রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ২য় সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ॥ ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী ॥ ২৯ মাচ ২০২৪

সোনার বাংলা রিপোর্ট : ভারত থেকে খাদ্যশস্য ও চিনি আমদানি না করলে বাংলাদেশ সংকটে পড়বে এমন একটি মনস্তত্ত্ব প্রচার করা হয়ে থাকে। বিগত দুই দশক ধরে এটা বেশ করে বলা হচ্ছে। আর এ প্রচার করার উদ্দেশ্য হচ্ছে ভারতের ওপর বাংলাদেশের জনগণের একটি নির্ভরশীলতা তৈরি করা। কিন্তু বিগত এক বছরে বাংলাদেশের খাদ্যশস্য আমদানির একটি পরিসংখ্যান দেখলে তার একটি বাস্তব চিত্র দেখা যায়। এতে দেখা যাচ্ছে যে, ভারত থেকে খাদ্যশস্য আমদানি ৯৩ এবং চিনি আমদানি কমেছে ৭০ শতাংশ। এ  আমদানি কমা দিয়ে প্রমাণ হচ্ছে যে, বাংলাদেশে ভারতের খাদ্যশস্য  রফতানি কমিয়ে দিলেও বাংলাদেশের জনগণ তেমন সংকটে পড়বে না।
ভারতের বাণিজ্য বিভাগের হালনাগাদকৃত তথ্যানুযায়ী, ভারত থেকে খাদ্য ও চিনি আমদানি হ্রাস পেয়েছে। এর মধ্যে খাদ্যশস্য আমদানি কমেছে গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৯৩ শতাংশ। আর চিনি আমদানি কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। ভারতের বাণিজ্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে (ভারতে অর্থবছর হিসাব হয় এপ্রিল-মার্চ সময়সীমায়) দেশটি থেকে মোট ১২৮ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের খাদ্যশস্য আমদানি করেছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে চাল, গম ও ভুট্টা আমদানি হয়েছে যথাক্রমে ৪১ কোটি ৮৭ লাখ ডলার, ৫৫ কোটি ১৭ লাখ ও ৩১ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (এপ্রিল-জানুয়ারি) ভারত থেকে খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে মাত্র ৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের। এর মধ্যে ৭ কোটি ১৫ লাখ ডলারের ভুট্টা ও ১ কোটি ২১ লাখ ডলারের চাল আমদানি করা হয়েছে। এ সময়ে কোনো গম আমদানি করেনি বাংলাদেশ। দেশটি থেকে অর্থবছরের বাকি দুই মাস অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি ও মার্চে চাল আমদানি এক প্রকার বন্ধ ছিল। ভুট্টা আমদানিও তেমন একটা হয়নি। সে হিসাবে দেশটি থেকে বাংলাদেশে খাদ্যশস্য আমদানি কমেছে প্রায় ৯৩ শতাংশ।
এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারত থেকে গত অর্থবছরের চেয়েও বেশি খাদ্যশস্য আমদানি করেছিল বাংলাদেশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ২২৪ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের খাদ্যশস্য। এর মধ্যে ১১৯ কোটি ১৬ লাখ ডলারের গম, ৪৩ কোটি ২৪ লাখ ডলারের ভুট্টা ও ৬২ কোটি ডলারের চাল আমদানি হয়।
একইভাবে চিনি আমদানিও প্রায় ৭০ শতাংশ কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে (এপ্রিল-মার্চ) ভারত থেকে ৪৭ কোটি ৭২ লাখ ডলারের চিনি আমদানি করে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে চিনি ও চিনি জাতীয় পণ্য আমদানি হয় ১৩ কোটি ৯৭ লাখ ডলারের। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে চিনি ও চিনিজাতীয় পণ্য ভারত থেকে আমদানি হয়েছিল ৫৭ কোটি ২৩ লাখ ডলারের।
এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭ কোটি ৪৪ লাখ ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৪ কোটি ৬৪ লাখ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭ কোটি ৫২ লাখ ডলারের চিনি আমদানি করে বাংলাদেশ।
একসময় চাল ও চিনি আমদানিতে ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা ছিল সবচেয়ে বেশি। একপর্যায়ে শুধু চাল আমদানিতেই ভারতের ওপর নির্ভরতা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৭৩ শতাংশে। বাজার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নৈকট্যের কারণে দেশটি থেকে পণ্য আমদানিতে পরিবহন খরচ কম, সময়ক্ষেপণও কম হয়। এ কারণে চাল ও চিনি আমদানিতে ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছিল আমদানিকারকদের। বিশেষ করে করোনার প্রাদুর্ভাব ও এর পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন উৎস থেকে আমদানি কমে যাওয়ায় এ নির্ভরশীলতা আরো বাড়ে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সরকারিভাবে চাল আমদানি অনেকটাই কমে গেছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে গত বছরের ২০ জুলাই থেকে সব ধরনের নন-বাসমতী চাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত সরকার। এরপর কয়েক দফায় চাল রফতানিতে আরো বেশকিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে দেশটি। বিশ্বব্যাংকের ‘ফুড সিকিউরিটি আপডেটের’ সর্বশেষ সংস্করণের তথ্যানুযায়ী, দেশটি এখন চিনি ও গম রফতানি পুরোপুরি বন্ধ রেখেছে। আবার চালের রফতানিতেও আরোপিত বিভিন্ন বিধিনিষেধও এখনো বহাল রয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশও চাল আমদানি বন্ধ রাখে। তবে বেশ কিছুদিন বন্ধ রাখার পর সর্বশেষ গত ২১ মার্চ বৃহস্পতিবার সরকারের পক্ষ থেকে ৩০ প্রতিষ্ঠানকে ৮৩ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়।
আবার গম আমদানিতে একসময় রাশিয়া ও ইউক্রেনের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা ছিল বেশি। এ দুই দেশের মধ্যে চলমান যুদ্ধ শুরুর আগেই গমের প্রধান আমদানি উৎস হয়ে উঠেছিল ভারত। যুদ্ধ শুরুর সময়েই গম আমদানিতে বাংলাদেশের ভারতনির্ভরতা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৭০ শতাংশে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজার ঠিক রাখতে ২০২২ সালের মার্চে গম রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত। তবে এর মধ্যেও বাংলাদেশে কিছু মাত্রায় গম রফতানি বজায় রাখে দেশটি। পরবর্তী সময়ে দেশটিতে গমের দাম বেড়ে যাওয়ায় রফতানিতে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ায় দেশটি। এসব বিষয়ের পাশাপাশি ডলারের সংকটও খাদ্যশস্য ও চিনি আমদানি কমে যাওয়ায় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন বাজার পর্যবেক্ষকরা।
সাবেক খাদ্য সচিব আব্দুল লতিফ মণ্ডল গণমাধ্যমে বলেন, ‘ভারত থেকে করোনার সময় খাদ্যশস্য আমদানি বেড়ে যায়। সবচেয়ে কাছের উৎস হওয়ায় ভারত থেকে বেশি আমদানি হয়েছে। কিন্তু এ বছর চাল আমদানি করেনি সরকার। যদিও সম্প্রতি ৮৩ হাজার টন আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। সাধারণত ভারত থেকে চাল আমদানি বেশি হয়। যেহেতু এবার একেবারে চাল আমদানি হয়নি সে কারণে মোট আমদানির পরিমাণ কমে যাওয়াটা স্বাভাবিক। আবার গমও অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি হয়েছে। এখন সার্বিকভাবে আমদানি কমার আরেকটি কারণ হলো ডলার সংকট। এসব কারণেই এবার সরকার চাল আমদানি করেনি। তবে এর প্রভাব পড়েছে ভোক্তাদের ওপর। তাদের বেশি দামে পণ্য কিনতে হয়েছে।’
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে মোট ৩৯ লাখ ২০ হাজার টন খাদ্যশস্য আমদানি হয়। এর মধ্যে পুরোটাই গম। চলতি অর্থবছরে কোনো ধরনের চাল আমদানি হয়নি। যদিও সম্প্রতি ৩০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৩ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০ লাখ ৫৫ হাজার টন চাল ও ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার টন গম আমদানি করে বাংলাদেশ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ গণমাধ্যমে বলেন, ‘চালের বেশিরভাগ ভারত থেকে আসে। আর থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকেও একটি অংশ আমদানি হয়। কিন্তু চলতি অর্থবছরে দেশে কোনো চাল আমদানি হয়নি। গমের ক্ষেত্রে উচ্চমূল্যের কারণে আগের তুলনায় সার্বিকভাবে অনেক কম আমদানি হয়েছে এবার। আবার ভারতে গম রফতানিতে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা রয়েছে। সে কারণে পণ্যটি আমদানির বিকল্প উৎস তৈরি হয়েছে। অনেকে কানাডা কিংবা অস্ট্রেলিয়া থেকেও গম আমদানি করেছেন। এ কারণেও ভারত থেকে গম আমদানি কমে গেছে। কোনো এক নির্দিষ্ট বছরে আমদানি কম হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। তবে বিধিনিষেধ তুলে দিলে আবার দেখা যাবে আমদানি বেড়ে গেছে। চিনির ক্ষেত্রেও ভারত রফতানি বন্ধ রেখেছিল। চিনি আমাদের প্রচুর প্রয়োজন হয়। এখন ব্রাজিল থেকে সরাসরি বাল্কে চিনি আসছে।’




অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।