আমরা শোকাহত : সোনার বাংলার প্রতিষ্ঠাতা মহীউদ্দীন আহমদের ইন্তেকাল


৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:০০

স্টাফ রিপোর্টার : সাপ্তাহিক সোনার বাংলা ও দৈনিক জেহাদ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা, প্রখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান খোশরোজ কিতাব মহলের স্বত্বাধিকারী, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, মহীউদ্দীন আহমদ গত ২ ডিসেম্বর সোমবার বিকালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মরহুমের জানাযার নামায গত ৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বাদ জোহর রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার মাদরাসা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। জানাযার নামায শেষে তাকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। মরহুমের নামাযে জানাযায় তার আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক শুভাকাক্সক্ষী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া জানাযায় অংশগ্রহণ করেন বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান তাসবীর, বিশিষ্ট মিডিয়াব্যক্তিত্ব কর্নেল (অব.) আব্দুল হক, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক এম এ মুসা, তার প্রতিষ্ঠিত মাগুরা গ্রুপসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ। মহীউদ্দীন আহমদ ছিলেন একজন প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিত্ব, যিনি দেশের সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকা দীর্ঘদিন ধরে সৎ ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। মহীউদ্দীন আহমদের মৃত্যুর সংবাদে প্রকাশনা ও সাংবাদিকতা অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু হয় প্রকাশনা জগতের এ নক্ষত্রের। তার বয়স হয়েছিল ১০৫ বছর। স্বাধীনতার আগে প্রকাশিত দৈনিক ‘জেহাদ’ পত্রিকার প্রকাশক ছিলেন তিনি। ‘স্বাধীনতা’ নামে জনপ্রিয় একটি পত্রিকা প্রকাশ করে তৎকালে তিনি কারাভোগ করেছিলেন। সংবাদপত্রের পাশাপাশি বিভিন্ন বই প্রকাশনায়ও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন এ কর্মবীর। ১৯৩৯ সালে তিনি কলকাতায় খোশরোজ কিতাব মহল প্রতিষ্ঠা করেন। দেশ বিভাগের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং বাংলা বাজারে তার প্রকাশনা শুরু করেন। জানা যায়, বাংলাবাজারের তৎকালীন অফিসটি স্থাপনে অর্থ এবং নিজের বাড়ী দিয়ে সহায়তা করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম সহধর্মিণী নার্গিস খানম। কলকাতা হতে রিক্ত থেকে ফিরে মহীউদ্দীন আহমদের নিকট কোনো অর্থ না থাকলেও তার দৃঢ়তা এবং সৎ-কর্মনিষ্ঠা দেখে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্ত্রী নার্র্গিস তার বাংলাবাজারের বাড়িটি খোশরোজ কিতাব মহলের নামে লিখে দেন এবং নিজের জমানো টাকা বই ও পত্রিকা প্রকাশনার পুঁজি হিসেবে অনুদান দেন। সুদীর্ঘ ৮৫ বছরের পথচলায় দেশের শীর্ষ স্থানীয় এ ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত সুনাম এবং সফলতার সাথে পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে। মহীউদ্দীন আহমদ তার দীর্ঘ কর্মময় জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করে গেছেন। তিনি বাংলা ভাষায় পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন অনুবাদ প্রকাশে একজন স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। ড. মোস্তাফিজুর রহমান সম্পাদিত খোশরোজ কিতাব মহলের বাংলা অনুদিত কুরআনটি আজো সর্বমহলে প্রশংশিসত। এছাড়া তিনি বাংলাদেশে আইনের নানা দুর্লভ এবং গুরুত্বপূর্ণ বই প্রকাশের পথিকৃৎ। তার ইন্তেকালে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ শোক প্রকাশ করেছেন। সাপ্তাহিক সোনার বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক অধ্যাপক মো. তাসনীম আলম, চেয়ারম্যান এ কে এম রফিকুন্নবী ও প্রকাশক এ টি এম সিরাজুল হক এবং বার্তা সম্পাদক ফেরদৌস আহমদ ভূইয়া শোক প্রকাশ করেন। এছাড়া অন্য এক বার্তায় সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠন সিএনসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল হক বলেন, খোশরোজ কিতাব মহল ও সোনার বাংলার প্রতিষ্ঠাতা মহীউদ্দীন আহমদ ছিলেন দেশপ্রেমিক একজন মিডিয়াব্যক্তিত্ব। এদেশে ইসলামী সাহিত্য-সংস্কৃতি প্রচারে তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তারা শোক বার্তায় তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।