আমরা বৈষম্যহীন একটা দেশ গড়তে চাই : ডা. শফিকুর রহমান
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:০০
সোনার বাংলা ডেস্ক: দখলবাজ এবং চাঁদাবাজমুক্ত দেশ গড়তে নেতাকর্মীদের ত্যাগ স্বীকার করার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সকল ক্ষেত্রে বৈষম্যহীন একটা দেশ গড়তে চাই; যে দেশে দখলবাজি-চাঁদাবাজি চলবে না। দুর্বলরা সবল দ্বারা অত্যাচারিত হবে না। শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা পাবে। সমতা-সাম্য কায়েম হবে দেশে। জুলাই আন্দোলনের শহীদরা যে দেশ চেয়েছিলেন, তার বাস্তব নমুনা দেখাতে চাই।
গত ২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার গাইবান্ধা ইসলামিয়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ঐতিহাসিক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, সাবেক জেলা আমীর ডা. আবদুর রহীম সরকার ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান পলাশ। মঞ্চের পাশেই ছিলেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও গাইবান্ধা জেলা আমীর মো. আব্দুল করিম সরকার।
জেলা সেক্রেটারি মাওলানা জহুরুল হক সরকারের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কের পক্ষে মুহিদ আহমেদ ফাহিম, গাইবান্ধা জেলা জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমীর বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল ওয়ারেছ, জেলা নায়েবে আমীর অধ্যাপক মাজেদুর রহমান, মাওলানা নজরুল ইসলাম লেবু, জামায়াত নেতা নুরুন্নবী প্রধান, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি সৈয়দ রুকুনুজ্জামান, ফয়সাল কবির রানা, শহর শাখার আমীর অধ্যাপক একেএম ফেরদৌস আলম, সদর উপজেলা আমীর মাওলানা নূরুল ইসলাম মণ্ডল,্ পলাশবাড়ী উপজেলা আমীর আবু বকর সিদ্দিক, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আমীর আবুল হোসেন মাস্টার, সাদুল্লাপুর উপজেলা আমীর এরশাদুল হক ইমন, ফুলছড়ি উপজেলা আমীর মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, সাঘাটা উপজেলা আমীর মাওলানা ইব্রাহীম হোসাইন, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আমীর অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম মঞ্জু প্রমুখ। বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে হামদ, নাত ও ইসলামী সংগীত পরিবেশন করা হয়। এছাড়া সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামের আমীর মুফতি আবদুল বাছেত, সেক্রেটারি মাওলানা মাহমুদুল হাসান কাসেমী প্রমুখ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জানতাম না, যে ছেলেগুলো মোবাইল নিয়ে সারাক্ষণ পড়ে থাকে, টিকটক নিয়ে পড়ে থাকে, তাদের দিয়েই বিপ্লব সাধিত হবে। পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার অত্যাচারের বর্ণনা দিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, গত ১৫টা বছর সারা দেশে ছিল ছোপ ছোপ রক্ত। গাইবান্ধা ছিল লাশ আর ছোপ ছোপ রক্তের জনপদ। কত মা, কত বোন, কত সন্তানের বুক খালি হয়েছে। ধরে নিয়ে গুম করা হয়েছে। তার সঠিক সংখ্যা আল্লাহপাক কেবল জানেন।
মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, এদেশে স্বৈরাচারের কবর হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিচার আগে হবে। পরে দেখা যাবে জনগণ তাদের চায় কি-না। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের পক্ষে কথা বলেন। এটা খুব দুঃখজনক। অত্যাচারের শিকার হয়েও জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা দীন বিজয়ের জন্য কাজ করছেন এবং আন্দোলন করেছেন উল্লেখ করে মাওলানা হালিম আরও বলেন, আমাদের প্রত্যেক কর্মীকে দেশ রক্ষার দায়িত্ব পালনে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। আমরা একটি দুর্নীতিমুক্ত দখলদারমুক্ত দেশ গড়ে তুলতে চাই। এজন্য জামায়াতে ইসলামীর প্রতিটি কর্মীকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে।
মাওলানা মমতাজ উদ্দিন বলেন, জাতি তাকিয়ে আছে জামায়াতে ইসলামীর দিকে। অতীতের শাসকদের প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়েছে। তাই জামায়াতের কর্মীদের রাষ্ট্র পরিচালনার গুণ অর্জন করতে হবে। ইসলামী জ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে হবে।
অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল বলেন, এদেশে খুনিদের আর ছাড় দেওয়া হবে না। খুনি হাসিনাকে ভারত থেকে এনে বিচার করা হবে। নইলে আবারও খুনি সৃষ্টি হবে। সৎ শাসন কায়েম করতে হবে। এজন্য আগামী নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীকে জয়ী করতে হবে।
ডা. আবদুর রহীম সরকার বলেন, ইসলামের প্রতি জনসমর্থনের দিক থেকে গাইবান্ধা উর্বর। ৯ জন শহীদে রক্তাক্ত জেলা গাইবান্ধা। আল্লাহর দীনকে বিজয়ী করতে চাই এখানে। ৫৬ হাজার বর্গমাইল সীমানাজুড়ে ইসলাম বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একবিংশ শতাব্দীতে ইসলামের বিজয় হবে। সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।
রাজিবুর রহমান পলাশ বলেন, আজ ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দেওয়া হবে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন করতে চাইলে বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করা হবে। সেইসাথে গাইবান্ধাকে জামায়াতে ইসলামীর ঘাঁটি বানানোর আহ্বান জানান তিনি।
আব্দুল করিম সরকার বলেন, নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে। জামায়াতে ইসলামী এ ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ। নতুন দেশ গঠনে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। এ সময় তিনি জুলাই বিপ্লবে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
পলাশবাড়ী মন্দিরের পুরোহিত শ্রী মিলন কুমার ভট্টাচার্য্য ঠাকুর এসেছিলেন কর্মী সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য দিতে। তিনি জানালেন, তার বড়ভাই ছিল জামায়াতের সমর্থক। এখন তিনি নিজেও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন করেন। ইসকন সদস্যরা হিন্দুদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে জানিয়ে এ পুরোহিত বলেন, পূজা-পার্বণে এরা বিভেদ সৃষ্টিকারী। আওয়ামী লীগের লোকজন নেই; এখন তাদের কোনো নিরাপত্তা সংকট নেই। এবারের পূজাতে তাদের পুলিশ প্রয়োজন হয়নি বলেও জানান মিলন ভট্টাচার্য্য।
জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানকে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, দলমত-নির্বিশেষে জামায়াতকে সমর্থন দেওয়ার আহ্বানও জানান এ হিন্দু পুরোহিত। তিনি পলাশবাড়ী উপজেলার ৪নং বরিশাল ইউনিয়ন দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি।
রংপুরের পাগলাপীরে পথসভায় জামায়াতে ইসলামীর আমীর
ক্ষমতায় গেলে নারীদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে জামায়াত মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘সেনাবাহিনী এবং জামায়াত এদেশের একমাত্র দেশপ্রেমিক শক্তি। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে ভারতের কাছে ইজারা দিয়েছিল এবং মইন উর সাথে ক্ষমতার জন্য ষড়যন্ত্র করে প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদস্যদের।’ গত সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে রংপুরের পাগলাপীরে এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে উত্তরবঙ্গ সফর উপলক্ষে রাত সাড়ে ৮টার দিকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে আসেন জামায়াতের আমীর। পথে রংপুরের পাগলাপীরে পথসভায় বক্তব্য দেন তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মঈন উ আহমেদের সাথে ষড়যন্ত্র করে, পেছনের দরজা দিয়ে কানাকানি করে, ভোটের ইঞ্জিনিয়ারিং করে মেকানিজম করে ২০০৯ সালের ৭ জানুয়ারি তারা যখন ক্ষমতায় আসে তার দুই মাস পূরণ হয়নি। পরের মাসেই আমরা লক্ষ করলাম, বিডিআর সদর দফতর পিলখানায় তারা ৫৭ সেনা অফিসারকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। পরিবারের সদস্যদের হত্যা করল। হত্যা করে লাশ ড্রেনে ভাসিয়ে দিয়েছে। সাথে সাথে পিলখানার চারদিকে রাতের বেলা কারেন্ট বন্ধ করে দিয়ে খুনিদের পালানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। বিডিআরের লোকজনকে দফায় দফায় অ্যারেস্ট করেছে। সাড়ে ১৬ হাজার বিডিআর জওয়ানকে জেলে নিয়ে গেছে। সকলের চাকরি নষ্ট করে দিয়েছে। জেলের ভেতর সাড়ে ৩ শতাধিক অফিসার ও সৈনিক মারা গেছে।’
তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্র করল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার জন্য। আর জীবন গেল বিডিআরের। আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্রের দল। একটি বাহিনীকে শেষ করে দিয়েছে তারা। সেনাবাহিনীর কোমর ভেঙে দিয়েছে। এরপর জামায়াতে ইসলামের গায়ে হাত দিল।’
জামায়াত আমীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এ দেশকে ভারতের কাছে ইজারা দিয়ে রেখেছিল। আমরা এদেশে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান চারটি ধর্মের মানুষ পাশাপাশি বসবাস করি। হিংসা-বিদ্বেষ নেই বললেই চলে। আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ দৃষ্টান্ত পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে আমরা শিখেছি। কিন্তু আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিপক্ষে নয়, ধর্মের ভিত্তিতে সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু হিসেবে এদেশের মানুষকে আখ্যায়িত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘২০০৭ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যাদের তারা সংখ্যালঘু বলেÑ যাদের জন্য মায়াকান্না করে, তারাই তাদের জায়গা জমি অন্যায়ভাবে সব দখল করে রেখেছিল। তাদের সম্পদের ওপর হাত দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাদের ইজ্জতের ওপরেও হাত দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ সময়ে আওয়ামী লীগ মায়াকান্না করে এবং দোষ চাপায় এদেশের দেশপ্রেমিক মানুষ বিশেষ করে যারা নিষ্ঠাবান মুসলমান তাদের ওপরে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে বেকার যুবকদের হাতে কাজ দেয়া হবে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে বাংলাদেশে। ন্যায়বিচার এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা হবে।’