ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হতে হবে ন্যায্যতার
৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:০০
হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো দিল্লির মসনদ দখল করে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিনিয়ত বিনষ্ট করে চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। তারা বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক কোনো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নয়, এটা হতে হবে ন্যায্যতার সম্পর্ক। ভারতের মানুষকেও প্রমাণ করতে হবে, তারা সেখানকার উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় না।
গত ৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। ভারতের ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হামলার প্রতিবাদে এ সমাবেশ করা হয়।
আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত এবং ভিয়েনা কনভেনশনের (কূটনৈতিক সম্পর্কের চুক্তি) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে সমাবেশে উল্লেখ করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের প্রতি উদাত্ত আহ্বান থাকবে- হিন্দুত্ববাদের নগ্ন চেহারা দেখুন; প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর দিল্লির ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন দিন দিন প্রলম্বিত হচ্ছে। ভারতের জনগণ ও দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপ্রিয় মানুষকে আমরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে দিল্লির হিন্দুত্ববাদী মসনদ আমরা ভেঙে চুরমার করে দেব।’
যেকোনো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণ ও শিক্ষার্থীদের মাঠে থাকার আহ্বান জানান নাসীরুদ্দীন। তিনি বলেন, ‘হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো দিল্লির মসনদ দখল করে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিনিয়ত বিনষ্ট করে চলেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি উদাত্ত আহ্বান, প্রকাশ্য দিবালোকে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে নগ্ন হামলা হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। আপনারা সেখানে ব্যবস্থা নিতে না পারলে, আগ্রাসনবাদী শক্তিকে দমাতে না পারলে বিশ্বের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হবে।’
সমাবেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, হাসিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেছিলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নাকি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক! আবদুল মোমেন তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ভারতকে কর্তৃত্বের জায়গায় এবং বাংলাদেশকে অধীনস্থের জায়গায় বুঝিয়েছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের স্পষ্ট ঘোষণা, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক কোনো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নয়, এটা হতে হবে ন্যায্যতার সম্পর্ক। তিনি বলেন, হাসিনা ক্ষমতায় না থাকায় ভারতের গাত্রদাহ হচ্ছে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে ভারতের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব মিথ্যা অপপ্রচার করা হয়েছে, সেসবের বিরুদ্ধে ভারত সরকার কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়নি। দীর্ঘসময় ধরে নানা উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী মিছিল-সমাবেশ করে এলেও ভারত সরকার কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা করার ধৃষ্টতা দেখানো হয়েছে।
ভারতের জনগণের সঙ্গে কোনো শত্রুতা নেই, কিন্তু দিল্লির সিংহাসনের সঙ্গে লড়াই আছে বলে সমাবেশে মন্তব্য করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য অনিক রায়। তিনি বলেন, ভারতের সাম্প্রদায়িক সরকারের কাছ থেকে বাংলাদেশের মানুষের অসাম্প্রদায়িকতা শিখতে হবে না।
গত ১৫ বছর ভারত বাংলাদেশকে উপনিবেশ বানিয়ে রেখেছিল বলে মন্তব্য করেন নাগরিক কমিটির আরেক সদস্য প্রীতম দাশ। ভারত সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো বিষয়ে ভারতের নাক গলানোর প্রয়োজন নেই।’
সমাবেশে সঞ্চালক ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য মো. নিজাম উদ্দিন। এছাড়া বক্তব্য দেন কমিটির সদস্য মনিরা শারমিন, আলী আহসান জোনায়েদ, সাইফ মোস্তাফিজ, সালেহউদ্দিন সিফাত প্রমুখ। সমাবেশ শেষে শাহবাগ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।