‘ফাঁসির সেল থেকে দেখা বাংলাদেশ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

শহীদ কামারুজ্জামান এদেশের ইসলামপ্রিয় ও দেশপ্রেমিক মানুষের কাছে যুগ যুগ ধরে প্রেরণা হয়ে থাকবেন

স্টাফ রিপোর্টার
২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৪২

গত ২৯ ডিসেম্বর রোববার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে শহীদ কামারুজ্জামান রচিত ‘ফাঁসির সেল থেকে দেখা বাংলাদেশ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়

স্টাফ রিপোর্টার: শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ইসলাম ও দেশের জন্য যে খেদমত করে গেছেন, তা এদেশের মানুষ আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। শহীদ কামারুজ্জামান এদেশের ইসলামপ্রিয় ও দেশপ্রেমিক মানুষের কাছে যুগ যুগ ধরে প্রেরণা হয়ে থাকবেন। কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করা গেলেও তার আদর্শকে হত্যা করা যায় না। শহীদরা আমাদেরও প্রেরণা, শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা ফ্যাসিস্টমুক্ত হতে পেরেছি। গত ১৬ বছরে সংঘটিত সব গুম-খুনের বিচার করতে হবে। তাহলেই আমরা শহীদদের ঋণ কিছুটা হলেও পরিশোধ করতে পারব। কোনোভাবেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের এদেশে পুনর্বাসন করার সুযোগ দেয়া যাবে না। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
গত ২৯ ডিসেম্বর রোববার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রচ্ছদ প্রকাশন আয়োজিত শহীদ কামারুজ্জামান রচিত ‘ফাঁসির সেল থেকে দেখা বাংলাদেশ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। প্রচ্ছদ প্রকাশনের চেয়ারম্যান মু. রাজিফুল হাসান বাপ্পির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন দৈনিক ইনকিলাবের সহযোগী সম্পাদক মোবায়েদুর রহমান, সাপ্তাহিক সোনার বাংলার চেয়ারম্যান এ কে এম রফিকুন্নবী, শহীদ কামারুজ্জামানের সহধর্মিণী নুরুন নাহার, সাপ্তাহিক সোনার বাংলার বার্তা সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ ভূঁইয়া, শহীদ কামারুজ্জামানের সন্তান হাসান ইমাম ওয়াফি, যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মীর্যা গালিব, ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফেজ রাশেদুল ইসলাম, ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক কায়েম প্রমুখ।
মোবায়েদুর রহমান বলেন, জাতীয় ঐক্যে প্রয়োজন ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশ। ফ্যাসিবাদ উচ্ছেদের পর রাষ্ট্রকাঠামোয় পরিবর্তন আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। ক্ষমতা কুক্ষিগত হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য পরিবর্তন আনতে হবে সংবিধানেÑ যাতে ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তি এ দেশে না ঘটে। এজন্য যে ধরনের সংস্কার প্রয়োজন, সেগুলোয় রাষ্ট্রের সব অংশীজনের ঐকমত্য হতে হবে।
এ কে এম রফিকুন্নবী বলেন, শহীদ কামারুজ্জামান ছাত্রনেতা থেকে জাতীয় নেতা হয়েছিলেন। সোনার বাংলার সম্পাদক হিসেবে তিনি ইসলামের ও দেশ-জাতির খেদমতে অনেক কাজ করেছেন। তিনি সময়কে ধারণ করে কাজ করতেন। ৫ আগস্টের বিপ্লবের সাথে জামায়াতের শীর্ষনেতাদের শহীদ হওয়ার ঘটনাও যুক্ত হয়েছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ এদেশে যে জুলুমের শাসন কায়েম করেছিল, তার বড় ভিক্টিম হলো জামায়াত। শহীদ কামারুজ্জামান রাষ্ট্রীয় জুলুমের শিকার হয়েছেন। আওয়ামী সরকার কামারুজ্জামানের মেধা ও আদর্শকে ভয় পেয়ে পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ও হত্যা করে।
নুরুন নাহার বলেন, আমার সর্বশেষ বই এটি। উনি বইটি রাজনৈতিক ও সামাজিক অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন। তিনি বইয়ের এ লেখাগুলো পত্র আকারে লিখে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। দীর্ঘদিন আমি এ লেখাগুলোকে অনেক কষ্ট করে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে সযত্নে আগলে রেখেছি। প্রচ্ছদ প্রকাশনীকে ধন্যবাদ বইটি প্রকাশের জন্য।
ড. মীর্যা গালিব বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কামারুজ্জামান ভাইয়ের সাথে পরিচয় ও সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। কামারুজ্জামান ভাই অনেক বেশি বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন আমাদের সাথে। কামারুজ্জামান ভাইয়ের রাজনৈতিক দর্শনের বিষয়ে পরিষ্কার জ্ঞান ছিল। তিনি দলের বাইরে গিয়ে দেশ ও উম্মাহ স্বার্থ প্রধান্য দিতেন। ওনার রাজনৈতিক দর্শনকে কাজে লাগাতে পারলে দেশের ও উম্মাহ উন্নয়নে অনেক কাজ করা সম্ভব।
হাসান ইমান ওয়াফি বলেন, আমার বাবা এদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এবং ইসলামের খেদমতের জন্য আজীবন কাজ করে গেছেন। মহান আল্লাহ বাবার দীনের খেদমত কবুল করুন।
হাফেজ রাশেদুল ইসলাম বলেন, যেকোনো বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জনের জন্য নোট রাখতেন কামারুজ্জামান ভাই। শহীদ কামারুজ্জামান জাতির জন্য হীরকখণ্ড ছিলেন। এই গ্রন্থ সেই হীরকখণ্ডের অংশবিশেষ। তিনি জেল থেকে পত্রের মাধ্যমে বইয়ের অংশগুলো পরিবারের কাজে পাঠিয়েছেন। কামারুজ্জামানের রাজনৈতিক চিন্তাধারা আলোকে দেশ ও জাতির কল্যাণে আমাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।
ডিউইজে সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ব্যক্তিকে হত্যা করা গেলেও তার আদর্শকে হত্যা করা যায় না। শহীদ কামারুজ্জামান এদেশের ইসলামপ্রিয় ও দেশপ্রেমিক মানুষের কাছে যুগ যুগ ধরে প্রেরণা হয়ে থাকবে। শহীদ কামারুজ্জামান ইসলামের জন্য ও দেশের জন্য যে খেদমত করে গেছেন, তা এদেশের মানুষ আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
ডা. ফখরুদ্দীন মানিক বলেন, শহীদ কামারুজ্জামান ভাই জেলখানা থেকে বাংলাদেশের নতুন ইতিহাস লিখে পাঠিয়েছেন। যে ইতিহাস পাঠ করলে এদেশের মানুষ ইসলামপ্রিয় ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। যখন শহীদ কামারুজ্জামান ভাইকে ফাঁসি দেয়া হয়, তখন পুরো দেশকে আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা কারাগার বানিয়ে ফেলেছিল।
স্বাগত বক্তব্যে প্রচ্ছদ প্রকাশনীর পরিচালক ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এটি একটি ইতিহাসের বই এবং আত্মজীবনীমূলক বইও বলা যায়।
মু. রাজিফুল হাসান বাপ্পি বলেন, উপস্থিত সবাইকে অনেক ধন্যবাদ জানাই, আপনারা শহীদ কামারুজ্জামান ভাইকে ভালোবেসে এ অনুষ্ঠানে এসেছেন। দেশের নতুন ইতিহাস জানতে শহীদ কামারুজ্জামান রচিত ফাঁসির সেল থেকে দেখা বাংলাদেশ বইটি কেনার এবং পড়ার আহ্বান জানাচ্ছি।