত্থান-পতনে বিপুলসংখ্যক জনজীবনের পরিবর্তন, আশা-নিরাশা, দুঃখ-বেদনা, সামাজিক টানাপড়েন, আর্থিক অবস্থা, দৈব-দুর্বিপাক, রাষ্ট্রীয় পীড়ন ইত্যাদি সব প্রচলিত ইতিহাসে তুলে ধরা সম্ভব নয়। লোকায়ত শিল্পে গ্রাম-গঞ্জের লোকগান, ছড়া, প্রবাদ, প্রবচন ও গাঁথায়’ এর সার্থক চিত্র প্রতিফলিত হয়। জীবনের ছোট ছোট সুখ-দুঃখের খণ্ডচিত্র স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী কবির পক্ষেই বাস্তবানুগভাবে বিবৃত করা সম্ভব। লোক-কবিগণ সমসাময়িক বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে প্রচুর গাঁথা, কথকতা, কাব্য, পদ্য ইত্যাদি রচনা করে থাকেন। এতে ঘটনার আলেখ্য যেমন বাস্তবসম্মত হয়, তেমনি পাওয়া যায় এক অবিকৃত ঐতিহাসিক সময়ের স্বাক্ষর। স্বতঃস্ফূর্তভাবে রচিত যুগ-যুগান্তরের চারণ কবিদের এসব রচনায় রয়েছে অমূল্য ঐতিহাসিকে উপাদান ও অবদান। সমাজ অভ্যন্তরের টুকরো-গাঁথাই কালে কালে হয়ে দাঁড়ায় ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান।
আঠারো শতকে ইংরেজ আমলে বাংলায় ঘটে একের পর এক মন্বন্তরের ঘটনা। এগারোশ’ ছিয়াত্তর বাংলা সনে সংঘটিত মহাদুর্ভিক্ষ ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’ নামে পরিচিত বাংলার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। ইংরেজরা এদেশ দখলের পর কায়েম করে সীমাহীন শোষণের রাজত্ব। বাংলায় ইংরেজ শাসনের শুরুতেই শুরু হয় কৃষকদের ওপর নির্যাতন। কারণ তথন বাংলা ছিল সবচেয়ে সম্পদশালী এলাকা। ফসল তোলার মৌসুমে ইংরেজ আমলা ও কর্মচারীরা মিলে বাংলার সব খাদ্যশস্য নামমাত্র মূল্যে কিনে গুদামজাত করে ফেলতো। এরপর বেশি দামে বিক্রি করতো এবং লন্ডনের বাজারে চালান পাঠিয়ে দিতো। এর ফলে ভারতের ‘খাদ্যভাণ্ডার’ হিসেবে পরিচিত সুজলা সুফলা বাংলার খাদ্যশস্যভাণ্ডার ক্রমশ শূন্য হতে থাকে। বণিকরা শাসনক্ষমতা হাতিয়ে নেয়ার দশ বছরেই বাংলা ও বিহারের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। এ দুটি প্রদেশ শিকার হয় ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও মন্বন্তরের। ‘ভারতের কৃষক বিদ্রোহ ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম’ গ্রন্থে সুপ্রকাশ রায় উল্লেখ করেছেন, কোম্পানির শোষণের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট ছিয়াত্তরের দুর্ভিক্ষে এক-তৃতীয়াংশ লোকের মৃত্যু হলে বাংলার কৃষিজমির জমি যেমন জঙ্গলে পরিণত হয়, তেমনি ইংরেজদের অর্থনৈতিক কুব্যবস্থায় এদেশের এতদিনের অনেক লাভবান শিল্পও শূন্যে পরিণত হয়। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরটি অবিশ্যম্ভাবী ছিল। কারণ এ দেশের পণ্য ইংরেজরা কোম্পানির লগ্নির নামে কৃষকদের কাছ থেকে জোরপূর্বক নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করে তা ইংল্যান্ডের বাজারে রপ্তানি করে।’
প্রত্যক্ষদর্শী এক ইংরেজ বর্ণনা করেছেন, “বঙ্গদেশের সমগ্র ইতিহাসে এ দুর্ভিক্ষ এরূপ একটি নতুন অধ্যায় যোজনা করিয়াছে, তাহা মানব সমাজের সব অসিত্বকাল ব্যাপিয়া ব্যবসা-নীতির এ ক্রর উদ্ভাবনী শক্তির কথা স্মরণ করাইয়া দিবে, আর পবিত্রতম ও অলঙ্ঘনীয় মানবাধিকার সমূহের ওপর কত ব্যাপক, কত গভীর ও কত নিষ্ঠুরভাবে অর্থ লালসার উৎকট অনাচার অনুষ্ঠিত হইতে পারে, এ নতুন অধ্যায়টি তাহার একটি কালজয়ী নিদর্শন হইয়া থাকিবে”।১
ভারতের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দুটি প্রদেশ বাংলা ও বিহারের ক্ষমতা গ্রাস করেই ইংরেজরা এদেশে চালু করল দ্বৈত শাসন। নবাবকে অকার্যকর করে বিদেশি অর্থলোভীরা রাজস্ব আদায় ও লুটপাটের দায়িত্ব রাখে নিজেদের মুঠোয়। এর আগে মোগলযুগে রাজস্ব নেয়া হতো সমবেতভাবে এবং ফসলের মাধ্যমে। কিন্তু ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি তা বন্ধ করে নগদ টাকায় এবং ব্যক্তিগতভাবে রাজস্ব আদায়ের নিয়ম চালু করলো। তারা কৃষকের সম্পদ কেড়ে নিয়ে আবার কৃষকের কাছ থেকেই আদায় করতো উচ্চহারে রাজস্ব। ক্লাইভ, হেস্টিংস, ডালহৌসিসহ সকল ইংরেজ শাসকদের ভূমিকা ছিল লুটেরা বাহিনীর সর্দারের মতো। অধ্যাপক সুপ্রকাশ রায় উল্লেখ করেছেন, এই দুই স্থানের মানুষ ক্ষুধার জ্বালায় আত্মবিক্রয় করিয়া প্রাচীন যুগের মতো ক্রীতদাস শ্রেণি ও দাস-ব্যবসায়ের সৃষ্টি করে। ইংল্যান্ডের বাগ্মীশ্রেষ্ঠ এডমন্ড বার্ক ভারতের ইংরেজ বণিকের শাসনকে মানবসভ্যতার ইতিহাসে ‘মৃত্যুর শাসন’ এবং ‘ওরাংওটাং বা ব্যাঘ্রের শাসন’ নামে অভিহিত করিয়াছেন”।২.
অতিরিক্ত মুনাফা, জায়গাজমি-সম্পদ লুঠ ও অমানবিক কুশাসনে একের পর এক দুর্যোগের মতো দেখা দেয় মন্বন্তর। ব্রিটিশ-পূর্ব সময়ে বাংলার সুখ-সম্পদ ও ঐশ্বর্যের সুখ্যাতি প্রবাদে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে উড়ে এসে জুড়ে বসা কোম্পানি শাসনের মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলা ভূখা-নাঙ্গা দেশে পরিণত হলো। লোক-কবিদের ছড়া, প্রবাদ, প্রবচন ও গানে গানে সেই দুঃসহ দিনের ইতিহাসগাঁথা অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। মন্বন্তর ঘিরে তেমনি একটি লোকগাঁথা-
“বছরে বছরে এলা হইতেছে আকাল।
চালে নাই খেড় কারো ঘরে নাই চাল॥
মাও ছাড়ে বাপ ছাড়ে ছাড়ে নিজের মাইয়া।
বেটা ছাড়ে বেটি ছাড়ে নাই কারো মায়া॥”
১৭৫৭ সালের পর থেকেই বাংলার মানুষের ভাগ্যাকাশে ঘনিয়ে আসল মহাদুর্যোগ। এ সময় থেকেই এ দেশের সর্বনাশের বীজ রোপিত হলো। দেশজুড়ে শুরু হলো ধ্বংসের দাবানল। একদিকে ইংরেজের অত্যাচার; অন্যদিকে মারাঠা বর্গিদের হামলা এবং রাষ্ট্রীয় শোষণÑ এই তিনের পেষণে নিষ্পেষিত বাংলার জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছিল চরমে। ইংরেজরা এদেশীয়দের মধ্যে থেকে দেওয়ান, গোমস্তা, ইজারাদার, বেনিয়ান ইত্যাদি বানিয়ে একটি দলকে তাদের লুটের অংশীদার বানিয়ে নেয়। অত্যাচারের দুঃসহ কারাগারে বন্দি হলো বাংলার মানুষ। পাবনা জেলার চারণ কবি রামপ্রসাদ মৈত্রেয় সেই সর্বনাশা দিনের অক্ষয় রূপ দিয়েছেন তার পালাগানে-
“অপূর্ব শুনহ সবে স্বর্গের যত দেবে।
বিলাতে হইলা সাহেব রূপী॥
বাঙ্গলার অভিলাষে আইলা সদাগরবেশে
কৈলকাতা পুরাণা কুঠি আদি
গতামল সুভেদারী অশুভ সন বাহাত্তরী
আংরেজ আমল তদবধি।”
ইংরেজ বণিকরা এদেশে এসেছে টাকার জন্য। ক্লাইভ ‘টাকা চাই, আরো টাকা’- রব তুলে যে কোনো উপায়ে মানুষের অর্থ-বিত্ত কেড়ে নিয়ে লন্ডনে পাঠাতে শুরু করল। গ্রামে-গঞ্জে কায়েম হলো মহা শোষণের রাজত্ব। কোম্পানি শাসনের লুটপাট ও অত্যাচারে দেশজুড়ে অরাজকতা দেখা দেয়। মাত্র দশ বছরের মাথায় দেখা দিল মহাদুর্ভিক্ষের করাল গ্রাস। বাংলা ১১৭৬ সাল ছিল বলে এ দুর্ভিক্ষ ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’ নামে পরিচিতি পায়। বাংলার প্রত্যন্ত প্রান্তরে আজও ইংরেজ দ্বারা উৎপীড়িত বহু প্রবাদ-প্রবচনগাঁথা ও কথামালা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মন্বন্তরের আগের বছর বাংলায় ছিল প্রচণ্ড খরা। নদ-নদী, খাল-বিল প্রায় শুকিয়েছিল। দেশের শোচনীয় অবস্থা ফুটে উঠেছে একটি ছড়ায়-
“নদ-নদী খালবিল সব শুকাইল।
অন্নাভাবে লোক সব যমালয়ে গেল।”
আঠারো শতকে বাংলায় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর ছিল ঔপনিবেশিক শাসকদের শোষণের প্রবল চাপের একটা প্রচণ্ড বিস্ফোরণ। যে বিস্ফোরণে ধসে পড়েছে বাংলার হাজারো গ্রাম। বিনষ্ট হয়েছিল অর্থনৈতিক কাঠামো। ভারতে বহুবার রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু ১৭৫৭ সালের পরিবর্তনের ফাঁস যেভাবে মানুষের গলায় চেপে বসেছিল তা আর কখনো হয়নি। ছিয়াত্তরের মন্বন্তর তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। অনেক ইতিহাসবিদ ভারতে ইংরেজ শাসনের কালকে ‘মন্বন্তরের কাল’ বলে উল্লেখ করেছেন। ক্রমাগত মন্বন্তর ও কৃষক বিদ্রোহের অন্যতম কারণ ছিল কোম্পানির অবর্ণনীয় প্রজা-পীড়ন।
ওয়ারেন হেস্টিংস ক্ষমতা হাতে পেয়েই বাংলায় খাজনার হার অতিরিক্ত হারে বাড়িয়ে দেয়। আর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অতি উচ্চহারের এ খাজনা পরিশোধ করতে না পারলে সঙ্গে সঙ্গে জমিদারি ক্রোক ও রাজাদের রাজ্য কেড়ে নেয়ার নিয়ম চালু করে। হেস্টিংসের সহচর ছিলো দেবী সিংহ, কান্তমুদী, নবকৃষ্ণ, গঙ্গা মণ্ডলসহ আরো কয়েকজন। এদের সবাই ছিল নিম্নবর্গের মানুষ। ইংরেজের ছত্রছায়ায় ধনী হওয়ার সুযোগ পেয়ে যাওয়ায় এরা ইংরেজের বশংবদ তল্পীবাহক হয়ে ওঠে এবং যে কোনো উপায়ে অর্থ-বিত্ত লাভের জন্য ইংরেজের পেছনে দৌড়াতে থাকে। সবচেয়ে অত্যাচারী দেওয়ান ছিল দেবী সিংহ।
হেস্টিংস এদেরই ওপর ছেড়ে দেয় রাজস্ব আদায়ের ভার। এদের মাধ্যমে হেস্টিংস মালিকদের বন্দি, অপমান ও লাঞ্ছিত করে ভালো ভালো প্রাসাদ, জমিদারি, সম্পত্তি সব তার প্রিয়পাত্রদের নামমাত্র মূল্যে বিলিয়ে দিতো। এভাবেই বীরভূমের রাজা নবাব বদিউজ্জামানকে পথের ভিখারিতে পরিণত করে হেস্টিংস। বারানসীর রাজা চৈত সিংহের ‘বালিয়া পরগনা’ লুট করে কান্তমুদীকে দেয়। এভাবেই দেবী সিংহ ‘রাজা’ বনে যায়। কান্তমুদীও সামান্য মুদি দোকানদার থেকে রাজা বনে যায়। হেস্টিংসের কল্যাণে এরা সবাই অন্যদের থেকে কেড়ে নেয়া বড়ো বড়ো রাজ-প্রাসাদের মালিক হয়ে রাজা-জমিদার হয়। কান্তমুদী প্রতিষ্ঠা করে ‘কাশিমবাজার রাজবংশ’। একটি ছড়ায় তার পরিচয় মেলে-
“মহারাজ চৈত সিং কাশীধামে ছিল
হেস্টিংসের সনে তার বিবাদ ঘটিল॥
মাঝ থেকে কান্তবাবু লুটে মজা নিল।
মহামূল্য ধনরত্ন ঘরে নিয়ে এল।”
ইংরেজদের দমন করতে নবাব সিরাজ-উদ্দৌলা কাশিমবাজার আক্রমণ করেছিলেন। এতে ইংরেজ পক্ষ পরাজিত হয়। নবাবের সেনাবাহিনীর হাতে ইস্ট-ইন্ডয়ার সাধারণ কর্মচারী হেস্টিংস বন্দি হয়ে চালান যায় মুর্শিদাবাদে। মুর্শিদাবাদ থেকে পালিয়ে হেস্টিংস তার বন্ধু কাশিম বাজারের কান্তমুদীর দোকানে আশ্রয় নেয়। সেখানে পালিয়ে থাকার সময় পান্তাভাত খেয়ে কাটাতে হয়েছে অনেকদিন। সে কাহিনী নিয়ে কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী লিখেছেন চমৎকার ছড়া-
“হেস্টিংস সিরাজ ভয়ে হয়ে মহাভীত।
কাশিমবাজারে গিয়া হন উপনীত॥
কোনখানে গিয়া আজ লইব আশ্রয়।
হেস্টিংস মনে এই নিদারুন ভয়॥
কান্তমুদী ছিল তার পূর্ব পরিচিত।
তাহারি দোকানে গিয়া হল উপনীত॥
নবাবের ভয়ে কান্ত নিজের ভবনে।
সাহেবকে রেখে দেয় পরম গোপনে॥”
নবাবের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে ইংরেজরা এদেশে শক্তিশালী বনে গেলে হেস্টিংস কায়েমি ক্ষমতাধর হয়ে বসে। সাধারণ কৃষক শ্রেণিকে শোষণ করে টাকা আদায়ের জন্য কিছু নরাধম ব্যক্তিকে দেওয়ান নিযুক্ত করে। উত্তরবঙ্গের ইজারাদার নিযুক্ত করে দেবী সিংহকে। দিনাজপুরের নাবালক মহারাজার দেওয়ানের দায়িত্বও তাকে দেয়া হয়। ক্ষমতা পেয়েই ভীষণ স্বেচ্চাচারী হয়ে ওঠে দেওয়ান দেবী সিংহ। জমিদার ও সাধারন মানুষের ওপর তার অত্যাচারে সীমা ছাড়িয়ে যায়। রংপুর, দিনাজপুর, মালদহ প্রভৃতি জেলায় দেবী সিংহের অত্যাচারে প্রচণ্ড ক্ষোভ ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। রংপুর সদরের ইটাকুমারী গ্রামের লোককবি রতিরাম তার বিখ্যাত ‘জাগের গানের পালায়’ সে নিষ্ঠুরতার ছবি এঁকেছেন-
“কোম্পানীর আমলেতে রাজা দেবী সিং।
সে সময়ে মুল্লুকেতে হইল বার ঢিং॥
যেমন সে দেবতার মুরতি গঠন।
তেমনি হইল তার ভূষণ বাহন॥
রাজার পাপেতে হইল মুল্লুকে আকাল।
শিয়রে রাখিয়া টাকা গৃহি মারা গেল॥”
ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ান দেবী সিংহ এবং তার সহকারীরা অসংখ্য প্রকারের কর আদায়ের জন্য লাগামহীন অত্যাচার করতে থাকে। সোনার বাংলাকে জ্বালিয়ে ছারখার বানিয়ে ফেলে। তখনকার রংপুর সাহিত্য পরিষদের সভাপতি পণ্ডিত যাদবেশ্বর তর্কালংকার বলেন, “দিনাজপুরে দেবী সিং অষ্টাদশ প্রকারের কর আদায় করিতেছিলেন; হররাম (দেবীর অধীনস্থ কর্মচারী) রংপুরে একবিংশতি প্রকারের কর সৃষ্টি করিলেন। এরূপ অত্যাচার করিয়া হররাম কিছু আদায় করিতে সমর্থ হইলেন। কিন্তু দেবী সিংহের তাতেও মন উঠিল না।” মানুষের পেটে ভাত নেই অথচ খাজনা আদায় করা চাই। দেবী সিংহের লোকেরা মানুষের দুয়ারে ‘খাড়া যমে’র মত দেখা দিতো। স্বদেশি গানের রচয়িতা মনোমোহন বসু লিখেছেন-
‘দে কর দে কর রব নিরন্তর-
সিন্ধুবারি যথা শুঁষে দিনকর।
করদানে-নর নিকর কাতর
আয়কর শুনে গায়ে আসে জ্বর
লবণটুকু খাব তাতেও লাগে কর।
মাদকতা-কর ছলে রাজ্যময়
সে গরলে দগ্ধ ভারত নিশ্চয়॥”
পণ্ডিত যাদবেশ্বর তর্কালংকার আরও বলেন “জমিদারদিগের তো কথাই নাই, স্ত্রী লোকদিগের ওপরেও ভয়ানক অত্যাচার হইতে লাগিল। স্ত্রী জাতির শেষ অপমান তাহাও সর্বসমক্ষে সংঘটিত হইতে লাগিল। ক্ষোভে, রোষে, অপমানে কত সহস্র কূল-ললনা আত্মহত্যা করিয়াছেন, কে জানে?” এরা মানুষের জীবনের সুখ-শান্তি নষ্ট করে তছনছ করে দেয় বাংলার শান্ত গার্হস্থ্য জীবন। আলোচ্য গীতিকায় নারীর ওপর অকথ্য নির্যাতন করার চিত্রও বর্ণিত হয়েছে-
“পারে না ঘাটায় চলিতে ঝিউরী বউরী।
দেবীসিংহের লোকে নেয় তাকে জোর করি॥
পূর্ণ কলি-অবতার দেবীসিংহ রাজা।
দেবীসিং এর উপদ্রবে প্রজা ভাজা ভাজা॥”
কোম্পানির লোকেরা দুর্ভিক্ষের বছরের শুরুতেই চাল মজুদ করতে শুরু করে। চার্লস গ্রান্টের হিসাব অনুযায়ী, সেই সময়ে সরকার শুধুমাত্র কলকাতার সেনাবাহিনীর জন্যই ৬০ হাজার মণ চাল মজুদ করেছিল। এগারোশ’ ছিয়াত্তর সনের সেই অবিশ্রুত মঙ্গায় বাংলার সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি সবক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। (ণড়ঁহমযঁংনধহফ) নামে ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের প্রত্যক্ষদর্শী এক ইংরেজ ঐ দুর্ভিক্ষের জন্য সমকালীন ইংরেজ বণিকদের দায়ী করেছিলেন। ১৭৮৬ সালে প্রকাশিত তার লেখা ‘ট্রানসাকশনস ইন ইন্ডিয়া’ গ্রন্থে লিখেছেন, “তাহাদের মুনাফা শিকারের পরবর্তী উপায় হইলো চাউল কিনিয়া গুদামজাত করিয়া রাখা। তাহারা নিশ্চিত ছিলেন যে, জীবন ধারণের পক্ষে অপরিহার্য এ দ্রব্যটির জন্য তাহারা যে মূল্যই চাহিবেন তাহাই পাইবেন। … চাষিরা তাহাদের প্রাণপাত করা পরিশ্রমের ফসল অপরের গুদামে মজুদ হইতে দেখিয়া চাষবাস সম্বন্ধে উদাসীন হইয়া পড়িল। ইহার ফলে দেখা দিল খাদ্যাভাব। দেশে যাহা কিছু খাদ্য ছিল, তাহা একচেটিয়া (ইংরাজ বণিকদের) দখলে চলিয়া গেল। … খাদ্যের পরিমাণ যত কমিতে লাগিল ততই দাম বাড়িতে লাগিল। শ্রমজীবী, দরিদ্র জনগণের চিরদুঃখময় জীবনের ওপর পতিত হইল এ পুঞ্জীভূত দুর্যোগের প্রথম আঘাত। কিন্তু ইহা এক অশ্রুতপূর্ব বিপর্যয়ের আরম্ভমাত্র। এই হতভাগ্য দেশে দুর্ভিক্ষ কোনো অজ্ঞাতপূর্ব ঘটনা নহে। কিন্তু দেশীয় জনশত্রুদের সহযোগিতায় একচেটিয়া শোষণের বর্বরসুলভ মনোবৃত্তির অনিবার্য পরিণতি স্বরূপ যে বিভীষিকাময় দৃশ্য দেখা দিলো তাহা এমনকি ভারতবাসীও আর কখনো চোখে দেখেন নাই বা শুনেন নাই। চরম খাদ্যাভাবের এক বিভীষিকাময় ইঙ্গিত লইয়া দেখা দিল ১৭৬৯ খ্রিষ্টাব্দ। সঙ্গে সঙ্গে বাঙলা ও বিহারের সমস্ত ইংরাজ বণিক, তাহাদের সকল আমলা-গোমস্তা, রাজস্ব বিভাগের সকল কর্মচারী, যে যেখানে নিযুক্ত ছিল সেখানেই দিবারাত্র অক্লান্ত পরিশ্রমে ধান, চাউল ক্রয় করিতে লাগিল। এ জঘন্যতম ব্যবসায় মুনাফা হইলো এত শিগগির ও এরূপ বিপুল পরিমাণে যে, মুর্শিদাবাদের নবাব দরবারে নিযুক্ত একজন কপর্দকশূন্য ভদ্রলোক এ ব্যবসা করিয়া দুর্ভিক্ষ শেষ হইবার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ৬০ হাজার পাউন্ড (দেড় লক্ষাধিক টাকা) ইউরোপে পাঠাইয়া ছিলেন।”
এ প্রসঙ্গে একজন গ্রাম-কবির রচনা উল্লেখযোগ্য-
“অন্নাভাবে সব প্রজা করে হাহাকার।
দিনান্তরে কিছুমাত্র না মিলে আহার॥
জঠর জ্বালাতে মরে করিয়া হতাশ।
ছাড়য়ে বনিতা নিজ পতি গৃহবাস॥”
“মূল্য দিয়া অন্ন নাহি পায় কোন স্থান।
পিতা-পুত্র সম্বন্ধতে অন্ন নাহি দান॥
দু:খিত কাঙ্লী জত স্নেহ দূর করে।
ইস্টমিত্র পুত্র কন্যা ত্যাগয়ে সত্তরে॥
সহস্রাবধি মৃত্যু হয় অন্নের অভাবে।
বিনামূল্যে বিক্রি লোক দেখি অসম্ভভে॥”
বাংলার গ্রামে গ্রামে দলে দলে লোক না খেতে পেয়ে মরছে। ঘরবাড়ি, নিজের সন্তানও বিক্রয় করছে। ক্ষুধায় মানুষ কুকুর বেড়াল, গাছের পাতা খেতে শুরু করে। খাবারের জন্য, বাঁচার জন্য মানুষের আহাজারি-
“পেটে নাই অন্ন তাদের পৈরণে নাই বাস
চামে ঢাকা হাড় কয়খান করি উপবাস॥
… রাজার পাপে প্রজা নষ্ট দেওয়ায় নাই জল
মাঠে ধান জ্বলিয়া গেল ঘরে নাই সম্বল॥”
বৃষ্টি না হওয়ায় ফল-ফসলাদি জন্মায়নি। নিরন্ন মানুষের— ‘হা অন্ন হা অন্ন’ হাহাকার রবে প্রকম্পিত সারা দেশ। এর মধ্যেই নির্দয় ইংরেজ বণিকরা বাজারের সব চাল ও খাদ্যশস্য জোর করে নিয়ে গেল একচেটিয়া মজুদদারী কারবারের জন্য। আকাশচুম্বী দরে তারা এসেব বিক্রি করে লালে লাল হলো, অন্যদিকে বাংলার ভূখা জনগণ খেতে না পেয়ে রক্তহীন কংকালসার দেহে মারা পড়ল।
“একচেটে ব্যবসা, দাম খরতর
ছিয়াত্তরের মন্বন্তর হলো ভয়ঙ্কর॥
পতিপত্নী পুত্র ছাড়ে পেটের লাগিয়ে।
মরে লোক, অনাহারে অখাদ্য খাইয়ে॥”
খাবারের অভাবে বাংলার ঘরে ঘরে হাহাকার। রাস্তাঘাটে অস্থি-চর্মসার মানুষের লাশের সারি। মানুষ দিশেহারা অস্থির। কোলের প্রিয় শিশু, সন্তান, স্বামী-স্ত্রী পরস্পর বিচ্ছিন্ন। অখাদ্য খাবার খেয়ে সড়ক লেগে উজাড় হচ্ছে গ্রামকে গ্রাম। সারি সারি ঘরবাড়ি খালি, অনেক জনপদ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তবু ইংরেজ দেওয়ানদের করের হাত থেকে রক্ষা নেই। দেবী সিংহের মতো কর আদায়কারীদের অত্যাচারের মর্মান্তিক কাহিনী বাতাসের বেগে পল্লবিত হয়ে মানুষের কানে কানে ঘুরে বেড়ায়। ছোট-বড় তার কাছে কারো কোনো মান সম্মান নাই। যাদেশ্বর তর্করত্ন লিখেছেন, জমিদারদিগের জমি নামমাত্র মূল্যে দেবী সিং বেনামীতে স্বয়ং কিনতে লাগলেন। তাহাতেও রাজস্ব আদায় হইল না। কাজেই তখন, জমিদারবর্গ বেত্রাঘাত সহ্য করিতে লাগিলেন। কাহারো টাকা নাই। প্রহারে অপমানে জর্জরিত হইয়া অসংখ্য লোক অকালে কালগ্রাসে পতিত হইলেন—
“কত যে খাজনা পাইবে তার নেকা নাই।
যত পারে তত নেয় আরো বলে চাই॥
দেও দেও চাই চাই এই মাত্র বোল।
মাইরের চোটেতে ওঠে ক্রন্দনের রোল॥
মানীর সম্মান নাই মানী জমিদার।
ছোট বড় নাই সবে করে হাহাকার॥
সোয়ারীতে চড়িয়া যায় পাইকে মারে জোতা।
দেবী সিংহের কাছে আজ সবে হলো ভোঁতা॥”
কৃষকরা একত্র হয়ে ইংরেজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এ কৃষকদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন সমাজের মানবদরদী নেতৃবৃন্দ। রংপুরের ফুলচৌকির জমিদার নুরুদ্দিন মোহাম্মদ বাকের জঙ্গ। যিনি কৃষক বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ইংরেজের বিদ্বেষের শিকার হয়েছিলেন। ইংরেজরা তাঁর নাম বিকৃত করে দিলÑ ডাকাত ও ফকির মজনু শাহ। এভাবে তারা আমাদের দেশপ্রেমিক বীর সন্তানদের নামে কলঙ্কিত ইতিহাস লিখে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে। মজনু শাহই শুধু নয়, মুসা শাহ, আজিজুন্নেসা, দেবী চৌধুরানী, ভবানী পাঠক ইত্যাদি প্রত্যেক স্বাধীনতা সংগ্রামী বীরের ইতিহাসকেই তারা বিকৃত ও কলঙ্কিত করেছে। বিদ্রোহের নেতা মজনু শাহর ১৭৮৭ সালে মৃত্যুর পর তার ভাই মুন্সী কাদের উল্লাহ নেতৃত্ব দেন কৃষক বিদ্রোহের। যাকে ইংরেজরা মুসা শাহ্ ও ডাকাতের সর্দার হিসেবে ইতিহাসে প্রচার করে। আফসোস যে, আজ অবধি দেশের জন্য প্রাণ দেয়া দেশপ্রেমিক বিপ্লবী বীরদের দেশের মানুষ ইংরেজ প্রচারিত ‘দস্যু, ডাকাত’ বলেই চেনে!
অধ্যাপক সুরেশ চন্দ্র বলেন,- ‘বিদেশি ঐতিহাসিকগণ নিজেদের সুবিদামত এদেশের বহু ঘটনা এমনিভাবে বিকৃত করে ফেলেছেন যে আজ আর তা কেউ বিশ্বাস করতেও পারে না’। মজনুর বিরুদ্ধে ইংরেজরা টাকার বিনিময়ে মিথ্যা কবিতাও প্রচার করেছিল। পরিচয়হীন কোন এক পঞ্চানন দাশের মিথ্যা নাম দিয়ে লেখা হয়েছিল ছড়া। নিচে তার কয়েকটি লাইন-
“শুন সবে একভাবে নোতন রচনা।
বাঙ্গলা নাশের হেতু মজনু করনা॥
কালান্তক জম বেটা কে বলে ফকির
যাঁর ভয়ে রাজা কাঁপে প্রজা নহে স্থির॥
সহজে বাঙ্গালী অবশ্য ভাগুয়া।
আসামী ধরিতে ফকির যায় পাড়া পাড়া॥
ফকির আইল বলি গ্রামে পৈল হুড়।
গাছুয়া ব্যাপারী পলায় গাছে ছাড়্যা গুড়॥”-(সংক্ষেপিত ) ৪
পল্লীবন্ধু কবি রওশন ইজদানী তার লেখায় তুলে ধরেছেন সমকালীন চিত্র। দরদের সঙ্গে তিনি ‘আকালের বছর’ চাষির দুঃখ শিরোনামে মন্বন্তরের কথা লিখেছেন-
“হায়রে
ক্ষেতে ফসল নাই
ডোলেতে নাই মুষ্টি দানা-বাছুর মরা গাই।
হায়রে
ঝরার বেলা খরায় নিলো, খরায় দিলো বান,
রাঁজার হাঁসে খাইল বাঁকে পাকা ক্ষেতের ধান’।”
ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনের পুরো সময়টা কেটেছে দুর্ভিক্ষে। হঠাৎ রাজস্ব দুই-তিনগুণ বাড়িয়ে দেওয়ায় বাংলায় কান্নার রোল পড়ে গেল। ‘লোকে প্রথম ভিক্ষা করিতে বের হল, ভিক্ষা কে দেয়! তারপরে রোগগ্রস্ত হইতে লাগিল। গরু বেচিল, নাঙল-জোঁয়াল বেচিল, বীজধান খাইয়া ফেলিল। জোত-জমি বেচিল, ঘরবাড়ি বেচিল। তারপর স্ত্রী-মেয়ে বেচিতে আরম্ভ করিল, ছেলে বেচিতে আরম্ভ করিল। তারপর ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী কে কেনে? খরিদ্দার নাই, সকলেই বেচিতে চায়। খাদ্যাভাবে গাছের পাতা খাইতে লাগিল, ঘাস খাইতে আরম্ভ করিল, আগাছা খাইতে লাগিল। ইতর ও বন্যেরা কুকুর, ইঁদুর, বিড়াল খাইতে লাগিল। অনেকে পালাইল, যাহারা পালাইল তাহারা বিদেশে গিয়া অনাহারে মরিল। যাহারা পালাইল না তাহারা অখাদ্য খাইয়া না খাইয়া, রোগে পড়িয়া প্রাণত্যাগ করিতে রাগিল।।” ৫
ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে বাংলার তাঁতি, রেশম শিল্পী, গুটি পোকার পালক, সোনা, লবণ ইত্যাদি তৈরির লোকজন প্রায় সবাই মৃত্যুবরণ করে। মলঙ্গি, নৌকামাঝি, গাড়িচালকসহ সব শ্রেণি-পেশার লোকের স্বল্পতা দেখা দিল। বেশিরভাগ অনাহারে হারিয়ে যাওয়ায় সমাজ জীবনে সৃষ্টি হলো বিরাট শূন্যতা। মোগল আমলে জনসাধারণ সংকটে পড়লে কর মওকুফের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু ইংরেজ সরকার দেশে চরম দুর্ভিক্ষ চলাকালীনও কর মওকুফ দূরে থাক, অন্যায়ভাবে বাংলার দুরবস্থায় পড়া মানুষের কাছ থেকে নির্মম নির্দয়তায় খাজনা আদায় করেছিল। ইতিহাস সূত্র বলে, বাংলার প্রায় এক কোটি লোক অনাহারে মারা যায়। এর ফলে যাবতীয় উৎপাদন কমে যায়। অথচ উইলিয়াম হান্টারের মতে- “ঐ সময় (১৭৭০ সাল) থেকেই বাংলার অভিজাতদের দুই-তৃতীয়াংশের অবক্ষয় বা ধ্বংস শুরু হয়ে গিয়েছিল।”
এ মহামন্বন্তরে বাংলার গ্রামসমূহ বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছিল। বাংলার জীবনে এমন সংকটময় পরিস্থিতি আর বুঝি দেখা দেয়নি। এ মন্বন্তরে বাংলা বিহারের অর্থনীতি চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে এ দুটি প্রদেশ চির দরিদ্র ও চির দুর্ভিক্ষের দেশে পরিণত হয়। গ্রামের কবিরা অতি সহজ সরল অনাড়ম্বর কথায় মন্বন্তরের বিবরণ, কারণ ও অত্যাচারীদের সম্পর্কে কবিতা, গাঁথা, পদ্য ইত্যাদি লিখেছেন। ইতিসাশ্রিত এসব কবিতা সম্ভারে রয়েছে ইতিহাসের অলিখিত সুর। সব সুরগুলো একত্রে জড়ো করলে বেরিয়ে আসবে সেই দুঃখ-বেদনা ও সংকটের মূল। আঠারো শতকের সেই সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অনিশ্চিত ও বিশৃঙ্খল সময়ে স্থানীয় কবি, গায়েন প্রভৃতিগণ তাদের কবিতা-ছড়া-প্রবচনের মাধ্যমে এঁকে রেখেছেন বিক্ষুব্ধ কালের চাল-চিত্র। সামাজিক বিষয়ের তথ্য ও তত্ত্বপ্রদান এ লিরিকসগুলোর অবদান অপরিসীম। লোক-কবির লেখার ভেতর শুক্তির মুক্তোর মতো লুকানো হারানো দিনের কড়চা, মন্বন্তরের ইতিহাস।
তথ্যসূচি :
১. সুপ্রকাশ রায়- ‘ভারতের কৃষক বিদ্রোহ ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম, পৃষ্ঠা-১৪
২. সুপ্রকাশ রায়- ‘ভারতের কৃষক বিদ্রোহ ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম, পৃষ্ঠা-১৫।
৩. (ট্রানসাকশনস ইন ইন্ডিয়া, ইয়ংহাজব্যাণ্ড, পৃ: ১২৩-২৪; ভারতের কৃষক বিদ্রোহ ও গণতান্ত্রিক
সংগ্রাম, ১ম খণ্ড, সুপ্রকাশ রায়, পৃ: ১৩-১৪)।
৪. হায়দার আলী চৌধুরী- পলাশী যুদ্ধোত্তর আযাদী সংগ্রামের পাদপীঠ, পৃষ্ঠা- ১২।
৫. বঙ্কিমচন্দ্র চট্রোপাধ্যায়- বঙ্কিম রচনাবলী (উপন্যাস সমগ্র) প্রথম খণ্ড, (আন্দমঠ) পৃষ্ঠা-৬৭০।