অধ্যাপক গোলাম আযম তাঁকে আজ সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে
২৩ অক্টোবর ২০২৫ ২০:২৭
স্টাফ রিপোর্টার : ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের বিপ্লব এবং ডাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিজয়ের পর যাকে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে, তিনি এদেশের গণমানুষের নেতা বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণা অধ্যাপক গোলাম আযম। তিনি কেয়ারটেকার সরকার ফর্মুলার প্রণেতা বিশ্বনন্দিত ইসলামী চিন্তাবিদ, ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও ডাকসুর সাবেক জিএস। ২৩ অক্টোবর তার একাদশ মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯৮৩ সালে সর্বপ্রথম ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফর্মুলা’ উপস্থাপন করেন। ১৯৯৬ সালে তার পূর্বেকার প্রস্তাব মতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার সংবিধানে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফর্মুলা’ সংযোজন করে। ১৯৯৯ সালে গঠিত চারদলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষনেতা ছিলেন তিনি।
২০১৪ সালের এই দিন রাত ১০টা ১০ মিনিটে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাবেক বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেলে ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। এ হাসপাতালের কার্ডিয়াক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অধ্যাপক গোলাম আযমের রক্তচাপ সকালে আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়। দুর্বলতার কারণে কথা বলতে পারছিলেন না তিনি। রক্তচাপ ওইদিন অনেক কমে যাওয়ায় দুর্বল হয়ে পড়েন। পক্ষাঘাতগ্রস্ত (প্যারালাইজড) হওয়ায় তার দেহের নিচের অংশ নড়াচাড়া করতে পারছিলেন না। সন্ধ্যার পর অবস্থার আরো অবনতি হয়। পরে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। রাত ১০টা ১০ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন। রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। তাঁর ৬ ছেলে ও স্ত্রীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রয়েছে।
লাখো মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বাবার পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন অধ্যাপক গোলাম আযম। ২০১৪ সালের ২৫ অক্টোবর দুপুরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঐতিহাসিক নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় স্বতঃস্ফূর্ত জনতার উপস্থিতি ছিল অভূতপূর্ব। লাখ লাখ তরুণ আর বয়স্কের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কিংবদন্তি নেতা অধ্যাপক গোলাম আযমের নামাজে জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকে জনতার ঢল নেমেছিল মসজিদমুখী। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, নামাজে জানাজার জন্য সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লাখ লাখ জনতা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম অভিমুখে স্রোতের মতো আসতে শুরু করে। বেলা ১১টায় বায়তুল মোকাররম উত্তর এবং দক্ষিণ গেট ও তার চারপাশ, পল্টন ময়দান, গুলিস্তান, জিপিও, দৈনিক বাংলার মোড় হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত জনসমুদ্রে পরিণত হয়। জানাজার পূর্ব মুহূর্তে জনগণ উচ্চৈঃস্বরে কালেমা পাঠ করতে করতে চারদিক মুখরিত করে তোলেন। জানাজাকে ঘিরে বায়তুল মোকাররম ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়। সরকার সমর্থক কয়েকটি সংগঠন জানাজা ঠেকানোর ঘোষণা দিলেও তাদের তৎপরতা চোখে পড়েনি। শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই জানাজা সম্পন্ন হয়। বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযমের নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজায় ইমামতি করেন তার চতুর্থ পুত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আল আযমী। জানাজা শেষে মগবাজারের কাজী অফিস লেনস্থ নিজ বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে এ কিংবদন্তি নেতাকে দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য, অধ্যাপক গোলাম আযমের পুত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আল আযমী ফ্যাসিস্ট হাসিনার আক্রোশে গুমের শিকার হয়ে ৮ বছর আয়নাঘরে বন্দী ছিলেন। ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট রাতে এ সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে তুলে নেওয়া হয়। ওইদিন দিবাগত রাত ১২টার দিকে রাজধানীর বড় মগবাজারের বাসা থেকে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তাকে আটক করা হয়। পরে তাকে সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অব্যাহতি দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। চব্বিশের অভ্যুত্থানের পর মুক্তি পান তিনি।
অধ্যাপক গোলাম আযমের সংক্ষিপ্ত জীবনী : অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯২২ সালের ৭ নভেম্বর মঙ্গলবার (৫ অগ্রহায়ণ ১৩২৯ বঙ্গাব্দ) ঢাকা শহরের লক্ষ্মীবাজারস্থ বিখ্যাত দীনি পরিবার শাহ সাহেববাড়ী (মিঞা সাহেবের ময়দান নামে পরিচিত) মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতামহ মাওলানা আব্দুস সোবহান। তাদের আদিনিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও গ্রামে। ইউনিয়নের নামও বীরগাঁও। অধ্যাপক গোলাম আযমের পিতা ১৯৪৮ সালে ঢাকা মহানগরীতে রমনা থানার পূর্ব দিকে মগবাজার এলাকায় জমি কেনার পর ঢাকাতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯৩৭ সালে জুনিয়র মাদরাসা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। এসএসসি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় গোলাম আযম ত্রয়োদশ স্থান লাভ করেন। ১৯৪৪ সালে ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকেই আইএ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে ঢাকা বোর্ডে দশম স্থান অধিকার করেন। ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের কাজে জড়িয়ে পড়ায় গোলাম আযম পরীক্ষা দিতে পারেননি এবং ১৯৪৯ সালে দাঙ্গাজনিত উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠান সম্ভব হয়নি। ফলে তিনি ১৯৫০ সালে এমএ পরীক্ষা দেন। ঐ বছর কেউ প্রথম বিভাগ পাননি। চারজন ছাত্র উচ্চতর দ্বিতীয় বিভাগ লাভ করেন এবং অধ্যাপক গোলাম আযম তাদের মধ্যে একজন।
১৯৫০ সালের ৩ ডিসেম্বর রংপুর কারমাইকেল কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। তিনি ১৯৫০ সালের ৩ ডিসেম্বর থেকে ১৯৫৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অত্যন্ত জনপ্রিয় শিক্ষক হিসেবে রংপুর কারমাইকেল কলেজে কর্মরত ছিলেন। নিজ বিভাগের ছাত্ররা ছাড়াও তার লেকচারের সময় অন্যান্য ক্লাসের ছাত্ররা তার ক্লাসে যোগদান করতেন।
তাবলিগ জামাত ও তমদ্দুন মজলিসে গোলাম আযম : ছাত্রজীবন শেষে অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯৫০ সালেই তাবলিগ জামাতের তৎপরতার সাথে জড়িত হন। ১৯৫২ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি তাবলিগ জামাতের রংপুরের আমীর ছিলেন। তাবলিগ জামাত যেহেতু ধর্মীয় প্রচার ও মিশনারি দায়িত্ব পালন করছিলো, তাই তিনি শুধু তাবলিগ জামাতের কাজ করেই তৃপ্তি পাননি। সুনির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক কর্মসূচি তাবলিগ জামাতের ছিল না। তমদ্দুন মজলিসের কার্যক্রমে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা ও তার সমাধান সম্পর্কে বক্তব্য থাকায় জনাব গোলাম আযম তমদ্দুন মজলিসের কাজেও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হয়ে পড়েন ১৯৫২ সালেই। ১৯৫৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তিনি তমদ্দুন মজলিসের রংপুর জেলার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জামায়াতে ইসলামীতে দায়িত্ব পালন : ১৯৫৪ সালের এপ্রিলে জামায়াতে ইসলামীতে সহযোগী (মুত্তাফিক) হিসেবে যোগদান করার পর ১৯৫৫ সালে গ্রেফতার হয়ে রংপুর কারাগারে অবস্থানকালেই জামায়াতের রুকন হন। ১৯৫৫ সালের জুন মাসে তিনি রাজশাহী বিভাগীয় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। এর এক বছর পর তাকে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি এবং রাজশাহী বিভাগীয় জামায়াতের আমীরের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ১৯৬২ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯-৭১ সেশনে তিনি জামায়াতে ইসলামী পূর্ব-পাকিস্তানের আমীর নির্বাচিত হন। ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসে মজলিসে শূরার কাছে বিশেষ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমীরে জামায়াতের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি লাভ করেন।
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন : স্বৈরাচারী ও একনায়কতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে জামায়াত সর্বদাই সোচ্চার ছিলো। জামায়াতের অন্যতম নেতা হিসেবে এবং বিশেষভাবে রাজনৈতিক দিক থেকে উত্তপ্ত সাবেক পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমীর হিসেবে অধ্যাপক গোলাম আযম বিরোধীদলীয় আন্দোলনে একজন প্রথম সারির নেতার ভূমিকা পালন করেছেন। আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিটি আন্দোলনে অধ্যাপক গোলাম আযম অংশ নেন। ১৯৬৪ সালের ২০ জুলাই ঢাকায় খাজা নাজিমুদ্দিনের বাসভবনে মুসলিম লীগ (কাউন্সিল), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, আওয়ামী লীগ, নেজামে ইসলাম ও নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিবৃন্দ ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য চার দিনব্যাপী বৈঠকে ৯ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে সম্মিলিত বিরোধী দল ঈড়সনরহবফ ঙঢ়ঢ়ড়ংরঃরড়হ চধৎঃরবং (ঈঙচ) গঠন করা হয়। সম্মিলিত বিরোধীদলের তৎপরতা পরিচালনায় অধ্যাপক গোলাম আযম বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৭ সালের ৩০ এপ্রিল শাসরুদ্ধকর স্বৈরশাসনের হাত থেকে দেশকে বাঁচানোর জন্য আতাউর রহমান খানের বাসভবনে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সর্বজনাব নূরুল আমীন, হামিদুল হক চৌধুরী ও আতাউর রহমান খান, কাউন্সিল মুসলিম লীগের মিয়া মমতাজ দৌলতানা, তোফাজ্জল আলী ও সৈয়দ খাজা খায়েরুদ্দিন, জামায়াতে ইসলামীর মিয়া তোফায়েল মুহাম্মদ, মাওলানা আব্দুর রহীম ও অধ্যাপক গোলাম আযম, আওয়ামী লীগের নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান, আব্দুস সালাম খান ও গোলাম মোহাম্মদ খান লুন্দখোর এবং নেজামে ইসলাম পার্টির চৌধুরী মোহাম্মদ আলী, মৌলভী ফরিদ আহমদ ও এমআর খানকে নিয়ে ‘পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট’ গঠিত হয়। পিডিএম আট দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের আব্দুস সালাম খানকে সভাপতি এবং অধ্যাপক গোলাম আযমকে জেনারেল সেক্রেটারি করে পূর্বাঞ্চলীয় পিডিএম কমিটি গঠিত হয়। পিডিএমের পূর্বাঞ্চলীয় জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে অধ্যাপক গোলাম আযম দিনরাত পরিশ্রম করেন এবং গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
১৯৬৯ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলন জানুয়ারি মাসে নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করায় দেশব্যাপী এক প্রচণ্ড গণজাগরণের সূচনা হয়। দেশব্যাপী সুষ্ঠুভাবে গণআন্দোলন পরিচালনার তাগিদে ৭ ও ৮ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী বৈঠকে (১) ন্যাপ, (২) আওয়ামী লীগ (৬ দফা), (৩) নেজামে ইসলাম পার্টি, (৪) জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, (৫) কাউন্সিল মুসলিম লীগ, (৬) জামায়াতে ইসলামী, (৭) এনডিএফ, (৮) আওয়ামী লীগ (৮ দফা পন্থী) এই আটটি দলের নেতৃবৃন্দের স্বাক্ষরে ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি (ডাক) গঠন করা হয়। নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খানকে ডাক-এর আহ্বায়ক নির্বাচিত করা হয়।
গণআন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান করার জন্য ডাক-এর ৮টি অঙ্গ দলের দুজন করে প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানান। যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়, তারা হলেন- কাউন্সিল মুসলিম লীগের মমতাজ দৌলতানা ও খাজা খায়েরুদ্দিন; জামায়াতে ইসলামীর সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী ও অধ্যাপক গোলাম আযম; পাকিস্তান আওয়ামী লীগের (৬ দফা) শেখ মুজিবুর রহমান ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম; জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মাহমুদ ও পীর মোহসেন উদ্দিন; পাকিস্তান আওয়ামী লীগের (৮ দফা) নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান ও আব্দুস সালাম খান; নেজামে ইসলামের চৌধুরী মোহাম্মদ আলী ও মৌলভী ফরিদ আহমদ; ন্যাপের আব্দুল ওয়ালী খান ও অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ। এছাড়া পাকিস্তানের পিপল্স পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো ও ন্যাপ (ভাসানীর) মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, এয়ার মার্শাল আসগর খান, লে. জেনারেল মুহম্মদ আযম খান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ বৈঠকে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন।
২৬ ফেব্রুয়ারি রাওয়ালপিন্ডিতে সকাল সাড়ে ১০টায় প্রেসিডেন্ট গেস্ট হাউসে ডাক-এর ১৬ জন প্রতিনিধি, প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের নেতৃত্বে ১৫ জন, নির্দলীয় এয়ার মার্শাল আসগর খান, বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণকল্পে গোলটেবিল বৈঠকে মিলিত হন। ৪০ মিনিটব্যাপী বৈঠকের পর ঈদুল আজহা উপলক্ষে বৈঠক ১০ মার্চ সকাল ১০টা পর্যন্ত মুলতবি রাখা হয়। ১০ থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট গেস্ট হাউসে গোলটেবিল বৈঠক বসে এবং ১৩ মার্চ গোলটেবিল বৈঠকের সমাপ্তি অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান নিম্নোক্ত দাবি দুটি গ্রহণ করেন- প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচন এবং ফেডারেল পার্লামেন্টারি সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন।
বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯৮৩ সালে সর্বপ্রথম ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফর্মুলা’ উপস্থাপন করেন। ১৯৯৬ সালে তার পূর্বেকার প্রস্তাব মতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার সংবিধানে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফর্মুলা’ সংযোজন করেন। তাঁর প্রণীত এ ফর্মুলা শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ পৃথিবীর অনেক দেশ গ্রহণ করেছে।
লেখক ও চিন্তাবিদ গোলাম আযম : অধ্যাপক গোলাম আযম তাফসীর, নবী জীবন, ইসলাম, সংগঠন, আন্দোলন, রাজনীতি ইত্যাদি নানা বিষয়ে ১০৭টি বই লিখেছেন। তার লিখিত কিছু বই ইংরেজি ছাড়াও উর্দু, তামিল ও অহমিয়া ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এছাড়া অধ্যাপক গোলাম আযমের জীবনী নিয়ে ইংরেজি ভাষায় একটিসহ ৮টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
৫ বার কারাবাসে অধ্যাপক গোলাম আযম : নির্ভীক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মজলুম জননেতা অধ্যাপক গোলাম আযম। আন্দোলন-সংগ্রামের পথচলায় তিনি ৫ বার কারাভোগ করেন। ভাষা আন্দোলনের সময় দুবার, ১৯৬৪ সালে একবার, ১৯৯২ সালে একবার আর সর্বশেষ ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আদেশে কারাবাসে ছিলেন এ নেতা। প্রিজন সেলে থাকা অবস্থায়ই তিনি ইন্তেকাল করেন।