সাতক্ষীরায় ঐতিহাসিক কর্মী সম্মেলনে ডা. শফিকুর রহমান

দেশের আকাশে কালো শকুন, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে


৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০:০০

গত ৩০ নভেম্বর শনিবার সাতক্ষীরা জেলার ঐতিহাসিক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান

জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে ইস্পাতকঠিন ঐক্য চাইলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, দেশের আকাশে কালো মেঘ জমেছে। দেশের আকাশে কালো শকুন দেখা যাচ্ছে। তাদের কোনোরকম সুযোগ দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।
গত ৩০ নভেম্বর শনিবার সাতক্ষীরা জেলার ঐতিহাসিক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা সদরের সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে মাঠে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা আমীর উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমান।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, কুরআনের কথা বলতে গিয়ে, আল্লাহর দীনের কথা বলতে গিয়ে, সত্য কথা বলতে গিয়ে সাতক্ষীরা জেলার মতো বাংলাদেশের আর কোনো জেলা এত জীবন এবং রক্ত উপহার দেয়নি। এজন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কাছে সাতক্ষীরার মর্যাদা অনন্য উচ্চতায়। আল্লাহ যেন এ জেলার মর্যাদা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি করে দেন।
তিনি বলেন, চমৎকার সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির দেশ আমাদের বাংলাদেশ। কিন্তু আমাদের বাগানে মাঝেমধ্যে হুতুমপেঁচা ঢুকে পড়ে। হুতুমপেঁচাদের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমরা সম্প্রীতি নষ্ট হতে দেব না। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই; সব মানুষকে কাজের মর্যাদা দেব। আমরা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে সবাই কাজ পাবে। যুবসমাজের হাতে কাজ তুলে দিতে চাই। বয়স্করা কি বেজার হয়েছেন? আমি মনে করি অবশ্যই না। ছেলের কৃতিত্ব বাবার কাছে অটোমেটিক হয়ে যাবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ বলেন, ইনসাফপূর্ণ সমাজের জন্য গণঅভ্যুত্থান সফল করতে হলে সৎ নেতৃত্ব কায়েমের বিকল্প নেই। সকল পর্যায়ের নেতৃত্বে সৎ মানুষের সমাহার ঘটাতে হবে। নইলে আমরা প্রতারিত হবো। ৪৭ সাল ও ৭১ সালের স্বাধীনতায় আমরা স্বাধীন হতে পারেনি। আসুন, আমরা কাক্সিক্ষত সমাজ পেতে সাতক্ষীরা জেলার ৪টি আসন সহ সবখানে যোগ্য মানুষের নেতৃত্ব কায়েম করি।12
কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের মৃত্যুর ভয় দেখাতে চেয়েছিল। কিন্তু মাওলানা নিজামী প্রমাণ করেছেন যে আমরা মৃত্যুকে ভয় করি না। তারা মূলত বাঘের লেজে পা দিয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলার সাবেক আমীর ও খুলনা অঞ্চল টিম সদস্য মুহাদ্দিস রবিউল বাশার বলেন, জালিম সরকার বিচারিক হত্যা করেছে। মিথ্যা মামলায় হয়রানি করেছে। বার বার নেতার পরিবর্তন হলেও নীতির পরিবর্তন হয়নি। স্বাধীনতা এখনো বাকি রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মাওলানা আজিজুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরায় আমাদের ৪৬ জন ভাইকে শহীদ করেছে। কিন্তু আমাদের নরম করতে পারেনি। ইসলামী আন্দোলনের জন্য সাতক্ষীরা দেশের মডেল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সাবেক এমপি ও জেলা কর্মপরিষদ সদস্য গাজী নজরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করেছিল এ দেশ থেকে তারা জামায়াত-শিবির উৎখাত করবে। কিন্তু তারা নিজেরাই উৎখাত হয়ে গেছে।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেদ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. খলিলুর রহমান মাদানী, জেলা নায়েবে আমীর নুরুল হুদা, ডা. মাহমুদুল হক, খুলনা অঞ্চল টিম সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম, অধ্যক্ষ মাওলানা মশিউর রহমান, খুলনা মহানগর আমীর অধ্যাপক মাফুজুর রহমান, বাগেরহাট জেলা আমীর মাওলানা রেজাউল করিম প্রমুখ। কর্মী সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরা জেলার আমীর উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুল।
যশোর বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের সংবর্ধনা: ঢাকা থেকে বিমানযোগে আসা আমীরে জামায়াতকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন যশোর জেলার আমীর অধ্যাপক গোলম রসুলের নেতৃত্বে একদল নেতাকর্মী। এ সময় আমীরে জামায়াতের সফর সঙ্গী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন। বিমান থেকে নেমে জামায়াতে ইসলামীর আমীর গাড়িতে ওঠেন। তিনি বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে নেতাকর্মীদের অভিবাদন জানাতে জানাতে শহরের দিকে রওনা হন। রাস্তায় তিনি প্রথম পথসভায় বক্তব্য রাখেন স্বৈরাচারী হাসিনার পতনের আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু যশোর, খুলনা সাতক্ষীরা ও ঝিনাইদহ এ চারটি জেলার সংযোগস্থল চাঁচড়া চেকপোস্ট মোড়ে। তিনি বলেন, এই মোড়ে নতুন মুক্ত বাংলাদেশে বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলের মধ্যে কোনো দলীয় প্রধান হিসেবে জামায়াতের আমীরের এটাই প্রথম আগমন।
প্রথম পথসভায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যশোর মিষ্টি গুড় আর মিষ্টি শীতের শুভেচ্ছা। আত্মীয়-স্বজনকে সবরে সানি দান করুন। দোয়া করি আমার ভাই আবদুল্লাহসহ যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের শহীদ হিসেবে কবুল করেন। তাদের উসিলায় বাংলাদেশের মানুষের ওপর শান্তি বর্ষণ করুন। তাদের আমি বিশেষভাবে স্মরণ করছি যারা ২৪ এর স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তাদের মূল্যবান জীবনবাজি রেখেছেন। এই সংগ্রামে এবং আন্দোলনে গণঅভ্যুত্থান এবং বিপ্লবে আপনারাও লড়াই করেছেন। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমাদের সন্তানরা একটি বৈষম্যহীন সমাজের জন্য গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছিল। আমরাও সেই বৈষম্যহীন দেশ গড়ে তুলতে চাই। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই; যেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে জাতপাত দল ধর্মের ব্যবধান থাকবে না। সব মানুষ তার সকল বৈধ অধিকার ভোগ করবে।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, যারা আমাদের ওপর ফ্যাসিবাদের ডালপালা বিস্তার করেছিলেন, একনাগাড়ে সাগে ১৫ বছর যারা তাণ্ডব চালিয়ে ছিলেন, যারা খুন, গুম চালিয়েছিলেন, দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করেছেন, আমরা তাদের ক্ষমা করবো না। তাদের প্রত্যেকের বিচার করা হবে।
জামায়াতের আমীর বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি মজলুম দল। এই দলের শীর্ষনেতাকে বিচারের নামে হত্যা করা হয়েছে। কুরআনের পাখি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী রাহিমাহুল্লাকে হত্যা করা হয়েছে। জননেতা গোলাম আযম রাহিমাহুল্লাহে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে। হত্যা করা হয়েছে আপনাদের কৃতিসন্তান জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান আহসান মুজাহিদকে। হত্যা করা হয়েছে আবদুল কাদের মোল্লাকে, হত্যা করা হয়েছে আমার ভাই কামারুজ্জামানকে।
তিনি বলেন, যশোর ঐতিহ্যবাহী এবং আন্দোলন-সংগ্রামের এলাকা। সুদীর্ঘ সংগ্রামের এলাকা। এই এলাকা থেকে সর্বপ্রথম একটি দেশের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ৯ম ডিভিশনের সেক্টরের কামান্ডার মেজর এম এ জলিল সঙ্গীদের নিয়ে লুটেরাদের বিরুদ্ধে প্রথম আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। তাই এ যশোরকে আমরা অনন্য উচ্চতায় দেখি।
এরপর দ্বিতীয় পথসভা করেন যশোর বেনাপোল মহাসড়কের ঝিকরগাছা বাজার এলাকায়। সর্বশেষ তিনি পথসভায় বক্তব্য রাখেন শার্শা উপজেলার নাভারুণ মোড়ে। সভা শেষে রাতেই তিনি রওনা দেন সাতক্ষীরার উদ্দেশে। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।